নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২৮ এএম, ২০ জুন, ২০২১
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিট, খুলনা করোনা হাসপাতাল এবং কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে রাজশাহীতে করোনায় একজন এবং বাকি ৯ জন উপসর্গ নিয়ে, খুলনায় ছয়জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং একজন উপসর্গ নিয়ে এবং কুষ্টিয়ায় সাতজনই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার (২০ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত রামেকের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ১০ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে রাজশাহীর সাতজন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুজন ও নওগাঁর একজন ছিলেন। করোনায় মৃত একজন ব্যক্তির বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। উপসর্গ নিয়ে মৃতদের মধ্যে রাজশাহীর সাতজন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন ও নওগাঁর একজন মারা গেছেন। মৃতদের স্বজনদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে মরদেহ দাফনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
এদিকে রোগীদের ভর্তি ও সংক্রমণের বিষয়ে তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রামেকে নতুন ভর্তি হয়েছে ৫৪ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৮ জন। এছাড়া রামেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে ১৬৬ জন। এছাড়া সন্দেহভাজন ও উপসর্গ নিয়ে ২১১ জন ভর্তি রয়েছেন রামেকে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় রামেকে ৩০৯টি শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিলেন ৩৭৭ জন, যা আগের চেয়ে ১২ জন বেশি।’
করোনা পরীক্ষার বিষয়ে উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌস বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালের পিসিআর মেশিনে ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৫ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। আর মেডিকেল কলেজের পিসিআর মেশিনে ৪৬৪টি নমুনা পরীক্ষায় ২৩৫ জন করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৪৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ।’
এদিকে, খুলনা করোনা হাসপাতালের ফোকাল পার্সন ও খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং একজন উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
এ ছাড়া হাসপাতালে সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৫৯ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। যার মধ্যে রেডজোনে ৯৮ জন, ইয়ালোজোনে ২৫ জন, এইচডিইউতে ২০ জন এবং আইসিইউতে ১৮ জন চিকিৎসাধীন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৫২ জন। এ সময় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৬ জন।
এদিকে শনিবার (১৯ জুন) রাতে খুমেক পিসিআর ল্যাবের পরীক্ষায় ১৬৫ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে।
কুষ্টিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় এটিই এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসক অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। নতুন করে শনাক্ত হওয়া ১৬৪ জনের মধ্যে কুষ্টিয়া সদরের ১০০ জন, দৌলতপুরের ১৬ জন, কুমারখালীর ২৪ জন, ভেড়ামারার ১৩ জন, মিরপুরের সাত জন ও খোকসার চার জন রয়েছেন। মৃত সাত জনের চার জন সদরের ও অপর তিন জন দৌলতপুর, কুমারখালী ও মিরপুর উপজেলার বাসিন্দা।
এ পর্যন্ত জেলায় ৫৬ হাজার ৩৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে ৫৫ হাজার ৮৮৪ জনের। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছেন ৫০৫ জন।
বর্তমানে কুষ্টিয়ায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা এক হাজার ২০৭ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৯১ জন এবং হোম আইসোলেশনে আছেন এক হাজার ১৯৫ জন।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানান, করোনার শুরু থেকেই কুষ্টিয়া জেলায় শনাক্তের হার কখনও ২০ শতাংশের ওপরে যায়নি। কিন্তু এখন শনাক্তের হার ৪০ শতাংশের ওপরে উঠে গেছে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।