ইনসাইড থট

কোভিড- ১৯: বাংলাদেশ এবং এর গবেষণা উদ্যোগসমূহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ১৮ অক্টোবর, ২০২০


Thumbnail

সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে বসে প্রতিদিন আমি কয়েকটি বাংলাদেশি অনলাইন সংবাদপত্র পড়ি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও মন্ত্রীর ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে কোভিড-১৯ অ্যান্টিবডি টেস্টের গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশের পরে বিভিন্নজনের মধ্যে অস্বস্তি, অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক এবং কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি লক্ষ্য করেছি। কর্মকর্তারা যে ভীতসন্ত্রস্ত তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। অতীতের ব্যর্থতা, বোঝার ও দক্ষতার অভাব থাকায় তারা ভীতসন্ত্রস্ত, নাকি গ্রহনযোগ্যতা ও চাকরি হারানো এবং ভবিষ্যতে পদোন্নতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে এই ভেবে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন ?

ভারতে অ্যান্টিবডি টেস্টের গবেষণায় দেখা গেছে, কয়েকটি রাজ্যে ৫০ ভাগের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু সেখানে এই রিপোর্ট প্রকাশের সময় বাংলাদেশের মত এত শোরগোল হয়নি। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এবং ভারতীয় অর্থনীতির খারাপ অবস্থা সত্ত্বেও আমার এরকম কোনো বিতর্ক চোঁখে পড়েনি! এটিকে সরকারের ব্যর্থতা হিসাবে দেখা হয়নি! আমাদের জেনে রাখা দরকার অ্যান্টিবডি টেস্ট বিশ্বের অনেক দেশেই করা হয়েছে এবং এখনো করা হচ্ছে। আমার আগের লেখাগুলো পড়লে আপনি দেখবেন যে,  আমি বাংলাদেশে কোভিড- ১৯ পরিস্থিতির ব্যাপকতা জানতে বারবার অ্যান্টিবডি টেস্ট করার জন্য বলেছি।

গবেষণাটির কার্যকারিতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আমরা তর্ক-বিতর্ক ও ইতিবাচক আলোচনা করতে পারি। ভবিষ্যতে কীভাবে আমরা আরও ভাল গবেষণা চালাতে পারি সেটাই এই বিতর্ক এবং আলোচনার লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। তবে সর্বাগ্রে প্রত্যেকেরই বিজ্ঞানীদের আন্তরিক উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে তাদের উৎসাহিত করা এবং এই সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় গবেষণায় বিনিয়োগ করার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানানো উচিৎ। বিভিন্ন ব্যক্তি বা মিডিয়া ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে গবেষণাটি ব্যাখ্যা করতে পারেন। আমরা এটা বন্ধ করতে পারব না। কিন্তু অযথা একে অন্যকে দোষারোপ করার সংস্কৃতি পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করবে এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে সামনে এনে নিজেদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করবে।

অ্যান্টিবডি কি এবং অ্যান্টিবডি টেস্টের প্রয়োজন কেন সে প্রসঙ্গে শুরুতে কিছু কথা বলে নেই

কোভিড-১৯ সংক্রমণ বা অন্য কোনো সংক্রমণের পরে প্রায় সমস্ত সুস্থ-সবল ব্যক্তির শরীরে ঐ রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হয়। অ্যান্টিবডি সশস্ত্র বাহিনীর মত আক্রমণকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং তাকে মেরে ফেলে আমাদের দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। কিছু মানুষের অ্যান্টিবডি তাদের অসুস্থতা শুরুর প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সনাক্ত করা যায়। কোভিড-১৯ সংক্রমণের বেলায় আইজিএম এবং আইজিজি অ্যান্টিবডিগুলি অসুস্থতা শুরুর ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে সিরামের মধ্যে প্রায় একসাথে তৈরি হতে পারে। সংক্রমণের পরে আমাদের দেহে কতক্ষণ আইজিএম এবং আইজিজি অ্যান্টিবডিগুলি সনাক্তযোগ্য থাকে তা জানা যায়নি।

সংক্রমণের পর কিছু মানুষের শরীরে আইজিজি এবং আইজিএম এর উপস্থিতি নাও সনাক্ত করা যেতে পারে। সুতরাং, নেগেটিভ রিপোর্ট এবং সনাক্তযোগ্য আইজিএম ও আইজিজি অ্যান্টিবডির অনুপস্থিতি তাদের পূর্বে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনাকে বাতিল করে না। কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে রক্তে আইজিএ এবং অন্যান্য অ্যান্টিবডির প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমরা কমই জানি। কারো শরীরে নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডিও তৈরি হতে পারে। তবে অ্যান্টিবডি সনাক্তকরণের জন্য দেশে অবশ্যই একটি ৪ স্তরের (সর্বোচ্চ স্তর) বায়োসফটি পরীক্ষাগার থাকতে হবে।

নির্দিষ্ট রিএজেন্ট এবং ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার সাহায্যে আমরা আমাদের দেহে আইজিজি, আইজিএম এবং আইজিএর মত ভিন্ন ভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবডির উপস্থিতি সনাক্ত করতে পারি। যদিও বিজ্ঞানীরা জানেন না যে, কোভিড-১৯ এর বেলায় কত সময় পর্যন্ত অ্যান্টিবডি সনাক্ত করা যায়, তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সংক্রমণ নির্ণয়ের জন্য আইজিএম সবচেয়ে কার্যকর এবং এটি সাধারণত সংক্রমণের পরে কয়েক সপ্তাহ থেকে মাস পর্যন্ত সনাক্ত করা যায়। আইজিজি কয়েক মাস বা বছর পর্যন্ত সনাক্তযোগ্য হতে পারে। আইজিএ শ্লেষ্মা প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং রক্ত ছাড়াও লালা জাতীয় শ্লেষ্মা নিঃসরণ থেকে এটি সনাক্ত করা যেতে পারে, যদিও কোভিড-১৯ সংক্রমণে এর ভূমিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। এ পরীক্ষাগুলো মাঠপর্যায়ে বা পরীক্ষাগারে দ্রুত (৩০ মিনিটেরও কম সময়ে) করা যায়।

সাধারণ জনগণের মধ্যে করোনাভাইরাসের বিস্তার বুঝতে এবং সংক্রমণের উচ্চঝুঁকিতে থাকা গোষ্ঠীগুলো চিহ্নিত করতে অ্যান্টিবডি টেস্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কারো মধ্যে সংক্রমণের কোনো লক্ষণ না থাকলেও অ্যান্টিবডি পরীক্ষার সাহায্যে সনাক্ত করা যায় সে পুর্বে সংক্রমিত হয়েছিল কিনা। অন্যদিকে পিসিআর বা অ্যান্টিজেন সনাক্তকরণ পরীক্ষা দ্বারা তীব্রভাবে সংক্রমিত ব্যক্তিদের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি সনাক্ত করা যায়। অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির শরীরে প্রবেশকৃত ভাইরাসের বিরুদ্ধে জীবদেহের প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া পরিমাপ করা যায়। এটি পূর্বে কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত বা সুস্থ হয়ে ওঠা রোগী সনাক্ত করতে পরোক্ষভাবে সহায়তা করে।  

কোভিড- ১৯ মহামারী পর্যবেক্ষণ এবং এটি প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে অ্যান্টিবডি টেস্ট খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পূর্বে সংক্রমিত জনসংখ্যার অনুপাত নিরূপণ করতে এবং নিরাপদ ও সম্ভাব্য সুরক্ষিত জনসংখ্যা সম্পর্কে তথ্য পেতে এ পরীক্ষাগুলো সহায়তা করে। কোন কমিউনিটি সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছে এবং সাময়িকভাবে কাদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কম তা অ্যান্টিবডি টেস্টের জনতাত্ত্বিক ও ভৌগোলিক ফলাফলের চিত্র দেখে বের করা যায়। কিছু ক্ষেত্রে, অ্যান্টিবডি টেস্টের ফলাফল সম্ভাব্য কোভিড- ১৯ এ সংক্রমিতদের সনাক্ত করতে এবং কোভিড- ১৯ এ আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের সম্ভাব্য চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্লাজমা কারা দিতে পারবে তাদের খুঁজে পেরে সহায়তা করে।

বাংলাদেশে অ্যান্টিবডি টেস্ট সমীক্ষা প্রসঙ্গে ফিরে আসি

২১ মিলিয়ন জনসংখ্যা বিশিষ্ট ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকায় করোনার বিস্তার সম্পর্কে জানতে একটি সমীক্ষা চালানো হয় হয়। সমীক্ষাটি সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল। ইউএসএআইডি-এর সহযোগিতায় আইসিডিডিআর,বি ১৮ এপ্রিল থেকে ৫ জুলাইয়ের মধ্যে এই সমীক্ষা চালিয়েছে। সমীক্ষায় রাজধানীর ৩,২২৭ টি পরিবারের ৫৫৩ জন উপসর্গযুক্ত এবং ৮১৭ জন উপসর্গবিহীন মানুষের আইজিজি এবং আইজিএম পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া বস্তিতে থাকা ৯৬০ পরিবারের ৯৬ জন উপসর্গযুক্ত ও ৩১৪ জন উপসর্গবিহীন মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরের প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের  অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে এবং বস্তির বাসিন্দাদের মধ্যে এই হার ৭৪.৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

তাদের অন্য একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, কোভিড -১৯ সংক্রমিতদের মধ্যে ষাটোর্ধ্বদের সংখ্যা শতকরা ২৪ ভাগ এবং ১৫-১৯ বছর বয়সীদের সংখ্যা শতকরা ১৬ ভাগ। সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, করোনা টেস্টে পজিটিভ আসা লোকদের মধ্যে শতকরা ৮২ জনের কোনো উপসসর্গ ছিল না এবং তারা সংক্রমণের ব্যাপারে সতর্কও ছিল না। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে কোভিড-১৯ বাংলাদেশে আসে এবং মার্চের মধ্যে এই ভাইরাসটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। জিনোমিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে,  ভারত, সৌদি আরব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কোভিড- ১৯ সংক্রমিতরা বাংলাদেশে এসেছে।

হ্যাঁ, আমরা গবেষণায় ব্যবহৃত নমুনার আকার, এর বাছাই প্রক্রিয়া, পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা এবং প্রাপ্ত ফলাফলের সরলীকরণ নিয়ে বিতর্ক করতে পারি। আমরা এটিও বলতে পারি যে, সমীক্ষাটি এখনো বিশেষজ্ঞ দ্বারা পর্যালোচনা করা হয়নি। অথবা ফলাফল ঘোষণার আগে সরকারি সব রীতিনীতি অনুসরণ করা হয়নি। কোভিড-১৯ একটি জরুরি অবস্থা। এ রোগটি সম্পর্কে অনেক কিছুই আমাদের অজানা। এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের একসাথে কাজ করা প্রয়োজন। তাই, সর্বদা এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের সমালোচনা করা উচিৎ নয়। বরং আমাদের গর্ব করা উচিৎ এই কথা ভেবে যে অনেক সীমাবদ্ধতা ও অসম্পূর্ণতা থাকা সত্ত্বেও আমরা বাংলাদেশে অ্যান্টিবডি সমীক্ষা চালিয়েছি।

গবেষণাটি আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করতে এবং আরো ভালোভাবে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে উদ্বুদ্ধ করতে সহায়তা করবে। হ্যাঁ, গবেষণালব্ধ ফলাফলকে পরিবর্তন করতে নয়, বরং সীমাবদ্ধতা ও বিভ্রান্তি এড়াতে ভবিষ্যতে আমাদেরকে গবেষণার সমস্ত নিয়ম-কানুন অনুসরণ করতে হবে। পরীক্ষিত মানুষের সংক্রমণের হার (২৩ শতাংশ থেকে কমে এখন ১০-১২ শতাংশের মধ্যে উঠানামা করছে) লক্ষ্য করে আমাদের সকলকে অবশ্যই একমত হতে হবে, এখনো বাংলাদেশে ব্যাপকহারে সংক্রমণ চলছে। ঢাকায় আক্রান্ত জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ যদি তাদের সংক্রমণ সম্পর্কে অবগত না থাকে এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিধিবিধান অনুসরণ না করে, তবে এটা কল্পনা করা খুবই সহজ যে, এই রোগের ব্যাপক সংক্রমণ কেন হয়।

এ গবেষণাটি এপ্রিল-জুলাই মাসে করা হয়েছিল এবং সেই সময়ে অনেকে সংক্রমিত হলেও তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি বা সনাক্তযোগ্য অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়নি। উপরের বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমরা এ সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের চেয়ে সংক্রমিতের হার অনেক বেশি ছিল এবং এখন এ সংখ্যা আরো বেড়েছে এবং দিন দিন বাড়তেই আছে। এতক্ষণে বাংলাদেশ, বিশেষ করে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা সম্ভবত হার্ড ইমিউনিটির পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভাগ্যক্রমে, এ পর্যায়ে আসতে সংক্রমিত ও মৃত্যুবরণ করা মানুষের সংখ্যা অনেক কম। সংক্রমিতদের মধ্যে কেবল শতকরা ১ ভাগ লোককে হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন পড়েছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর মতে, কোভিড -১৯ এর কারণে বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে সৃষ্ট মারত্মক অর্থনৈতিক মন্দার তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি ভাল পর্যায়ে আছে এবং ইতিবাচক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখাচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব কিভাবে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জীবন রক্ষা ও জীবিকার নিশ্চয়তা বিধানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েও শক্ত হাতে দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে, তা নিয়ে হয়তো একদিন গবেষক এবং ঐতিহাসিকরা গবেষণা করে লিখবেন। গবেষকরা হয়তো কম মৃত্যু এবং দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কারণগুলোও অনুসন্ধান করবেন। ধনী দেশগুলোসহ অনেক দেশই বিশাল সমস্যার সম্মুখীন এবং কেউই এখনো জীবন ও জীবিকা রক্ষার জন্য সঠিক সমাধান নিয়ে আসতে পারেনি। এই গবেষণা অনেক দেশকে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব ও কর্মপন্থা ঠিক করতে  সহায়তা করবে। তবুও, আমি জোর দিয়ে বলব যে, আসুন আমরা আত্মতুষ্টিতে না ভুগে গণজমায়েত এড়িয়ে চলি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি, বাইরে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করি এবং সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে বারবার হাত ধুই। এটি এখনকার জন্য এবং ভবিষ্যতে একটি নতুন নিয়ম হিসাবে গ্রহণ করা উচিত। ভবিষ্যতের মহামারী মোকাবেলায় বাংলাদেশকে অবশ্যই প্রাথমিক সনাক্তকরণ, কন্টাক্ট ট্রেসিং, এবং আইসোলেশন সুবিধা প্রস্তুত রাখতে হবে এবং সুপরিকল্পিত জরুরি চিকিৎসা সেবা সুবিধা তৈরি করতে হবে।

অন্য যে বিষয়টি এই গবেষণাকে বিতর্কিত করেছে তা হল, ভাইরাসটির বাংলাদেশে আসা এবং কমিউনিটির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে সরকার কোনো মিথ্যাচার করেছে কিনা। সমীক্ষায় দেখা গেছে, এটি বাংলাদেশে মার্চে নয়, ফেব্রুয়ারির দিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। কেউ কেউ এই তথ্যের নেতিবাক ব্যাখ্যা করেছেন। আমি তা দেখে হতবাক।  ফ্রান্সের সরকার গত ২৪ জানুয়ারি, ২০২০ সালে প্রথম সেদেশে করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু সেখানকার একটি হাসপাতালে এক নিউমোনিয়া রোগীর পুরনো নমুনা জেনেটিক পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ঐ লোক ফ্রান্সের সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে করোনা রোগী সনাক্তের ঘোষণা দেয়ারও এক মাস আগে ২৭ ডিসেম্বর করোনায় আক্রান্ত হন।

ফ্রান্সের জনগণ কি মিথ্যাচারের জন্য সে দেশের সরকারকে দোষ দিয়েছে? না, তারা তা করেনি। বরং এটিকে বাস্তবতা এবং সত্য হিসাবে গ্রহণ করেছে। কোভিড- ১৯ নতুন একটি রোগ। শুরুতে এটি সম্পর্কে আমরা বেশি কিছু জানতাম না। আমরা এখন এটি সম্পর্কে আগের চেয়ে অনেক কিছু জানি, তারপরও এখনো বেশিরভাগ তথ্যই অজানা রয়ে গেছে। যেমন একবার সংক্রমিত হওয়ার পর কারো শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হলে তা কতদিন টিকে থাকে? কেউ কি পুনরায় সংক্রমিত হতে পারে? আমরা এখনও পর্যন্ত বিশ্বে পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার তিনটি ঘটনা সম্পর্কে জানি- একটি হংকং- এ, একটি নেদারল্যান্ডসে এবং একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। আমাদের আরও জানতে, সজাগ থাকতে, আরো ভালো কর্মপন্থা প্রণয়ন করতে এবং অতীতের ভুলগুলো থেকে শিখে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে গবেষণা ও বিজ্ঞান সহায়তা করবে।

গবেষণা এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কিছু বলি

মার্কিন জাতীয় বিজ্ঞান ফাউন্ডেশন (এনএসএফ) থেকে প্রকাশিত এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত তিন দশকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশে চীন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়কে ছাড়িয়ে তৃতীয় থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির পাশাপাশি বিজ্ঞানকে বর্তমান সরকার বেশি গুরুত্ব দেয়ায় এই অগ্রগতি হয়েছে। চীন সরকার বিজ্ঞানকে এগিয়ে নেয়ার জন্য বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। এর মধ্যে একটি হলো জার্নালে বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশ করা বিজ্ঞানীদের অর্থ প্রদান। এটি বৈজ্ঞানিক প্রকাশনাগুলোর সংখ্যা ৩০০০% বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করেছে এবং ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরো বাড়বে। কেন চীন আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি এবং শীঘ্রই প্রথম হয়ে উঠতে পারে তা ভেবে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

গবেষণা ও প্রকাশনায় আমরা কোথায় আছি তা যাচাই করে দেখা প্রয়োজন। জেনেভাতে আমাদের প্রতিবেশীর নাতি ঘরে বসে পড়াশুনা করে এবং মানূষের সাক্ষাৎকার নিয়ে আলঝেইমার রোগ এবং এ রোগাক্রান্তদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে একটি অসাধারণ লেখা লিখেছিল তার মাধ্যমিক পড়াশুনার অংশ হিসেবে। এটি দেখে আমি খুব বিস্মিত হয়েছিলাম।  দেশ ও সমাজের উন্নয়নের জন্য গবেষণা প্রয়োজনীয় এবং জরুরী হওয়ায় অনেক দেশেই তা স্কুলের পাঠ্যক্রমের মধ্যে সন্নিবেশ করা হয়েছে। অনেক দিন আগে, যখন আমি স্কুলে বা মেডিকেল কলেজে ছিলাম, তখন আমাদের গবেষণার সুযোগ ছিল না। আমরা বেশিরভাগই আমাদের নিজস্ব উদ্যোগে গবেষণার সক্ষমতা অর্জন করি।

নিজের সমস্ত সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে নিয়ে আমি জানতে চাই, আজ বাংলাদেশে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্যক্রমের মধ্যে গবেষণার স্থান কোথায়? বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে এফিয়ে যাচ্ছে।  বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তাৎপর্যপূর্ণ। তবে আমরা যদি আরো দ্রুততার সাথে এগিয়ে যেতে চাই, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার একেবারে শুরুতে গবেষণাকে অন্তর্ভুক্ত করে এর পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। আমাদের গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তোলা দরকার। আমাদের গবেষণার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা উচিত এবং গবেষণার ফলাফল নেতিবাচক হতে পারে দেখে বিজ্ঞানকে ভয় পাওয়া উচিত না। আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে শিখতে হবে, সততার সাথে এর প্রতিফলন ঘটাতে হবে এবং সত্যকে সাহসিকতার সাথে গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে হবে। আজ বাংলাদেশের তরুণদের জন্য গবেষণার দ্বার অনেকটাই উন্মুক্ত। আমাদের অবশ্যই তাদের সাথে থাকতে হবে, তাদেরকে গবেষণার মাধ্যমে পারিপার্শ্বিক অবস্থা আরো ভালভাবে বুঝতে এবং তাদের মাঝে সত্যের মুখোমুখি হওয়ার এবং দেশ গড়ার সাহস গড়ে তুলতে সহায়তা করতে হবে। আমাদের বিজ্ঞানীদের সীমাবদ্ধতার জন্য তাদের নিরুৎসাহিত করা উচিত নয়, বরং তাদের ছোট ছোট সাফল্যেও আমাদের গর্ব করা উচিৎ।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মা জীবনের প্রথম এবং বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক


Thumbnail

একটা গল্প দিয়ে শুরু করছি। এক প্রেমিকা তার প্রেমিককে পরীক্ষা করার জন্য বলল, তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে চাই আমি! প্রেমিক বলল, কী পরীক্ষা নেবে? সব পরীক্ষার জন্য আমি প্রস্তুত। প্রেমিকা বলল, তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ডটা নিয়ে আসো। প্রেমে অন্ধ ছেলেটি ছুটল মায়ের কাছে! মাকে হত্যা করে তার হৃৎপিন্ড নিয়ে ছুটল প্রেমিকার কাছে, ভালোবাসার পরীক্ষায় পাস করতে। পথে হঠাৎ আছড়ে পড়ল, আর হাত থেকে ফসকে গেল মায়ের হৃৎপিন্ডটা। হাতে তুলে নিতেই হৃৎপিন্ড থেকে আওয়াজ এলো, “ব্যথা পেলি খোকা? তুই তো খুব পিপাসার্ত, ক্লান্ত। আমি যে দাঁড়াতে পারছি না, তোকে কীভাবে পানি পান করাব বাবা”। এরই নাম মা।

আজ বিশ্ব ‘মা’ দিবস। দিনটি কীভাবে, কবে...

কোথা থেকে এলো, কেন পালন করা হয়, এর গুরুত্ব কী, তা হয়তো অনেকের অজানা। দিনটি পালনে রয়েছে এক ইতিহাস। ১৯০৭ সালের ১২ মে আমেরিকার ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফটন শহরে প্রথমবার ‘মাদার্স ডে’ বা মা দিবস পালিত হয়। ভার্জিনিয়ায় অ্যান নামে এক সমাজকর্মী ছিলেন। তিনি নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতেন এবং ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন। ছোট ছোট ওয়ার্ক ক্লাব বানিয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নিতে চেষ্টা এবং তাদের স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করতেন। অ্যানের একটি মেয়ে ছিল। একদিন মেয়ের সামনেই প্রার্থনা করেছিলেন, “যেন কেউ একটা দিন মায়েদের জন্য উৎসর্গ করেন”। মায়ের সেই প্রার্থনা হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায় তার মেয়েটির। অ্যানের মৃত্যুর পর সেই দিনটিকে সারা বিশ্বের প্রতিটি মায়ের উদ্দেশে উৎসর্গ করেন তার মেয়ে। আর এভাবেই মায়েদের প্রতি সম্মানে পালিত হয়ে আসছে মা দিবস। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে ‘মা দিবস’ ঘোষণা করেন। এর পর থেকে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়ে থাকে।

‘মা’ কথাটি সবচেয়ে ছোট, অথচ সবচেয়ে মধুর একটি শব্দ। মাত্র এক অক্ষরে শব্দটি হলেও এর ব্যাপকতা সাগরের চেয়েও বিশাল। মায়ের মতো এত মধুর আর আবেগী শব্দ পৃথিবীতে আর একটিও নেই। যে শব্দটিতে জড়িয়ে আছে স্নেহ-মায়া-মমতা-ভালোবাসা। ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, প্রতিটি সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা ও প্রেম স্বার্থহীন, সীমাহীন। সন্তানের জন্য মা বরাবরই নিঃস্বার্থ একজন মানুষ। মা হচ্ছেন মমতা-নিরাপত্তা-অস্তিত্ব, নিশ্চয়তা ও আশ্রয়। মা সন্তানের অভিভাবক, পরিচালক, ফিলোসফার, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও বড় বন্ধু। জীবনে সবচেয়ে বড় শ্রমজীবী হচ্ছেন মা, যার কর্মবিরতি নাই, মজুরি নাই, দাবি নাই, শর্ত নাই, স্বার্থ নাই, তিনি শুধু শ্রম দিয়েই যাচ্ছেন। তারই নাম মা। নিজের জীবনের চেয়েও সন্তানকে ভালোবাসেন, সন্তানের কথা ভাবেন। সন্তানের সামান্য ব্যথাতে ব্যথিত হন। মা সব রোগের চিকিৎসক। মায়ের কাছে সবকিছু চাওয়া যায়। ‘মা’ই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর কাছে সবকিছু চাইলেই পাওয়া যায়। মা সবচেয়ে সেরা রাঁধুনি। মায়ের হাতের রান্না পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার। মা হলো সন্তানের প্রথম বন্ধু, সেরা বন্ধু, চিরকালের বন্ধু। মায়ের মতো পরম বন্ধু এ জীবনে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আরও পড়ুন: আজ বিশ্ব মা দিবস

গর্ভধারণের মুহূর্ত থেকেই সন্তানের সঙ্গে একজন মায়ের নিবিড় বন্ধন তৈরি হয়। বন্ধনটি আরও গভীর হয় যখন তিনি সন্তানকে তাঁর জঠরে মধ্যে বহন, উষ্ণতা, পুষ্টি এবং সুরক্ষা প্রদান করতে থাকেন। গর্ভাবস্থায় একজন মা তাঁর অনাগত সন্তানের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন, যা তুলনাহীন। এই গভীরতা অন্য কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। এরপর শিশুটি যখন ভূমিষ্ট হয়ে পৃথিবীতে আসে, তখন মা হয়ে যান তার প্রথম এবং সাবর্ক্ষণিক পরিচর্যাকারী। সন্তানের জন্য অগণিত রাতজাগা, সারাক্ষণ যত্ন নেওয়া, খাওয়ানো এবং আদরের আলিঙ্গনের মাধ্যমে তিনি সীমাহীন ধৈর্য প্রদর্শন করেন।

প্রতিটি মানুষের পৃথিবীতে আসা ও বেড়ে ওঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেন একজন মা। এজন্য শুধু মানুষ নয়, পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীই তার মায়ের কাছে ঋণী। এই ঋণ শোধ করার কোনো বিকল্প নাই। মা হলেন এমন একজন মানুষ, যিনি অন্য সবার স্থান নিতে পারেন কিন্তু তাঁর স্থান অন্য কেউ নিতে পারে না। চাওয়া-পাওয়ার এই পৃথিবীতে মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না।

মাকে নিয়ে কিছু অসাধারণ উক্তি: মাকে নিয়ে পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিরা হাজারো অসাধারণ উক্তি করেছেন।

(১) মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।”

(২) রবীন্দ্রনাথের গানে, “মধুর আমার মায়ের হাসি, চাঁদের মুখে ঝরে ..., সে যে জড়িয়ে আছে ছড়িয়ে আছে সন্ধ্যা রাতের তারায়, সেই যে আমার মা, বিশ্বভুবন মাঝে তাহার নেইকো তুলনা..., প্রদীপ হয়ে মোর শিয়রে কে জেগে রয়

দুঃখের ঘরে, সেই যে আমার মা সেই যে আমার মা। বিশ্বভুবন মাঝে তাহার নেইকো তুলনা, সেই যে আমার মা”।

(৩) আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, “যার মা আছে, সে কখনোই গরিব নয়”।

(৪) বিখ্যাত ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাডোনা বলেছেন, “আমার মা মনে করেন আমিই সেরা, আর মা মনে করেন বলেই আমি সেরা হয়ে গড়ে উঠেছি”।

(৫) জর্জ ওয়াশিংটন বলেছেন, “আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী নারী হলেন আমার মা”। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। আমার জীবনের সব অর্জন তাঁরই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শিক্ষার ফল।

(৬) মাইকেল জ্যাকসন বলেছেন, “আমার মা বিস্ময়কর, আর আমার কাছে উৎকৃষ্টের আরেক নাম”।

(৭) কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, “মা হলো পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নেই বিনা সুদে অকৃত্রিম ভালোবাসা”।

(৮) কবি কাদের নেওয়াজ বলেছেন, ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি, কিন্তু জেনো ভাই, ইহার চেয়ে নামটি মধুর, তিন ভুবনে নাই...”।

(৯) কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, “যেখানেতে দেখি যাহা, মা এর মত আহা, একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই, মায়ের মতন এত আদর সোহাগ সেতো, আর কোনোখানে কেহ পাইবে না ভাই”।

(১০) শিল্পী “ফকির আলমগীর এর ভাষায়, “মায়ের এক ধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম, পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না, এমন দরদি ভবে কেউ হবে না আমার মা গো”।

ইসলামে মায়ের সম্মান ও অধিকার : ইসলাম মাকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম করা হয়েছে মাকে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। তাই জান্নাত পাওয়ার আকাক্সক্ষাকারী কোনো সন্তানই মাকে এড়িয়ে যেতে পারে না।

আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “তোমার পরওয়ারদেগার আদেশ করিয়াছেন, তোমরা তাহাকে ব্যতীত অন্য কাহারও এবাদত করিও না এবং তুমি মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করিও, যদি তোমার সম্মুখে তাঁহাদের একজন অথবা উভয়ে বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তাহাদিগকে উহ পর্যন্তও বলিও না, আর তাঁহাদিগকে ধমক দিও না এবং তাঁহাদের সঙ্গে খুব আদবের সহিত কথা বলিও। এবং তাঁহাদের সম্মুখে করুণভাবে বিনয়ের সহিত নত থাকিবে, আর এইরূপ দোয়া করিতে থাকিবে, হে আমার পরওয়ারদেগার! তাঁহাদের উভয়ের প্রতি দয়া করুন, যেরূপ তাহারা আমাকে লালন-পালন করিয়াছেন শৈশবকালে” (সুরা বনি ইসরাইল, ২৩-২৪)।

আল্লাহ আরও বলেন, “আমি মানুষকে তাহার মাতা-পিতা সম্বন্ধে নির্দেশ দিয়াছি, তাহার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করিয়া তাহাকে গর্ভে ধারণ করিয়াছে এবং তাহার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে, যেন তুমি শোকর কর আমার” (সুরা লোকমান-১৪)।

অন্য এক আয়াতে আছে, “আর তোমরা আল্লাহতায়ালারই এবাদত কর, এবং তাঁহার সহিত কাহাকেও শরিক করিও না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করিও” (সুরা-নিসা-৩৬)। পিতা-মাতার অধিকার সম্পর্কে হাদিসেও বহু জায়গায় বর্ণনা এসেছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া অবশ্যই কবুল হয়; এতে কোনো সন্দেহ নেই। এক, মা-বাবার দোয়া তাঁর সন্তানের জন্য; দুই, মুসাফিরের দোয়া ও তিন, অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া অত্যাচারীর বিরুদ্ধে” (আবু দাউদ)।

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “মা-বাবাই হলো তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম” (ইবনে মাজাহ-মিশকাত)।

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, “যখন কোনো অনুগত সন্তান নিজের মা-বাবার দিকে অনুগ্রহের নজরে দেখে, আল্লাহ তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সাওয়াব দান করেন” (বায়হাকি-মিশকাত)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রসুল! কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি হকদার? তিনি বললেন তোমার মা; সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা; সে আবারও বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে পুনরায় বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা (বুখারি ও মুসলিম)।

একদিন হজরত মুয়াবিয়া ইবনে জাহিমা আসসালামি (রা.) রসুল (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বললেন, ‘ইয়া রসুলাল্লাহ! আমি জিহাদ করতে ইচ্ছুক। এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী? জবাবে রসুল (সা.) বললেন, তোমার মা আছেন? তিনি বললেন, আছেন। রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকো, কেননা তার পায়ের নিচেই জান্নাত।’

উপরোক্ত আয়াতগুলোতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আল্লাহর পরেই মা-বাবার অধিকার।

রসুল (সা.)-এর জমানায় বিখ্যাত এক আশেকে রসুল ওয়াইস করনি (রা.) প্রিয় নবীজির কাছে এই মর্মে খবর পাঠালেন, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ (সা.), আপনার সঙ্গে আমার দেখা করতে মন চায়; কিন্তু আমার মা অসুস্থ। এখন আমি কী করতে পারি?’ নবীজি (সা.) উত্তর পাঠালেন, ‘আমার কাছে আসতে হবে না। আমার সাক্ষাতের চেয়ে তোমার মায়ের খেদমত করা বেশি জরুরি ও বেশি ফজিলতের কাজ।’

মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব : সন্তানের সব সময় মনে রাখা উচিত, মায়ের ত্যাগের কারণেই সে আজ সে এই সুন্দর পৃথিবীতে এসেছে। যদি সে মাকে ভুলে যায়, কষ্ট দেয় বা অবহেলা করে- তাহলে সবই মিছে। সন্তানের পর্বত সমান সফলতা তখন মূল্যহীন। কিন্তু অতি দুঃখের সঙ্গে লিখতে হচ্ছে, সেই মহান মায়ের প্রতি অনেক সন্তান আজকাল উদাসীন, অনেকে বেপরোয়া। এমনও শোনা যায়, সন্তান তার মাকে প্রহার করছেন, ঘর থেকে বের করে দিচ্ছেন, জঙ্গলে মাকে ফেলে এসেছেন, নিজে সুন্দর ঘরবাড়িতে বাস করে মাকে রেখেছেন রান্নাঘরে।

এমনও দেখা যায়, পিতা-মাতাকে সন্তান ঠিকমতো ভরণপোষণ দিচ্ছে না। তারা বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগারে পাঠিয়ে দিচ্ছে। অথচ স্ত্রী-সংসার নিয়ে নিজেরা বেশ আরাম-আয়েশে থাকছে। তাদের পরিবারে বাবা-মা যেন বোঝা। যে সন্তানকে আদর যত্ন দিয়ে মানুষ করলেন, সেই সন্তান কীভাবে তার মায়ের অবদানকে ভুলে যায়? নাড়িছেঁড়া ধন একজন সন্তানের কাছ থেকে কোনোভাবেই এসব কাম্য নয়। এতে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে; জমিন অভিশাপ দেয়। নিশ্চয় কঠিন কেয়ামতের দিন সেই সন্তানকে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কী উপায় হবে সেদিন?

মা শ্রদ্ধার আধার, স্নেহের কান্ডারি। সব ধর্মেই মা আশীর্বাদস্বরূপ। তাই সন্তানের সর্ব প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে মাকে শ্রদ্ধা করা, অন্তরের শ্রেষ্ঠতম আসনে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করা, ভক্তি ও শ্রদ্ধায় মাকে অভিষিক্ত করা। সন্তানের কাছে মা-ই হলেন জগতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তাই মায়ের সঙ্গে সর্বদা সম্মানজনক ও সহযোগিতামূলক ব্যবহার করতে হবে। তাঁর সঙ্গে কখনো কর্কশ ভাষায় কথা বলা উচিত নয়। মায়ের অবাধ্যতা অমার্জনীয় অপরাধ। মায়ের আদেশ পালন করা এবং তাঁর নির্দেশ মেনে চলা সন্তানের পবিত্র কর্তব্য। মায়ের ঋণ কোনো দিন কখনো কোনোভাবেই শোধ করা যাবে না।

পৃথিবীর সবচেয়ে আপন হলো মা। তাই আসুন আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, আমরা আমাদের কোনো আচরণে যেন মাকে কষ্ট না দিই। যাদের মা এখনো বেঁচে আছেন, সেই মায়ের জন্য জীবনের সর্বোচ্চটাই করার চেষ্টা করি। মা-বাবার সেবা-যত্ন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত অর্জন করি। আল্লাহ আমাদের সবাইর পিতা-মাতাকে ভালো রাখুন। তাদের উত্তম সেবা করার তৌফিক দান করুন।

 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আপাদমস্তক একজন বাম আদর্শের ব্যক্তিত্বের উদহারণ ছিলেন রনো ভাই


Thumbnail

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা হায়দার আকবর খান রনো না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন। শতভাগ বাম আদর্শে বিশ্বাসী একজন ব্যক্তি ছিলেন তিনি। আদর্শগতভাবে আমরা কখনোই এক আদর্শে বিশ্বাসী ছিলাম না। কিন্তু সেই ৬০ এর দশক থেকে রণ ভাইকে আমি চিনি। এবং ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমার অগ্রজতুল্য।

বর্তমান যুগে বাম আদর্শের বা যেকোন আদর্শে শতভাগ বিশ্বাসী নির্ভেজাল লোক পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। সেখানে আপাদমস্তক একজন বাম আদর্শের ব্যক্তিত্বের উদহারণ ছিলেন রনো ভাই। তিনি যে লেখাগুলো লিখতেন তার অধিকাংশ লেখাগুলো আমি পড়েছি। তার বিশ্লেষণের ক্ষমতা, লেখার ধরণ প্রত্যেকটা জিনিসে বাম রাজনীতি এবং বাম আদর্শ ফুটে উঠতো। 

তিনি এমন একটি সময় আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন যখন বাংলাদেশে বাম দল কবরে যাওয়ার পথে। অথচ আমাদের দেশে এখনই বামদলের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কেননা, চরম ডানপন্থি দলগুলো অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য তারা চ্যালেঞ্জ। আবার ডান দলগুলোর মধ্যে যাদের মডারেট ডান বলা যায়, তারাও আজ শক্তিহীন। 

একমাত্র গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মধ্যম পন্থায় চলা আওয়ামী লীগ শক্তিশালী, আর মডারেট ডান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিএনপির মতো যে দলগুলো আছে তারাও আজ নেই বললেই চলে। এমন একটা ক্রান্তিকাল যখন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষ একটি রাজনৈতিক দলকে সামনে নানা যারা চরম বামপন্থী বা চরম ডানপন্থী হবে না। ঠিক সেই সময় একজন আদর্শবান রনো ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। রনোভাইদের মতো যারা সত্যিকার বাম আদর্শে বিশ্বাস করতেন এমন ব্যক্তি বাস্তব ক্ষেত্রে খুঁজে পাওয়া যায় না। রনো ভাই ছিলেন রাজনৈতিক লড়াকু সৈনিক এবং পদ পদবীর কোন লোভ তার মধ্যে ছিল না। সবসময় আত্ম প্রচার থেকে দূরে থাকতেন তিনি। এমন একজন ব্যক্তির চলে যাওয়া মানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন আদর্শবান বাম সৈনিকের চলে যাওয়া। 

যারা বাম আদর্শে বিশ্বাস করেন তাদেরকে আমি বলবো, আপনারা রনো ভাইয়ের বিকল্প হতে পারবেন না, কিন্তু সকলে আপনারা এক হয়ে, রনো ভাইয়ের মতো আদর্শিক হয়ে এখনই যদি বাম দলকে সংগঠিত না করেন তাহলে আওয়ামী লীগের বিকল্প হবে তালেবানরা। এখন আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আওয়ামী লীগকে কি তালেবানের সাথে যুদ্ধে নামাবেন নাকি দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য নিজ দায়িত্বে বাম দলকে সুসংগঠিত করবেন।


সিপিবি   হায়দার আকবর খান রনো  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

দেশের গণতন্ত্রকে অনুসরণ করবে অন্যরা


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চতুর্থ মেয়াদের ক্ষমতার চার মাস পার করে দিয়েছেন। অনেকের ভেতরে আলাপ-আলোচনা শোনা যায় যে, বিশেষ করে যারা বেতনভোগী বুদ্ধিজীবী, বাইরের অনেক পত্রপত্রিকায় যারা লেখালেখি করেন তারা একটি প্রশ্ন তোলেন যে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আসলে এ বিষয়টি নিয়ে খুব বস্তুনিষ্ঠ এবং নির্মোহভাবে কোনো আলাপ-আলোচনা হয় না। আমি এ বিষয়টির কিছু ভাবনা প্রকাশ করতে চাই।

কদিন আগে স্টিভেন লেফেস্কি এবং ডেনিয়েল জিব্লাটের লেখা ‘হাউ ডেমোক্রেসি ডাই’ বইটি পড়ছিলাম। বইটি আমেরিকা থেকে প্রকাশিত এবং দেশে দেশে বহুল পঠিত। ২০১৮ সালে প্রকাশিত বইটি বেস্ট সেলার হিসেবেও বিবেচিত হয়েছে। কীভাবে ধীরে ধীরে গণতন্ত্র ক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে এবং দেশে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, সে বিষয়ে বইটির ২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে।

প্রথমেই যেটি বলা হয়েছে তা হলো, সংবিধানকে গণতন্ত্রবিরোধী সরকার মানে না সংবিধানকে কীভাবে দূরে সরিয়ে দেশ শাসন করা যায়, সেই চেষ্টা করে।

বাংলাদেশে নিয়মিত নির্বাচন হওয়ার ফলে সংবিধানবহির্ভূত ঘটনা শেখ হাসিনার শাসনামলে ঘটেনি। বলা যায় ১৯৮১ সালের ১৭ মে যেদিন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব নেন, সেদিনই কিন্তু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সূচনা শুরু হয়। সেদিনকে বলা চলে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শুভ যাত্রার দিন’। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, এ গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য তিনি দেশে এসেছেন এবং সর্বশেষ তিনিই গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছেন। তার আশার পরেই কারফিউ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন সামরিক একনায়ক জিয়া।

আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচন বর্জন বিএনপি কফিনের শেষ পেরেক

গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য যেসব কাজ করা হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচনকে যে কোনো প্রকারে বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা অনেক কঠিন অবস্থার মধ্যে থেকেও নিয়মিত নির্বাচন করে চলেছেন। একনায়কতন্ত্র যে গণতন্ত্রকে দুর্বল করে তার কোনো চিহ্ন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার মধ্যে নেই। বিরোধী দল যত গণতন্ত্র ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করেছেন, শেখ হাসিনা ততই গণতন্ত্র সুরক্ষার চেষ্টা করেছেন।

বইটিতে বলা হয়েছে, এসব একনায়ক সরকার কিছু কিছু সংগঠনকে বন্ধ করে দেয়। যেমন—মানবাধিকার কমিশন। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এ মানবাধিকারকে আরও উজ্জীবিত করেছেন। স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন তারই সৃষ্টি। এ ছাড়া এসব একনায়ক রাজনৈতিক দলকে বন্ধ করে দেয়। কিন্তু দেখা যায় দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলকে বন্ধ করেননি। বরং রাজনৈতিক দলগুলোকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।

বইটিতে আরেকটি বিষয়ে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয় আর তা হচ্ছে, সরকার দুর্বল হতে থাকলে এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সামরিক গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করে এবং সংবিধানকে বাতিল করে অথবা স্থগিত করে দেশ চালায়। সে হিসেবে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটা খুব সুশৃঙ্খল, শক্তিশালী এবং পেশাদার সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেছেন। এখানে কোনো ধরনের নৈরাজ্য দেখা যাচ্ছে না, আজ পর্যন্ত ঘটেনি এবং ঘটারও সম্ভাবনা নেই। সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদ সংযোজন শেখ হাসিনার আরেকটি অসাধারণ উদ্যোগ। এটি গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। এর ফলে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে।

আরও পড়ুন: বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ

এ বইয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে তা হলো, যে কোনো নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে হৈচৈ হয়। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে আমাদের দেশে হৈচৈ হলেও সর্বশেষ নির্বাচনে এটি প্রমাণ হয় সবাই এ নির্বাচন গ্রহণ করে নিয়েছে। যারা বলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র দুর্বল হচ্ছে তাদের জন্য এ উদাহরণগুলো দিয়ে বলা যায় দুর্বল নয় বরং বাংলাদেশে দিন দিন গণতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছে। বলা যায়, দেশ এখন শুধু উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। নির্বাচনে দেওয়া ইশতেহারগুলো সরকার পূরণ করে চলেছে। মানুষের যে মৌলিক অধিকার তা পূরণ করা হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, পথশিশু এবং বস্তিবাসীর জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষকে করা হচ্ছে আত্মনির্ভর। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবার জন্য প্রতি ছয় হাজার জনগণের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তুলেছেন। আর এ কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ গত বছর ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত প্রচার করে তারাই মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা। তারাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার কোথায় কোথায় লঙ্ঘন হচ্ছে তার সূচক দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সূচক নেই। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে, গাজাতে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম অত্যাচার। আর এতে ইসরায়েলকে অস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে তারা। এ বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন তুঙ্গে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা এভাবেই প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু এবার যুক্তরাষ্ট্র এ আন্দোলনের বিষয়টি অন্যভাবে দমন করছে। শিক্ষার্থীদের অমানবিক কায়দায় নিপীড়ন করা হচ্ছে।

আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ এবং র‌্যাবের প্রতি আমার একটি আবেদন থাকবে, তারা যেন আন্দোলন দমনে যুক্তরাষ্ট্রের এ স্টাইল অনুসরণ না করে। কেননা তাদের এ স্টাইল যদি আমরা ফলো করি তাহলে আমাদের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাবে। সুতরাং আমরা যারা সাধারণ জনগণ, আমরা আপনাদের প্রতি অত্যন্ত বিশ্বাসী এবং আপনাদের কাছে শ্রদ্ধায় মাথানত করি। আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য, আমাদের সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য জীবন দিচ্ছেন। আমি জানি যে, আপনাদের জীবন অমূল্য, অনেকে এর জন্য তাদের সংসার ত্যাগ করছেন। আপনাদের প্রতি সহানুভূতি জানানোর দায়িত্ব হয়তো আমাদের নেই, কিন্তু দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আপনাদের দেখছেন। তাই কষ্ট হলেও আপনারা আপনাদের পথে থাকেন।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, আগামী ১০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র থাকবে কি না, তা নিয়ে ভাবনা হচ্ছে অনেকের। তাই বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে গণতন্ত্র শিখতে হবে না। আমরা তাদের কিছুতেই অনুসরণ করতে পারি না এবং অনুসরণ করে আমাদের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে পারি না। সুতরাং এ দেশে গণতন্ত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে এবং আমার বিশ্বাস গণতন্ত্রে আমরা বিশ্বে মডেল হব। যেমনটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ভ্যাক্সিনেশনে আমরা মডেল হয়েছি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়েও বিশ্বে মডেল হবেন। এজন্য আমাদের কাউকে অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই।

লেখক: সভাপতি, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট


অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী   গণতন্ত্র   মানবাধিকার   কমিউনিটি ক্লিনিক   দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

উপজেলা নির্বাচন বর্জন বিএনপি কফিনের শেষ পেরেক


Thumbnail

আজকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেভাবে হয় তার সামান্যতম কোন ব্যতিক্রম হয়নি। ভোটাররা উৎসাহ নিয়ে ভোট দিয়েছে। কোথাও কোথাও অনেক ভোটার আছেন যারা মনে করেন যে, অমুকে তো অনেকে জনপ্রিয় প্রার্থী, তিনিই বিজয়ী হবেন। আমার ভোট না দিলেও হবে। এ রকম মনোভাব নিয়ে অনেকে ভোট দেয়নি। আর কিছু জায়গা আছে ছোট খাটো মারামারি হয়েছে। যা এদেশের স্থানীয় নির্বাচনের চরিত্র। 

নির্বাচনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সেটার প্রমাণ করছেন বারবার। সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রপতিও শেখ হাসিনার দার্শনিক ভিত্তি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, শেখ হাসিনার প্রতিটি সিদ্ধান্ত একেকটা দর্শন। এবং এর লম্বা প্রভাব রয়েছে। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আসলে সংগ্রামের মধ্যেই আছেন। এই যে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। তাকে হত্যার করার হুমকি থাকলেও তিনি দেশে এসেছেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন যে, আমাকে যখন দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে আমি সেটা মোকাবিলা করার জন্য দেশে যাব এবং তিনি দেশে এসেছেন। আমরা অনেক সময় অনেক কথা বলে আবার পিছিয়ে যাই। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটা করেননি। তিনি দেশে এসেছেন। তবে আল্লাহ একটা রহমত আছে তাঁর প্রতি। আল্লাহ মনে হয় তাকে সব সময় চাঁদর দিয়ে ঢেকে রক্ষা করেন অত্যন্ত বাংলাদেশের জন্য। না হলে বারবার তার ওপর যে রকম আঘাত এসেছে তাতে উনার বাঁচার কথা নয়। 

বাংলাদেশে বিরোধী দল বলতে এখনো জনগণ বিএনপিকেই বুঝে। এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। কারণ জাতীয় পার্টি এবং বাম দল তো এখন নাই। জাতীয় পার্টি মোটামুটি ভাবে শেষ হয়ে গেছে। এখন বিএনপিও শেষ হয়ে যেতে বসেছে। উপজেলা নির্বাচন হয়ে গেল। নির্বাচনে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন সেখানে হয়তো বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত কেউ কেউ থাকবেন। কিন্তু যারাই হোক না কেন তারা আর কেউ বিএনপির থাকবে না। বিএনপির একের পর এক নির্বাচন বর্জন করার ফলে দল হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার পথে। এদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি খুব শঙ্কিত অনুভব করছি উপজেলা নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর। কারণ বিএনপি যে ধ্বংস হয়ে গেল তাতে গণতন্ত্রের যে ক্ষতি হয়ে যাবে এই ক্ষতি সহজে পূরণ করা যাবে না। কারণ একটি শক্তিশালী বিরোধী দল আমাদের দেশে থাকা দরকার। যেহেতু বাম রাজনীতি যারা করেন তারা একেবারে ক্ষমতাহীন। নিজেরা দাঁড়ালে এক হাজার ভোটও তারা পায় না। আর জাতীয় পার্টির অবস্থাও এখন একই রকম। আর এদেশে সন্ত্রাসের রাজনীতি আর চলবে না। সেটার মূল উৎপাটন করেছেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। সেটাও তাঁর দার্শন ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে। তিনি দেশে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কিন্তু ইসলামকে রাজনীতির জন্য ব্যবহার করেননি। তিনি সব সময় বলেন যে, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’ তিনি সেভাবে কাজও করছেন। সুতরাং আমাদের দেশে ধর্মান্ধ রাজনীতির কোন সুযোগ নাই। 

বাংলাদেশে এই যে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এজন্য প্রধানত দায়ী আমেরিকা। কারণ আমেরিকা যেভাবে এবার তাদের দেশে ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলন প্রতিহত করছে তাতে যে উদারহণ তারা সৃষ্টি করলো এটা মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব রাখবে সারা বিশ্বে। তারা আর কাউকে বলতে পারবে না যে, তোমার দেশে মানবাধিকার নাই। মানবাধিকার এখন শুধু বাংলাদেশেই আছে বলে আমার মনে হয়।

বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগকে বাকশাল গঠন করার জন্য একটা বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য করছে। এটা আমরা চাই না। বাকশাল যখন করা হয় তখন দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে একটা আলাদা প্রেক্ষাপট ছিলো। কিন্তু এখন সেটা নেই। সুতরাং এখন গণতন্ত্রের মধ্যে জনগণকে থাকতে হবে। কিন্তু এই যে বিএনপি গণতন্ত্রের ক্ষতি করলো এই ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে আমার জানা নেই। এজন্যই আমার মনে হয় বিএনপি শুধু নিজের ক্ষতি করলো তা না, দল হিসেবে তারা তো শেষ হয়ে গেলো। সাথে সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্রে যে আঘাত তারা করলো সেটা মারাত্মক আঘাত এবং আমরা কেউই এই আঘাত চাইনি। এখন আওয়ামী লীগ ছাড়া কোন রাজনৈতিক দলের বাস্তব উপস্থিতি থাকলো না। বাকি দলগুলো তো নিজেরা নিজেদের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বাম দল তারা সাহস দেখাতে পারলো না। তারা সঠিক পন্থা অবলম্বন করতে পারলো না। এজন্য শেষ হয়ে গেলো। অন্যদিকে যারা সন্ত্রাস করে রাজনীতি করতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলোরেন্স নীতিতে তারা এখন ধ্বংস প্রায়। বিএনপি ঠিকে থাকতে পারতো কিন্তু তারা সেটা চেষ্টাও করলো না। বিএনপি আন্দোলন করতে পারেনি ঠিক কিন্তু তারা যদি শুধু প্রতিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতো তাহলেও এদেশে একটি রাজনৈতিক শক্তি থাকতো। ক্ষমতায় যাওয়াই রাজনৈতিক দলের একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত না। জনগণের সাথে যদি থাকেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এক সময় নিশ্চিত ক্ষমতায় যাবেন। অনেক দেশে এমন অনেক দল আছে যারা ক্ষমতায় নেই তবে তারা রাজনৈতিক ভাবে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যায় না। ব্রিটেনের লেবার পার্টি অনেক দিন ধরে ক্ষমতায় নেই। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে জরিপে দেখা যাচ্ছে এবার তারা ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। অথচ এক সময় তারেদর কোন সম্ভাবনাই ছিল না। তাই আমি বলবো শুধু লন্ডনের বুদ্ধিতে বিএনপি তাদের কফিনের শেষ পেরেকটাও মারলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে। সাথে সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্রেও তারা এই পেরেক বিদ্ধ করলো। এটা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। বিএনপি তো আর পারবেই না। আমি আশা করি বাম দলগুলো যেন সেই উদ্যোগ নেয়।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

গোয়েবলসের বাড়ি কেনার জন্য তারেক জিয়াই যোগ্য ব্যক্তি


Thumbnail

মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের বাড়ি বিনা টাকায় বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষ আগ্রহী প্রার্থী পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো যে, আমাদের একজন ভালো খরিদ্দার আছে এবং তার কাছে এই গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি করলে গোয়েবেলসের আদর্শটাও বেঁচে থাকবে এবং কর্তৃপক্ষেরও উপকার হবে। আর এ খরিদ্দার হচ্ছে বিএনপি এবং এবং লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বাড়িটি কিনতে পারেন। তিনি হচ্ছেন গোয়েবেলসের এই বাড়ির যোগ্য ব্যক্তি। কারণ তিনি গোয়েবেলসের ভাবশিষ্য। 

গোয়েবেলস যেভাবে জার্মানিকে তখন গেসকাভো বাহিনী দিয়ে হত্যা করা থেকে শুরু করে সবকিছু জাস্টিফাই করতো, যুদ্ধে হেরে যাওয়ার সময়ও বলতো জিততেছে। তার একটা বিখ্যাত থিওরি ছিলো, ‘একটা মিথ্যা বার বার বললে সেটা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।’ এরকম বিভিন্ন দিকে গোয়েবেলস সম্বন্ধে পড়ে এবং দেখে বুঝেছি যে, বিএনপি এবং তারেক জিয়ার সাথে হিটলার বাহিনীর প্রচার মাধ্যম এবং আদর্শগত মিল সাংঘাতিক। হিটলার বাহিনী যেমন তখন ইহুদিদের হলোকাস্ট করেছে বিএনপিও যখন ২০০১ এ নির্বাচনে জিতে যায়, তখন তারা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের হত্যা করেছে, শিশুদের শ্লিলতাহানী করেছে এবং এমন কোন অপকর্ম নেই যা করেনি। সুতরাং তারা এই হিটলার বাহিনীরই প্রতিনিধিত্ব করে এখন। 

আমার জানা মতে, তারা এই কাজটি যেহেতু ভালোভাবে করতে পেরেছে এই কারণেই এই বাড়িটি পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য হচ্ছে, বিএনপি এবং বিএনপির পক্ষে তারেক জিয়া। সুতরাং আমার মনে হয়, গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি হওয়ার আগেই তাদের যোগাযোগ করা প্রয়োজন, যাতে বাড়িটা বিনা পয়সায় নিয়ে জার্মানিতে স্থায়ীভাবে তারা এবং তাদের লোকজন মাঝে মাঝে গিয়ে থাকতে পারে। এতে তাদের কাজের খুব সুবিধা হবে।

স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিক কারণে জার্মান সরকার বাড়িটাকে ধ্বংস করতে চায় না। তাই তারা এতদিন বাড়িটাকে ঠিকঠাক করে রেখেছে। কারণ জার্মানের লোকজনের ভেতরে হিটলারের আদর্শ উপস্থিত আছে। আর হিটলারের আদর্শকে ধরে রাখার মতো যেহেতু বিএনপিকে পাওয়া গেছে, তারেক জিয়াকে পাওয়া গেছে। সুতরাং আমার মনে জার্মানির এই গোয়েবেলসের বাড়িটি পাওয়ার একমাত্র যোগ্য বিএনপি এবং তারেক জিয়া। এতে বিএনপি এবং হিটলারের বাহিনীর যে কোন পার্থক্য ছিলো না সেটিও জনগণ বুঝতে পারবে। সুতরাং আমি মনে করি বিএনপির জার্মানিতে গোয়েবেলসের এই বাড়িটি কিনা উচিত। 


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন