গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন সংস্কৃতির লোক তাদের নৈতিকতার দর্শনের বিভিন্ন ধরণ প্রদর্শন করে। কেউ কেউ এমন বিশ্বাস করতে পারেন যে তাদের সংস্কৃতি এবং নৈতিক মানগুলি অন্যান্য সংস্কৃতি গোষ্ঠীর চেয়ে উচ্চতর। তাই তারা তাদের সংস্কৃতিক গোষ্ঠীর জনগনকে বহিরাগতদের থেকে সংজ্ঞায়িত ও পার্থক্য করার জন্য নিজেদের তৈরি একটি মানদণ্ড ব্যবহার করে। এই মানদণ্ড ব্যবহার করে যখন সেই উচ্চতর গোষ্ঠীতে বিশ্বাসী তারা ধরে নেয় যে অন্য গোষ্ঠীর জনগণ তাদের সংস্কৃতি এবং নৈতিক মানগুলি লঙ্ঘন করছে তখন তারা একা বা সবাই একসাথে মিলে নিন্দা ও শাস্তি দেওয়ার হুমকি এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
ব্যক্তিত্ববাদের পশ্চিমা ধারণাটি প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের বিশ্বের দ্বৈত দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজনীয়তা অনুভূত করেছে এবং তা প্রয়োগ করছে। যখন অন্যরা তাদের গোষ্ঠীর লক্ষ্যগুলি উপলব্ধি করার বিষয়টি আর পরিবেশন করে না, তখন তারা সেখানে তাদের সংস্কৃতি এবং নৈতিকতার কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করার জন্য দাবি করে যেন অন্যরা পুনরায় তাদের সমাজকে যেন পুনর্গঠন করে। এই নৈতিক দ্বৈতবাদের ভিত্তিতে, পশ্চিমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ “আমাদের সবার জন্য কী কী উপকার হয় তার চেয়ে আমার উপকারগুলি কী” তার উপর নির্ভর করে।পাশ্চাত্য দ্বৈতবাদের বিপরীতে, পূর্বের সংস্কৃতি এবং নৈতিকতা জীবনের উৎসের মনোবাদী দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে। এটি হলো, একটি জীবন বিশ্বের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে বিবেচিত, যেখানে নিজেকে সবার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়। তারা প্রাচ্যের নিজেকে বিশ্বের বাহিরে বা বিরোধী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা স্বতন্ত্র সত্তা হিসাবে বিবেচনা করে না। পূর্বাঞ্চলীয় নৈতিক ব্যবস্থাটি নিজের স্বায়ত্তশাসনের নৈতিকতার চেয়ে বরং সম্প্রদায়ের নৈতিকতা বা দেবতার নৈতিকতাগুলিকে তাদের জীবন যাএায় অন্তর্ভুক্ত করে।
দীর্ঘকাল ধরে, বিশ্বব্যবস্থা পশ্চিমা সংস্কৃতি এবং নৈতিকতার দ্বারা প্রভাবিত এবং নির্দেশিত ছিল। তবুও বিশ্বব্যবস্থায় কিছুটা হলেও একটি ভারসাম্যতা ছিল। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধের শেষে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের ফলে বিশ্বব্যবস্থার দোলকের কাটা পুরোপুরি ডানের পশ্চিমা শক্তির দিকে চলে যায়। তবে কেবল জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক শক্তির ভারসাম্যতা শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা সরবরাহ করতে পারে। বিশ্বব্যাপী নৈরাজ্যকে উপশমের জন্য উপযুক্ত মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক অনুশীলনের একটি সাধারন বিন্যাস আর সবার মেনে চলা প্রয়োজনীয়। ওয়ার্ল্ড অর্ডার/বিশ্ব শান্তি একটি নৈতিক সংজ্ঞা যেটি আন্তর্জাতিক সংহতির উপর যথেষ্ট জোর দেয়। যেখানে জাতীয় অধিকারগুলি আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার সাথে সম্পর্কিত। অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক মনে করেন যে মানবাধিকার লঙ্ঘন কেবলমাত্র অ-পশ্চিমা দেশগুলির সমস্যা। তাদের দৃষ্টিতে এটা স্ব-স্পষ্ট যে, কেবল অ-পাশ্চাত্য সরকারই আদর্শ লঙ্ঘনকারী হতে পারে। আশ্চর্যজনকভাবে ইরাকের আবু ঘড়াইব, বা গুয়ান্তানামো বে ইত্যাদি ঘটনায়, পশ্চিমা সরকারগুলি তাদের লঙ্ঘনগুলিকে কেবল নুতন আদর্শ-নিয়ামক এবং আদর্শ-প্রয়োগকারী হিসাবে বিবেচনা করে।
১. আন্তর্জাতিক ও বেসরকারী সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো পশ্চিমা দেশগুলিকে বিশ্বের বিভিন্ন বিষয়গুলিতে তাদের আধিপত্য এবং আদর্শিক প্রাধান্য অর্জনের আর কার্যকর করার বা চাপিয়ে দেওয়ার উপকরণগুলির মধ্যে একটি । পশ্চিমা দেশগুলি জাতিসংঘের পাশাপাশি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টকে অন্যান্য দেশগুলিকে মানবাধিকার লঙ্ঘণে অভিযুক্ত করা করার কার্যকর কাঠি হিসাবে ব্যবহার করতে কোন দ্বিধা না করে আনন্দের সাথে তা ব্যবহার করেছেন। ২০১৬ সালে জাতিসংঘ (ইউএন) এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার লঙ্ঘন করে সুইডেন এবং যুক্তরাজ্য কর্তৃক নির্বিচারে আটক করা হয়েছিল এবং ক্ষতিপূরণ দিয়ে তার মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। তবে সুইডেন এবং যুক্তরাজ্য বলেছিল যে তারা এই বিষয়টির সাথে দ্বিমত পোষণ করেছে এবং এটিকে উপেক্ষা করবে। এটা প্রমান হয় বা তা আবারও নিশ্চিত করে যে পশ্চিমা সরকারগুলির জন্য নয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার যন্ত্রপাতি কেবলমাত্র বাকীদেশ গুলিতে পশ্চিমা মান প্রয়োগের জন্য বিদ্যমান। পশ্চিমাদেশ এবং অনেক আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো চীন ও রাশিয়ার হুইসেল ব্লোয়ারদের কথা উচ্চস্বরে প্রচার করে, তাদের বিচারের প্রতিবাদ করে কিন্তু অ্যাসাঞ্জ, ব্র্যাডলি ম্যানিং এবং স্নোডেন যখন আইনের বাইরে ধূসর আইনী ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের পরিচালিত গোপন নজরদারি রাষ্ট্রের সীমাটি উন্মোচিত করে তখন তাদেরকে চরম শাস্তি দেয়। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমা সরকার এবং তাদের গৃহপালিত ভাষ্যকারদের এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাবশালী পশ্চিমা গণমাধ্যমের নির্বাচিত নৈতিক নৃশংসতার বিপক্ষে তাদের উদ্বেগ বা আগ্রহের অভাব বা নিরবতা বা কখনও তাদের মতামত সমর্থন করা লক্ষ্য করে নির্বিশেষে বিশ্বের বাকী সবার মধ্যে তাদের ভণ্ডামির মুখোশ খুলে দিয়েছে।
২. আজ যখন তারা, সাবেক উপনিবেশিক শক্তির দেশ অন্য দেশকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলে, দোষ দেয় বা উপদেশ দেয় তখন ঔপনিবেশিক সময়কালে তাদের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রেকর্ড তারা কখনো চিন্তা বা বিবেচনা করেনা ক্ষমা চাওয়া তো দুরের কথা। অল্প কিছু উদাহরণ উদ্ধৃত করে বলা যায় যেমন ১৯১৯ সালে ভারতে জলিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যার ঘটনা বা ব্রিটিশরা ১৯৫০-এর দশকে কেনিয়ায় মৌ মৌ বিদ্রোহের দমন; ১৯৪৫ সালে ফরাসিদের দ্বারা আলজেরিয়ায় জবাইয়ের তরঙ্গ অনেক অমানবিক ও নির্মম ছিল। সাম্প্রতিককালে, বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক দাবা বোর্ডে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর ভারতের বিরুদ্ধে চীনকে দাঁড় করানোর জন্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি এবং তার পররাষ্ট্র সচিব ১৯৭১ সালে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যাকে উপেক্ষা করা তাদের নৈতিক অবস্থানগুলি এবং স্বার্থপর ইচ্ছা স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে।
৩. আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার পর রাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়াতে ঐতিহাসিক প্রচলিত নাগরিক স্বাধীনতার এবং মানবাধিকার সরঞ্জাম এবং সরঞ্জামগুলি হ্রাস কার্যকারি করে। আজ সেখানে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা বা সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ প্রতিরোধের নামে কাউকে আত্মরক্ষার জন্য কোনও আইনজীবীর সুযোগ না দিয়ে মাসের পর মাস গোপনে আটক করতে পারে। ঘুরেফিরে, এটি মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতার হুমকিস্বরূপকে ‘নৈতিক মূল মানের পরিবর্তে একটি ঐচ্ছিক অতিরিক্ত’ হিসাবে রূপান্তর করছে। একমাত্র অস্ট্রেলিয়াই ৯/১১-এর পরে এই বিযয়ে ৩৫০টি আইন করেছে। এই আইনগুলি তীব্রতা বৃদ্ধি সহ মৌলিক গণতান্ত্রিক মানকে সীমাবদ্ধ করে দেয়। অনেকগুলি উন্নয়নশীল দেশ যখন একই জাতীয় আইন এবং যন্ত্রগুলি প্রণীত করে তখন একই পশ্চিমাদেশগুলো তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে এবং বক্তৃতা দেয়।
৪. আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) কাজ হলো দুর্বল জনগণকে বর্বর শাসকদের হাত থেকে রক্ষা করা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এই আদালত দ্বারা দুর্বল দেশগুলির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু দেশ আইসিসির এখতিয়ারকে স্বীকৃতি দেয় না এবং আইসিসির বিচারকদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাগুলি চাপিয়ে দেয় যখন বিচারকরা এই শক্তিধর দেশগুলির দ্বারা সংঘটিত অপরাধগুলি তদন্ত করার সাহস করে। অনেক উন্নয়নশীল দেশ গভীরভাবে উদ্বেগ কেবল মাএ আফ্রিকার দেশগুলির উপর আইসিসির একচেটিয়া দৃষ্টি দেখে। যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএর জিজ্ঞাসাবাদ, গোপনে আটকানো, এবং আউটসোর্স করা নির্যাতনের সেশনগুলি যা সংস্থাটি নীতি-নির্ধারকদের কাছে প্রকাশ করেছিল আসলে তা তার চেয়ে অনেক নির্মম এবং অনেক খারাপ ছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের রুটিনের অংশ হিসাবে নির্যাতনের অনুশীলন হিসাবে পরিচিত ‘নির্যাতনের প্রতিস্থাপন’, এমনকি আটক বন্দীদের তাদের নিজ দেশে বা তৃতীয় দেশে প্রেরণ করার অসম্মানজনক/অপমানজনক অনুশীলনের পরেও স্বতন্ত্র বা যৌথ দায়বদ্ধতা অনুসরণ করা হয়নি। উদাহরণ সরুপ বর্ণবাদী পদ্ধতিগত আচরণ বা নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের হত্যা বা আফগানিস্তানের অনেক নিরপরাধ শিশু বা মাদের ড্রোন দিয়ে হত্যার মামলা শুরু করা তো দুরের কথা তদন্তের অনুমতি পর্যন্ত দেওয়া হয় না। ইরাক যুদ্ধে টনি ব্লেয়ারের মিথ্যাচার এবং সক্রিয় ভূমিকার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ডেসমন্ড টুটু মিঃ টনি ব্লেয়ারের সাথে একই মঞ্চে অংশ নিতে অস্বীকার করেছিলেন এবং নিজেকে আন্তর্জাতিক ইভেন্ট থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। আইসিসির মাধ্যমে ছোট বা বড়, দরিদ্র বা ধনী, শক্তিশালী বা কম শক্তিশালী সবার ক্ষেএে সর্বজনীন ন্যায়বিচার না থাকলে একটি মহৎ উদ্যোগ ধসে পড়বে।
৫. একটি অনুমোদনের পাশাপাশি আর্থিক নিষেধাজ্ঞাগুলি যুদ্ধের মানসিক বিকল্প বলে মনে করা হয় যা মূলত নাগরিকদের, প্রধানত মহিলা ও শিশুদের ওপর ক্ষতির বোঝা বাড়ায় এবং কাঠামোগত সহিংসতার কারণে (অনাহার, অপুষ্টি, এবং রোগ) বড় আকারের মৃত্যু এবং ভোগের কারণ হয়। আজ পর্যন্ত আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলি বেশিরভাগ ক্ষেএে অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়ছে। তবে পশ্চিমাদের বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী অবস্থানের কারনে নিষেধাজ্ঞাগুলি আরোপ করার তাদের একচেটিয়া শক্তির বিকাশ হয়েছে এবং একই কারনে সেই শক্তি তাদেরকে তাঁদের দ্বৈত মান এবং কপটতা সম্পর্কে ভিন্ন চিন্তার করার ধারণা থেকে রক্ষা করছে। নিষেধাজ্ঞাগুলি সর্বদা পশ্চিমের দ্বারা আরোপিত হয় এবং অন্যভাবে কখনও ঘটেনি। ২০১৩ সালে মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি যখন সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পদচ্যুত করেছিলেন এবং গণ-বিক্ষোভের পরে একটি নৃশংস সামরিক জান্তা বসানো হয়েছিল, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অভ্যুত্থানকে সেনাবাহিনীর `গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার` বলে বিবেচনা করেছিল এবং কোনও নিষেধাজ্ঞার চাপ দেয়নি। থাই মিলিটারি ২০১৪ সালে অনুরূপ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের সময় থাইল্যান্ডে সমস্ত সামরিক সহায়তা স্থগিত করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটিশ সরকার উজবেকিস্তান, যা এমন একটি দেশ যেখানে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে জীবিতভাবে পুড়িয়ে মারা হয়েছে বলে জানা গেছে সেই দেশের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের দিকে এগিয়ে চলেছে। এই দেশের দমনমূলক শাসন এক কোটি মানুষকে তুলা তোলার জন্য দাস শ্রমিক হিসাবে ব্যবহার করছে তখনও পশ্চিমারা কোনও অনুমোদনের চাপ দেয়নি বা সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করেনি।
৬. ড্রোনগুলি মূলত বিদেশে বিচার বিহিন লক্ষ্যবস্তু হত্যার একটি প্রোগ্রাম এবং তা অনেক নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। ড্রোনগুলি প্রতিটি তথাকথিত বিদ্রোহি বা ধর্মান্ধ একজনকে হত্যার জন্য একই সময় ৪৯ জন বেসামরিক লোককে হত্যা করে। এই উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্রাগার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্যদেরকে বিশ্বের প্রত্যন্ত কোণে সামরিক শক্তি প্রদর্শন করতে সক্ষম করছে। এই জাতীয় প্রযুক্তিগত দক্ষতা রক্ত, ধন এবং বিবেকের বিষয়ে ‘হাল্কা যুদ্ধ’ এবং ‘হাল্কা নৈতিকতার’ প্রলোভনমূলক প্রতিশ্রুতি ধারণ করে। কে শত্রু, কে যোদ্ধা এবং কে সন্ত্রাসী, এই লক্ষ্যবস্তুর সিদ্ধান্তটি মানুষ নিজেই নিচ্ছে, ড্রোন নয়। এগুলি প্রযুক্তিগত নয়, তবে এটি মানুষের তৈরি একটি নৈতিক সংকল্প।
৭. যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনে একতরফাভাবে সামরিক শক্তি ব্যবহার করবে, যখন তা আমাদের মূল স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজন বোধ করবো”। তবে তার অল্প সময়ের পর তিনি দাবি করেছেন যে “বড় জাতি অথবা ছোট - প্রত্যেক দেশকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক নিয়ম পালন ও প্রয়োগ করায় আমাদের দায়িত্ব যতাযত পালন করতে হবে।”দুটি বিবৃতি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং প্রকৃতপক্ষে দ্বিতীয়টি রাশিয়া যখন তাদের কথায় মূল স্বার্থরক্ষার জন্য ক্রিমিয়া এবং ইউক্রেনের পদক্ষেপ নিয়েছিল তার জন্য রাশিয়ার সমালোচনা প্রসঙ্গে ঐ কথা বলা হয়েছিল।
৮. সাদ্দাম হোসেন এমন এক ব্যক্তি ছিলেন যে স্নায়ু গ্যাস থেকে শুরু করে অ্যানথ্রাক্স এবং শত্রুর বিরুদ্ধে বুবোনিক প্লেগকে ব্যবহার করে হাজার হাজার ইরীকি মানুযকে নির্মম ভাবে হত্যা করে তখন পশ্চিমা দেশগুলো তার জঘন্য কাজের দিকে অন্ধ দৃষ্টি রাখল; যখন সারিন বিষ গ্যাস ব্যবহার করে হাজার হাজার নাগরিককে মেরে ফেলা হলো তখনও পশ্চিমারা সাদ্দামকে সমস্তভাবে সমর্থন করেছিল। কারন তারা ভাবছিল সাদ্দাম, ইরানকে পরাজিত করে দেশটিকে আটকে রাখতে পারবে। কিন্তু ভাগ্যের কি নিষ্ঠুর পরিহাস এরপরে মিথ্যার আড়ালে পশ্চিমারা ইরাকে আক্রমণ চালিয়ে দেশটিকে প্রায় ধংস করে। পশ্চিমের মিডিয়া যেমন সিএনএনের একজন নিউজ অ্যাঙ্কার আনন্দে ফেটে পড়েছিল যখন ক্ষেপণাস্ত্রগুলি বাগদাদে পড়েছিল এবং বলেছিল- "বাগদাদের রাতের আকাশ আতশবাজি প্রদর্শনে কত সুন্দর দেখাচ্ছে", এমনকি যখন শত শত ঘর বাড়ী ধংস এবং নিরীহ লোক খুন হচ্ছে (তাদের বিবেচনায় নিরহ ইরাকীর মৃত্যু সান্নিধ্যে অনিবার্য সমান্তরাল ক্ষতি, collateral damage, বলে ধরা হয়।)
৯. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, এবং ইসরাইল আপাতদৃষ্টিতে অন্যান্য দেশগুলিকে পারমাণবিক প্রযুক্তির আন্তর্জাতিক নীতি মেনে চলার বিষয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে, এবং তারাই প্রায় ৮০০০ উচ্চ-মাত্রার পারমানবিক ওয়ারহেড সংরক্ষণ করেছে - যা সমস্ত পৃথিবীকে বহুবার ধ্বংস করতে যথেষ্ট। তারপরে এই বোমা কার থাকা উচিত এবং কার উচিত নয় তা সিদ্ধান্ত নেওয়া তাদের অযৌক্তিক। পারমাণবিক অস্ত্রের মতো গুরুতর কিছু নিয়ে, আমরা অবশ্যই আশা করবে যে পশ্চিম এবং পূর্ব এই মানগুলি সমানভাবে প্রয়োগ করতে একসাথে কাজ করবে।
বিস্ময়কর আর আশার বিষয় হলো সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ধীরে ধীরে তবে অবশ্যই শক্তির দোলকের কাটা বিশ্বব্যবস্থার কাঠামোয় পশ্চিমের আপেক্ষিক ভূমিকা ও প্রভাবকে নিঃশব্দ করতে বাম দিকে ফিরে দুলতে শুরু করেছে। পশ্চিমা দেশগুলো তাদের নীতি, পছন্দ, মান এবং বাকী অংশগুলিতে তাঁদের দ্বৈত মান চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে। পশ্চিমা দেশ থেকে আপেক্ষিক শক্তি পরিবর্তনের ফলে, পশ্চিমা দেশগুলো পক্ষে বিশ্বব্যাপী রীতিনীতিগুলি মেনে চলার পথ এড়ানোর ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস ঘটছে। আন্তর্জাতিক নিয়মতান্ত্রিক সরঞ্জামগুলির কাজকর্মের সাথে সামঞ্জস্য আনতে পশ্চিমা দেশগুলো তাদের আচরণগুলির আধুনিকীকরণকে ত্বরান্বিত করার বা নরমকরণের উদ্যোগ নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না।
দুর্ভাগ্যক্রমে এবং দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশের কিছু লোক বা দলের নেতারা এমনকি আজ পড়লাম হেফাজ ই ইসলাম তাদের রাজনৈতিক লাভের জন্য এখনও পশ্চিমা দূতাবাসগুলিতে ছুটে যাচ্ছে এবং রাষ্ট্রদূতদের কাছে তাদেরকে কোন ভাবে সমর্থন করার জন্য ভিক্ষা চাইছে। তারা বিদেশী মিডিয়া নেটওয়ার্কগুলির দরজায় আমাদের কিছু ত্রুটিগুলি বা মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করছে। আমরা যতই গরিব বা ছোট হই না কেন একজন স্বাধীন জাতির নাগরিক হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের কোনও আত্মসম্মান, মর্যাদা এবং গর্ব নেই। ভারত বা রুয়ান্ডা বা সিঙ্গাপুর বা দক্ষিণ আফ্রিকা বা থাইল্যান্ডে এটি কখনই ঘটবে না। এই দেশগুলির লোকেরা বাইরের লোকের হস্তক্ষেপ ছাড়াই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর স্ব-প্রচেষ্টায় বিশ্বাসী। তারা সম্মান ও মর্যাদার সাথে আচরণ করার দাবি জানান। কখনই ভুলে যাবেন না আমাদের সবার অক্লান্ত প্রচেষ্টার কারণে আমরা আর তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ নই। হ্যাঁ, আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে তবে আমরা বিশ্বাস করি যে আমরা এগুলি নিজেরাই কাটিয়ে উঠতে পারি। আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে তবে আমাদের মর্যাদার ব্যয়ে বা কখনই সার্বভৌমত্বকে ছাড় দিয়ে নয়। সম্মান ও মর্যাদা কখনই দেওয়া হয় না তা অর্জন করতে হয়। আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারনে আমি গর্বের সাথে বিশ্বাস করি যে আমরা সেই সন্মান অর্জন করেছি। আমরা আজ বিশ্বব্যাপী সম্মানিত। বিশ্ব সম্প্রদায়ের সদস্য হিসাবে এবং সমান হিসাবে সম্মানিত হয়ে আমাদেরকে আমাদের নিয়তির জন্য লড়াই করার এবং গন্তব্য পৌঁছানোর কাজ যেমন আমরা সবাই মিলে অতিতে করছি, এখন করছি, ভবিষ্যতেও করবো। আজ বাংলাদেশ আমাদের সবার গর্ভ।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১৫ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১২ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:০৭ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক অভাবনীয়, অনন্য এবং যুগান্তকারী একটি মডেল। শিশু স্বাস্থ্য, মাতৃ স্বাস্থ্য এবং কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। নবজাতকের মৃত্যু, মাতৃ মৃত্যু কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুসরণ শুরু করেছে। গত বছর ১৭ মে কমিউনিটি ক্লিনিক ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিসিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ সারা বিশ্বের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশী জনগণের জন্য ‘আলোক বর্তিকা’।
আজকে আমরা ১৭ মে নিয়ে কথা বলছি। যেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। আবার গত বছর এই দিনে তাঁর চিন্তা প্রসূত কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজকে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, উন্নয়নশীল বাংলাদেশের কথা বলছি, যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি, একদিন উন্নত বাংলাদেশ হব বলে স্বপ্ন দেখছি এই সবকিছু শেখ হাসিনার স্বপ্ন, শেখ হাসিনার ইনিশিয়েটিভ। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৭৮১ সালে পলাশি যুদ্ধে ইতিহাসের ঘৃণিত সেনাপতি মির্জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজ উদ্দৌলার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ২০০ বছরের গোলামী আমাদের ললাটে এসেছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হলেও বাঙালী এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা পায়নি। যার পটভূমিতে বীরদর্পে আবির্ভূত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ থেকে ৭৫’ বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে স্বাধীনতার লাল পতাকা উড়েছিল বাঙালী আশায় বুক বেধেছিল।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বিয়োগান্তের ঘটনায় জাতি ছিল দিক নির্দেশনাহীন। নারকীয় এই ঘটনায় জনগণ হয়ে পড়েন দিশেহারা। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করার কোন শক্তি সাহস ছিল না। দলের অনেক বড় বড় নেতাও ছিলেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ধানমন্ডির ৩২ বাড়ি ছিল কবরের নীরবতা। সমগ্র জাতি তখন অন্ধকারে। সামরিক বুটে পিষ্ঠ গণতন্ত্র। নির্বাসনে সংবিধান আর মানুষের মৌলিক অধিকার। বাক স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। এমনকি বঙ্গবন্ধু নাম উচ্চারণ ছিল নিষিদ্ধ।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের মৌলিক চরিত্রকেই বদলে ফেলা হয়। বিশেষ করে পাকিস্তানি ধারায় সামরিক শাসনের সংস্কৃতির প্রবর্তন ঘটে দেশে। সাম্প্রদায়িকতা ফিরে আসে রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে। একের পর এক স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা ঘটতে থাকে দেশে। বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। ঠিক এমন প্রতিকূল সময় ১৯৮১ সালের ১৭ মে সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর রক্তস্নাত মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন বাঙালির মুক্তির মহানায়কের যোগ্য উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনা।