নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৮ পিএম, ১১ অগাস্ট, ২০২০
সাবের হোসেন চৌধুরী। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে রাজনীতিতে তাঁর নামটিও কেউ জানতো না। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার জন্য যতগুলো চমক দেখিয়েছিল তাঁর মধ্যে অন্যতম চমক ছিল সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো তরুন-আনকোরাকে মনোনয়ন দেওয়া। তাও আবার মতিঝিলের মতো নির্বাচনী এলাকা থেকে, যেখানে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মির্জা আব্বাস। এই সময়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন মোজাফফর হোসেন পল্টু, কিন্তু শেখ হাসিনা মোজাফফর হোসেন পল্টুকে না দিয়ে তরুণ ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিতে একেবারে আনকোরা সাবের হোসেন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেন। এই মনোনয়ন দেওয়ার পর সাবের হোসেন চৌধুরী বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে প্রথম ব্যতিক্রমী নির্বাচনী প্রচার অভিযানের সূচনা করেন। যে নির্বাচনী প্রচার এখনো বিরল ব্যতিক্রমধর্মী। এর সঙ্গে তুলনা করা যায় শুধুমাত্র প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের মেয়র নির্বাচনের প্রচারণার সঙ্গে।
সাবের হোসেন চৌধুরী নির্বাচনী প্রচারণায় রাজনীতির বাইরের বিশেষ করে ক্রীড়াবিদ, শিল্প-সংস্কৃতির বিভিন্ন মানুষকেও যুক্ত করেন। নিজে বিনয়ী চেহারায় নিষ্পাপ ভাব এবং সুন্দর বাচনভঙ্গির কারণে ঐ নির্বাচনে তিনি বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মির্জা আব্বাসকে পরাজিত করেন এবং রাজনীতিতে অভিষিক্ত হন। তাঁর রাজনীতির অভিষেকটা যেন ছিল এলাম-দেখলাম-জয় করলামের মতো। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরপরই তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির পদে নিয়োগ পান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই ক্রীড়া সংগঠক সাবের হোসেন চৌধুরী বাংলাদেশের ক্রিকেটের দন্ডমুন্ডের কর্তা হন। তাঁর হাত ধরেই দেশের ক্রিকেট অনেকগুলো সাফল্য অর্জন করে, যার মধ্যে টেস্ট ক্রিকেট মর্যাদা প্রাপ্তি অন্যতম। এই সময়ে উপমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী। রাজনীতিতে অভিষিক্ত হয়ে একবারে এতকিছু আওয়ামী লীগের হয়ে অন্য কেউ পেয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
অনেকে মনে করতেন সাবের হোসেন চৌধুরী আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতাদের অন্যতম এবং আওয়ামী লীগে তিনি অনেক দূরে যাবেন। বিশেষ করে যখন শেখ হাসিনার স্নেহ এবং ভালোবাসা তাঁর জন্যে ছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পরে সাবের হোসেন চৌধুরী দল ছেঁড়ে যাননি, বরং দলের মধ্যে তাঁর অবস্থান আরো শক্তিশালী এবং সুদৃঢ় করেছেন। এই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আরো নৈকট্য হয়েছে। সাবের হোসেন চৌধুরীকে শেখ হাসিনা তাঁর রাজনীতিক সচিব হিসেবে নিয়োগ দেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ দেন। এই সময় আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারক হয়ে ওঠেন সাবের হোসেন চৌধুরী। এই কারণেই রাজনীতিতে অতিথি সাবের হোসেন চৌধুরী অনেক নির্যাতনও ভোগ করেছেন। তাঁকে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। যে মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সেই মামলা এখনো বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম প্রহসন। তিনি তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সফরে যাচ্ছিলেন এই সময়ে ফেরি থেকে কাঁটা চামচ এবং প্লেট চুরির মামলায় সাবের হোসেন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিএনপি-জামাত বাংলাদেশের রাজনীতিতে যত প্রহসন এবং অপকর্ম করেছে তাঁর একটি বড় উদাহরণ সম্ভবত এটা।
সাবের হোসেন চৌধুরী আওয়ামী লীগকে ২০০১ পরবর্তী সময়ে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে নানামুখী তৎপরতা করেছিলেন। আওয়ামী লীগকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করায় তিনি বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছিলেন। কিন্তু এরপরেই শুরু হয় ওয়ান ইলেভেন ঝড় এবং ওয়ান ইলেভেনের পর হঠাৎ করেই সাবের হোসেন চৌধুরী বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন। এখনো স্পষ্ট নয় সাবের হোসেন চৌধুরীর কি হয়েছিল, তিনি কি সংস্কারপন্থি হয়েছিলেন? তিনি কি শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন? নাকি তাঁর অন্যকোন চিন্তা ছিল? বিষয়টা যেমন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও স্পষ্ট করেননি, তেমনি সাবের হোসেন চৌধুরীও এই নিয়ে কখনো কথা বলেননি। তবে সাবের হোসেন চৌধুরী একাধিকবার বলেছেন যে, তিনি কখনো সংস্কারপন্থি ছিলেন না। তবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে দেখা যায় যে, সাবের হোসেন চৌধুরী ভারতের সোনিয়া গান্ধী মডেল বাংলাদেশে চালু করার জন্য কারো কারো সঙ্গে দেনদরবার করেছিলেন বলে জানা যায়। বিশেষ করে তৎকালীন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর সঙ্গে সাবের হোসেন চৌধুরীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল সেই সময়ে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গেও। এই বাস্তবতায় সাবের হোসেন চৌধুরী আসলে শেখ হাসিনার মুক্তি বিলম্বিত করতে চেয়েছিলেন নাকি শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন তা এক বড় প্রশ্ন।
