ইনসাইড টক

`চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যাপারে পুলিশের আরও সতর্ক হওয়া দরকার`

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২১


Thumbnail

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেছেন, চলমান কঠোর লকডাউনে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা মানুষের চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন। এজন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত তাদেরকে চ্যালেঞ্জ না করা। যদিও প্রথম দিনের লকডাউনে অনেক চিকিৎসককে পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হয়েছে এবং জরিমানাও গুনতে হয়েছে। তবে ‌চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরও উচিত যথাযথ পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় বের হওয়া।

চলমান করোনা পরিস্থিতি, কঠোর লকডাউন এবং করোনা চিকিৎসার বিভিন্ন দিক নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলপচারিতায় এসব কথা বলেছেন ডা. এম এ আজিজ। পাঠকদের জন্য ডা. এম এ আজিজের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের নিজস্ব প্রতিবেদক জুয়েল খান। 

ডা. এম এ আজিজ বলেন, সরকার এবার যে ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়েছে সেটা মানা হলেও লকডাউন হবে। আর নির্দেশনা মানানোর জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। এবারের এই লকডাউন যে কঠোরভাবে মানা হচ্ছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এর বড় প্রমাণ হচ্ছে লকডাউনের প্রথম দিনে অনেক চিকিৎসককেও পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। এভাবে যদি কিছুদিন কঠোর বিধিনিষেধ এবং স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে মানুষকে রাখা যায় তাহলে সংক্রমণ কমে আসবে। আর সংক্রমণ কমে আসলে লকডাউন কমিয়ে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানানোর দিকে জোর দিতে হবে।

প্রথম দিনের লকডাউনে চিতিৎসকদের সঙ্গে পুলিশের মুভমেন্ট পাস নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে সেটার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথম দিনের লকডাউনে চিকিৎসকদের সঙ্গে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আর এ কারণে কয়েকজন চিকিৎসককে জরিমানাও করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত। আগামী দিনগুলোতে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। কোনো চিকিৎসক যদি নিজের পরিচয়পত্র দেখাতে পারেন তাহলে তার কোনো জরিমানা হবে না যেমনটা হয় গণমাধ্যম কর্মীদের ক্ষেত্রে। 

ডা. এম এ আজিজ বলেন, মাঠ প্রশাসন কিংবা পুলিশ প্রশাসন যারা লকডাউন বাস্তবায়ন করবেন তারা যাতে নিরাপদ থাকেন সেজন্য তাদের স্বাস্থ্যবিধি, ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ এবং থাকার জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং নিরাপদে থাকার বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। তারা নিজেরা যদি সুরক্ষিত না থাকে তাহলে অন্যদের সুরক্ষার দায়িত্ব তারা কীভাবে নেবে। তাদের টিকার দ্বিতীয় ডোজ দিলে তাদের আক্রান্তের ঝুঁকি কম থাকবে এবং নিরাপদে থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা যতই হাসপাতালের অবকাঠামো বৃদ্ধির কথা বলি কিন্তু এটা কোনো বাস্তবসম্মত সমাধান নয়। সংক্রমণ যদি কমানো না যায় তাহলে যতই হাসপাতালের বেডের সংখ্যা বাড়ানো হোক সেটা কোনো কাজে দেবে না। এখন বাসায় থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। নিয়মিত হাত ধোয়া, স্বাস্থ্যবিধি মানা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে যাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়। আমরা নিজেরা যদি সচেতন না হই তাহলে করোনা মোকাবেলায় সফলতা কঠিন। তবে সরকার ইতিমধ্যে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা, টিকা ব্যবস্থাপনাসহ সব ধরনের কার্যক্রমে অনেক এগিয়ে বলে মনে করেন এই চিকিৎসক নেতা



মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কেবি মডেল

প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ১৫ মে, ২০২৪


Thumbnail

দেশজুড়ে বিশেষ করে ঢাকা শহরে ডেঙ্গু একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্যও ডেঙ্গু আক্রান্তের তীব্রহারের ইঙ্গিত দেয়। ইতোমধ্যে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাফল্য দেখিয়েছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া কলকাতা মডেল। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মশা গবেষক অধ্যাপক . কবিরুল বাশার কেবি (কবিরুল বাশার) মডেল নামে একটি মডেল তৈরি করেছেন। বুধবার (১৫ মে) বাংলা ইনসাইডারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি মডেল সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।

বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণ খুব সফলভাবে মোকাবেলা করেছে। মানুষ থেকে মানুষের ছড়ানো এই ভাইরাসটি মোকাবেলা করা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে করোনার বিরুদ্ধে জয়ী হতে পেরেছে বাংলাদেশ।

দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা পরিচিত শত্রু এডিস মশা এবং তার দ্বারা সংক্রমিত রোগ ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়া। ২০০০ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় প্রতিবছরই কমবেশি ডেঙ্গু হয়েছে। ডেঙ্গু এবং এর বাহক মশা সম্বন্ধে আমরা সকলেই অবগত এবং এর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও আমাদের জানা। তারপরেও আমরা কেন ব্যর্থ হচ্ছি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে?

গত কয়েকদিন ধরে  প্রতিদিন গড়ে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে প্রায় আড়াই হাজারের বেশী মানুষ। ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। কোনভাবেই যেন ঠেকানো যাচ্ছে না এডিস মশা এবং তার ডেঙ্গু সংক্রমণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে এখন পর্যন্ত প্রায় লাখ ২৩ হাজার মানুষ ডেঙ্গু রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। যদিও এই পরিসংখ্যানটি সম্পূর্ণ নয়। কারণ এটি শুধুমাত্র যে সকল হাসপাতালগুলোও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে রিপোর্টিং করে তাদের তথ্য। এছাড়াও অনেক হাসপাতাল ক্লিনিকে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে যার তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে পৌঁছায় না। আবার অনেক রোগী বাসায় থেকেও চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব গবেষণাগার সবসময়ই মশা মশা বাহিত রোগ নিয়ে গবেষণা করে। আমরা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, মাঠ পর্যায়ের এডিস মশার ঘনত্ব, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আদ্রতা এই কয়েকটি বিষয়কে নিয়ে মাল্টিভেরিয়েট এনালাইসিস করে ফোরকাস্টিং মডেল তৈরি করি। যার মাধ্যমে ডেঙ্গু সম্বন্ধে আগাম ধারণা দিতে পারি। আমাদের গবেষণাগার থেকে পর্যন্ত আমরা যে আগাম তথ্য দিয়েছি তার সবগুলোই সঠিক হয়েছে।  আমাদের বর্তমান ফোরকাস্টিং মডেল বলছে আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হবে।  শুধুমাত্র ঢাকায় নয় বাংলাদেশের সব জায়গায় ডেঙ্গু আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যাবে।

বাংলাদেশের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা একটি মডেল তৈরি করেছি।  এই মডেলটি অনুযায়ী পাঁচ বছর কার্যক্রম চালাতে পারলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ হবে বলে আমি নিশ্চিত করতে পারি। ধারণা করা হয় এবছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আমার এই মডেলটি বাস্তবায়নে যে ব্যয় হবে তা মোট নিয়ন্ত্রণ ব্যয়ের চাইতে অনেক কম হবে। মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। বাংলাদেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রস্তাবিতকেবি মডেলরুপরেখা নিম্নরূপ।

. স্বাস্থ্যকর্মী: প্রতি এক হাজার হোল্ডিং বা বাড়ির জন্য একজন করে স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিতে হবে। আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে এই জনবল নিয়োগ করা যেতে পারে। এই স্বাস্থ্যকর্মী কাছে প্রতিটি বাড়ির মালিকের ফোন নাম্বার এবং ঠিকানা থাকবে।  বাড়ির মালিকের সাথে তার নিয়মিত যোগাযোগ থাকবে। ওই বাড়িতে কারো কোনরকম জ্বর হয়েছে কিনা সেই তথ্য নিয়মিতভাবে তার কাছে থাকতে হবে।  প্রতি ১৫ দিনে একদিন তার নির্ধারিত বাড়িতে গিয়ে বাড়ির মালিকপক্ষের কাউকে নিয়ে সম্পূর্ণ বাড়ি এবং বাড়ির আঙিনা ঘুরে দেখতে হবে কোথাও কোন পাত্রে পানি জমা আছে কিনা, যেখান থেকে ডেঙ্গুর বাহক এইডিস মশার প্রজনন হতে পারে। যদি ওই বাড়িতে এইডিস মশার জন্মাতে পারে বা জন্মেছে এমন কোন ধরনের পাত্র পাওয়া যায় তাহলে সেই বাড়ির লোককে দিয়ে সেইটি ব্যবস্থাপনা করতে হবে। তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে কিভাবে এই কাজটি করতে হয়।  নিয়মিতভাবে তাদের এই কাজ করার জন্য অনুরোধ করতে হবে। যদি কোন বাড়িতে ডেঙ্গুর বাহক এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় তাহলে সেই বাড়ির মালিককে মশার লার্ভা সম্পর্কে সম্মুখ  জ্ঞান প্রদান করতে হবে। লার্ভা প্রাপ্ত বাড়ির মালিককে সর্তকতা নোটিশ প্রদান করতে হবে যেন ভবিষ্যতে আর না পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে লার্ভা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সেই নোটিশে উল্লেখ থাকতে হবে।

বাড়ি ভিজিট করার সঙ্গে সঙ্গে প্রাপ্ত তথ্য এবং উপাত্ত ডেঙ্গু নিধন অ্যাপে এন্ট্রি দিতে হবে। এন্টি দেওয়ার পরেই কেন্দ্রীয় টিম,জিআইএস টিম, ্যাপিড রেসপন্স টিম সেটি দেখতে পাবে। যদি কোন বাড়িতে ডেঙ্গু রোগী থাকে এবংএইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় তাহলে কেন্দ্রীয় ্যাপিড রেসপন্স টিম দ্রুত ওই বাড়ি এবং তার আশেপাশে মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিবে। মশা নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে সেটিও অনলাইন অ্যাপে এন্ট্রি দিতে হবে যেন কেন্দ্রীয় টিম সেটি সহজেই মনিটরিং করতে পারে। স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে তিন ধরনের স্টিকার থাকবেসবুজ, হলুদ এবং লাল। যদি বাড়িতে কোন ধরনের পানি জমা না থাকে তাহলে সেই বাড়িতে সবুজ স্টিকার লাগানো, এইডিস মশার প্রজনন স্থল আছে কিন্তু লার্ভা নেই এমন বাড়িতে হলুদ আর যদি লার্ভা পাওয়া যায় তাহলে সেই বাড়িতে লাল স্টিকার লাগিয়ে দিতে হবে। বাড়ির মালিককে জানাতে হবে যে সে কোন কারণেই এই স্টিকার তুলে ফেলতে পারবে না। স্টিকার তুলে ফেললে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে ডেঙ্গু টেস্ট করার কিট থাকতে হবে।  ওই বাড়ির কারো জ্বর থাকে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করিয়ে দিতে হবে। যদি কোন বাড়িতে ডেঙ্গু পজেটিভ পাওয়া যায় তাহলে সিটি কর্পোরেশনের চিকিৎসকের সাথে তার সংযোগ করিয়ে দিতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের চিকিৎসক নিয়মিতভাবে তার খোঁজখবর রাখবেন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দিবেন। তার অধীনে থাকা প্রতিটি বাড়ির প্রতিবার পর্যবেক্ষণের পূর্ণাঙ্গ তথ্য ছবিসহ অ্যাপে আপলোড করতে হবে।

শুধুমাত্র আবাসিক এলাকা নয় একজন স্বাস্থ্যকর্মীর অধীনে তার এলাকার নির্ধারিত সমস্ত হোল্ডিং গুলোই থাকবে। সেটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল বা অফিস আদালতও হতে পারে। স্বাস্থ্যকর্মীকে ১৫ দিনে একদিন যেতেই হবে এবং সেই বাড়ির সমস্ত তথ্য অনলাইনে আপলোড করতে হবে। জাতীয় ডাটা ম্যানেজমেন্ট এর জন্য বিভিন্ন ধরনের ফ্রি অ্যাপস আছে।  অথবা সিটি কর্পোরেশন নিজেরাও এই অ্যাপ তৈরি করে নিতে পারে।

. ক্লিনার: প্রতিটি ব্লকে একজন করে ক্লিনার থাকবে। ক্লিনারের কাজ হচ্ছে আটকে যাওয়া ড্রেন, ডোবা, নর্দমার পানি প্রবাহিত রাখা। কারণ আবদ্ধ পানিতে মশা জন্ম হয়। সাথে সাথে তার ব্লকের বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা পাত্র যেখানে এডিস মশা জন্মানোর সম্ভাবনা আছে সেগুলো পরিষ্কার রাখা।

. মশককর্মী: প্রতিটি ব্লকে দুজন করে মশককর্মী থাকবে যারা সকালে লার্ভিসাইড এবং বিকালে এডাল্টিসাইড স্প্রে করবে। প্রতি তিন দিন পর পর অবশ্যই একটি এলাকাতে লার্ভিসাইড এবং এডাল্টিসাইড স্প্রে নিশ্চিত করতে হবে। আর এই নিশ্চিতকরণের দায়িত্বে থাকবে একজন ওয়ার্ড সুপারভাইজার। ওয়ার্ড সুপারভাইজার আঞ্চলিক কীটতত্ত্ববিদকে রিপোর্ট করবেন।

