নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২০ জুলাই, ২০২১
কুরবানীর ঈদ চলেই এসেছে। হাম্বা হাম্বা আর ম্যা ম্যা রবে পাড়ার অলিগলি এখন সরগরম। তবে প্রতিবারের মতো সাধারণ যে দৃশ্যটি দেখা যাচ্ছে না, তা হলো কুরবানীর পশুর হাট। রাস্তাঘাটে হাঁটতে গেলে এর আগের বছরগুলোতে গোবর বাঁচিয়ে হাঁটা দায় হয়ে পড়ত। আর এবারে রাস্তায় হাঁটতে গেলে মাথা চুলকে ভাবতে হবে, এ আবার কোথায় এসে পড়লাম!
এমন নয় যে মানুষ কুরবানীর পশু কিনছেন না। কিনছেন, তবে আগের চেয়ে একটু কম। করোনা মহামারীর কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত, আবার জীবিকাও একটু টেনেটুনে চলতে হচ্ছে। তার ওপর একের পর এক লকডাউন, শাটডাউন ইত্যাদি মিলিয়ে দেশের অবস্থাও ডাউনের দিকেই যাচ্ছে। এবারের কুরবানীর ব্যাপারে একটি ইস্যু সামনে এসেছে, যা হচ্ছে কোন দিকটা আসলে ভালো হবে? কুরবানীর পশু কিনতে ফিজিক্যাল হাটে গেলে ভালো হবে নাকি অনলাইনে গরুছাগলের ছবি দেখে পছন্দ করে অর্ডার দিয়ে বাড়ি নিয়ে আসলে ভালো হবে? কারণ করোনা ভাইরাসের কারণে এবার হাটে যাওয়াও বেশ মুশকিলের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আসুন, ডিজিটাল হাটে যাবেন নাকি ফিজিক্যাল হাটে যাবেন, তা নিয়ে একটি বিতর্ক ও কিছু উত্থাপিত পয়েন্ট সম্পর্কে জেনে আসি-
১) ডিজিটাল হাটে আপনি দলবল নিয়ে গরু কিনতে যেতে পারবেন না। ফিজিক্যাল হাটে তা পারবেন।
২) ডিজিটাল হাটে যদি গরু কেনেন, তাহলে ‘ভাই কত নিলো?’ এই প্রশ্নের উত্তর আপনাকে দিতে হবে না। গরু একেবারে দোরগোড়ায় এসে পৌঁছে যাবে।
৩) অনেকে পশুর হাটে গিয়ে কুরবানীর পশুর পশ্চাতে চাপড় দিয়ে অনাবিল সুখ লাভ করেন। ডিজিটাল হাটে তা সম্ভব নয়।
৪) ব্যাপারীদের সাথে দামাদামি কিংবা বাক-বিতণ্ডায় জড়ানোর ঝক্কি ডিজিটাল হাটে একেবারেই নেই। পছন্দ হলে আঙুলের ক্লিকেই আপনার কুরবানীর পশু কেনা সারা হয়ে যাবে।
৫) ফিজিক্যাল হাটে যেমন গরুর শিং-এর গুঁতো খাওয়ার ভয় আছে, ডিজিটাল হাটে তার একেবারেই নেই।
৬) কুরবানীর হাটে যায় না বলে ঘরের যেসব পুরুষদের বদনাম আছে, তারা ডিজিটাল হাটের দোহাই দিয়ে বীরদর্পে অনলাইনে গরুর অর্ডার দিয়ে বাড়ির সবাইকে চমকে দিতে পারেন।
৭) সবচেয়ে বড় কথা, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার ভয় ডিজিটাল হাটে একেবারেই নেই।
তবুও মানুষ ডিজিটাল হাটের চেয়ে ফিজিক্যাল হাটকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। কেন?
এর একমাত্র কারণ হলো প্রতারণা। কারণ, কুরবানীর পশুর প্রতি মানুষের স্বাভাবিক একটি ধর্মীয় আবেগ কাজ করে। তাছাড়া দেখেশুনে গরু কেনার প্রতিও একধরণের আলাদা আমেজ আছে, যা ডিজিটাল হাটের মাধ্যমে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অনলাইনে পশু কিনতে যেয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন, এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়।
ঈদুল আজহা সামনে রেখে রাজধানী ঢাকায় কোরবানির পশু বিক্রির উপায়-পদ্ধতি নিয়ে চলছে জোর উদ্যোগ-আলোচনা। সামনে চলে এসেছে অনলাইনে পশু বিকিকিনির বিষয়টি। এরই মধ্যে এ পদ্ধতিতে পশু বেচাকেনাও শুরু হয়েছে। তবে এই ডিজিটাল হাটে কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে দুই সিটি করপোরেশনের অবস্থান দুই মেরুতে। করোনা সংক্রমণ রোধে ডিজিটাল হাটকে প্রাধান্য দিচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ডিজিটাল হাট নিয়ে তারা মোটেও ভাবছে না। সংস্থাটি মনে করছে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পশু কিনে ক্রেতা প্রতারণার শিকার হতে পারেন।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ে ডিএসসিসি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের পরিবর্তে গুরুত্ব দিচ্ছে সশরীরে হাটে উপস্থিত হয়ে কেনাবেচাকে। সংস্থাটি বলছে, গত বছর অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কোরবানির পশু কিনে রাজধানীর বেশির ভাগ ক্রেতা ভয়াবহ প্রতারণার শিকার হওয়ার খবর তাদের কানে এসেছে। এ জন্য তারা বরাবরের মতো হাটে পশু তুলে কেনাবেচায় গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে এতে করে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে যাবার ভয়ও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।
সূত্রে জানা যায়, অনলাইন হাটে প্রতারণা রোধে এসক্রো নামের একটি পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই পদ্ধতিতে গরু কেনাবেচার টাকা তৃতীয় পক্ষের কাছে জমা থাকবে। ক্রেতা গরু পাওয়ার পর বিক্রেতা টাকা পাবেন।
যদি এটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে এর চেয়ে সুবিধাজনক পদ্ধতি এই করোনা পরিস্থিতিতে আর কিছু হতেই পারে না। ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৮ বিভাগে কোরবানির পশু বিক্রির জন্য প্ল্যাটফর্ম রয়েছে ১৫টি। এর বাইরে সরকারি উদ্যোগ (ফেসবুক ভিত্তিক) ৫৯৪টি। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রয়েছে ১ হাজার ৭৬৩টি। এগুলোও ফেসবুকভিত্তিক। তবে এগুলো ভেরিফায়েড করা নয়।
সরকার যদি এদিকে একটু সুদৃষ্টি দেয়, তাহলে ফিজিক্যাল হাটের পাশাপাশি ডিজিটাল হাটেও বেশ চমৎকার কুরবানীর পশু বিক্রি করা যাবে। আর অনলাইনে পশু কেনার আগে মানুষকেও একটু যাচাই-বাছাই করে কিনতে হবে, যাতে করে প্রতারিত হবার সুযোগ না থাকে।
সবার ঈদ ভালো কাটুক, এই প্রত্যাশায়...
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপদাহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।
প্রথম দুই দফা ভোটের যে হার, তাতে বিজেপির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিজেপির নেতারা ভোটে যে ভূমিধস বিজয় আশা করছিলেন সেটি হবে না। ভারতের কোন কোন গণমাধ্যমগুলো ভোটের ফলাফলে নাটকীয় ঘটনা ঘটারও ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের নির্বাচনে যেভাবে কংগ্রেস অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছিল সেরকম কোন ঘটনা ঘটতেও পারে বলে মনে আশঙ্কা করছেন অনেকে। অবশ্য এখনও আরও পাঁচ দফা ভোট বাকি আছে এবং বিজেপি আশা করছে যে, পরবর্তী ধাপগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং বিজেপি তাদের জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখবে। নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে দেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ভারতের নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা বোঝা যাবে আগামী ৪ জুন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে ভোটের হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটের যে নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারণা করা হয়েছিল, সেটি বাস্তবতা নাও পেতে পারে। আর এ কারণেই মোদী যদি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন, তাহলে সেটি হবে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বড় ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং এটি হবে ভারতের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক।
এখন যখন ভারতের নির্বাচনে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বা অনিশ্চয়তার ফলাফলের শঙ্কা জেগেছে তখন প্রশ্ন উঠছে যে, বিজেপি যদি এই নির্বাচনে পরাজিত হয় তাহলে বাংলাদেশে কী হবে? গত দুটি নির্বাচনে ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন দিয়েছে। ২০১৮ এবং ২০২৪ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি সরকার।
বিশেষ করে ২০২৪ এর নির্বাচনে ভারতীয় সরকারের পরিপূর্ণ সমর্থন ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করত এবং এই নির্বাচনকে অস্বীকৃতি জানাত বলেও অনেকে মনে করেন। মার্কিন মনোভাব পাল্টানোর ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর নির্বাচনের পর বিএনপি থেকে শুরু করে জাতীয় পার্টি প্রত্যেকেই বলছে যে, ভারত বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। যদিও এরকম অভিযোগকে আওয়ামী লীগ অস্বীকার করে এবং আওয়ামী লীগ মনে করে যে, জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি আওয়ামী লীগ বা বিজেপি কেউই অস্বীকার করে না।
এখন প্রশ্ন হল, যদি বিজেপি পরাজিত হয়, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশের সমীকরণ কী হবে? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বর্তমান সরকারের জন্য সমীকরণের কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দল কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছে।
অনেকে মনে করেন যে, এখন ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মনোভাবের কারণে সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য রাখা হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের মধ্যে একটা ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি নরেন্দ্র মোদি তাহলে এই অবস্থানের পরিবর্তন হবে। দুই দেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারত লোকসভা নির্বাচন মল্লিকার্জুন খাড়গে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।