নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২১
শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘এখন মানুষকে ভুলে যাওয়ায় হাল ফ্যাশন’। আসলে আমদের অনেকেই এতোই নিজ-কেন্দ্রিক ও স্বার্থপর আর মানসিক অসুস্থ হয়ে গেছি যে, বাবা–মাকে দেখভাল করার জন্য সরকারকে আইন করতে হয়েছে। মানসিক সুস্থতা হলো যখন মানুষ নিজের সম্ভাব্য শক্তির জায়গাগুলি সহজেই বুঝে যায়, জীবনের নানা পর্যায়ের চাপের সাথে ভালো ভাবে মানিয়ে নিতে পারে, পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে ভালো ও ফলপ্রসূ ভাবে কাজ করতে পারে এবং সমাজের জন্য তার যথেষ্ট অবদান থাকে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, নানাভাবেই আমরা আমাদের মানসিক সুস্থতা চাঙ্গা রাখতে পারি। আমাদের দেশের নগর সংস্কৃতিতে ব্যায়াম বা হাঁটাচলা বা কাজ করা নেই বললেই চলে। সঠিক খাবারের পরিবর্তে সে জায়গা দখল করেছে ফাস্টফুড, উন্নত জীবনের মোহ মায়ায় শুধুই দৌড়চ্ছি, কোন বিশ্রাম নেওয়ার বালাই নেই, নতুন কিছু শেখার শেখা বাদ দিয়ে বুঁদ হয়ে গেছি সোশ্যাল মিডিয়ায়, গান শোনা তো বলতে গেলে শিকেয় উঠেছে, পড়ার অভ্যাস তা কিছুটা আছে বটে কিন্তু তা ইতিবাচক নয় নেতিবাচক চিন্তা ও বিষয় নিয়ে। শহরের অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠা, মেডিটেশন বা ধ্যান বাদ দিয়েছে, হাতে সময় নেই। করোনার ভয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম কিছু শুরু হলেও সহ্য করার অনুশীলন নাই হয়ে গেছে। একটু কিছু অসঙ্গতি দেখলেই খিস্তি খেঁউড় দিতে শুরু করি আমরা তাই আমাদের মাঝে মানবিক চর্চা বলতে গেলে প্রায় অনুপস্থিত। কিন্তু এগুলোই মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য চাংগা রাখার অন্যতম উপায়।
এতসব কথা বলার অর্থ হচ্ছে মানুষের অবদানের কথা ভুলে যাওয়া নিয়ে। আমরা অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মুল সুর ভুলে, তা নিয়ে ব্যবসা করছি। আমার দেখা মতে অনেক রাইফেলধারি রাজাকার এখন মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের আওলাদেরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে রাজপথে হুংকার দেয়। রাজাকার ও তাঁর আওলাদেরা এখন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বসে কলকাঠি নাড়ে সময় সুযোগ পেলেই। মামুনুল তথা হেফাজত কাণ্ড তা অনেকের কাছেই পরিষ্কার হয়ে গেছে।
ভবিষ্যৎ সুবিধা পাওয়ার বা নেবার আশায় কী ১৯৭১ সালে কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেছে যে, সেটা নিয়ে রাস্তায় হুংকার দিতে হবে! আমি মূল্যায়িত হব বলে কী ভেবে চিনতে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি? সরকারের দায় ছিল, তাই তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা ও আর পরিবারের সদস্যদের মূল্যায়নের চেষ্টা করেছেন। তাতেও ছিল নানা বাঁধা এমন কি তাঁদের করা হয়েছে অপমান এই বাংলার মাটিতে মুক্তিযুদ্ধের নব্য ধ্বজাধারীদের সহায়তায়, রাজাকারের আওলাদের সামনে রেখে। তাও মুক্তিযোদ্ধারা সহ্য করেছেন, হজম করেছেন ২০১৮ সালে; ৩০ লক্ষ শহীদ আর লক্ষ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলার মাটিতে। ২০১৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা আর তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম যে ভুলটি করেছে তা হলো তাঁরা বিশ্বাস করেন নি যে রাজাকার ও রাজাকারের আওলাদের সহায়তা করবে সরকার বা সরকারি দলের ছত্র ছায়ায় থাকা তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবসায়ীর বর্ণচোরার দল।
এটা ২০২১ আবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে ধর্মের নামে, যেমনটি হয়েছিলো ১৯৭১ সালে। মোদী বিরোধী বিক্ষোভের নামে সারা দেশে অবৈধ উপায়ে সরকার উৎখাতের যে ষড়যন্ত্র করেছিল জামায়াত-বিএনপি তথা ১৯৭১ এর পরাজিত শক্তি হেফাজতকে সামনে রেখে; সেই সব এখন ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসের দায়ে আটক অপরাধীরা একে একে তাঁদের ভয়ংকর অপরাধ পরিকল্পনার কথা জানাচ্ছে পুলিশী জেরার মুখে। মধ্যপ্রাচ্যের শেষ প্রান্তের একটি মুসলিম দেশে বসে চলছে কলকাঠি নাড়ানোর কাজ। সবাই বুঝতে পারছেন বা পেরেছেন, ইতোমধ্যেই। কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে এবারেও তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবসায়ীর বর্ণচোরার দল চুপ। কেউ কেউ ২০১৮ সালের মত এই অপকর্মের সহায়তায় সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারে নেমেছে, ধর্মের দহাই দিয়ে। মুষ্টিমেয় কিছু মুক্তিযোদ্ধা আর তাঁদের সন্তানেরা লড়াই করছে অপশক্তির বিরুদ্ধে, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সরকার উচ্ছেদের প্রাণান্ত অপচেষ্টার এই কঠিন সময়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার সরকারকে।
আমরা যারা ১৯৭১ আর ১৯৭৫ দেখেছি তাঁরা জানি যে, একজন মুক্তিযোদ্ধা এক হাজার রাজাকার বা রাজাকারের আওলাদের চেয়ে অনেক বেশী ক্ষমতাশালী, মন-মনন, চিন্তা- চেতনা আর মানসিক শক্তিতে। মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই মারা গেছেন, সবারই চুলে পাক ধরেছে, চামড়া গেছে কুঁচকে। কিন্তু সত্য, মুক্তির চেতনার আগুণ এখনো নিভে যায় নি। আয়নার সামনে না গেলে এখনো তাঁরা তাগড়া যুবকের মত বা তাঁর চেয়েও শক্তিশালী। মিথ্যাচারীরা মানসিকভাবে দুর্বল থাকে, তাদের কাজ থাকে অন্যায় আর অপরাধে, ভুলে ভরা। মুক্তিযোদ্ধা আর ১৯৭৫ পরবর্তী মুজিবসেনাদের হুংকার আর পদক্ষেপ এখনো পাল্টে দিতে পারে দেশের রাজনীতির দৃশ্যপট। তাঁদের জন্ম দেওয়া দেশ মাকে ১৯৭১ এর শকুনের ছিঁড়ে খাবে, তা কি তাঁরা বসে বসে দেখবেন তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবসায়ীর বর্ণচোরার দলের আশায়! মনে হয় না।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরে যারা ফিনিক্স পাখির মত জেগে উঠেছিল, তাঁরা আজ কোথায়? তাদেরি দায়িত্ব দেশ মাকে রক্ষা করার। ভাড়াতে তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবসায়ীর বর্ণচোরার দলকে বিশ্বাস করে কি তাঁরা ২০১৮ সালের মত রাজাকার বা রাজাকারের আলাদের কাছে, ষড়যন্ত্রের কাছে পরাজিত হতে চান! হয়তো অনেকের দেহের খাঁচা ভেঙ্গে গেছে, কিন্তু মনের খাঁচা ভাঙেনি। ভাঙেনি মনোবল। তাই দেশজুড়ে এখন মুক্তিযোদ্ধারা আয়নায় নিজের বাইরের রূপ দেখা বন্ধ করুন, চলুক আয়না ভেঙ্গে ফেলার উৎসব। মুক্ত হউক দেশ মা, মুক্তিপাক দেশের মানুষ, ষড়যন্ত্রের হাত থেকে। কারণ মুক্তিযোদ্ধারা এখনো মানসিকভাবে সুস্থ।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১৫ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১২ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:০৭ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক অভাবনীয়, অনন্য এবং যুগান্তকারী একটি মডেল। শিশু স্বাস্থ্য, মাতৃ স্বাস্থ্য এবং কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। নবজাতকের মৃত্যু, মাতৃ মৃত্যু কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুসরণ শুরু করেছে। গত বছর ১৭ মে কমিউনিটি ক্লিনিক ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিসিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ সারা বিশ্বের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশী জনগণের জন্য ‘আলোক বর্তিকা’।
আজকে আমরা ১৭ মে নিয়ে কথা বলছি। যেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। আবার গত বছর এই দিনে তাঁর চিন্তা প্রসূত কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজকে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, উন্নয়নশীল বাংলাদেশের কথা বলছি, যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি, একদিন উন্নত বাংলাদেশ হব বলে স্বপ্ন দেখছি এই সবকিছু শেখ হাসিনার স্বপ্ন, শেখ হাসিনার ইনিশিয়েটিভ। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৭৮১ সালে পলাশি যুদ্ধে ইতিহাসের ঘৃণিত সেনাপতি মির্জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজ উদ্দৌলার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ২০০ বছরের গোলামী আমাদের ললাটে এসেছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হলেও বাঙালী এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা পায়নি। যার পটভূমিতে বীরদর্পে আবির্ভূত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ থেকে ৭৫’ বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে স্বাধীনতার লাল পতাকা উড়েছিল বাঙালী আশায় বুক বেধেছিল।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বিয়োগান্তের ঘটনায় জাতি ছিল দিক নির্দেশনাহীন। নারকীয় এই ঘটনায় জনগণ হয়ে পড়েন দিশেহারা। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করার কোন শক্তি সাহস ছিল না। দলের অনেক বড় বড় নেতাও ছিলেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ধানমন্ডির ৩২ বাড়ি ছিল কবরের নীরবতা। সমগ্র জাতি তখন অন্ধকারে। সামরিক বুটে পিষ্ঠ গণতন্ত্র। নির্বাসনে সংবিধান আর মানুষের মৌলিক অধিকার। বাক স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। এমনকি বঙ্গবন্ধু নাম উচ্চারণ ছিল নিষিদ্ধ।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের মৌলিক চরিত্রকেই বদলে ফেলা হয়। বিশেষ করে পাকিস্তানি ধারায় সামরিক শাসনের সংস্কৃতির প্রবর্তন ঘটে দেশে। সাম্প্রদায়িকতা ফিরে আসে রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে। একের পর এক স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা ঘটতে থাকে দেশে। বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। ঠিক এমন প্রতিকূল সময় ১৯৮১ সালের ১৭ মে সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর রক্তস্নাত মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন বাঙালির মুক্তির মহানায়কের যোগ্য উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনা।