নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০৪ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০
ইদানিং সারা দেশ জুড়ে মুজিব কোর্টের ছড়াছড়ি দেখা যায়। বিশেষ বিশেষ দিনে কিংবা ছোটখাটো কোন জনসমাবেশ হলেও ইদানীং রাস্তায় নানা মাপের ও রঙয়ের মুজিব কোর্টের দেখা মেলে। মুজিব কোর্ট এখন শুধু বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরাই পরেন না, এটাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার জন্য পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে শিশু অপহরণকারী, প্রতারক, বিভিন্ন পেশাজীবী, ক্যাসিনোর বাণিজ্যের হোতা, টেন্ডারবাজ, মাদক কারবারি, চোরাকারবারি, মানব পাচারকারী, দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের টাকা পাচারকারী, গরিবের জন্য সরকারের বরাদ্দের অর্থ লুটেরা, ব্যাংক লুটেরা, টেন্ডারবাজ, এনআইডি জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের জমি দখলকারী, সরকারী জমি দখলদার, টোকাই, রংবাজ সহ অনেকেই অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য গায়ে চাপিয়েছে প্রিয় মুজিব কোট।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই কোটটি কবে থেকে পরতে শুরু করেছিলেন তা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি, তবে বলা হয় যে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে তিনি এই কোটটি পরতে শুরু করেন। মুজিব কোট মূলত নেহেরু জ্যাকেটের একটি সংস্করণ, যা ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু পরতেন। অনেকের মতে শেখ মুজিব ছয় বোতাম বিশিষ্ট এই কোটটি পরতেন, যা ১৯৬৬-এর ছয়-দফা দাবীর সাথে সম্পর্কিত। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আইনজীবী কামাল হোসেন বলেন যে ১৯৬৮ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই স্বতন্ত্র নকশার পোশাকটি পরতে শুরু করেন।
কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক ছাত্র তার সহপাঠী তাজউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা দিতে গিয়েছিলেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে অনেক কাছ থেকে দেখলেন, কথাও বললেন দীর্ঘক্ষণ। কথা শেষে ওঠে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু যখন তার কালো কোটটি গায়ে জড়াচ্ছিলেন তখন ওই ছাত্র লক্ষ্য করলেন কোটে ৬টি বোতাম রয়েছে। যা এ ধরনের অন্য কোটের বোতামের চেয়ে কম। এসময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কোটের বোতাম ৬টি কেন? উত্তরে বঙ্গবন্ধু তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘এমন প্রশ্ন এর আগে আমাকে আর কেউ করেনি। তুই প্রথম। এই ৬টি বোতাম আমার ঘোষিত ৬ দফার প্রতীক। আর এ কারণেই একটি আদর্শ মুজিব কোটের প্রতিটিতে বোতামের সংখ্যা থাকে ৬টি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। এর মধ্যে স্কুলের ছাত্র অবস্থায় ব্রিটিশ আমলে সাত দিন কারা ভোগ করেন। বাকি ৪ হাজার ৬৭৫ দিন তিনি কারাভোগ করেন পাকিস্তান সরকারের আমলে। সেই বঙ্গবন্ধুর মুজিব কোর্ট পাকিস্তান আমলে খুব কম সংখ্যক রাজনৈতিক নেতা কর্মী পরতেন। কারণ এতে পাকিস্তানি শাসকরা চিনে ফেলতেন কে কে মুজিবের অনুসারী। যারা অন্তরে মুজিবের আদর্শ ধারণ করতেন, বাংলার মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখতেন তাঁদের নেতার মত নির্ভয় নিঃসংকোচ চিত্তে তারাই মুজিব কোর্ট পরে রাস্তায় বেরুতেন তখন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন প্রায় পুরো পরিবার নিয়ে খুন হতে হয় বঙ্গবন্ধুকে তাঁর পরে খুব কম সংখ্যক রাজনৈতিক নেতা কর্মীকে মুজিব কোর্ট পরে বাইরে বেরুতে দেখা যায়। তথ্য প্রবাহের এই যুগে সত্য জানার পরে বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই ‘মুজিব কোট’। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে যারা রাজনীতি করছেন তারাও এই কোটকে ব্যবহার করছেন। বঙ্গবন্ধুর ভক্তদের কাছে, এই কোট ধারণ করা মানেই বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করার সামিল। পায়জামা-পাঞ্জাবির সাথে মুজিব কোট বঙ্গবন্ধুর আইকন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কিন্তু আদালতের বারান্দায় যখন খুন ধর্ষণের আসামী মুজিব কোর্ট পরে হাজিরা দেয়, সাহেদ যখন মুজিব কোর্ট পরে শ্রেষ্ঠ প্রতারক বনে যায়, টি এস সি থেকে শিশু অপহরণকারী নূর নাজমা আক্তার লোপা তালুকদার, যার নামে খুন অপহরণ, শিশু পাচারের অভিযোগ আছে, তাঁকেও মুজিব কোর্ট পরে সোশ্যাল মিডিয়ায়ই শুধু নয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও দেখা যায়। মনে হয় এ যেন সাহেদের লেডি ভার্সন।
সারা দেশে এমন হাজারো সাহেদ, লোপারা মুজিব কোর্টের অপব্যবহার করে করছে নানা ধরণের জঘন্য অপরাধ। ফরিদপুর কুষ্টিয়া সহ সারা দেশে মুজিব কোর্টের চরম অপব্যবহার আমরা লক্ষ্য করছি। বিভিন্ন দল থেকে এসে অনেকে তাঁর আগের দল থেকে পদত্যাগ না করেও ‘মুজিব কোর্ট’ধারী হয়ে গেছেন, হয়েছেন পদধারী আওয়ামী লীগ বা যুবলূগ নেতা। ,
যার তাঁর সাথে নেতা মন্ত্রীদের ছবি তোলার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। সবাইকে সাবধান হতে বলেছেন। ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা মন্ত্রীরা যার তাঁর সাথে ছবি তোলার ব্যাপারে সাবধান হয়ে গেছেন। এতে অনুপ্রবেশকারীদের সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ সীমিত হবে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ছিল ২০২০ সালের ১৭ মার্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মগ্রহণের একশততম বছর পূর্ণ হয় এই দিন। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১০২ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে ৬১ সদস্যের একটি বাস্তবায়ন কমিটিও গঠন করা হয়েছে। নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও করোনাভাইরাস এর মহামারির কারণে তা প্রায় বাতিল করা হয় বলা যায়। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে কী এমন কোন আইন আসতে পারে না যা দিয়ে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে কে বা কারা কোন লেভেলের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নেতা-কর্মীরা কখন কীভাবে মুজিব কোর্ট পরতে পারবেন। তাঁর ছবিও কোথায় কোথায় ব্যবহার বা প্রকাশ করা যাবে? অনেকটা ড্রেস কোর্ডের আইনের মত যাতে করে মুজিব কোর্টকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, মানে অপব্যবহার করে কেউ কোন না জায়েজ ফায়দা নিতে না পারে?
মন্তব্য করুন
চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত (তৃতীয় ধাপ) ২০৪ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এরমধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। আর প্রথম ধাপে ভোটের জন্য ৮০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৬৯ জনকে বহিষ্কার করে দলটি।
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ কোনো নির্বাচনে অংশ না নিচ্ছে না বিএনপি। গত ১৬ এপ্রিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই। তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না দল।
দেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এই ধাপের নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত ৭ জন চেয়ারম্যান পদে, ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে বলেও জানা যায়।
দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মন্তব্য করুন
সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলন শুরুর আগে কর্মসূচি প্রণয়ন ও আন্দোলন পরিচালনায় শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি চায় বিএনপির মিত্ররা। তারা মনে করে, লিয়াজোঁ কমিটি না থাকায় বিগত আন্দোলন পরিচালনায় এক ধরনের সমন্বয়হীনতা ছিল।
কারণ, যুগপতের সব দল ও জোটের সঙ্গে বিএনপির পৃথক বৈঠক শেষে তাদের স্থায়ী কমিটিতে কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়াকে যথাযথ প্রক্রিয়া এবং আন্দোলনের সঠিক প্ল্যাটফর্ম বলে মনে করে না শরিকরা, বিশেষ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। তাই এবার এ প্রশ্নে একটা সিরিয়াস মীমাংসা চান মঞ্চের নেতারা।
বিএনপির সঙ্গে বুধবার (১৫ মে) রাতে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, প্রতিটি জোট ও দল থেকে একজন করে নিয়ে ১০-১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করতে হবে। সেই লিয়াজোঁ কমিটিতে আলোচনার ভিত্তিতে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণীত হবে। তার আগে নিজ নিজ দল ও জোটের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠকে উপস্থিত হবেন।
নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ অতীতের আন্দোলনগুলোতে লিয়াজোঁ কমিটি এভাবে কাজ করেছে। কিন্তু বিগত আন্দোলনে এ প্রক্রিয়ায় কর্মসূচি প্রণীত হয়নি। পাঁচ-দশ মিনিট আগে মিত্রদের কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হতো এবং কর্মসূচির সঙ্গে সহমত না হলেও সেটাই তারা ঘোষণা করতেন। বৈঠক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
যুগপৎ আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত করে সরকারের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে ঈদুল আজহার পর মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। সেই আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণে পরামর্শ নিতে গত রোববার থেকে মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এ ধরনের বৈঠক এবারই প্রথম। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এনডিএম, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এবং মিয়া মসিউজ্জামান ও ফারুক হাসানের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণতন্ত্র মঞ্চ ছাড়াও এর আগে গত সোমবার বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নে সমন্বয়হীনতা দূরীকরণে যুগপতের সব দল ও জোট থেকে দু-একজন করে নিয়ে শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের ওপর জোর দেন সমমনা জোটের নেতারা।
মন্তব্য করুন
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় প্রেস ক্লাব
মন্তব্য করুন
বিএনপি ভারত বিরোধী মার্কিন বিরোধী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
১৯৮১ সালের ১৭ মে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন এক বৃষ্টিমুখর দিনে। সেই দিনে লাখো মানুষ মানিক মিয়া এভিনিউতে জড়ো হয়েছিল জাতির পিতার কন্যাকে দেখার জন্য। তাদের শোক এবং আবেগ ছিল হৃদয়স্পর্শী। সারা বাংলাদেশ উত্তাল হয়েছিল। জাগরণের এক গান গেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পর থেকেই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। এই সরকার পুরোপুরিভাবে নতজানু সরকারে পরিণত হয়েছে। শুধু ফারাক্কা নয়, গঙ্গার পানি নয়, বাংলাদেশের ১৫৪টি নদীতে পানি দিতে তারা গড়িমসি করে যাচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন, এ করছি, এ হচ্ছে এমন করে সময় শেষ করছে সরকার। এ যে ব্যর্থতা এর মূল কারণ হচ্ছে, সরকারে যারা আছে তারা পুরোপুরিভাবে একটা নতজানু সরকার।