কিন্তু সাবের হোসেন চৌধুরী তারপরেও ভাগ্যবান। ২০০৮ সালে যারা সংস্কারপন্থী ছিলেন তাঁদের অনেকেই মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন পাননি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, খ ম জাহাঙ্গীরের মতো অনেকেই। কিন্তু সাবের হোসেন চৌধুরী তারপরেও মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং এখনো আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে আছেন। এর মধ্যে সাবের হোসেন চৌধুরীকে ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্ট কমিটির সহ সভাপতি পদেও মনোনয়ন দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা এবং সেখানে তিনি বিজয়ীও হয়েছিলেন।
কাজেই সাবের হোসেন চৌধুরীর রাজনৈতিক অবস্থান রহস্যাবৃত। শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর দুরত্ব আছে, কিন্তু তারপরেও তিনি আওয়ামী লীগে আছেন। তিনি যেন আওয়ামী লীগে ধূমকেতুর মতো। হঠাৎ আলো ছড়িয়েছিলেন, এখনো তাঁর আলোর ছটার রেখা দৃশ্যমান। তিনি রাজনীতিতে টিকবেন কিনা তা ভিন্ন প্রশ্ন, তবে রাজনীতিতে তাঁর আগ্রহ আছে কিনা সেই প্রশ্ন কেউ করতেই পারে।
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি রাজনীতির খবর মির্জা আব্বাস
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড লু বিএনপি আওয়ামী লীগ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সুশীল সমাজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
এনবিআর কাস্টমস জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করলে বিএনপিকে আবারও পালাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার দরকার নেই। সরকারেরও দরকার নেই। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির নেতাকর্মীরা বক্তব্য দিয়েছে, আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না। সেদিনও দেখলাম পল্টন ময়দান থেকে একে একে দৌড়াতে দৌড়াতে অলিগলি কোথায় দিয়ে যে পালিয়েছে, কেউ চিন্তাও করেনি।
সোমবার (১৩ মে) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে। যদি তারা আবারও জ্বালাও-পোড়াও করে। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করলে বিএনপিকে আবারও পালাতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাসে পালিয়ে যাওয়ার কোনো রেকর্ড নেই। ২০০৭ সালে আর রাজনীতি করব না এই মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাদের মূল নেতা পালিয়ে আছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ২৮ অক্টোবরও বক্তব্য দিয়েছিল আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না। শেষ পর্যন্ত দেখলাম দৌড়াতে দৌড়াতে তারা পালিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশে এসে কেউ আবারও বিএনপিকে মদত দেবে সে পরিস্থিতি এখন বিশ্বে নেই। যারা দাপট দেখাতো তাদের ক্ষমতা মধ্যপ্রাচ্যেই সংকুচিত হয়ে গেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথাই ইসরায়েল শুনে না।
এসময় ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক গোলাপ, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ ওবায়দুল কাদের বিএনপি
মন্তব্য করুন
জামায়াতকে নিয়ে নতুন বিরোধের মুখোমুখি হচ্ছে বিএনপি। স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের এই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিএনপির ভেতরে যেমন শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব অন্তঃকলহ তেমনই বিএনপি যাদের সঙ্গে নির্বাচন প্রতিরোধের আন্দোলন করেছিল তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মতদ্বৈততা। বিএনপির নেতৃত্বের একটি বড় অংশ জামায়াতকে নিয়ে আবার প্রকাশ্য আন্দোলনের পক্ষে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভাতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল এবং সেই বৈঠকে মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সহ স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্য জোটের ব্যাপারে তাদের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছেন।
আগামীকাল দুদিনের সফরে ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে আসছেন। বাংলাদেশের নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর এটি প্রথম সফর। নানা কারণেই এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফর নিয়ে যেরকম উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ত, এখন সে রকম পরিস্থিতি নেই। ডোনাল্ড লু এর বাংলাদেশ সফর নিয়ে রাজনীতির মাঠে আলাপ আলোচনা আছে। তবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এর কেউই এই সফরকে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন না।
আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করলে বিএনপিকে আবারও পালাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার দরকার নেই। সরকারেরও দরকার নেই। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির নেতাকর্মীরা বক্তব্য দিয়েছে, আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না। সেদিনও দেখলাম পল্টন ময়দান থেকে একে একে দৌড়াতে দৌড়াতে অলিগলি কোথায় দিয়ে যে পালিয়েছে, কেউ চিন্তাও করেনি।