. সুপারভাইজার: একটি  ওয়ার্ড এর জন্য একজন সুপারভাইজার থাকবে। তিনি তার ওয়ার্ডের সমস্ত স্বাস্থ্য কর্মী মশককর্মীদের নিয়মিত কাজ নিশ্চিত করবেন। তার স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজের মাসিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন ওয়ার্ড কমিটিকে প্রদান করবেন।  তার ওয়ার্ড প্রতিটি বাড়ির মশা বাহিত রোগের খবরা খবর রাখবেন। তার ব্লকে কোথায় মশা জন্মানোর স্থান আছে সেটি কিউলেক্স মশা না এডিস মশা তার রেকর্ড তার কাছে থাকতে হবে। সাথে সাথে তার ব্লকের জনগণকে সচেতন করা এবং মশা নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করার দায়িত্ব তার থাকবে। তার অধীনে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত মোবাইল অ্যাপে এন্ট্রি দিচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করবেন।

. সহকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা: প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে চিকিৎসক সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে থাকবেন।  তিনি সুপারভাইজারের কাছ থেকে ডেঙ্গুর বাহক এইডিস মশা, তার প্রজনন স্থল, ঘনত্ব, ডেঙ্গু রোগী ইত্যাদি সমস্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করবেন। তার ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা খবরাখবর রাখবেন। তিনি তার আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে নিয়মিত মাসিক সভায় প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন: পৃথিবীতে কোন নাগরিকের সম্পৃক্ততা ছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণ করা কখনোই সম্ভব নয়। নাগরিকদেরকে মশা নিয়ন্ত্রণে সম্পৃক্ত করার জন্য পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে আইন রয়েছে। সেরকম একটি আইন বাংলাদেশে তৈরি করে তার বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। কোন ব্যক্তি যেন তার নিজ জায়গায় মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করে অপরের ক্ষতি করতে না পারে তা রোধ করাই এই আইনের উদ্দেশ্য।

মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশকের পর্যাপ্ততা: মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত কীটনাশক জনগণের হাতের নাগালে আনতে হবে। তেলাপোকা এবং ইদুর মারার কীটনাশক এর মত মশা নিয়ন্ত্রণের কীটনাশক মানুষের কাছে সহজলভ্য হতে হবে। যেন মানুষ সহজেই কীটনাশক কিনে তার বাড়ি এবং আশেপাশে ব্যবহার করতে পারে।

কীটনাশক রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজীকরণ: আমাদের দেশে একটি কীটনাশক বাজারজাত করতে গেলে যে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া রয়েছে সেটিতে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা যায়। একটি কীটনাশক রেজিস্ট্রেশন এর জন্য আবেদন করার পরে সর্বোচ্চ মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা প্রয়োজন।

মশক নিয়ন্ত্রণ বা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য নিম্নলিখিত কমিটি করা যেতে পারে:

কেন্দ্রীয় কমিটি, কমিটির সদস্য: মেয়র, উপদেষ্টা বা পরামর্শক, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা, উপ প্রধান স্বাস্থ্যকর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মকর্তা,আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, কীটতত্ত্ববিদ, জিআইএস এক্সপার্ট কাউন্সিলর।

কাজ: প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর ডেঙ্গু পরিস্থিতি মশক সমস্যা বিষয়ক মূল্যায়ন সভা। প্রতিটি ওয়ার্ডকে লিখিত আকারেপরবর্তী দিকনির্দেশনা প্রদান। মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশকলোকবল, এবং সরঞ্জামাদি নিশ্চিত করা।

জি আই এস টিম, কমিটির সদস্য: প্রধান জিআইএস এক্সপার্ট, কীটতত্ত্ববিদ,স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

কাজ: স্বাস্থ্যকর্মীরা যে তথ্য উপাত্ত অ্যাপে এন্ট্রি দিচ্ছে তা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ ম্যাপে রূপান্তর। ডেঙ্গুর হট স্পট নির্ধারণ। হটস্পট অনুযায়ী ্যাপিড রেসপন্স টিমের কাছে বাড়ির ঠিকানা তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করা। ্যাপিড রেসপন্স টিমের কার্যক্রম নিশ্চিত করা।

মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন টিম, কমিটির সদস্য: এটি সিটি কর্পোরেশনের বাইরের কোন অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদ বা প্রতিষ্ঠান দিয়ে করিয়ে নিতে হবে।

কাজ: দুই মাস অন্তর অন্তর প্রতিটি ওয়ার্ডের ডেঙ্গু পরিস্থিতি মশক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ মূল্যায়ন করবেন। প্রতিটি ওয়ার্ডের মশার ঘনত্ব ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করবেন। তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনলাইনে এন্ট্রি করবেন। এতে স্পষ্ট হবে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে যে কার্যক্রম করা হয়েছে সেটি আসলে ফলাফল দিয়েছে কিনা। ওয়ার্ড কমিটির কার্যক্রম কতটা ফলপ্রসু হলো তা এই মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন টীম এর তথ্য উপাত্ত থেকে তুলনামূলক চিত্র পাওয়া যাবে  এবং এটি সরাসরি অনলাইনে দেখা যাবে। মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন টিম তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সরবরাহ করবে এবং এই প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় কমিটির পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

র‍্যাপিট রেসপন্স টিম, কমিটির সদস্য: কীটতত্ত্ববিদ,মশক সুপারভাইজার, স্প্রেম্যান, ফগারম্যান, ক্লিনার, ড্রাইভার।

কাজ: জিআই স্টিমের তথ্য উপাত্ত অনুযায়ী কোথাও ডেঙ্গুর রোগী পাওয়া গেলে সেই বাড়ির ৪০০ গজের মধ্যে উড়ন্ত মশা নিধন নিশ্চিত করা। কোথাও এইডিস মশার ঘনত্ব বেশি পাওয়া গেলে সেইখানেও মশা নিধন নিশ্চিত করা। তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন করে মোবাইল অ্যাপে এন্ট্রি দেওয়া।

আঞ্চলিক কমিটি, কমিটির সদস্য: সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি অঞ্চলে একটি করে আঞ্চলিক কমিটি থাকতে হবে। আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা,কীটতত্ত্ববিদ,মশক সুপারভাইজার।

কাজ: তার অঞ্চলে মশক নিধন কার্যক্রম তদারকি করা। কেন্দ্রীয় কমিটিকে অবহিত করা। প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর প্রতিটি ওয়ার্ডের ডেঙ্গু পরিস্থিতি মশক সমস্যা বিষয়ক মূল্যায়ন সভা। প্রতিটি ওয়ার্ডকে লিখিত আকারেপরবর্তী দিকনির্দেশনা প্রদান। মশা নিয়ন্ত্রণে তার অঞ্চলে কীটনাশক, লোকবল, এবং সরঞ্জামাদি নিশ্চিত করা।

ওয়ার্ড কমিটি, কমিটির সদস্য: সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ওয়ার্ড কমিটি থাকতে হবে। কাউন্সিলর, সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা,মশক সুপারভাইজার।

কাজ: তার ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম তদারকি করা। আঞ্চলিক কমিটিকে অবহিত করা। প্রতি মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মশক সমস্যা বিষয়ক মূল্যায়ন সভা। মশক সুপারভাইজার কে লিখিত আকারেপরবর্তী দিকনির্দেশনা প্রদান। মশা নিয়ন্ত্রণে তার ওয়ার্ডে কীটনাশক, লোকবল, এবং সরঞ্জামাদি নিশ্চিত করা।

কাজগুলোকে বাস্তবায়নের জন্য অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদ দিয়ে আধুনিক এবং সময় উপযোগী গাইডলাইন তৈরি করে নিতে হবে। মশা নিয়ন্ত্রণের আধুনিক সরঞ্জামাদি এবং আধুনিক কীটনাশক নির্দেশিকা এই গাইডলাইন থাকবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সারা দেশের মশা এবং অন্যান্য বাহক নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি স্বতন্ত্র সেন্টার তৈরি করতে পারে। যেটির নাম হতে পারে বাংলাদেশ ভেক্টর কন্ট্রোল রিসার্চ সেন্টার। এই সেন্টারের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের মশা এবং অন্যান্য বাহক নিয়ন্ত্রণ হতে পারে। এই সেন্টারে বছরব্যাপী মশা, অন্যান্য বাহক কীটনাশক নিয়ে গবেষণা হবে এবং তারাই নির্দেশনা দিবে কখন কোন কীটনাশক কোন বাহক এর জন্য ব্যবহৃত হবে। বাহকের আচরণ এবং নতুন নতুন বাহক এর ক্ষেত্রে কি ধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে সেটির দায়িত্ব তাদের উপর থাকবে। এই সেন্টারে অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ দিতে হবে। এই সেন্টার দেশব্যাপী মশা অন্যান্য বাহক নিয়ন্ত্রণের অভিভাবক হিসেবে কাজ করবে। এই প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদদের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সেক্টরের জনপ্রতিনিধি কর্মকর্তাদেরকে বাহকের আচরণ, প্রজনন এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ প্রদান করবে।  সাথে সাথে মশা নিয়ন্ত্রণের আধুনিক সরঞ্জাম কীটনাশক সরবরাহ করবে।

ডেঙ্গু যেহেতু এখন সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই তাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোকে মশক নিধনে যুগোপযোগী করে তুলতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং জেলা পরিষদ প্রতিটি জায়গায় তাদের মশক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

প্রতিটি জেলাতে জেলা কীটতত্ত্ববিদ এর একটি পদ রয়েছে। কোন কোন জেলাতে এপদে কর্মকর্তা রয়েছে। যেসব জেলাতে পদগুলি ফাঁকা রয়েছে সেসব জেলাতে এই পথ গুলো পূরণ করে এই মশা নিয়ন্ত্রণ কাজ জোরদার করা প্রয়োজন।

এই মুহূর্তে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নাজুক। আগামী দুটি মাস পরিস্থিতি খারাপ থাকবে। তাই এই মুহূর্তে একে অপরকে দোষারোপ না করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এবং জনগণকে যার যার অবস্থান থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভালো হয়ে গেলে নীতি নির্ধারকরা ভুলে যাবেন না। আগামী বছরগুলোর জন্য একটি টেকসই পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য উদ্যোগী হবেন নিশ্চয়ই।


জাহাঙ্গীরনগর   প্রাণিবিদ্যা   মশা   গবেষক   অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

কোরবানিতে পশুর কোন সংকট হবে না: প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

আগামী কোরবানি ঈদে চাহিদার তুলনায় গবাদি পশুর যোগান বেশি আছে, ফলে পশুর কোনো সংকট হবে না বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এক কোটি ৩০ লাখের বেশি পশু রয়েছে।  

মঙ্গলবার (১৪ মে) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এ কথা বলেন মন্ত্রী।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, চাহিদার তুলনায় কোরবানির পশু বেশি আছে। সুতরাং এটি নিয়ে বিভ্রান্তি হওয়ার কোন কারণ নেই। হতাশা হওয়ারও কোন কারণ নেই। আমরা আমাদের উৎপাদিত গবাদি পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মেটাতে পারব। 

তিনি বলেন, কেউ একটা গরু মোটা অংকের টাকা দিয়ে কেনে সে যেমন কোরবানি দিয়ে ধর্মীয় অনুশাসন পালন করে তেমনি অন্যদিকে তার একটা সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিরও বিষয় বা ক্ষেত্র তৈরি করতে চায়। সুতরাং মোটাতাজা গরুর যেমন চাহিদা আছে আবার ছোট বা মাঝারি গরুরও আলাদা একটা চাহিদা আছে। এবং সেভাবে আমাদের প্রস্তুতিও আছে। আমি মনে করি ক্রেতাদের কাউকে বিমুখ হয়ে ফেরত যেতে হবে না। মানুষের চাহিদা মতো এবার আমাদের গবাদি পশু প্রস্তুত আছে।

কোরবানি পশু দাম বৃদ্ধির জন্য সিডিকেন্ট একটি কারণ উল্লেখ্য করে আব্দুর রহমান বলেন, সিডিকেন্ট একটা ব্যাধির মতো। এটি বন্ধ করতে যে জায়গা গুলো চিহ্নিত করার প্রয়োজন সেটি হলো পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়া, হাট বাজারে হাসিল নিয়ে নানা ধরনের বিষয়াদি থাকে। গরুর বেপারীদের হয়রানির বিষয় থাকে। এগুলোকে চিহ্নিত করার জন্য আমরা আন্ত:মন্ত্রণালয় একটা বৈঠক খুব শিগগিরই করবো। এ নিয়ে আমরা ১৬ তারিখে খামারিদের নিয়ে বসবো। এই সমস্যাগুলো নিরসন করতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে সে বিষয়গুলো নিয়ে তাদের সাথে আলাপ করবো।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে এখন অনলাইনে গবাদি পশু কেনাবেচার প্রবণতা বা আগ্রহের বিষয়টি বাড়ছে। এটি আমরা কীভাবে আরও উৎসাহিত করতে পারি এবং ঝামেলামুক্ত করতে পারি সেটা নিয়েও আমাদের আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে। অনেকে পরিবার সহ গরু কিনতে যেতে পছন্দ করেন আবার কেউ কেউ আছেন যারা এটাকে ঝামেলা মনে করে অনলাইন পাঁচটি গরু দেখে পরে একটা পছন্দ করে কেনেন। সুতরাং পুরো বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘নতুন কারিকুলাম অনুসারে তীব্র তাপদাহেও স্কুল খোলা না রেখে উপায় নাই’

প্রকাশ: ০৪:০৫ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, এপ্রিল মাসে তীব্র তাপদাহ যাচ্ছে। এটা একটু কষ্টদায়ক বটে। তবে মে মাসেও তো আবহাওয়া এমন থাকবে এবং সে সময় প্রচন্ড গরম থাকবে। কিন্তু তাই বলে তো আর স্কুল, কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এত লম্বা সময় ধরে বন্ধ রাখা যায় না।

দেশে চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এ নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এসব কথা বলেছেন। 

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, আমাদের নতুন যে কারিকুলাম সেটা বাস্তবমুখী শিক্ষা। সে অনুযায়ী স্কুলে উপস্থিত থাকার বিষয়টি এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ স্কুলে না গিয়ে শেখার উপায় নেই। এছাড়াও করোনার সময় এমনতেই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় একটা বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তাছাড়া কিছুদিন আগে ঈদের ছুটি, পয়লা বৈশাখের ছুটি সব মিলিয়ে একটা বড় সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।

তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই দেশের তাপমাত্রা কমে আসবে। এখন যেহেতু তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে সেজন্য আমরা মনিং স্কুল চালু করতে পারি। এখন হয়ত সকাল ৮টায় ক্লাস শুরু হয় সেখানে আমরা এখন থেকে সকাল ৭টায় ক্লাস শুরু করতে পারি এবং ১১ টার মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। যেমন, আজকে সকালে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। তাছাড়া দেশের সব জাগয়ায় তাপমাত্রা একই রকম না। যেমন সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহে তুলনামূলক তাপমাত্রা কম এবং এই অঞ্চলগুলো গত দুদিন ধরে বৃষ্টি হয়েছে। এরকম অবস্থায় স্কুল বন্ধ রাখলেও তো আবার তাদের জন্য ক্ষতি।

তীব্র তাপপ্রবাহের বাস্তবতা মেনে নিয়ে আমাদের পাঠ্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে উল্লেখ্য করে অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান  বলেন, যেহেতু তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে সেজন্য আমরা কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে পারি। যেমন, এ সময় আমাদের স্কুলগুলোতে পযাপ্ত আলো-বাতাস বিশেষ করে এ সময় যেন লোডশেডিং না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। গ্রামের স্কুলগুলোতে যেন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে সে ব্যাপারে আমাদের বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি’

প্রকাশ: ০৪:০৫ পিএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, যারা দলের নির্দেশনা মানতে পারেননি, তারা তো না পারার দলে। দল থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, কোন মন্ত্রী-এমপির পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন না। এটা ছিল দলের বৃহত্তর স্বার্থে। সেজন্য সেটা পালন করা সবাই নৈতিক দায়িত্ব ছিল। কিন্তু যখন কেউ কেউ সেই নির্দেশ মান্য করেননি সেটার দায়-দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে। দলের প্রতি তাদের কমিটমেন্ট নিয়ে আমার বড় প্রশ্ন রয়েছে।

কোন মন্ত্রী-এমপির পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনেরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন না—এমন নির্দেশনা থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি কোন কোন এমপির পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনেরা। এ নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। পাঠকদের জন্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ। 

তিনি বলেন, দল করলে আপনাকে দলের সিদ্ধান্ত, গঠনতন্ত্র, শৃঙ্খলা ইত্যাদি বিষয়গুলো মানতেই হবে। সেটা না করলে আপনি রাজনীতিতে কখনও ভালো করতে পারবেন না। এটা শুধু রাজনীতিতে নয়, যে কোন সেক্টরে এটা প্রযোজ্য। আওয়ামী লীগ সভাপতি যখন নির্দেশ দিলেন তখন সেটা অমান্য করার প্রশ্নই আসে না। এরপরও যারা দলের সিদ্ধান্তকে মানলেন না তাদের আদর্শ নিয়ে তো বড় প্রশ্ন আছে। কারণ নির্দেশ অমান্য করা দলের নীতি আদর্শের সাথে যায় না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তাদের মধ্যে কতটুকু আছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন। তবে এখনও সময় ফুরিয়ে যায়নি। যারা এখনও মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তাদের উচিত হবে অনতিবিলম্বে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়া।

নির্দেশনা অমান্য করা ক্ষেত্রে দলের কৌশলের ভুল আছে কিনা বিশেষ করে এর আগে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে একাধিকবার বহিষ্কার করে আবার দলে ফিরিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এটা থেকে যদি কেউ অনুপ্রাণিত হয় তাহলে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত ভালো হবে না এটা নিশ্চিত। আমি বলব তারা ভুল রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করেছে। এরা অচিরেই রাজনীতিতে হারিয়ে যাবে। দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে বা গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে কেউই এখন পর্যন্ত রাজনীতির চরম শিখরে পৌঁছাতে পারেনি। বরং যিনি দলের প্রতি অবিচল থেকেছেন, দলের সিদ্ধান্তকে মান্য করেছেন, দলের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি তারা ধাপের ধাপে রাজনীতিতে উন্নতি করেছেন দেশের জন্য অবদান রাখতে পেরেছেন, জনগণের নেতাতে পরিণত হয়েছেন, রাজনীতিতে অমরত্ব লাভ করেছেন। কিন্তু যারা এর ব্যতিক্রম করেছেন তারা সেই স্বাদ পাননি।

তিনি আরও বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ হয়তো সাময়িক ভাবে লাভবান হতে পারেন কিন্তু একটা সময়ের পর রাজনীতিতে থেকে জীবনের জন্য হারিয়েছে যাবেন। রাজনীতিতে তারা অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়বেন। জনগণের কাছে তাদের মযার্দার আসন হারাবেন, জনগণ দ্বারা প্রত্যাখান হবেন। কেউ যদি সে পথে পা বাড়ান সেটার দায়-দায়িত্ব তার নিজের।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘উপজেলা নির্বাচনে স্বজনদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত ত্যাগী কর্মীদের অনুপ্রাণিত করেছে’

প্রকাশ: ০৫:০৩ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে স্বজনদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এর মধ্য দিয়ে একটি স্পষ্ট হয়েছে যে, রাজনীতির মধ্য দিয়েই প্রধানমন্ত্রীর উত্থান হয়েছে এবং তিনি যে দল ও ত্যাগী নেতাদের ভালোবাসেন, তাদের প্রতি যে তার মমত্ববোধ সেটি প্রকাশ পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই সিদ্ধান্তের কারণে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা রাজনীতিতে নতুন আলোর সঞ্চার দেখছেন এবং তারা নিঃসন্দেহে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তারা আশ্বস্ত হয়েছেন যে, রাজনীতি রাজনীতিবিদদের কাছেই থাকবে।

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নির্দেশের যৌক্তিকতা এবং দলের অবস্থান সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে আলাপচারিতায় জাহাঙ্গীর কবির নানক এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের অনেকে আছেন যারা উত্তরাধিকারে সূত্রে রাজনীতিতে এসেছেন এবং তারা স্ব স্ব অবস্থানে ভালো অবদান রাখছেন তাহলে এখন কেন আওয়ামী লীগ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলো—এমন প্রশ্নের উত্তরে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, রাজনীতির বিষয়টি ধন-সম্পদের মত বিষয় নয়। কোন এমপি বা মন্ত্রীর সন্তান উপজেলা নির্বাচন করছে সেটা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। যিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন বা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন তিনি নির্বাচন করতেই পারেন। নির্বাচন করা তার অধিকার। কিন্তু বাস্তবতা হলো কোন কোন এমপি বা মন্ত্রীর সন্তান কিংবা স্বজনেরা সরাসরি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও তাদের সন্তান, শ্যালক, ভাগ্নে বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের নির্বাচনে দাঁড় করানো হয়েছে। অথচ তিনি হয়তো কোনদিনই একবারের জন্যেও জয় বাংলা স্লোগান দেননি কিংবা দলের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেননি। এরকম যাদের অবস্থান তাদের বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ। উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতি করা বা আসা সেটা মূখ্য নিষয় নয়। কারও পরিবারতন্ত্রের কারণে যেন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চিত না হন সেটার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা। 

কোন কোন উপজেলায় এমপিরা একক প্রার্থী ঘোষণা করেছেন সেটি দলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, এটি অবশ্যই সাংঘর্ষিক। কারণ উপজেলা নির্বাচনে দল থেকে কাউকে মনোনয়ন না দেওয়া সিদ্ধান্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি যে সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দিয়েছেন সেটি অমান্য করার কোন প্রশ্নই আসে না। কারও অধিকারও নেই এই নির্দেশ অমান্য করার। এমনকি এ ধরনের মনোবৃত্তি দেখানোরও কোন সুযোগ নেই। আমি মনে করি যিনি নেত্রীর সিদ্ধান্তকে অনুসরণ করবে না তিনি এই দলের জন্য কোন ভাবেই মঙ্গলজনক হতে পারে না।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন