নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০০ পিএম, ২০ জুন, ২০২১
রাজধানীতে কিশোর গ্যাং এর উৎপাত ও অপরাধ কর্মকাণ্ড দিন দিন বাড়ছে। ইভটিজিং, মারধর, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ছাড়াও মাদক ব্যবসা, ছিনতাই এমনকি খুনের মতো অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাং। অনেক এলাকায় কিশোর গ্যাং সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। এমন বাস্তবতায় মাঠ পর্যায় থেকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। সেই তালিকায় জানা গেছে রাজধানীতে এ ধরনের ভয়ংকর কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা ৭৮টি এবং যেগুলোর সদস্য সংখ্যা ২ হাজারের বেশি।
ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি হালনাগাদ তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। যাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা, সদস্য এবং পৃষ্ঠপোষকদের বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। এবারই প্রথম তালিকায় নাম ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরের পাশাপাশি গ্যাং লিডারের ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে।
পুলিশের তালিকা অনুযায়ী রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি কিশোর গ্যাং রয়েছে মিরপুর এলাকায়। আর সবচেয়ে কম গুলশানে। এছাড়া তেজগাঁও বিভাগে যথাক্রমে ১৪টি, মিরপুরে ২৩, উত্তরায় ১১, গুলশানে ১, ওয়ারীতে ৬, মতিঝিলে ১১, রমনায় ৮ এবং লালবাগে ৪টি গ্রুপ চিহ্নিত হয়েছে। তবে এটিই চূড়ান্ত তালিকা নয়। ইতোমধ্যে সবগুলো থানাকে কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা হালনাগাদ রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় প্রতিদিনই কিশোর সন্ত্রাসীদের তালিকায় নতুন নাম যুক্ত হচ্ছে।
এছাড়া পুলিশের হালনাগাদ তালিকায় সদস্যদের পাশাপাশি কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষক বা রাজনৈতিক গডফাদারদের নামও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাদের রাজনৈতিক পদ, পদবি ও নাম-ঠিকানাসহ এবং মোবাইল নম্বর যুক্ত করে কে কোন গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক তার বিস্তারিত বিবরণও রয়েছে এ তালিকায়। এতে যেসব রাজনৈতিক নেতার নাম উঠে এসেছে তাদের বেশির ভাগই পাড়া-মহল্লার উঠতি নেতা বা পাতিনেতা হিসাবে পরিচিত। এছাড়া বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নাম আছে তালিকায়। তবে সূত্রগুলো বলছে, কোনো কোনো গ্রুপের নেপথ্যে রয়েছে একেবারে বড় মাপের প্রভাবশালী নেতা। কিন্তু বিদ্যমান বাস্তবতায় যাদের নাম তালিকায় স্থান পায়নি।
পৃষ্ঠপোষক যারা :
পুলিশের তালিকায় কিশোর গ্যাংয়ের রাজনৈতিক শেল্টারদাতা বা পৃষ্ঠপোষক হিসাবে অর্ধশত ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। কেউ কেউ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে সুবিধার জন্য সরকারি দলের সাইনবোর্ডসর্বস্ব পদ-পদবিও নিয়েছেন। তালিকায় নাম আছে এমন নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শিল্পাঞ্চল থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জিল্লুর রহমান ওরফে জীবন, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তালুকদার সারোয়ার হোসেন, মোহাম্মদপুর এলাকার চন্দ্রিমা হাউজিং ও সিলিকন হাউজিংয়ের মালিক ছারোয়ার ও নাজিব আমজাদ এবং গ্রামবাংলা হাউজিংয়ের মালিক কবির, ড্রিমল্যান্ড হাউজিংয়ের মালিক সাদিকুর রহমান ওরফে বকুল, শেরেবাংলা নগর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান ওরফে আসাদ। আদাবর এলাকার ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কাশেম, ১০০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি পাপ্পু।
৭৮ কিশোর গ্যাং সম্পর্কিত তথ্য:
রাজধানীর তেজগাঁও থানা এলাকায় সক্রিয় গ্রুপ ১৪টি। এর সদস্য সংখ্যা ১০৫০ জন। গ্রুপের নামগুলো হলো-কানা জসিম গ্রুপ, মাইন উদ্দিন গ্রুপ, শাকিল গ্রুপ, মামুন গ্রুপ, লাড়া-দে, চিনে ল, কোপাইয়া দে, বাঁধন গ্রুপ, পলক গ্রুপ, গাংচিল, ঘুটা দে, চেতাইলেই ভেজাল, দ্যা কিং অব গাইরালা, ভইরা দে এবং অনলি কোপাইয়া দে গ্রুপ। এছাড়া মিরপুরে সক্রিয় ২৩টি গ্রুপ। এগুলো হলো-অপু গ্রুপ, আব্বাস গ্রুপ, নাডা ইসমাইল, হ্যাপি, বগা হৃদয়, ভাস্কর, রবিন, এল কে ডেভিল বা বয়েজ এল কে তালতলা, পটেটো রুবেল, অতুল গ্রুপ, আশিক গ্রুপ, জল্লা মিলন গ্রুপ, রকি, পিন্টু-কাল্লু গ্রুপ, মুসা হারুন গ্রুপ ওরফে ভাই ভাই গ্রুপ, রোমান্টিক গ্রুপ, সোহেল গ্রুপ, ইসামিন, ইমন ও জুয়েল গ্রুপ।
উত্তরা বিভাগে মোট ১১টি গ্রুপ পুলিশের তালিকাভুক্ত হয়েছে। এগুলো হলো-নাইন স্টার, এইচবিটি বা হিটার বয়েজ, সানি, ইয়ংস্টার, বিগ বস, রানা ভোলা কিং মহল, জিদান গ্রুপ, দি বস (হৃদয় গ্যাং)। নামবিহীন আরও ২টি গ্রুপ শনাক্ত করেছে পুলিশ। গুলশান এলাকায় ডি নাইন নামের মাত্র একটি গ্রুপ শনাক্ত করেছে পুলিশ। এর সদস্য সংখ্যা ৩০ জনের বেশি। রমনা বিভাগে ৮টি গ্রুপের নাম হচ্ছে বেইলী কিং রন, অলি গ্রুপ, জসিম, লাভলেন, বাংলা গ্রুপ, পারফেক্ট গ্যাং স্টার বা পিজিএস, সুমনের গ্রুপ এবং লাড়া-দে। এছাড়া ওয়ারী বিভাগের ৬টি গ্রুপ চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হচ্ছে-শুক্কুর গ্রুপ, লিটন গ্রুপ, তাহমিদ, পলাশ, মোল্লা এবং সাঈদ গ্রুপ।
রাজধানীর ব্যাংকপাড়া হিসাবে পরিচিত মতিঝিল এলাকায় ১১টি কিশোর গ্যাং পুলিশের তালিকাভুক্ত। এগুলো হলো-মিম গ্রুপ, চাঁন যাদু, ডেভিল কিং, ফুল পার্টি, জিসান গ্রুপ, বিচ্ছু বাহিনী, আকিল ও অন্নয় গ্রুপ, নিবিড় গ্রুপ, মাসুদ গ্রুপ। এছাড়া সক্রিয় আরও ৩টি গ্রুপের নাম জানা যায়নি। পুলিশের লালবাগ বিভাগে জুম্মন গ্রুপ, বহুল আলোচিত টিকটক হৃদয়, আহম্মেদ পাত্তি গ্রুপ, ইয়ামিন, ফায়সাল ও নাসির গ্রুপ নামের মোট ৪টি গ্রুপ সক্রিয়।
শিল্পাঞ্চল থানা : তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা এলাকায় ২টি গ্রুপ কিশোর গ্যাং হিসাবে পুলিশের খাতায় তালিকাভুক্ত। এর একটির নাম শাকিল গ্রুপ। সদস্য সংখ্যা ১৪-১৫ জন। গ্রুপ লিডার শাকিল হোসেন। তিনি ২৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার পিতা এনায়েত হোসেন পেশায় রাজমিস্ত্রি। ঠিকানা ৪৫/১ বেগুনবাড়ি, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, থানা। শাকিল গ্রুপের উল্লেখযোগ্য সদস্যরা হলেন- তামিম, সাব্বির, তুষার, রবিন, তপু, রাসেল, মুহিন এবং তুহিন। গ্রুপের প্রায় সব সদস্য ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। শাকিল গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকের নাম জিল্লুর রহমান জীবন। তিনি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা ছাত্রলীগের সভাপতি।
পুলিশ বলছে, শাকিল গ্রুপের সদস্যরা শিল্পাঞ্চল থানার বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয়। তবে পদ্মা গার্মেন্ট, সিদ্দিক মাস্টারের ঢাল, ইয়াং স্টার স্পোর্টিং ক্লাবের আশপাশে তাদের সার্বক্ষণিক দেখা যায়। ইয়াং স্টার ক্লাবের পাশে রিকশার গ্যারেজের চিপায় তারা মাদক সেবন করেন। চুলের ছাঁটেও শাকিল গ্রুপের সদস্যদের বিশেষত্ব রয়েছে। বেশির ভাগ সদস্য জিন্স প্যান্টের সঙ্গে শার্ট পরে এবং চুলে কদম ফুল ছাঁট দেয়।
এছাড়া শিল্পাঞ্চলে সক্রিয় কিশোর গ্যাং মামুন গ্রুপের নেতার নাম মামুন খান। তিনি বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সাধারণ সম্পাদক। ৭-৮ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে তার। নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো হচ্ছে-নাবিস্কো মোড়, নিপ্পন বটতলা, প্রগতি মোড় এবং নূরানী মোড়ের আশপাশ। গ্রুপের সদস্যরা অবৈধ অটোরিকশা, বিদ্যুৎ সংযোগ, চাঁদাবাজি, ফুটপাত দখল করে রিকশার গ্যারেজ নির্মাণসহ বেআইনি কর্মকাণ্ড চালায়। গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক হিসাবে আছেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তালুকদার সারোয়ার হোসেন।
মোহাম্মদপুর : মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় ৪টি কিশোর গ্যাং চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এগুলো হচ্ছে-গাংচিল গ্রুপ, ঘুটা দে, চেতাইলেই ভেজাল এবং লাড়া-দে গ্রুপ। এর মধ্যে গাংচিল গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৪০ জনের মতো। এর লিডার মোশারফ ওরফে লম্বু মোশারফ। তার ঠিকানা চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকার ১ নম্বর এভিনিউ। নদীতে ডাকাতি, ছিনতাই, ভূমিদস্যুদের ক্যাডার হিসাবে কাজ করেন তিনি। এছাড়া চুক্তিতে যে কোনো ধরনের খারাপ কাজে তিনি সিদ্ধহস্ত। তার গ্রুপের সদস্যরা হলেন- লম্বু কবির, মানিক ওরফে বোমা মানিক, ফরহাদ, মাঈন উদ্দিন, রনি, সাফায়েত, বদরুল, নূরে আলম, আক্তার, মামুন, মোহন, খান আলমগীর, হায়াত, ইউনুস, মিজান এবং জসিম। পুলিশের তালিকা অনুযায়ী গাংচিল গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক হলেন চন্দ্রিমা হাউজিং ও সিলিকন হাউজিংয়ের মালিক ছারোয়ার, নাজিব আমজাদ এবং গ্রামবাংলা হাউজিংয়ের মালিক কবির।
মোহাম্মদপুর এলাকায় সক্রিয় `ঘুটা দে` গ্রুপের সদস্য দেড়শর বেশি। নবোদয় হাউজিং, নবীনগর হাউজিং, চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায় তারা। গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, ভূমিদস্যুদের ক্যাডার এমনকি খুনের অভিযোগও আছে। সদস্যরা হলেন নবীনগর হাউজিংয়ের আহম্মেদ, নবোদয় হাউজিংয়ের ডেভিড আলম, সুনিবিড় হাউজিং এলাকার রাহাত, গোল্ডেন সানি, হাসান, সোহেল, জাহিদুল, রিয়াজ, আকাশ এবং বিপ্লব। গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক ড্রিমল্যান্ড হাউজিংয়ের মালিক সাদিকুর রহমান ওরফে বকুল। মোহাম্মদপুরে আরেকটি কুখ্যাত কিশোর গ্যাংয়ের নাম `চেতাইলেই ভেজাল`। শতাধিক সদস্য রয়েছে তাদের। গ্রুপ লিডারের নাম শান্ত ওরফে বুলেট শান্ত। তিনি সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের পেছনে গাড়ি শোরুমের সামনে আড্ডা দেন। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, ছিনতাই এবং মারামারির অভিযোগ রয়েছে। টিক্কাপাড়া এলাকায় সক্রিয় `চেতাইলেই ভেজাল` গ্রুপের অ্যাডমিনের নাম আরিয়ান ওরফে রহিত। টিক্কাপাড়া, জুহুরী মহল্লা, আজিজ মহল্লা, সূচনা কমিউনিটি সেন্টার এবং আশপাশের এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে। গ্রুপের সদস্যরা হলেন-অর্ণব, শেখ রাজিব, রহমান, ইয়াছিন, রাব্বি ও শামিনুর রহমান।
মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড, বাঁশবাড়ী, নূরজাহান রোড এবং কাটাশুর টাউন হল এলাকায় সক্রিয় ভয়ংকর কিশোর গ্রুপের নাম লাড়া-দে। তাদের স্লোগান হচ্ছে-`চিনে-ল`, `কোপাইয়া দে` ইত্যাদি। এ গ্রুপের লিডারের নাম তামিমুর রহমান ওরফে মীম। ২৫ বছর বয়সি মীমের পিতার নাম একরামুল শেখ। বাঁশবাড়ী এলাকায় তার বাসা। তিনি একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গেলেও সংশোধন হননি। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে। লাড়া দে গ্রুপের আরেক সদস্য অভিক ইসলাম ওরফে অভি মাত্র ১৮ বছর বয়সে একাধিকবার কারাগারে যান। তার বিরুদ্ধেও মাদক ব্যবসা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে। লাড়া দে গ্রুপের সদস্য সংখ্যা অন্তত আড়াইশ জন। সদস্যদের বেশির ভাগই ভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন-রবিউল ইসলাম, মেহেদী হাসান, হৃদয় হোসেন, আরিফুল ইসলাম, সানি ওরফে ডিকে সানি, আজগর আলী, নেছার উদ্দিন ওরফে হৃদয়, তৌসিক, মানিক, হাসান আশিকুজ্জামান, সাকিল, মেহেদী হাসান, জিসান আহম্মেদ, রায়হান হোসেন ও শুকরুল ইসলাম ওরফে নাঈম। এদের একটি বড় অংশ ইতোমধ্যে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে ছিলেন। জামিনে বেরিয়ে ফের তারা গ্যাং কালচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
মোহাম্মদপুর এলাকায় `অনলি কোপাইয়া দে` নামের একটি গ্রুপের সদস্য সংখ্যা তিন শতাধিক। গ্রুপ লিডারের নাম তানভীর। মাদক সেবন এবং মারামারিতে পারদর্শী তানভীরের বয়স মাত্র ১৮ বছর। এছাড়া গ্রুপের অন্য সদস্যরা হলেন-জগৎ, মিঠু, সুমন ওরফে ওয়ান পিচ সুমন, এমডি পরান, মোহাম্মদ সাব্বির রহমান, বিবিসি রাকিব, শাহদাৎ। গ্রুপের প্রশ্রয়দাতা হিসাবে ১০০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি পাপ্পুর নাম আছে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় মাত্র একটি কিশোর গ্যাং তালিকাভুক্ত করা হয়। লিডারের নাম জাকির হোসেন। তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বসবাস করেন পশ্চিম আগারগাঁও এলাকার বিএনপি বস্তিতে। তার গ্রুপের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে আছে বাংলাদেশ বেতারের আশপাশ, বিএনপি বস্তি, খালপাড়, শিশুমেলা ও আগারগাঁও এলাকা। ৩০-৩৫ জনের গ্রুপটির অন্য সদস্যরা হলেন-লিমন, সুজন, রুবেল, মনির হোসেন, সুমন ও সাগর। গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক হিসাবে নাম আছে শেরেবাংলা নগর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান ওরফে আসাদের নাম।
আদাবর : আদাবর এলাকায় সক্রিয় ৩টি গ্রুপ পুলিশের তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে `দ্যা কিং অব গাইরালা` নামের গ্রুপের নেতা শেখ ইয়াসিন। তিনি ছিনতাই ও মারামারিতে সিদ্ধহস্ত। গ্রুপের সদস্য সংখ্যা দেড়শরও বেশি। বেশির ভাগ সদস্য পুলিশের খাতায় মাদক ব্যবসায়ী হিসাবে চিহ্নিত। শেকেরটেক, মনসুরাবাদ, আদাবর ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় তাদের আধিপত্য রয়েছে। যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় ইতোমধ্যে অভিযোগ রয়েছে তারা হলেন-আরকে রাকিব, মিরাজ, মুরগি শাওন (আলিফ হাউজিংয়ের বাসিন্দা), শেকেরটেকের ইউসুফ, মামুন, নান্টু ও রাহুল। ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাশেমের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এই বাহিনী।
`ভইরা দে` নামের আরেকটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে শেকেরটেক, শ্যামলী হাউজিং ও নবোদয় হাউজিং এলাকায়। এ গ্রুপের লিডারের নাম সেলিম। তার ঠিকানা হচ্ছে-খায়ের সাহেবের বাসা, মালা হাউজিং শেকেরটেক-৬। গ্রুপের সদস্য সংখ্যা শতাধিক। উল্লেখযোগ্য সদস্যরা হলেন-সাগর, মিরাজ (গ্রুপ লিডার-১), জুয়েল (গ্রুপ লিডার-২), শাকিল (গ্রুপ লিডার-৩), রাব্বি টিবি (গ্রুপ লিডার-৪), এরফান ওরফে সেলিমের ভাগ্নে এরফান, আব্দুল্লাহ আল মঈন, রাব্বি এবং মোমিন ইসতিয়াক রিয়াজ।
পুলিশ বলছে, গ্রুপের সদস্যরা আল নূরানী তোতামিয়া জামে মসজিদের পাশের ৩য় তলা, আদবর, শেকেরটেক, শ্যামলী হাউজিং এবং শেকেরটেক ১ নম্বর রোডের মাথায় সমবেত হয়। এ গ্রুপের নিয়ন্ত্রণেও ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাশেমের হাত রয়েছে।
তেজগাঁও : রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় সক্রিয় ২টি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে কাওরান বাজার এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায় কানা জসিম গ্রুপ। সদস্য সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ জন। লিডারের নাম জসিম উদ্দিন পাটোয়ারী ওরফে জসিম পাটোয়ারী ওরফে কানা জসিম। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের কামরাঙ্গীবাজার। বর্তমানে তিনি বসবাস করেন মিরপুরের পশ্চিম কাজীপাড়ায়।
কানা জসিম গ্রুপের অন্য সদস্যরা হলেন তাজুল ইসলাম সোহেল ওরফে কিলার সোহেল, সাইদুর রহমান ওরফে বাবু, নাজির আহাম্মেদ, জয়-ই মামুন, পারভেজ, শাকির রানা, রনি শেখ, ইমন হোসেন ও শফিক। গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক জনৈক যুবলীগ নেতা সাব্বির আলম ওরফে লিটু। গ্রুপের সদস্যদের অনেকেই পাজামা-পাঞ্জাবি পরে ঘোরাফেরা করেন।
তেজগাঁও এলাকায় সক্রিয় আরেকটি কিশোর গ্যাং মাইন উদ্দিন গ্রুপ। লিডারের নাম জাহিদুল ইসলাম ওরফে মাইন। তিনি ২৬ নম্বর ওয়ার্ড শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার লাইন ও স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিশেষ করে হলিক্রস স্কুল গির্জার সামনে থেকে নাখালপাড়া পর্যন্ত অটোরিকশা চলাচল তার নিয়ন্ত্রণে। মাইনউদ্দিন গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে আছেন তেজকুনিপাড়ার গোলাপ, রেলওয়ে কলোনি স্কুলের বস্তির সোহেল, নাখালপাড়ার জাকির আহাম্মেদ, জায়িজ, গেশু, মনির, রাফছান এবং জুয়েল। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল হক জিল্লু এবং শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের তেজগাঁও থানা ইউনিটের সভাপতি আনোয়ার হোসেন রিপনের নাম আছে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক হিসাবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।