ইনসাইড পলিটিক্স

মুজিব কোর্টের অপব্যবহার রোধে আইন হবে কি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯:০৪ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০


Thumbnail

 

ইদানিং সারা দেশ জুড়ে মুজিব কোর্টের ছড়াছড়ি দেখা যায়। বিশেষ বিশেষ দিনে কিংবা ছোটখাটো কোন জনসমাবেশ হলেও ইদানীং রাস্তায় নানা মাপের ও রঙয়ের মুজিব কোর্টের দেখা মেলে। মুজিব কোর্ট এখন শুধু বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরাই পরেন না, এটাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার জন্য পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে শিশু অপহরণকারী, প্রতারক, বিভিন্ন পেশাজীবী, ক্যাসিনোর বাণিজ্যের হোতা, টেন্ডারবাজ, মাদক কারবারি, চোরাকারবারি, মানব পাচারকারী, দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের টাকা পাচারকারী, গরিবের জন্য সরকারের বরাদ্দের অর্থ লুটেরা, ব্যাংক লুটেরা, টেন্ডারবাজ, এনআইডি  জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের জমি দখলকারী, সরকারী জমি দখলদার, টোকাই, রংবাজ সহ অনেকেই অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য গায়ে চাপিয়েছে প্রিয় মুজিব কোট।      

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই কোটটি কবে থেকে পরতে শুরু করেছিলেন তা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি, তবে বলা হয় যে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে তিনি এই কোটটি পরতে শুরু করেন। মুজিব কোট মূলত নেহেরু জ্যাকেটের একটি সংস্করণ, যা ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু পরতেন। অনেকের মতে শেখ মুজিব ছয় বোতাম বিশিষ্ট এই কোটটি পরতেন, যা ১৯৬৬-এর ছয়-দফা দাবীর সাথে সম্পর্কিত। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আইনজীবী কামাল হোসেন বলেন যে ১৯৬৮ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই স্বতন্ত্র নকশার পোশাকটি পরতে শুরু করেন।

কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক ছাত্র তার সহপাঠী তাজউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা দিতে গিয়েছিলেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে অনেক কাছ থেকে দেখলেন, কথাও বললেন দীর্ঘক্ষণ। কথা শেষে ওঠে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু যখন তার কালো কোটটি গায়ে জড়াচ্ছিলেন তখন ওই ছাত্র লক্ষ্য করলেন কোটে ৬টি বোতাম রয়েছে। যা এ ধরনের অন্য কোটের বোতামের চেয়ে কম। এসময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কোটের বোতাম ৬টি কেন? উত্তরে বঙ্গবন্ধু তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘এমন প্রশ্ন এর আগে আমাকে আর কেউ করেনি। তুই প্রথম। এই ৬টি বোতাম আমার ঘোষিত ৬ দফার প্রতীক। আর এ কারণেই একটি আদর্শ মুজিব কোটের প্রতিটিতে বোতামের সংখ্যা থাকে ৬টি।

 জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। এর মধ্যে স্কুলের ছাত্র অবস্থায় ব্রিটিশ আমলে সাত দিন কারা ভোগ করেন। বাকি ৪ হাজার ৬৭৫ দিন তিনি কারাভোগ করেন পাকিস্তান সরকারের আমলে। সেই বঙ্গবন্ধুর মুজিব কোর্ট পাকিস্তান আমলে খুব কম সংখ্যক রাজনৈতিক নেতা কর্মী পরতেন। কারণ এতে পাকিস্তানি শাসকরা চিনে ফেলতেন কে কে মুজিবের অনুসারী। যারা অন্তরে মুজিবের আদর্শ ধারণ করতেন, বাংলার মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখতেন তাঁদের নেতার মত নির্ভয় নিঃসংকোচ চিত্তে তারাই মুজিব কোর্ট পরে রাস্তায় বেরুতেন তখন।        

