নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০
ঘটনা ১
তুরষ্কে বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন উদ্বোধন করা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী করোনাকালে তুরষ্ক সফর করবেন কিনা এই নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিলেন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তাকে বললেন যে, তুরষ্কে যেতে হবে আর তিনি বাংলাদেশ থেকেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুঝতে পারলেন না যে কেন প্রধানমন্ত্রী তাকে এই সময়ে তুরষ্কে যেতে বলছেন এবং এই করোনা সঙ্কটের সময়ে দূতাবাস ভবন উদ্বোধনের গুরুত্ব এবং রাজনৈতিক তাৎপর্য কি। তারপরেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ তাকে মানতেই হবে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গেলেন তুরষ্কে। উল্লেখ্য, তুরষ্ক বিশ্বে অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশ এবং রপ্তানিকারকও বটে।
ঘটনা ২
বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরেই ইলিশ উৎপাদনে একের পর এক রেকর্ড গড়ছে। বিশেষ করে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কিছু ব্যবস্থা- যেমন জাটকা ধরা নিষিদ্ধ করা, প্রজনন মৌসুমে ইলিশ নিধন বন্ধ করা ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশে ইলিশের ফলন এখন বাড়বাড়ন্ত। স্বল্প মূল্যে যেমন মানুষ ইলিশে স্বাদ পাচ্ছে, তেমনি দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইলিশ দেশের বাইরেও রপ্তানিও করা যাচ্ছে। আর এজন্যেই ইলিশ রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছে। ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হবে কিনা তা নিয়ে এক ধরণের দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বললেন যে, পূজোর সময়ে ভারতে ইলিশের চাহিদা থাকে, কাজেই ইলিশ রপ্তানি করা হবে। গতকালই প্রথম ইলিশের চালান বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে চলে গেছে।
ঘটনা ৩
সন্ধ্যায় ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হলো যে তারা বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং এখন থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করা হবে না। ভারতের এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে সবাই অবাক হয়ে গেল এবং নূন্যতম বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের শিষ্টাচারটুকু ভুলে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে এই ধরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলো।
এই ঘটনা তিনটি ঘটনাকে একত্রে মেলানো গেলে দেখা যাবে যে, শেখ হাসিনার কূটনীতিক দূরদর্শিতার কাছে কিভাবে ভারত পরাজিত হল। এর আগেও কিছু ঘটনা রয়েছে যা এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীকে ডেকে বললেন যে, পেঁয়াজের সামনে সঙ্কট হতে পারে। কাজেই এখন থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী টিপু মুনশির নেতৃত্বে বাণিজ্য মন্ত্রনালয় বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজের জন্য এলসি আমদানির সিদ্ধান্ত নিল। বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এখানেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রমাণ। তিনি জানতেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরের মতো এই বছরের সেপ্টেম্বরেও ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানি নিষিদ্ধ করতে পারে। আর এই কারণেই তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীকে আগে থেকেই পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তুরস্কে পাঠিয়েছিলেন, যেন তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কটা আরও প্রগাঢ় হয়। এই সম্পর্কের সূত্র ধরে তুরস্ক থেকে দ্রুত গতিতে পেঁয়াজ আনা যায়।
আবার তিনি প্রতিহিংসার কূটনীতি না করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পরও ভারতে ইলিশের চালান পাঠান। অর্থাৎ সংকীর্ণ কূটনীতি, সংকীর্ণ প্রতিবেশী সুলভ রাষ্ট্রের আচরণের প্রতিবাদ তিনি করলেন উদারতা দিয়ে। এটাই হল কূটনীতির এক নতুন ব্যাকরণ। এই ব্যাকরণ রচনা করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি কূটনীতিক শিষ্টাচার ও উদার কূটনীতির এক নতুন নজির স্থাপন করে ভারতকে কূটনীতিকভাবে পরাজিত করলেন। বাংলাদেশে গতকাল ভারতের পেঁয়াজ নিষিদ্ধ হওয়ার পর আকস্মিকভাবে পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। কিন্তু বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি বেশিক্ষণ থাকবে না। পেঁয়াজের ঘাটতি থাকবে না। আগামী দুই চারদিনের মধ্যেই চীন, তুরস্কসহ বেশ কিছু দেশ থেকে পেঁয়াজ আসবে। সেই পেঁয়াজ আসার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এখন বাংলাদেশেও পেঁয়াজ আছে। কৃত্রিমভাবে যে সমস্ত ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে তারা অচিরেই স্তিমিত হয়ে যাবে, বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল হবে।
এখানে শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক দুরদৃষ্টিতার দুটি দিক পাওয়া যায়- একটি হলো তিনি আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন যে আরেকটি পেঁয়াজ কূটনীতি হতে যাচ্ছে। এজন্য তিনি সম্ভব্য যে সমস্ত দেশগুলো পেঁয়াজ রপ্তানি করে তাদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন। তুরস্কতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠিয়ে তিনি সম্পর্কের একটা নতুন মেলবন্ধনও তৈরী করে রেখেছিলেন। দ্বিতীয়ত, তিনি ভারতের সংকীর্ণ পেঁয়াজনীতির জবাব দিলেন ইলিশ উদারতা দিয়ে। এরফলে ভারত আরেকবার শেখ হাসিনার কাছে কূটনীতিকভাবে পরাজিত হলো। যেমন অতীতে বহুবার এভাবেই কূটনীতিক উদারতা দিয়ে শেখ হাসিনা বিজয়ী হয়েছিলেন এবং বিশ্বরাজনীতিতে নিজের জায়গা দখল করেছিলেন। এবার পেঁয়াজ কূটনীতিতেও তিনি দেখালেন, সংকীর্নতা করে জয়ী হওয়া যায় না, জয়ী হতে হয় উদারতা দিয়ে।
মন্তব্য করুন
কাউন্সিল বিএনপি তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়া
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত (তৃতীয় ধাপ) ২০৪ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এরমধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। আর প্রথম ধাপে ভোটের জন্য ৮০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৬৯ জনকে বহিষ্কার করে দলটি।
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ কোনো নির্বাচনে অংশ না নিচ্ছে না বিএনপি। গত ১৬ এপ্রিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই। তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না দল।
দেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এই ধাপের নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত ৭ জন চেয়ারম্যান পদে, ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে বলেও জানা যায়।
দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এই বিষয়টি নিয়ে তাকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে তারেক জিয়া এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেননি বলে জানা গিয়েছে। বরং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে তারেক জিয়া জানিয়েছেন, কাউন্সিলের আগে বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। তবে বিএনপির কাউন্সিল কবে, কীভাবে হবে- এ সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তারা সাম্প্রতিক সময়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। তবে এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলা হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী কোন জোট করতে রাজি নয়। ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাওয়ার পর বিএনপি এখন পর্যন্ত জোটগত ভাবে কোন আন্দোলন করেনি। তবে বিভিন্ন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রেখেছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। এখন আবার নতুন করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না।