নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৫৪ এএম, ২২ অক্টোবর, ২০২০
সকাল আটটায় আমার মেয়ের অনলাইন ক্লাস শুরু হবে। কম্পিউটার অন করতেই দেখা গেলো ইন্টারনেট ডিসকানেক্ট হয়ে আছে। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানীকে ফোন করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা জানালেন, সম্প্রতি ঢাকা শহরে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে ঝুলন্ত ইন্টারনেটের ক্যাবল (তার) কেটে ফেলা হয়েছে। জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকাতেই চোখে পরলো কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে আমদানী করা ইন্টারনেট এর মূল্যবান ক্যাবলগুলো রাস্তায় যত্রতত্র পরে আছে বা বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে ঝুলছে। ফলে একদিকে দেশের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, অপরদিকে ভোগান্তি হচ্ছে কোমলমতি ছাত্রদের, ব্যাঘাত ঘটছে অনলাইন ক্লাস, পরীক্ষা, আসন্ন ‘ও’ লেভেল বা ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার প্রস্তুতি। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা আছেন উৎকণ্ঠায়। এদিকে বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আরও বেশি আতঙ্কে আছেন ব্যবসায়ীরা। যত ছোট উদ্যোক্তা আতঙ্ক তত বেশি। কারণ তার পুঁজি হারানোর ভয় বেশি। ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে করোনা মহামারীর এই সময়ে অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। একই সাথে ব্যবসা-বানিজ্য ও সরকারি কাজ ব্যাপকভাবে ব্যহত হয়েছে।
ঝুলন্ত ক্যাবল (তার) অপসারণের প্রতিবাদে প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা করে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি (ডিশ) সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল আইএসপিএবি ও কোয়াব। পরবর্তিতে এলজিআরডি মন্ত্রনালয় থেকে দুই সিটি কর্পোরেশনকে ক্যাবল (তার) কাটা বন্ধ রাখার নির্দেশসহ পাঠানো চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় মেয়র সদয় হয়ে শর্তসাপেক্ষে আগামী নভেম্বর পর্যন্ত ঝুলন্ত ক্যাবল (তার) অপসারণ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে ঝুলন্ত তার অপসারণ সমস্যার যৌক্তিক সমাধানে সাতদিন সময় চেয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ও কেবল টিভি অপারেটরদের ধমর্ঘটে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। আর এই আশ্বাসের পরপরই ইন্টারনেট ও ডিশ সেবা বন্ধের কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত থেকে তারা সরে আসেন।
একুশ শতকের বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ১২ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে। যেখানে বলা হয়েছে, ‘২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’এ পরিণত হবে। The Vision 2021 is an articulation of where this nation needs to be in 2021 – the year which marks the 50th anniversary of Bangladesh`s independence. ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বলতে বুঝায় ICT (Information and Communication Technology) বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে e-governance, e-banking, e-commerce, e-learning, e-agriculture, e-health ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত করে জনগনকে সহজে সেবা প্রদান করা।
বিশ্বব্যাপী বিরাজমান করোনা মহামারীর (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে গত মার্চ ২০২০ থেকে বাংলাদেশের সকল অফিস-আদালত, ব্যবসা-বানিজ্য ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। করোনার সংক্রমণের প্রকোপ বিবেচনা করে সাধারণ ছুটি কয়েকবার বৃদ্ধি করা হয়েছিল। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের কারণে সরকারী-বেসরকারী সকল যোগাযোগ, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র আদান-প্রদান, স্বাক্ষর দান, পরীক্ষা গ্রহণ, চিকিৎসা, অনলাইন শপিং ইত্যাদি সবকিছু ডিজিটাল বাংলাদেশ’এর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেই চলছে। মোট কথা শুধু শহর এলাকার বাসিন্দারা ডিজিটাল ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল হয়ে পরেছে তা নয়-গ্রামেও তা ছড়িয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি দেশের অর্থনীতির কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বানিজ্য প্রতিষ্ঠান এর কার্যক্রম স্বাভাবিক করা হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ ছুটি এখনও বহাল রয়েছে। মহামারি করোনায় সারা বিশ্বজুড়ে বেড়েছে প্রযুক্তির গুরুত্ব ও নির্ভরতা। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। সংকটের শুরু থেকেই প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে বহুগুণ। এ সময়ে অনেক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে প্রযুক্তি যেন বিকল্প মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ফলে বৈশ্বিক এই বিপর্যয়ের মধ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তি সৃষ্টিকর্তার এক আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে।
ইন্টারনেট ও ডিশ ক্যাবল অপসারণের প্রেক্ষাপটে আইএসপিএবি’র সভাপতি গণমাধ্যমকে বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা না করেই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন তার কেটে দিয়েছে। ফলে, এরিমধ্যে আইএসপিএবি এবং কোয়াবের আনুমানিক ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বেসিসের পরিচালক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আমরা এগোচ্ছি, এমন সিদ্ধান্ত সেই পথে একটা বড় বাধা। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ও কেবল টিভি অপারেটররা ক্যাবলের মাধ্যমে গ্রাহকের কম্পিউটার পর্যন্ত সংযোগ প্রদান করে থাকে। এই সংযোগের জন্য ব্যবহৃত ক্যাবলগুলো কি পদ্ধতিতে গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌছাবে সে ব্যাপারে নিশ্চয়ই সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সেবাগ্রহণকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সে বিষয়ে জানা বা খোঁজ নেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। গ্রাহকের দোরগোড়ায় ক্যাবলস পৌঁছাতে বৈদ্যুতিক খুঁটি ব্যবহার করা যদি অপরাধই হয় হয়, তাহলে কি উপায়ে এই অবৈধ তারগুলো লাগানো হলো, দীর্ঘদিন যাবত ঝুলে থাকলো কিভাবে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ডিজিটাল বাংলাদেশ’র ডিজিটাল যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেটের সংযোগ অপরিহার্য। ইন্টারনেট যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীকে অনলাইনে পাঠদান থেকে শুরু করে হোম অফিস কিংবা ব্যাংকিং, কৃষি বিষয়ক পরামর্শ সবই চলছে । সেই সাথে খাবার-দাবার অর্ডার, দৈনন্দিন পণ্য ক্রয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেবা গ্রহণ ইত্যাদি সকল কাজেই করোনাকালীন প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বেড়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের ভোগান্তির কথা বিবেচনায় না এনে, ইন্টারনেট সংযোগের বিকল্প স্থাপন না করে হঠাৎ করে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে ঝুলন্ত ইন্টারনেটের ক্যাবল (তার) কেটে ফেলা গ্রহনযোগ্য সিদ্ধান্ত নয়।
মাননীয় মেয়র মহোদয়ের ক্যাবল অপসারণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের পর থেকেই শুরু হয় কেটে ফেলা সংযোগগুলোর পুনঃসংযোগের কাজ। তিনদিন পর আমার মেয়ে কম্পিউটারে পুনরায় অনলাইন ক্লাস শুরু করেছে যেমনটি করেছে অনেক শিক্ষার্থীই। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ও কেবল টিভি অপারেটররা সিটি করপোরেশন কর্তৃক প্রদত্ত শর্তানুযায়ী যথাযথভাবে পালন করে ক্যাবলসমূহ মাটির নীচ দিয়ে নিবে কিনা জানিনা। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিষ্ঠিত ডিজিটাল বাংলাদেশ এর কার্যক্রম যেন কোনভাবেই ব্যাহত না হ্য়। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর প্রযুক্তি নির্ভর সেবা গ্রহণ করতে গ্রাহকরা যেন ভোগান্তির শিকার না হয় সেদিকে সকল মহলকেই সজাগ থাকা জরুরী। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ও কেবল টিভি অপারেটরদের সাথে দ্রুত আলোচনা করে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরী করে তা যথাযথ বাস্তবায়নে সকলকেই আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। গ্রাহকদের ভোগান্তির কথা বিবেচনায় না এনে, ইন্টারনেট সংযোগের বিকল্প ব্যবস্থা না করে হঠাৎ করে ইন্টারনেটের ক্যাবল কেটে ফেলে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা কারোই কাম্য নয়।
তাই মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে না ফেলে উপযুক্ত সমাধান খোঁজাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
লেখক: ড. মো. আওলাদ হোসেন
ভেটেরিনারীয়ান, পরিবেশবিজ্ঞানী, রাজনৈতিক কর্মী।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১৫ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১২ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:০৭ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক অভাবনীয়, অনন্য এবং যুগান্তকারী একটি মডেল। শিশু স্বাস্থ্য, মাতৃ স্বাস্থ্য এবং কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। নবজাতকের মৃত্যু, মাতৃ মৃত্যু কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুসরণ শুরু করেছে। গত বছর ১৭ মে কমিউনিটি ক্লিনিক ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিসিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ সারা বিশ্বের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশী জনগণের জন্য ‘আলোক বর্তিকা’।
আজকে আমরা ১৭ মে নিয়ে কথা বলছি। যেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। আবার গত বছর এই দিনে তাঁর চিন্তা প্রসূত কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজকে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, উন্নয়নশীল বাংলাদেশের কথা বলছি, যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি, একদিন উন্নত বাংলাদেশ হব বলে স্বপ্ন দেখছি এই সবকিছু শেখ হাসিনার স্বপ্ন, শেখ হাসিনার ইনিশিয়েটিভ। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৭৮১ সালে পলাশি যুদ্ধে ইতিহাসের ঘৃণিত সেনাপতি মির্জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজ উদ্দৌলার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ২০০ বছরের গোলামী আমাদের ললাটে এসেছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হলেও বাঙালী এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা পায়নি। যার পটভূমিতে বীরদর্পে আবির্ভূত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ থেকে ৭৫’ বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে স্বাধীনতার লাল পতাকা উড়েছিল বাঙালী আশায় বুক বেধেছিল।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বিয়োগান্তের ঘটনায় জাতি ছিল দিক নির্দেশনাহীন। নারকীয় এই ঘটনায় জনগণ হয়ে পড়েন দিশেহারা। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করার কোন শক্তি সাহস ছিল না। দলের অনেক বড় বড় নেতাও ছিলেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ধানমন্ডির ৩২ বাড়ি ছিল কবরের নীরবতা। সমগ্র জাতি তখন অন্ধকারে। সামরিক বুটে পিষ্ঠ গণতন্ত্র। নির্বাসনে সংবিধান আর মানুষের মৌলিক অধিকার। বাক স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। এমনকি বঙ্গবন্ধু নাম উচ্চারণ ছিল নিষিদ্ধ।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের মৌলিক চরিত্রকেই বদলে ফেলা হয়। বিশেষ করে পাকিস্তানি ধারায় সামরিক শাসনের সংস্কৃতির প্রবর্তন ঘটে দেশে। সাম্প্রদায়িকতা ফিরে আসে রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে। একের পর এক স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা ঘটতে থাকে দেশে। বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। ঠিক এমন প্রতিকূল সময় ১৯৮১ সালের ১৭ মে সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর রক্তস্নাত মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন বাঙালির মুক্তির মহানায়কের যোগ্য উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনা।