নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৯ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
১/১১ ছিলো রাজনীতির জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা। বিরাজনীতিকরণের শক্তির সঙ্গে রাজনীতিবিদদের যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত জয় হবে কি না সেটাই ছিলো পরীক্ষা। আর এই পরীক্ষায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজনীতিবিদরাই জয়ী হয়েছিলেন। ১/১১ এর যে মূল পরিকল্পনা সেই পরিকল্পনা ছিলো দীর্ঘদিন ধরে অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় রাখা। এ কারণেই ১/১১ সরকারের সময় রাজনীতিতে বিভাজন তত্ত এনেছিলো, নতুন রাজনৈতিক দল করার চেষ্টা করা হয়েছিলো এবং দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের নামের রাজনীতিকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু এই প্রচেষ্টা সফল হয়নি শুধুমাত্র শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শীতার জন্য। শেখ হাসিনা একদিকে যেমন দলকে আগলে রেখেছিলেন অন্যদিকে তিনি প্রমাণ করতে পেরেছিলেন যে গণতন্ত্রের বিকল্প শুধুমাত্র গণতন্ত্রই। অগণতান্ত্রিক সরকার কখনও গণতন্ত্রের কল্যাণ করতে পারে না।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় ছিলো অবধারিত। কারণ ১/১১ এর পরে বিএনপি ছিলো ক্ষতবিক্ষত এবং তাদের নেতাদের যে বিভক্তি ছিলো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাছাড়া তারেক রহমানের অনুপন্থিতি এবং বিএনপির অর্থদাতাদের পলায়নসহ নানা কারণে বিএনপি ব্যাকফুটে গিয়েই নির্বাচন করে। অন্যদিকে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপির অনিয়মের জবাব দিতে জনগণও মুখিয়ে ছিলো।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছিলো। দিন বদলের ডাক এবং সেই দিন বদলের ডাকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করার ঘোষণা দিয়েছিলো। তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয় বিষয়টি ছিলো আওয়ামী লীগের সাহসী উচ্চারণ সেটি হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে এদেশের দোসররা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিলো, আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ করেছিলো, ৩০ লাখ মানুষকে হত্যায় সহযোগিতা করেছিলো তাদের বিচার একটি গণদাবিতে পরিণত হয়েছিলো।
শহীদ জননী জাহানারা ইমামেমর নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির যে অভিযাত্রা সেই অভিযাত্রা পূর্ণতা পায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে। আর এই দুটি কারণে তরুণ ভোটাররা আওয়ামী লীগের প্রতি ব্যাপক সমর্থন দেখায়। আওয়ামী লীগ প্রায় তিন চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংসদে বসে এবং নতুন সরকার গঠন করে। সরকার গঠন করলেও শেখ হাসিনা প্রতিহিংসা নীতি গ্রহণ করেননি। ১/১১ এর অন্যতম কূশীলব সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদকে চাকরিতে বহাল রেখেছিলেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারও বিরুদ্ধে আক্রশমূলক ব্যবস্থা গ্রগণ করেননি বরং একটি জাতীয় ঐক্যমতের আবহের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। আসলে ১/১১ এই যুদ্ধে তিনি দুটো বিজয় অর্জন করেছিলেন। বিরাজনীতিকে পরাভূত করে রাজনীতির ঝান্ডা উড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে যুদ্ধপরাধী এবং তাদের দোসরদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা বিএনপিকে রাজনীতির মাঠ ধেকে বিদায় করে দিয়েছিলেন। সেই নির্বাচনের ক্ষত এখনও বিএনপি শুকাতে পারেনি।
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড লু বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চীন সফর ভারত যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন র্যাবের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায় না তখন বিএনপি নেতারা উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন। তারা দলীয় কার্যালয়ে মিষ্টিমুখের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
আবার ডোনাল্ড লু নির্বাচনের আগে যখন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছিলেন তখন বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্যে মার্কিন বন্দনা করতে দেখা গেছে। ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন দূতাবাসে বা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বাসভবনে বিএনপির নেতাদের আনাগোনা ছিল। তারা সেখানে চা চক্রে মিলিত হয়েছেন, নৈশভোজে মিলিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন রকমের শলাপরামর্শ করেছেন।
পিটার ডি হাস গত বছরের ১০ অক্টোবর বিএনপি যখন সমাবেশ করতে পারেনি তখনও একতরফা বিবৃতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বিতর্কিত সংগঠন মায়ের ডাকের এক নেতার বাসায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি বিএনপির প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি জানিয়েছিলেন। এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উপর এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন এবং সহানুভূতি দেখিয়েছিল।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সহানুভূতি এবং পরোক্ষ সমর্থনের কারণেই বিএনপির আন্দোলনের পালে হাওয়া লেগেছিল। নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি চাঙ্গা ভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। যদিও ২৮ অক্টোবরের পর এই ডোনাল্ড লু শর্তহীন সংলাপের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং এই আহ্বানের চিঠি নিয়ে পিটার ডি হাস তিনটি দলের নেতাদের কাছে গিয়েছিলেন এবং একটি সংলাপ আয়োজনের শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সংলাপ আয়োজনে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কেউই সাড়া দেয়নি।
এখন নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলার পরও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া এবং নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন। ডোনাল্ড লু’র আগে আফরিন আক্তার নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং সেই সময় তিনি হোটেল ওয়েস্টিনে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং শামা ওবায়েদ আফরিন আক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যদিও সেই সাক্ষাতের পর তারা কোনও কিছুই সাংবাদিকদেরকে জানাননি। কিন্তু এবার ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। আর এটি বিএনপির মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি মনে করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদেরকে আর আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না, পাত্তা দিচ্ছে না। বরং সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বিএনপিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিএনপি নেতারা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ, শামা ওবায়েদ, তাবিথ আউয়ালসহ যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং মার্কিন দূতাবাসে যাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাদেরকে দুষছেন। তারা মনে করছেন যে, বিএনপির মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। বিএনপির নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারেননি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিএনপির বক্তব্যগুলো তারা সঠিকভাবে ও যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। আর একারণেই ডোনাল্ড লু’র সফরের পর বিএনপির মধ্যে চলছে এক ধরনের হতাশা।
ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি
মন্তব্য করুন
আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, দলের ভেতর সুবিধাবাদী, লুটেরা এবং দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। কিন্তু ২৩ জুনের পর আওয়ামী লীগের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্র্যাকডাউন হবে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এবং দলের সুনাম নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করবে। আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগ এবং তার আদর্শিক জোট ১৪ দলের নেতাদের চীন সফরে হিড়িক পড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর এই চীন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলাপ আলোচনা। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের চীন সফরের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখছেন। তবে তারা এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবেই মনে করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।