নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৯ পিএম, ০৯ এপ্রিল, ২০২১
সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। সংসদে যখন তিনি হেফাজতের ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে কথা বলেছেন ঠিক তখন দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মী এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা হেফাজতের পক্ষে কথাবার্তা বলছেন। এটি আওয়ামী লীগের নতুন মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত পত্রপত্রিকার হিসাব অনুযায়ী ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের প্রায় ৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে মামুনুল হকের প্রতি সমর্থন জানানো এবং হেফাজতের প্রতি সহানুভূতি জানানোর জন্য।
শুধু আওয়ামী লীগ নয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থারও কারও কারও হেফাজতের প্রতি সহানুভূতিসূচক বিবৃতি দেখা গেছে। অনেক স্থানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কেউ কেউ হেফাজতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে সরকারের হাতে তথ্য প্রমাণ এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে আওয়ামী লীগ যে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করে, যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে অসাম্প্রদায়িক এবং ধর্মনিরপেক্ষ চেতনায় বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন সেই আওয়ামী লীগের ভেতর এতো হেফাজত ঢুকলো কীভাবে?
আওয়ামী লীগের নেতারাই বলছেন যারা প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছেন এরা উগ্র হেফাজতী এবং এরা আওয়ামী লীগের ভেতরে ছিলো। এরা আওয়ামী লীগের ভেতরে এখনও আছেন এবং দলে থাকার জন্য হেফাজতের পক্ষে প্রকাশ্যে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন না কিন্ত হেফাজতের প্রতি সহানুভূতিশীল। আর এই কারণে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হেফাজতীদের তালিকা করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থাসহ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে সংগঠনের মধ্যে এতো হেফাজত ঢুকলো কেন? কেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের তরুণরা হেফাজতের পক্ষে ফেসবুকে কথাবার্তা বলছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, একাধিক কারণ রয়েছে এর পেছনে।
১. অনুপ্রবেশকারী: গত ১২ বছরে আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রচুর অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। এরা সুবিধা আদায়ের জন্য আওয়ামী লীগে ঢুকেছে। এরা আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাস করে না। আর এরাই আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি বড় অংশ হেফাজতী।
২. ভোট পাওয়ার জন্য মাদ্রাসার সঙ্গে সম্পর্ক: আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ভোট পাওয়ার জন্য মাদ্রাসাগুলোর সঙ্গে এক ধরনের সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। আর এভাবে মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন করতে গিয়ে হেফাজতকে আলিঙ্গন করেছেন। আর এ কারণে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে হেফাজতীদের বসানো হয়েছে। স্থানীয় এমপি-মন্ত্রী বা প্রভাবশালী নেতারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করার জন্য হেফাজতের সঙ্গে যে সমঝোতার রাজনীতি করেছেন সেজন্য অনেক অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী লীগে ঢুকেছে।
৩. রাজনীতিতে আদর্শভিত্তিক চর্চা না থাকা: আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আদর্শভিত্তিক চর্চা না থাকা এবং দলের ভেতর প্রশিক্ষণ কর্মশালা ইত্যাদি না থাকার কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আদর্শচ্যুতি এবং এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে হেফাজতের প্রতি সহানুভূতি তৈরি হতে পারে।
৪. হেফাজতের সঙ্গে সমঝোতার নীতি গ্রহণ: ২০১৩ পর থেকে সরকার হেফাজতের সঙ্গে যে সমঝোতার নীতি গ্রহণ করেছে সেই সমঝোতা নীতির মাসুল দিতে হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন হেফাজত তাদের শত্রু নয় বন্ধু। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে এক ধরনের আরষ্ঠতা ছিলো। তারা হেফাজতের বিরুদ্ধে এক ধরনের কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করতেন। আর এসব কারণেই আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেক হেফাজতীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন, যে আওয়ামী লীগ তার আদর্শ থেকে কখনও সরে যাবে না। যারা বিভ্রান্তকর ভুল রাজনীতির শিকার তাদেরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
আজিজ আহমেদ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের একটি বক্তব্যকে নিয়ে বিএনপির উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে সাম্প্রতিক সময়ে আম আদমি পার্টির জামিনে মুক্তি পাওয়া এই নেতার একটি বক্তব্য বিএনপি তাদের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে শেয়ার করেছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল বক্তার বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ তুলেছেন। তিনি রাশিয়ার উদাহরণ দিয়েছেন। রাশিয়া নির্বাচনে পুতিন একচ্ছত্রভাবে বিরোধী দল দমন করে বিজয়ী হয়েছেন বলে অরবিন্দ কেজরিওয়াল উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের নির্বাচনে শেখ হাসিনা সকল বিরোধী দলের নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বলেও অরবিন্দ কেজরিওয়াল দাবি করেছেন। তিনি পাকিস্তানে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করে তার দলের প্রতীক কেড়ে নিয়ে নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা বিজয়ী হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল আসলে সমালোচনার তীর ছুড়েছেন নরেন্দ্র মোদীর দিকে। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশকে অনুসরণ করে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চান বলেও আম আদমি পার্টির এই নেতা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। আর এই বক্তব্য নিয়েই বিএনপির মধ্যে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপির নেতারা শুধু ইউটিউবেই এটি রিপোস্ট করেনি, তারা তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এবং টুইটারেও এই বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপির মধ্যে এক ধরনের ভারত বিরোধী প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। ভারতের সমালোচনা করা এবং ভারত এই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে এমন বক্তব্য বিএনপি নেতাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছিল। যদিও ইন্ডিয়া জোটের প্রধান শরিক কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন এবং সম্পর্ক আরও গভীর করার বার্তা দিয়েছেন। ভারতের অন্য একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেসও আওয়ামী লীগ এবং বর্তমান সরকারের সমর্থক। বিজেপি গত এক দশকে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। এরকম অবস্থায় ভারতের নির্বাচনে যে ফলাফলই হোক না কেন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তেমন কোন ব্যত্যয় হবে না বলেই কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
এর মধ্যে আম আদমি পার্টির বক্তব্য নিয়ে বিএনপির উচ্ছ্বাস নিয়ে অনেকেই নানারকম টীকা-টিপ্পনি কেটেছেন। কেউ কেউ মনে করেন যে, এর আগে যখন কংগ্রেসকে হারিয়ে নরেন্দ্র মোদী প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছিলেন তখনও বিএনপির মধ্যে উৎসব উৎসব ভাব সৃষ্টি হয়েছিল। বিএনপি নেতারা মিষ্টিমুখ করিয়েছিলেন। তাদের ধারণা ছিল যে, কংগ্রেস চলে গেলেই আওয়ামী লীগের উপর চাপ সৃষ্টি হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বিজেপির সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। এখন কেজরিওয়ালের নির্বাচনের মাঠের বক্তব্যকে নিয়ে বিএনপি আশায় বুক বেঁধে আছে। মুখে মুখে ভারত বিরোধীতা করলেও ভারতের অনুগত এবং ভারতের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য বিএনপি কম চেষ্টা করেনি।
আর এখনও বিএনপি যে ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চায় তার প্রমাণ পাওয়া গেল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বক্তব্যকে নিজেদের দলের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করে। কিন্তু বিএনপি নেতারা ভুলে গেলেন যে, একজন রাজনৈতিক নেতার রাজনৈতিক বক্তব্য, আর ক্ষমতায় এসে তার প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড- দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেউলিয়া রাজনীতির কারণে বিএনপি সবসময় অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকে আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করার জন্য। সাম্প্রতিক সময়ে কেজরিওয়ালের বক্তব্য বিএনপির ইউটিউবে ছাড়ার মধ্য দিয়ে সেই দেউলিয়াত্ব আরেকবার প্রকাশিত হল বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অরবিন্দ কেজরিওয়াল রুহুল কবির রিজভী
মন্তব্য করুন
কিছুদিন আগেও বিএনপি যুক্তরাষ্ট্র বলতে অন্ধ থাকত। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে ফোন আসলে বিএনপির নেতারা নাওয়া খাওয়া ভুলে ছুটে যেতেন। এমনকি কোনদিন সকালে মার্কিন দূতাবাসে প্রাতরাশ, রাতে নৈশভোজেও দেখা গেছে বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তারা অবতার হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশে গণতন্ত্র এনে দেবে, যুক্তরাষ্ট্রই এই সরকারের পতন ঘটাবে এমন একটা স্থির বিশ্বাস ছিল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। কিন্তু বিএনপির মধ্যে সেই মোহভঙ্গ ঘটেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনাগ্রহী বিএনপি। এটা যেন অনেকটা আঙুল ফল টকের মতো ঘটনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ইতোমধ্যে তিনি একটি হ্যাটট্রিক করেছেন। টানা তিন তিনবার আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই একমাত্র যিনি আওয়ামী লীগের তিনবার বা তার বেশি সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। এখন ওবায়দুল কাদেরও আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সাধারণ সম্পাদক। এবার তিনি আরেক রকম হ্যাটট্রিক করলেন।
আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের একটি বক্তব্যকে নিয়ে বিএনপির উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে সাম্প্রতিক সময়ে আম আদমি পার্টির জামিনে মুক্তি পাওয়া এই নেতার একটি বক্তব্য বিএনপি তাদের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে শেয়ার করেছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল বক্তার বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ তুলেছেন। তিনি রাশিয়ার উদাহরণ দিয়েছেন। রাশিয়া নির্বাচনে পুতিন একচ্ছত্রভাবে বিরোধী দল দমন করে বিজয়ী হয়েছেন বলে অরবিন্দ কেজরিওয়াল উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের নির্বাচনে শেখ হাসিনা সকল বিরোধী দলের নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বলেও অরবিন্দ কেজরিওয়াল দাবি করেছেন। তিনি পাকিস্তানে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করে তার দলের প্রতীক কেড়ে নিয়ে নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা বিজয়ী হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।