নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১০ জুন, ২০২১
বেগম জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার প্রেক্ষিতে সবচেয়ে আলোচিত যে বিষয়গুলো তার মধ্যে অন্যতম হল বেগম জিয়ার সম্পদ কত এবং কোথায় রয়েছে। এ নিয়ে বিএনপি`র মধ্যে, বেগম খালেদা জিয়া পরিবারের মধ্যে, বিভিন্ন মহলে নানামুখী আলোচনা রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার সম্পদের পরিমাণ কত এবং সম্পদগুলো কোথায় আছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কারোও ধারণা নেই। কারণ বেগম জিয়া অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গেই নিজের সম্পদগুলোকে সংরক্ষণ করতেন। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার মূল সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন মোসাদ্দেক আলী ফালু। তিনি সৌদি আরব অবস্থান করছেন। একাধিক সূত্র সূত্র বলছে যে, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার এবং মালয়েশিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার বিপুল সম্পদ রয়েছে। এই সম্পদের বিবরণ সৌদি আরবের একটি পত্রিকায় কয়েকবছর আগে প্রকাশিত হয়েছিল। যদিও বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে সে তথ্য অস্বীকার করা হয়েছিল।
একজন অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার সম্পদগুলো কোনটাই তার নামই নেই। বেনামে সব সম্পত্তি রয়েছে। আর এই কারণেই তার সম্পত্তির সঠিক হিসেব কখনোই বের করা সম্ভব নয়। একমাত্র বেগম খালেদা জিয়া, মোসাদ্দেক আলী ফালু ছাড়া কেউই তার সম্পত্তির পূর্ণাঙ্গ বিবরণ জানে না। তবে বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যে সম্পত্তি রয়েছে তার মূল্য বাংলাদেশী টাকায় ১ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। বেগম খালেদা জিয়ার সৌদি আরবের একটি শপিং মল, অন্তত তিনটি ফ্ল্যাট, অন্তত তিনটি বাড়ি এবং একাধিক ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যে সমস্ত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করে সৌদি আরবের লোকজন। কিন্তু সেখানে তার বিনিয়োগ আছে। এছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বেগম খালেদা জিয়ার অন্তত পাঁচটি দোকান, দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং একাধিক ফ্ল্যাট আছে বলে জানা গেছে। বেগম খালেদা জিয়ার কুয়েতে দুটি ব্যবসার খবর জানা গেছে। এছাড়াও মালয়েশিয়ায় বেনামে তার বিপুল সম্পদ রয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোসাদ্দেক আলী ফালু তার একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় বেগম খালেদা জিয়া যে সমস্ত অবৈধ উপার্জন করতেন তা বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হতো এবং বিদেশে এই সমস্ত টাকাগুলো বিনিয়োগ করতে মোসাদ্দেক আলী ফালু। মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে সৌদি আরবের শুরু থেকে ভালো সম্পর্ক ছিল এবং এই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ব্যবসায়ীদেরকে তিনি টাকাগুলো বিনিয়োগ করেন, যেখান থেকে নিয়মিত লভ্যাংশ পান। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলে ফালু বেগম খালেদা জিয়ার ছেলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা দিয়ে বিভিন্ন দুর্নীতির শুরু করেন। আর এই দুর্নীতির অংশ হিসেবেই বেগম জিয়ার নির্দেশে বিপুল সম্পদ ফালুর কাছে যায়।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ই আসলে বেগম খালেদা জিয়ার বিপুল বিত্তের বিকাশ ঘটে। এই সময় বেগম খালেদা জিয়ার তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে ফালুর ব্যাবসায়ীক পার্টনার করেন। এখন দেখা যায় যে, ফালুর যতগুলো ব্যবসা রয়েছে সেই সবগুলো ব্যবসাতেই প্রায়ই আরাফাত রহমান কোকো পার্টনার ছিলেন। এখন যেহেতু আরাফাত রহমান কোকো আর নেই, তাই বেগম খালেদা জিয়ার সম্পদ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এই সম্পদের মালিক কে হবে তা নিয়ে চলছে নানা রকম টানাপোড়েন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান মনে করছেন, এই সম্পদের মালিক কে হবে সেটি বড় প্রশ্ন নয়, বড় প্রশ্ন হল যে তার সম্পদের পরিমাণ কত। কারণ এই সম্পত্তিগুলো যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক এবং স্বীকৃত সম্পদ নয়, তাই বেগম খালেদা জিয়ার অবর্তমানে এই সম্পদের রক্ষকরা যদি ভক্ষক হয়ে যায়, তাহলে কারোরই কিছু করার থাকবে না।
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রথম দফায় ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। যথারীতি বিরোধী দল বিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় জয়কার। আওয়ামী লীগের নেতারাই অধিকাংশ উপজেলায় নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু তারপরেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সন্তুষ্টি নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিরক্তি কাজ করছে।
নানা কারণে উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক ফলাফল আনতে পারেনি বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে উদ্বিগ্ন এবং দল ও গণতন্ত্রের জন্য সামনের দিনগুলোতে আরও সংকট অপেক্ষা করছে বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামনে পাঁচটি সংকটকে উন্মোচন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-
১. ভোটার উপস্থিতি কম: উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার এবার সর্বনিম্ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যতগুলো উপজেলা নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে এবার ভোট পড়েছে সবচেয়ে কম। ২০০৮ এর ভূমিধস বিজয়ের পর প্রথম আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হয় ২০০৯ সালে। সেই উপজেলা নির্বাচনে ৬৮ ভাগের বেশি ভোট পড়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ৬১ ভাগ ভোটার উপজেলা নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। ২০১৯ সালে এই হার ছিল ৪০ শতাংশের বেশি।
কিন্তু এবার নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ ভোটার উপজেলা নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। এটি কখনোই স্বস্তি দেওয়ার খবর নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাধারণত ভোটাররা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দেয়। কিন্তু এবার উপজেলা নির্বাচনে ভোটাররা উৎসাহ নেয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের যে রিজার্ভ সমর্থক বলে যারা পরিচিত সেই ভোটাররাও ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ছিল না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতা কর্মীদেরকে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা, তারা যেন ভোটকেন্দ্রে যায় সে জন্য উৎসাহিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশ মাঠে প্রতিফলিত হয়নি। ভোটার উপস্থিতি কম থাকার ফলে আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তির কারণ।
২. অভ্যন্তরীণ কোন্দল: আওয়ামী লীগের জন্য এই নির্বাচন ছিল অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর মাধ্যম। এ কারণেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, দলীয় প্রতীক উপজেলা নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে না। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আশা করেছিলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যে কোন্দল এবং বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছিল তার কিছুটা হলেও অবসান ঘটবে।
কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগকে আরও বিভক্ত করেছে। বিশেষ করে যে সমস্ত স্থানে স্বতন্ত্রদের সাথে আওয়ামী লীগের বিরোধ ছিল, সেই বিরোধে গুলো আরও সহিংস রূপ নিয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি অশনী সংকেত।
৩. কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করার প্রবণতা: আওয়ামী লীগের জন্য উপজেলা নির্বাচনে একটি বড় অস্বস্তির বিষয় ছিল কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করা। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ মাঠে প্রতিফলিত হয়নি। দু একজন মন্ত্রী-এমপি ছাড়া অধিকাংশই তাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন এবং প্রভাব বিস্তার করে জিতিয়ে এনেছেন। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি সতর্কবার্তা। কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করার এই প্রবণতা যদি বাড়তে থাকে সেটি ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের জন্য একটি খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
৪. এলাকায় এলাকায় জমিদারতন্ত্র-পরিবারতন্ত্র কায়েম: এবার উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিরা তাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে মনোনয়ন দিয়েছেন, তারা এলাকায় এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করছেন। এর ফলে বিভিন্ন এলাকায় একটি গোষ্ঠীতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র বা জমিদারতন্ত্র কায়েম হচ্ছে। এটিও আওয়ামী লীগের জন্য একটি খারাপ সংবাদ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
৫. অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনে অনীহা: আওয়ামী লিগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার নেতাকর্মীদেরকে বলেছিলেন যে- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু দেখা গেছে, নির্বাচনে যারা শক্তিশালী প্রার্থী হয়েছেন তারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন। পেশিশক্তির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন, কালো টাকা ছড়িয়েছেন। আর এগুলো আওয়ামী লীগের ইমেজ নষ্ট করেছে এবং জনগণের কাছে ভুল বার্তা দিয়েছে। এই সমস্ত অস্বস্তিগুলো উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। এখন ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ কীভাবে এই সংকটগুলো কাটিয়ে উঠবে, সেটাই দেখার বিষয়।
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রথম দফায় ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। যথারীতি বিরোধী দল বিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় জয়কার। আওয়ামী লীগের নেতারাই অধিকাংশ উপজেলায় নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু তারপরেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সন্তুষ্টি নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিরক্তি কাজ করছে।