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন প্রায় পুরো পরিবার নিয়ে খুন হতে হয় বঙ্গবন্ধুকে তাঁর পরে খুব কম সংখ্যক রাজনৈতিক নেতা কর্মীকে মুজিব কোর্ট পরে বাইরে বেরুতে দেখা যায়। তথ্য প্রবাহের এই যুগে সত্য জানার পরে বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই ‘মুজিব কোট’। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে যারা রাজনীতি করছেন তারাও এই কোটকে ব্যবহার করছেন। বঙ্গবন্ধুর ভক্তদের কাছে, এই কোট ধারণ করা মানেই বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করার সামিল। পায়জামা-পাঞ্জাবির সাথে মুজিব কোট বঙ্গবন্ধুর আইকন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কিন্তু আদালতের বারান্দায় যখন খুন ধর্ষণের আসামী মুজিব কোর্ট পরে হাজিরা দেয়, সাহেদ যখন মুজিব কোর্ট পরে শ্রেষ্ঠ প্রতারক বনে যায়, টি এস সি থেকে শিশু অপহরণকারী নূর নাজমা আক্তার লোপা তালুকদার, যার নামে খুন অপহরণ, শিশু পাচারের অভিযোগ আছে, তাঁকেও মুজিব কোর্ট পরে সোশ্যাল মিডিয়ায়ই শুধু নয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও দেখা যায়। মনে হয় এ যেন সাহেদের লেডি ভার্সন।

সারা দেশে এমন হাজারো সাহেদ, লোপারা মুজিব কোর্টের অপব্যবহার করে করছে নানা ধরণের জঘন্য অপরাধ। ফরিদপুর কুষ্টিয়া সহ সারা দেশে মুজিব কোর্টের চরম অপব্যবহার আমরা লক্ষ্য করছি। বিভিন্ন দল থেকে এসে অনেকে তাঁর আগের দল থেকে পদত্যাগ না করেও ‘মুজিব কোর্ট’ধারী হয়ে গেছেন, হয়েছেন পদধারী আওয়ামী লীগ বা যুবলূগ নেতা।      ,   

যার তাঁর সাথে নেতা মন্ত্রীদের ছবি তোলার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। সবাইকে সাবধান হতে বলেছেন। ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা মন্ত্রীরা যার তাঁর সাথে ছবি তোলার ব্যাপারে সাবধান হয়ে গেছেন। এতে অনুপ্রবেশকারীদের সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ সীমিত হবে।  

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ছিল ২০২০ সালের ১৭ মার্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মগ্রহণের একশততম বছর পূর্ণ হয় এই দিন। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১০২ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে ৬১ সদস্যের একটি বাস্তবায়ন কমিটিও গঠন করা হয়েছে। নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও করোনাভাইরাস এর মহামারির কারণে তা প্রায় বাতিল করা হয় বলা যায়। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে কী এমন কোন আইন আসতে পারে না যা দিয়ে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে কে বা কারা কোন লেভেলের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নেতা-কর্মীরা কখন কীভাবে মুজিব কোর্ট পরতে পারবেন। তাঁর ছবিও কোথায় কোথায় ব্যবহার বা প্রকাশ করা যাবে? অনেকটা ড্রেস কোর্ডের আইনের মত যাতে করে মুজিব কোর্টকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, মানে অপব্যবহার করে কেউ কোন না জায়েজ ফায়দা নিতে না পারে?    

 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

২০৪ নেতাকে বহিষ্কার করল বিএনপি

প্রকাশ: ০২:৫৩ পিএম, ১৭ মে, ২০২৪


Thumbnail

চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পর্যন্ত (তৃতীয় ধাপ) ২০৪ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।

এরমধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। আর প্রথম ধাপে ভোটের জন্য ৮০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৬৯ জনকে বহিষ্কার করে দলটি।

বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ কোনো নির্বাচনে অংশ না নিচ্ছে না বিএনপি। গত ১৬ এপ্রিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই। তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না দল।

দেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, গত মে প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এই ধাপের নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত জন চেয়ারম্যান পদে, জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে বলেও জানা যায়।

দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জুন।


বহিষ্কার   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি চায় বিএনপির মিত্ররা

প্রকাশ: ১০:৪১ এএম, ১৭ মে, ২০২৪


Thumbnail

সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলন শুরুর আগে কর্মসূচি প্রণয়ন আন্দোলন পরিচালনায় শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি চায় বিএনপির মিত্ররা। তারা মনে করে, লিয়াজোঁ কমিটি না থাকায় বিগত আন্দোলন পরিচালনায় এক ধরনের সমন্বয়হীনতা ছিল।

কারণ, যুগপতের সব দল জোটের সঙ্গে বিএনপির পৃথক বৈঠক শেষে তাদের স্থায়ী কমিটিতে কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়াকে যথাযথ প্রক্রিয়া এবং আন্দোলনের সঠিক প্ল্যাটফর্ম বলে মনে করে না শরিকরা, বিশেষ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। তাই এবার প্রশ্নে একটা সিরিয়াস মীমাংসা চান মঞ্চের নেতারা।

বিএনপির সঙ্গে বুধবার (১৫ মে) রাতে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, প্রতিটি জোট দল থেকে একজন করে নিয়ে ১০-১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করতে হবে। সেই লিয়াজোঁ কমিটিতে আলোচনার ভিত্তিতে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণীত হবে। তার আগে নিজ নিজ দল জোটের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠকে উপস্থিত হবেন।

নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ অতীতের আন্দোলনগুলোতে লিয়াজোঁ কমিটি এভাবে কাজ করেছে। কিন্তু বিগত আন্দোলনে প্রক্রিয়ায় কর্মসূচি প্রণীত হয়নি। পাঁচ-দশ মিনিট আগে মিত্রদের কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হতো এবং কর্মসূচির সঙ্গে সহমত না হলেও সেটাই তারা ঘোষণা করতেন। বৈঠক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

যুগপৎ আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত করে সরকারের পদত্যাগ নতুন নির্বাচনের দাবিতে ঈদুল আজহার পর মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। সেই আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণে পরামর্শ নিতে গত রোববার থেকে মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ধরনের বৈঠক এবারই প্রথম। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এনডিএম, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এবং মিয়া মসিউজ্জামান ফারুক হাসানের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণতন্ত্র মঞ্চ ছাড়াও এর আগে গত সোমবার বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নে সমন্বয়হীনতা দূরীকরণে যুগপতের সব দল জোট থেকে দু-একজন করে নিয়ে শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের ওপর জোর দেন সমমনা জোটের নেতারা।


লিয়াজোঁ   কমিটি   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: সেদিন কী বলেছিলেন বিএনপির নেতারা

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৬ মে, ২০২৪


Thumbnail

১৯৮১ সালের ১৭ মে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন এক বৃষ্টিমুখর দিনে। সেই দিনে লাখো মানুষ মানিক মিয়া এভিনিউতে জড়ো হয়েছিল জাতির পিতার কন্যাকে দেখার জন্য। তাদের শোক এবং আবেগ ছিল হৃদয়স্পর্শী। সারা বাংলাদেশ উত্তাল হয়েছিল। জাগরণের এক গান গেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। 

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চারদিন পর ২১ মে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসে। ওই অধিবেশন ছিল ৩৪ কার্যদিবসের। মোট ৪১ দিন অধিবেশন চলে। ২১ মে এর অধিবেশন শুরু হওয়ার পরই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিরোধী দলের নেতা আসাদুজ্জামান খান, আওয়ামী লীগ সভাপতির স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং বঙ্গবন্ধুর বাসভবন শেখ হাসিনার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দাবি করেন। পয়েন্ট অফ অর্ডারে দাঁড়িয়ে আসাদুজ্জামান খানের এই বক্তব্যের পর শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই অনির্ধারিত আলোচনায় বিএনপির অনেক নেতাই টিপ্পনি মূলক ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। 

আওয়ামী লীগের নেতাদের পক্ষ থেকে সুধাংশু শেখর হালদার এসব বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করে দেওয়ার জন্য স্পিকারকে অনুরোধও জানিয়েছিলেন। এই সময় যে সমস্ত বিএনপির নেতারা পয়েন্ট অফ অর্ডারে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শাহ আজিজুর রহমান। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা এখন রাজনীতিতে গুরুত্বহীন। তিনি এসে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোন কিছুই করতে পারবেন না।

শাহ আজিজ এটাও মন্তব্য করেছিলেন যে, বাংলাদেশের মানুষ আর কোনদিন বাকশালে ফিরে যাবে না। আওয়ামী লীগ আর বাংলাদেশে কোনোদিন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে পারবে না। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে তিন বছরের শাসনামলেরও তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। 

এসময় বিএনপির আরেকজন সংসদ সদস্য তৎকালীন পাবনা-২ নির্বাচিত ডা. এম এ মতিন বলেছিলেন, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বহীন। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব যা করেছেন তাঁর জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান জাতীয় সংসদে এই নেতা। 

যশোর-৯ থেকে নির্বাচিত তরিকুল ইসলামও ঐ অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন এবং বক্তব্য রাখেন। এই বক্তব্যে তিনি আওয়ামী লীগের সাড়ে তিন বছর শাসনের তীব্র সমালোচনা করেন এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য দাবি জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবে দিলীন হয়ে গেছে। কাজেই আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে আর রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া যায় না। তিনি শেখ হাসিনার বিচারও দাবি করেছিলেন। 

এই অনির্ধারিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করে বিএনপির আরেক নেতা তৎকালীন ঢাকা-২৮ থেকে নির্বাচিত আব্দুল মতিন চৌধুরীও আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিলেন। এই অনির্ধারিত আলোচনায় বিএনপির নেতা কে এম ওবায়দুর রহমান শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছিলেন। তিনি যেন নতুন ষড়যন্ত্র না করেন সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে লক্ষ্য রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। পয়েন্ট অফ অর্ডারের এই আলোচনায় অবশ্য কোন রকমের সিদ্ধান্ত হয়নি। স্পিকার এর পর মূল আলোচনার জন্য দিনের কার্যসূচিতে ফিরে যান।

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

এই সরকার পুরোপুরিভাবে নতজানু: মির্জা ফখরুল

প্রকাশ: ০৯:১২ পিএম, ১৬ মে, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পর থেকেই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। এই সরকার পুরোপুরিভাবে নতজানু সরকারে পরিণত হয়েছে। শুধু ফারাক্কা নয়, গঙ্গার পানি নয়, বাংলাদেশের ১৫৪টি নদীতে পানি দিতে তারা গড়িমসি করে যাচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন, এ করছি, এ হচ্ছে এমন করে সময় শেষ করছে সরকার। এ যে ব্যর্থতা এর মূল কারণ হচ্ছে, সরকারে যারা আছে তারা পুরোপুরিভাবে একটা নতজানু সরকার।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) ফারাক্কা দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, নতজানু সরকার বলেই দেশের জনগণের স্বার্থে প্রকৃতভাবে যে একটা স্ট্যান্ড ( অবস্থান) নেওয়া দরকার সেটি নিতে ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী সরকার।

তিনি বলেন, ফারাক্কা দিবস মনে করে দেয় জনগণের শক্তির কাছে বড় কোনো শক্তি নেই। গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য বহু রাজনৈতিক দল এক হয়ে লড়াই করছে, অনেকে প্রাণ দিয়েছে। বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজও নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে। নেতাকর্মীদের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।

২৮ অক্টোবরের পর তিন দিনের মধ্যে আমাদের ২৭ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এমন তথ্য জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এখনও সেই নিপীড়ন নির্যাতন চলছে। যারা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করছেন তাদের সাজা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকার দখলদার সরকার। তাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে তাদের স্বার্থ আর প্রভুদের স্বার্থ রক্ষা করা। বিশেষ একটা দায়িত্ব নিয়ে এ সরকার ক্ষমতা দখল করে আছে। এটা নির্বাচিত নয় এরা নির্বাচন করে না। এরা জানে, নির্বাচন করলে তাদের একটা ভূমিধস পরাজয় হবে। বিভিন্ন কৌশলে নির্বাচন দেখিয়ে ক্ষমতায় টিকে আছে।

তিনি বলেন, যারা সরকারের গুণগান করে, তাদের উদ্দেশ্য হলো এ সরকার টিকে থাকলে তাদের লুণ্ঠন, পাচার অব্যাহত থাকবে। তারা বেনিফিশিয়ারি হবে। এমন একটি বেনিফিশিয়ারি গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের একমাত্র কাজ হচ্ছে নিজেদের বিত্ত তৈরি করা ও অন্য দেশের স্বার্থ রক্ষা করা। তাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের দাবি নিজেদেরই আদায় করতে হবে। অন্য কেউ এসে করে দেবে না।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সহ-সভাপতি তানিয়া রব, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব আবু ইউসুফ সেলিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ প্রমুখ।

বিএনপি   মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর   জাতীয় প্রেস ক্লাব  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপিতে ভারত বিরোধিতার সাথে যুক্ত হচ্ছে মার্কিন বিরোধিতাও

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৬ মে, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপি ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আবার ভারত বিরোধী অবস্থানে চলে গেছে। প্রথমে তারা ব্যক্তিগতভাবে, এখন প্রকাশ্যে দলগতভাবে ভারত বিরোধিতার নীতি গ্রহণ করেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিদিনই ভারতের সমালোচনা করেছেন। ভারতের বিভিন্ন নীতির বিপক্ষে বক্তব্য রাখছেন। 

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, দলগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের মহাসচিব ভারত বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তবে ভারত বিরোধী অবস্থান করেই দলটি ক্ষান্ত হয়নি। দলের ভিতরে এখন মার্কিন বিরোধী প্রবণতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি এবং কৌশলের সমালোচনা করার কৌশলও বিএনপি গ্রহণ করেছে। 

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলেছেন, তারা দলগত ভাবে এখন মার্কিন বিরোধিতা করবেন না। বিএনপির কিছু নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করবেন, মার্কিন নীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখবেন এবং এই সমস্ত বক্তব্য দিয়ে জনমত যাচাইয়ের চেষ্টা করবেন। 

উল্লেখ্য, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিএনপির যে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন তাতে তারা বলছে, ভারতের কারণেই প্রভাবিত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের ব্যাপারে নীরব অবস্থান গ্রহণ করেছিল। তবে বিএনপির কোনো কোনো নেতার দাবি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে বিরোধিতার নামে এক ধরনের অভিনয় করেছে। বিএনপিকে বোকা বানিয়েছে। 

বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ জানে যে বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে সেই নির্বাচনে তাদের পক্ষে জয়লাভ করা কঠিন হবে। আর এ কারণে বিএনপি যেন নির্বাচন থেকে দূরে থাকে থাকে এজন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভিনয় করছে। 

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির নেতা এবং সাবেক আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি সরাসরি ভাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন যে, পিটার ডি হাস ভারতের এজেন্ট হয়ে বিএনপির সাথে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনয় এত ভাল ছিল যে বিএনপির নেতারা নাকি সেটা বুঝতে পারেননি। তাঁর এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে বিএনপি থেকে কোন প্রতিবাদ করা হয়নি। 

বিএনপির আরেকজন নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ডোনাল্ড লু’র বাংলাদেশ সফর নিয়ে কোন কিছু যায় আসে না। বিএনপির একদা চীন পন্থী নেতা নজরুল ইসলাম খানও ডোনাল্ড লু’র বাংলাদেশ সফর নিয়ে বিএনপির কোনো আগ্রহ নেই বলে মন্তব্য করেছেন। 

বিএনপির নীতি নির্ধারক মহল মনে করছেন, নির্বাচনের আগে বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের পর ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এককাট্টা হয়ে যায়। ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ জড়িত রয়েছে। আর এই স্বার্থের কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কথা মতো সব কিছু করছে। এ বারের ডোনাল্ড লু’র সফর সেই ইঙ্গিত দেয় বলেও বিএনপির নেতারা স্বীকার করেছেন।

প্রশ্ন উঠেছে যে, এই বিশ্বায়নের যুগে বিএনপি যদি ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুটি প্রভাবশালী দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাহলে এই দলটি কীভাবে অস্তিত্ব রক্ষা করবে। বিএনপির নেতারা বলছেন, তারা বাংলাদেশের শক্তিতে বিশ্বাসী। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদীতে বিশ্বাসী। তবে বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন যে, বিএনপি নেতাদের এই ভারত বিরোধী এবং মার্কিন বিরোধী অবস্থানের সঙ্গে দলের অনেক নেতাই একমত নন। বিশেষ করে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান মনে করেন যে, ভারতের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধিতায় জড়ানো দলের জন্যই ক্ষতিকর হবে। তবে ড. মঈন খান চেয়ে এখন দলে ভেতর যারা ভারত বিরোধী তারাই ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছেন।

বিএনপি   ভারত বিরোধী   মার্কিন বিরোধী   মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন