নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৯ পিএম, ১৩ জুন, ২০২১
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের প্রায় দেড় বছর হতে চলল। গত বছর মার্চে প্রথম রোগী ধরা পড়েছিল। এখন বাংলাদেশ করোনার সংক্রমণ আবার ঊর্ধ্বমুখী। মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমলেও প্রতিদিন এই মৃত্যুর সংখ্যা আবার নতুন করে বাড়ছে। বাংলাদেশে করোনা নিয়ে এক দীর্ঘমেয়াদী সংকটের মধ্যে পড়েছে। শুধুমাত্র স্বাস্থ্যগত সংকট নয়, করোনার কারণে নানামুখী বিপর্যয় তৈরি হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এখনই যদি এই ব্যাপারে একটি পরিকল্পিত রূপকল্প না তৈরি করা হয় তাহলে পরে এই সংকট সামনের দিনগুলোতে আরো ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করবে এবং একটি অচল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। করোনার কারণে বাংলাদেশে যে সংখ্যাগুলো হচ্ছে সেই সংকট গুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. করোনা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে: বাংলাদেশে প্রথম এক বছরে করোনার সংক্রমণটা ছিল ঢাকা-শহর এবং মহানগরী এলাকায়। কিন্তু এখন যে করোনা প্রকোপ সেই প্রকোপটি ঢাকার বাইরেই বেশি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো এবং প্রত্যন্ত জেলাগুলোতে করোনা বাড়ছে। এতদিন মানুষ মনে করত যে করোনা বোধহয় ধনীদের রোগ কিন্তু এখন গরিবরাও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন এবং তাদের মধ্যে ভয় ঢুকছে। ঢাকার বাইরে আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা অপ্রতুল এবং পরীক্ষা হচ্ছে কম। কাজেই, আসলে কত মানুষ আক্রান্ত বা ভয়াবহতার পরিধি কতটুকু তা বুঝা যাচ্ছে না। আর এ কারণেই সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি সংকটময় হয়ে উঠতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
২. টিকার অনিশ্চয়তা: টিকা নিয়ে বাংলাদেশের অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। বিশেষ করে সিরামের টিকা না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশের যে গণটিকা কর্মসূচি স্থগিত হয়েছে তা আবার কবে চালু হবে এ নিয়েও এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা পাওয়া যায়নি। যদিও বলা হচ্ছে যে চীনের টিকা বাংলাদেশে আসবে কিন্তু সেটি আসবে কবে থেকে বা কিভাবে সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট কোনো ঘোষণা সরকারের পক্ষ থেকে নাই। বিভিন্ন দেশ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করেছে টিকা কর্মসূচির মাধ্যমে। কাজেই যদি বাংলাদেশে গণটিকা কর্মসূচি না করা যায় তাহলে বাংলাদেশ করোনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সংকটের মধ্যে চলবে।
৩. শিক্ষার সংকট: বাংলাদেশে করোনার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাত হলো শিক্ষাখাত। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার কারণে এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। আজ শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন যে এক বছর নষ্ট হলেও কোন কিছু যায় আসে না। এরকম বক্তব্যের পর শিক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং হতাশা আরো গভীর হয়েছে। এই সংকট বাংলাদেশের জন্য সুদূরপ্রসারী একটি বড় ধরনের সংকট হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে বলে অনেকে মনে করছেন।
৪.অর্থনৈতিক সংকট: আপাতদৃষ্টিতে করোনার কারণে বাংলাদেশ বড় ধরনের অর্থনৈতিক সঙ্কটের না পড়লেও দীর্ঘমেয়াদি করোনার প্রকোপ থাকলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট গভীর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বেকারত্ব, নতুনভাবে দারিদ্র্য হয়ে যাওয়া সহ নানা রকম অর্থনৈতিক সংকট বাংলাদেশের ক্রমশ দানা বেঁধে উঠতে পারে বলে মানুষ মনে করছে।
৫. সামাজিক অবক্ষয়: করোনার কারণে বাংলাদেশের সামাজিক অবক্ষয়ের বাড়ছে। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে কিশোর গ্যাং, বিভিন্ন মাদকাসক্তির ব্যবহার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। এই সমস্ত অস্থিরতা এবং সামাজিক ব্যাধিগুলো করোনা চলে গেলেও যাবে তেমনটি মনে করছেন না মনোবিজ্ঞানীরা।
ফলে বাংলাদেশ আস্তে আস্তে করোনা নিয়ে এক দীর্ঘমেয়াদি সংকটের গহ্বরে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বলেই অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপদাহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।
প্রথম দুই দফা ভোটের যে হার, তাতে বিজেপির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিজেপির নেতারা ভোটে যে ভূমিধস বিজয় আশা করছিলেন সেটি হবে না। ভারতের কোন কোন গণমাধ্যমগুলো ভোটের ফলাফলে নাটকীয় ঘটনা ঘটারও ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের নির্বাচনে যেভাবে কংগ্রেস অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছিল সেরকম কোন ঘটনা ঘটতেও পারে বলে মনে আশঙ্কা করছেন অনেকে। অবশ্য এখনও আরও পাঁচ দফা ভোট বাকি আছে এবং বিজেপি আশা করছে যে, পরবর্তী ধাপগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং বিজেপি তাদের জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখবে। নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে দেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ভারতের নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা বোঝা যাবে আগামী ৪ জুন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে ভোটের হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটের যে নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারণা করা হয়েছিল, সেটি বাস্তবতা নাও পেতে পারে। আর এ কারণেই মোদী যদি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন, তাহলে সেটি হবে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বড় ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং এটি হবে ভারতের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক।
এখন যখন ভারতের নির্বাচনে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বা অনিশ্চয়তার ফলাফলের শঙ্কা জেগেছে তখন প্রশ্ন উঠছে যে, বিজেপি যদি এই নির্বাচনে পরাজিত হয় তাহলে বাংলাদেশে কী হবে? গত দুটি নির্বাচনে ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন দিয়েছে। ২০১৮ এবং ২০২৪ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি সরকার।
বিশেষ করে ২০২৪ এর নির্বাচনে ভারতীয় সরকারের পরিপূর্ণ সমর্থন ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করত এবং এই নির্বাচনকে অস্বীকৃতি জানাত বলেও অনেকে মনে করেন। মার্কিন মনোভাব পাল্টানোর ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর নির্বাচনের পর বিএনপি থেকে শুরু করে জাতীয় পার্টি প্রত্যেকেই বলছে যে, ভারত বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। যদিও এরকম অভিযোগকে আওয়ামী লীগ অস্বীকার করে এবং আওয়ামী লীগ মনে করে যে, জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি আওয়ামী লীগ বা বিজেপি কেউই অস্বীকার করে না।
এখন প্রশ্ন হল, যদি বিজেপি পরাজিত হয়, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশের সমীকরণ কী হবে? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বর্তমান সরকারের জন্য সমীকরণের কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দল কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছে।
অনেকে মনে করেন যে, এখন ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মনোভাবের কারণে সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য রাখা হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের মধ্যে একটা ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি নরেন্দ্র মোদি তাহলে এই অবস্থানের পরিবর্তন হবে। দুই দেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারত লোকসভা নির্বাচন মল্লিকার্জুন খাড়গে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।