ইনসাইড থট

১৫ই আগস্ট: নেপথ্য জানতে কমিশন চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ অগাস্ট, ২০২১


Thumbnail

দাবিটি অনেক দিনের। বিষয়টি অতি জরুরি, ইতিহাসের স্বার্থেই।

কবিরা কি অন্তর্যামী হন? দেশের তখতে তখন লেবাস পাল্টে সেনাশাসক। জাতির পিতার খুনে রাঙ্গা বাংলায় ঘাতকদের উল্লাস। ১৬ জুলাই ১৯৭৮ এক তরুণ ছরাকার লেখেন: ‘রক্তঝরার অভিষেকে বসেছিলে তখতে/তোমার মরণ হবেই বাবা/এমনি ধারার রক্তে’।

মাত্র তিন বছরের মাথায় ছড়ার ছন্দ সত্য প্রমাণিত হলো। ১৯৮০-তে উল্টে গেল তখত। রক্তের অভিষেকে যিনি তখতে বসেছিলেন, রক্তেই তার পরিসমাপ্তি। কিন্তু সুস্পষ্টভাবে জানা হয় না, এই ক্ষমতায় যাওয়ার রক্তের সিঁড়িটি তৈরির ক্ষেত্রে নেপথ্যে কার কী ভূমিকা ছিল।

পদ্মায় মেঘনায় অনেক জল গড়ায়। জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়। সময় লাগেপ্রায় ১২ বছর। কিছু খুনির ফাঁসি হয়েছে, কিছু খুনি পালিয়ে আছে। কেউ কেউ এমন বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের মধ্য দিয়ে জাতির দায়মুক্তি হয়েছে। আমি বলি, শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে জাতি যে অপরাধ করেছে, তা থেকে এই জাতির কোনোদিন মুক্তি নেই। মুজিব হত্যার পাপের গ্লানি এই জাতিকে বয়ে বেড়াতে হবে অনাদিকাল। তবুও খুনের বিচারটা তো হয়েছে। কিন্তু সেই বিচারটাও কি পুরোপুরি হয়েছে? জবাব হচ্ছে: ‘না’। প্রকাশ্যে যাদের দেখি, সেই খুনিদের বিচার হয়েছে, কিন্তু এই হত্যা ও ষড়যন্ত্রের নেপথ্যের কুশীলবদের বিচার আজও হয়নি। এমনকি প্রামাণিক সত্যি দিয়ে তাদের দায়ও নিরুপণ করা হয়নি।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মাননীয় বিচারপতিগণের পর্যবেক্ষণ: খন্দকার মোশতাক আহমদের কুমিল্লার দাউদকান্দির বাড়ি ও কুমিল্লার বার্ড থেকে ষড়যন্ত্রের শুরু। এরই ধারাবাহিকতায় পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডটি যথেষ্ট পরিকল্পনাভিত্তিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রের চেহারা স্পষ্ট হয়, সেনানিবাসের বালুর ঘাটে। পঁচাত্তরের মার্চে যে ষড়যন্ত্রের শুরু, তার চূড়ান্ত পরিণতি আগস্টে মোশতাক আহমদের মন্ত্রিসভা গঠনের মাধ্যমে।  

রায়ে সম্মানিত এক বিচারপতি বলেছেন: ষড়যন্ত্রের অকাট্য প্রমাণের প্রয়োজন নেই। বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ থাকলেই হবে যে, কোনো ব্যক্তির কার্যক্রম, বিবৃতি ও লেখা অপরাধ সংঘটনে ষড়যন্ত্র করেছে। কোনো ব্যক্তি কথা বা কাজের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রে যোগ দিতে পারে। সকল ষড়যন্ত্রকারীকে অভিন্ন উদ্দেশ্যে একমত হতে হবে। আরেক সম্মানিত বিচারপতি বলেন, দণ্ডবিধির ৩৪ ধারায় অভিন্ন ইচ্ছার উপাদান হলো কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অপরাধমূলক কাজ করার জন্য কতিপয় ব্যক্তির মনের মিল। অভিমতে আরও বলা হয়, ‘আমরা কখনোই নিশ্চিতভাবে জানব না দণ্ডিতরা ছাড়া আর কে বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। তাই এ মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ সতর্কতার সাথে বিচার বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।’ এ সকল অভিমত অনুসরণ করেই কয়েকটি খণ্ডচিত্র খুঁজে দেখার চেষ্টা: দণ্ডিতরা ছাড়াও এই হত্যাকান্ডের নেপথ্যে কারা, কীভাবে জড়িত। কাদের ‘অভিন্ন ইচ্ছার মনের মিল’ অপরাধটি সংঘটনে ভূমিকা রেখেছে।

সাংবাদিক এ এল খতিব তাঁর বিখ্যাত ‘হু কিলড মুজিব’ বইয়ে লিখেছেন: (১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সকালে) রেডিও স্টেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে মোশতাকের ভাষণের লিখিত কপি বিতরণ করা হয়। তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল সফিউল্লাহ ভাষণের কপিটি পড়ে তাঁর প্রশংসা করেন। জবাবে মোশতাক বলেন: ‘আপনার কি মনে হয় এ ভাষণটি এক দিনে লেখা হয়েছে?’

যে প্রশ্নের জবাব জানা জরুরি: কবে থেকে এই ভাষণের খসড়া প্রণয়ন শুরু হয়েছিল? কারা এই খসড়া প্রণয়নের সাথে জড়িত? এই ভাষণের পরিকল্পনা আর ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা একই সূত্রে গাঁথা, সন্দেহ নেই।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কয়েকজন সাক্ষীর বক্তব্যের কিছু অংশ তুলে ধরা যাক। কী বলছেন তাঁরা, কার বা কাদের নামে বলছেন, সেদিকে নজর দেয়া জরুরি।

লে. কর্নেল (অব.) আবদুল হামিদ (তখন ঢাকার স্টেশন কমান্ডার ছিলেন): ১৪ আগস্ট বিকেলে জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল মামুন, কর্নেল খোরশেদ ও আমি টেনিস খেলছিলাম। তখন আমি চাকরিচ্যুত মেজর ডালিম ও মেজর নূরকে টেনিস কোর্টের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখি।… জেনারেল সফিউল্লাহ আমাকে বলেন: এরা চাকরিচ্যুত জুনিয়র অফিসার, এরা কেন টেনিস খেলতে আসে? আমাকে তিনি বলেন, ‘এদের মানা করে দেবেন, এখানে যেন এরা না আসে।’ খেলা শেষে আমি মেজর নূরকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তোমরা কার অনুমতি নিয়ে এখানে খেলতে আসো?’ জবাবে নূর জানায়, জেনারেল জিয়ার অনুমতি নিয়ে তারা এখানে খেলতে আসে।

প্রশ্ন: একজন ডেপুটি চিফ অবস্টাফ নিশ্চয়ই সেনানিবাসের সাধারণ নিয়ম জানেন। চাকরিচ্যুতদের সাথে তাঁর কীই-বা সখ্য? কেন তিনি এদেরকে সেনানিবাসে খেলতে যাওয়ার অনুমতি দেন?

কর্নেল (অব.) শাফায়েত জামিল (৪৬ ব্রিগেডের কমান্ডার) : (১৫ আগস্ট সকালে) আমি দ্রুত ইউনিফরম পরে মেজর হাফেজসহ ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারের দিকে রওনা দিই। পথে জেনারেল জিয়াউর রহমানের বাসায় যাই। ঘটনা শোনার পর তিনি (জিয়া) বললেন, ‘সো হোয়াট, প্রেসিডেন্ট ইজ কিলড; ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার, আপ হোল্ড দ্য কনস্টিটিউশন।’

জাতির পিতার হত্যার খবর শুনে, একজন নির্বিকার ডেপুটি চিপ অব স্টাফের সংবিধান রক্ষার এই নির্দেশনা কি এতটাই সহজভাবে নেওয়ার বিষয়?

মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ (ডিজিএসআই ঢাকা ডিতাচমেন্টের ওসি ছিলেন) : ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর একটি কর্মসূচি পাই। ডিজিএসআই থেকে আমাকে বঙ্গবন্ধুর পারসোনাল বডিগার্ড হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।… ১৪ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক লাইব্রেরি এলাকায় কয়েকটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

কারা সেদিন এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল? তাঁর সাথে ১৫ আগস্টের ঘটনার যোগসূত্রই বা কী?

জিয়াউদ্দিন বলছেন: আমি সেদিন (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে যাই। দেখতেপাই রাষ্ট্রপতির রুমে বসে খন্দকার মোশতাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, জেনারেল সফিউল্লাহ, জেনারেল জিয়াউর রহমান, ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, এয়ার এবং নেভি চিফদ্বয়, মেজর ডালিম, মেজর শাহরিয়ার। মেজর রশিদ, মেজর ফারুক, মেজর নূর, মেজর মহিউদ্দিন (ল্যান্সার), মেজর আজিজ পাশা আলোচনারত। এই সময় বিভিন্ন দেশের রেডিও মনিটরিং নিউজগুলি খন্দকার মোশতাকের কাছে এনে দেয়া হয়। তিনি সবাইকে পড়ে শোনান যে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর আধাঘণ্টা হতে একঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান সরকার মোশতাক সরকারকে স্বীকৃতি জানিয়েছে। এ সংবাদ শোনার পর মেজর ফারুক, মেজর রশিদ ও মেজর ডালিমকে উল্লসিত ও গৌরবান্বিত মনে হচ্ছিল।

এই উল্লাসের সূত্র ধরেই দেশের বাইরের কুশীলবদের চেহারা উন্মোচন খুবই সহজ।

মেজর জেনারেল (অব) সফিউল্লাহ (সেনাপ্রধান): ‘১৯৭২ সালের ৭ এপ্রিল আমাকে চিফ অব আর্মি স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। জিয়াউর রহমানকে টেলিফোনে আমার দায়িত্ব পাওয়া ও বঙ্গবন্ধুর সাথে আলাপের বিস্তারিত জানাই। জিয়া তখন বলেন, ‘ওকে সফিউল্লাহ। গুড বাই।’… ‘আমি যখনই কোনো অফিসারের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে ব্যবস্থা ঙ্কিয়েছি, তখনই ওই সব অফিসার জেনারেল জিয়ার নিকট শেল্টার নিয়েছে।’

একজন চিফ অব স্টাফের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাদেরকে ডেপুটি শেলতার দিচ্ছেন, সেটিও কি বড় চক্রান্তের আভাস নয়? চিফের কাছে শাস্তি পাওয়া কাউকে শেল্টার দেওয়া তো সেনা শৃঙ্খলারও পরিপন্থি।

লে কর্নেল (অব) সৈয়দ ফারুক রহমানের জবানবন্দি:… তৎকালীন ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান আমার বাসায় হেঁটে আসতেন। তিনি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতেন এবং একসময় বলেছিলেন, ‘তোমরা ট্যাকটুংক ছাড়া দেশের আর খবরাখবর রাখো কী?’ আমি বলি, দেখতেছি তো দেশে অনেক উল্টা-সিধা কাজ চলছে। আলাপের মাধ্যমে আমাকে ইন্সটিগেট করে বলেছিলেন, ‘দেশ বাঁচানোর জন্য একটা কিছু করা দরকার।’… এ নিয়েমেজর রশীদের সঙ্গে দেশের অবস্থার পরিবর্তন সম্পর্কে আলাপ-আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় যে, একমাত্রশেখ মুজিবকে ক্যান্টনমেন্টে এনে তাকে দিয়ে পরিবর্তন করা ছাড়া দেশে পরিবর্তন ঘটানো যাবেনা। এ ব্যাপারে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আলাপ করার সিদ্ধান্ত হয়। এপ্রিল মাসের এক রাত্রে আমি তাঁর বাসায় যাই। … সাজেশন চাইলে তিনি (জিয়া) বলেন, ‘আমি কী করতে পারি, তোমরা করতে পারলে কিছু করো।’… রশীদ পরে জিয়া ও খন্দকার মোশতাক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মেজর রশীদ, ডালিম ও খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে আলোচনা করে যে বাকশালের পতন ঘটাতেহবীবং প্রয়োজনে শেখ মুজিবকে হত্যা করতে হবে, নইলে দেশ ও জাতি বাচবে না। যৌক্তিকভাবে আমিও ধারণাকে সমর্থন করি। খন্দকার রশীদ জানায় যে, শেখ মুজিবকে হত্যা করতেপারলে জিয়াও আমাদের সমর্থন দেবে। ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাতে মিলিটারি ফার্মে নাইট ট্রেনিঙের সময় কো-অর্ডিনেশন মিটিং করে ১৫ আগস্ট ভোরে চূড়ান্ত একশনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৫ আগস্ট ঘটনার পর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে চিফ অব আর্মি স্টাফ করার বিষয়ে সাইফুর রহমানের বাড়িতে মিটিং হয়। জিয়া, রশীদ ও সাইফুর রহমান মিটিং করেন। পরে জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ঠবেন, সাইফুর ও রশীদ মন্ত্রী হবেন, ওই উদ্দেশ্যে জিয়াউর রহমানকে চিফ অবার্মি স্টাফকরা হয়। এই সাক্ষ্য থেকে কি স্পষ্ট হয় না যে মূল খুনিদের নেপথ্যেকে, কীভাবে কাজ করছে? দেশ বাঁচানোর নামে একটাকিছু করা এবং তার কে কী পেতে চান, সেই বাটোয়ারার চিত্রও তো স্পষ্ট।

লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশীদের স্ত্রী জোবায়দা রশীদের জবানবন্দি: মেজর ফারুক জেনারেল জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন ছোটবেলা থেকেই। একদিন রাতে মেজর ফারুক জিয়ার বাসা থেকে ফিরে আমার স্বামীকে জানায় যে, সরকার পরিবর্তন হলে জিয়া প্রেসিডেন্ট হতে চায়। জিয়া নাকি বলে ‘ইফ ইট ইজ এ সাকসেস, দেন কাম টু মি। ইফ ইট ইজ এ ফেইলার, দেন ডু নট ইনভলব মি। শেখ মুজিবকে জীবিত রেখে সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয়।’ এর কদিন পর মেজর ফারুক আমার বাসায় এসে রশীদকে বলে যে জিয়া বলেছে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খুঁজতে হবে যে দায়িত্ব নিতে পারবে। সে মোতাবেক রশীদ খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ১৫ আগস্ট বিকেলে বঙ্গভবনে জেনারেল জিয়াউর রহমান রশীদের কাছে ঘোরাঘুরি করছিল যাতে তাকে চিফ অব আর্মি করা হয়। ১৬ অথবা ১৭ তারিখে সাইফুর রহমানের গুলশানের বাসায় সাইফুর রহমান, আমার স্বামী ও জিয়ার উপস্থিতিতে জিয়াকে চিফ অব আর্মি স্টাফ করার বিষয় ঠিক হয়। কুশীলবদের কার কী ভূমিকা সেটি বুঝতে আর কি কিছু বাকি আছে?

তাহের উদ্দিন ঠাকুর (বঙ্গবন্ধুর সরকারের তথ্য ও বেতার মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী) : ১৯৭৫ সালের মে বা জুনের প্রথম দিকে ঢাকার গাজীপুর সালনা হাইস্কুলে ঢাকা বিভাগীয় স্বনির্ভর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সালনাতে মোশতাক সাহেব সেনা অফিসারদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমাদের আন্দোলনের অবস্থা কী?’ জবাবে তারা জানায়যে, ‘বস সবকিছু ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আমরা তাঁর প্রতিনিধি…।’ ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট খন্দকার মোশতাক বলেন, এ সপ্তাহে ব্রিগেডিয়ার জিয়া দুইবার এসেছিএন। তিনি এবং তাঁর লোকেরা তাড়াতাড়ি কিছু একটা করার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেন।

জানা দরকার: ‘বস’টি কে? একজন ব্রিগেডিয়ারের কেন তারসাথে দুইবার দেখা করতে গিয়েছিলেন? তাড়াতাড়ি কিছু করার জন্য কার বা কাদের এত তাড়া?

সীমিত পরিসরে কয়েকটি খন্ডচিত্র বিশ্লেষণে যা বের হয়ে এলো, তাতে পরিষ্কার, ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডটি একটি রাতের ঘটনামাত্র নয়, কয়েকজন ঘাতকের কাজমাত্র নয়। নেপথ্যে আছেন বহু কুশীলব। দেশে ও দেশের বাইরে। দেশি ও বিদেশি।

এ তো গেল খুনিদের বিচারের সময়কার কথা। যদি দৃষ্টি দিই একটু আগে। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকান্ডের বিচার করা যাবেনা বলে খুনি মোশতাক একটি অধ্যাদেশ জারি করে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। এটিই হচ্ছে সেই কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’। ১৯৭৯ সালের ৬এপ্রিল এই অধ্যাদেশটিকে সংবিধানের অংশ করে নেন সে সময়কার ‘উর্দিখোলা’ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এখানেই শেষ নয়, ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর যখন জাতীয় সংসদে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হলো, তাঁর বিরুদ্ধে রিট করেছিল খুনি কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানের মা মাহমুদা রহমান ও আরেক খুনি কর্নেল শাহরিয়ার রশীদ খান। এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের সময় বিএনপি ও জামায়াত সংসদ থেকে ওয়াক আউট করেছিল। জাতীয় পার্টির এমপি এন কে আলম চৌধুরী ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের আগে জনমত যাচাই করার প্রস্তাব করেন।

দেখা যাচ্ছে: খুনী মোশতাকের সঙ্গে হত্যাপূর্ববর্তী ষড়যন্ত্র, হত্যা পরবর্তী পদ-পদবি ও শেষে রাষ্ট্র ক্ষমতাপ্রাপ্তি, খুনের বিচার না করাকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি, সংসদ থেকে ওয়াক আউট এবং বছরের পর বছর বিচার বিলম্বিত করার প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি বা দলের ভূমিকা খুব স্পষ্ট।

১৯৮০ সালের ১ আগস্ট সে তরুণ ছড়াকার আবার বলেন, ‘পালাবে কোথায়? কী দিয়ে মোরাবে, বসে থাকা ওই তখতে/তোমার গায়ে, ছোপ ছোপ ওই জনক খুনের রক্ত/ থু থু দিয়ে আজ, অভিশাপ দিই, তোর বংশের গায়ে/জনম জনম ফাঁসি চাই তোর, জনক খুনের দায়’। এই থু থু বর্ষণ চলছেই।

১৫ আগস্টের ঘটনায় প্রত্যক্ষ কয়েকজন খুনির সাজা হয়েছে। কিন্তু দেশের ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের সব কুশীলবকে আনতে হবে প্রকাশ্যে। এমনকি তারা যদি মারাও গিয়ে থাকে, ইতিহাসের সত্যির খাতিরে তাদের দায় ও অবস্থান নিরূপণ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন একটি জাতীয় কমিশন গঠন। আজ এটিই জরুরি দাবি।   



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

তেতাল্লিশ বছর আগে দেশে ফিরেছিলো বাংলাদেশ


Thumbnail

দেখতে দেখতে স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স তিপান্ন বছর পার করলো স্বাধীন বাংলাদেশ। এই দীর্ঘ সময়ে দেশে ঘটে গেছে নানা ঘটনা দূর্ঘটনা। আছে সাফল্যের কথা সাথে আছে বেদনার উপাখ্যান। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুনর্গঠনে ব্যস্ত ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে একদল ঘাতক তাঁর ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘটনাচক্রে বেঁচে যান বিদেশে অবস্থানরত তাঁর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন ছুটি কাটাতে শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়াসহ গিয়েছিলেন বেলজিয়ামে। ড. ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থল ছিল জার্মানি। উঠেছিলেন বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাসায়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার সংবাদটি বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা ও ড. ওয়াজেদ জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশিদের মারফত পান। এমন একটি ভয়াবহ সংবাদ তাঁদের কাছে শুধু চরম একটি বিয়োগান্তাক ঘটনাই ছিল না, অবিশ্বাস্যও ছিল। বেলজিয়ামে অবস্থানকালে সবচেয়ে অমানবিক আচরণটি করেছিলেন রাষ্ট্রদূত সানাউল হক। তিনি জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে ফোনে বলেন, তিনি যেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের তাঁর বাড়ি থেকে সত্বর নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। অনেকটা জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার মতোই। দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারকে বেলজিয়াম সীমান্তে পৌঁছে দিতে রাজি হন। এক রাতেই একটি দেশের জন্মদাতার পরিবারের একান্ত ঘরের মানুষ হয়ে যান গৃহহীন। এক কথায় উদ্ভাস্তু।

জার্মানিতে অবস্থানকালে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী জার্মানিতে দায়িত্বরত ভারতের রাষ্ট্রদূত ওয়াই কে পুরির সহায়তায় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যোগাযোগ করে শেখ হাসিনাকে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে অনুরোধ করলে ইন্দিরা গান্ধী তাতক্ষণিক রাজি হয়ে যান। আগস্টের ২১ তারিখ শেখ হাসিনা দিল্লির উদ্দেশে জার্মানি ত্যাগ করেন। ইন্দিরা গান্ধী তাঁদের মাতৃস্নেহে গ্রহণ করেন। নিরাপত্তা বিবেচনা করে তাঁদের নাম বদলে নাম রাখা হয় মি. ও মিসেস মজুমদার। ইন্দিরা গান্ধী দিল্লিতে ড. ওয়াজেদ মিয়ার জন্য একটি গবেষকের চাকরিরও ব্যবস্থা করে দেন। শেখ হসিনা প্রথমবারের মতো ইন্দিরা গান্ধীর কাছেই ঢাকার পুরো ঘটনার বর্ণনা শুনতে পান।

শেখ হাসিনা যখন দিল্লিতে তখন জেনারেল জিয়া বাংলাদেশকে মোটামুটি মিনি পাকিস্তানে রূপান্তর করে ফেলেছেন। শাহ আজিজের মতো চিহ্নিত রাজাকারকে দেশের প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন। ঘাতক আবদুল আলিমকে বানিয়েছেন মন্ত্রীসভার সদস্য। জামায়াতের প্রধান গোলাম আযমকে বাংলাদেশে আসতে দিয়েছেন। বাহাত্তরের সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করা যাবে না বলে একটি ধারা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে উচ্চ পদে পদায়ন করেছেন। পাকিস্তানি আদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ স্লোগান চালু করেছেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১১ হাজার পাকিস্তানি দালাল রাজাকার—আলবদর বিচারের অপেক্ষায় কারাগারে ছিল। জিয়া তাদের মুক্ত করে দেন। বাতিল করেন দালাল আইন। যে দেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে, তাদের আত্মত্যাগকে জিয়া পদদলিত করেছেন।

জিয়া ক্ষমতা গ্রহণ করেই আওয়ামী লীগের সব শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীকে জেলে পুরেন। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ অনেকটা ছত্রভঙ্গ। এই সময় দলের হাল ধরেছিলেন শহীদ তাজউদ্দীনের স্ত্রী বেগম জোহরা তাজউদ্দীন। সঙ্গে ছিলেন দলের কিছু তরুণ নেতা। কিন্তু সবাই জানতেন দলকে নবজীবন দেওয়ার জন্য প্রয়োজন বঙ্গবন্ধুর একজন উত্তরাধিকার। ১৯৮১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ড. কামাল হোসেন দলের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করলে তা সর্বসম্মতক্রমে গৃহীত হয়। দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতা দিল্লি গিয়ে শেখ হাসিনাকে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরিয়ে আনেন। শেখ হাসিন দেশ ফিরবেন এই সংবাদ জানাজানি হয়ে গেলে জিয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ি গঠিত হয় ‘শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রতিরোধ কমিটি’। নেতেৃত্বে মির্জা গোলাম হাফিজ, জিয়ার আমলের সংসদের স্পিকার। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশে ফিরবেন এই সংবাদে দেশের মানুষ এমন উজ্জিবিত হয়ে উঠেছিলেন যে শেষ পর্যন্ত মির্জা গোলাম হাফিজ তার কর্মসূচী বতিল করে ঘরে ঢুকে যান।

যেদিন শেখ হাসিনা দেশে ফিরেন, তখন তা বঙ্গবন্ধু আর বাঙালির বাংলাদেশ ছিল না। যখন ফিরলেন তখন তা পরিণত হয়ে গিয়েছিল জেনারেল জিয়া আর পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের বাংলাদেশ। যে শেখ হাসিনার ১৯৭৫ সালে বিদেশ যাওয়ার সময় সব কিছু ছিল, সেই শেখ হাসিনা যখন স্বদেশ ফিরলেন তখন তাঁর কিছু নেই। তিনি সত্যিকার অর্থেই একজন সর্বহারা। এ রকম পরিস্থিতিতে যেকোনো মানুষের মানসিক বিপর্যয় ঘটতে পারে। সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পরাটা স্বাভাবিক। প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে উঠে শেখ হাসিনা মনোযোগ দিলেন আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনে। জন্মের পর থেকে আওয়ামী লীগের প্রাণশক্তি দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। দলটি একাধিকবার ভাঙনের মুখে পড়েছে। নিষিদ্ধ হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু আবার সমহিমায় ফিরে এসেছে নতুন অবয়বে আর শক্তিতে। যার পিছনে ছিল দলের তৃণমূল নেতা কর্মীদের আত্মত্যাগ ।

জিয়ার বাংলাদেশে শেখ হাসিনার থাকার জায়গাও নেই। উঠলেন এক ফুফুর বাড়িতে। স্বজনদের জন্য দোয়া করতে যেতে চাইলেন ধানমণ্ডি বত্রিশ নম্বরের নিজ বাড়িতে। অনুমতি মিলল না। সামনের রাস্তায় বসে দলের কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে দোয়া পড়লেন। কাকতালীয়ভাবে জিয়া এক সামরিক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে ৩১ মে ১৯৮১ সালে নিহত হন। তারপর জিয়ার উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের হাত ঘুরে ক্ষমতা দখল করলেন জেনারেল এরশাদ। তিনিও তাঁর পূর্বসূরির রেখে যাওয়া বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তানে রূপান্তর করার কাজে মনোনিবেশ করার দিকে নজর দিলেন। জিয়া স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন করে বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তান বানানোর কাজ সমাপ্ত করেছিলেন আর স্বৈরশাসক এরশাদ সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম যোগ করে বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্টে্র পরিণত করেন। অবস্য সম্প্রতি দেশের উচ্চ আদালত সংবিধানে এই অন্তর্ভূক্তিকে বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছে।

আশির দশকের মাঝামাঝি দেশের ছাত্রসমাজ প্রথমে শুরু করল এরশাদবিরোধী আন্দোলন। কিছুদিনের মধ্যে তাতে যোগ দিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আর দেশের শ্রমিক সংগঠনগুলো। কিন্তু এরশাদের চাতুর্য আর রাষ্ট্রীয় পেশিশক্তির সঙ্গে তারা ঠিক পেরে উঠছিল না। তখনো আওয়ামী লীগ দল গোছাতে ব্যস্ত। দলের অনেকেই এরশাদের সঙ্গে আগেই হাত মিলিয়েছে। জিয়ার সঙ্গে চলে গিয়েছিল বেশ কজন। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ করা ছাড়া এই দেশে কোনো গণ—আন্দোলন সফল হয়নি। কিছুদিন পরই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের পরে এই গণ—আন্দোলন সফল হয় এবং ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদ একটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। এই সরকারের একমাত্র কাজ ছিল একটি অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা আর নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর  করা।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে ভুল নির্বাচনী কৌশল, প্রতিপক্ষকে সঠিক মূল্যায়ন না করা, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির গোপনে নির্বাচনী আঁতাত আর শেখ হসিনার নেতৃত্বের জোট থেকে আলাদা হয়ে বাকশালের পৃথক প্রার্থী দেওয়ার কারণে সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করতে ব্যর্থ হয়। এই পরাজয়ে অনেকের মনোবল ভেঙে গেলেও শেখ হাসিনা তাঁর পূর্বের অভিজ্ঞতা ‘আবার ফিরে আসিব’র মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে শক্ত হাতে দলকে পুনরুজ্জীবিত করার দিকে মনোনিবেশ করেন। ১৯৯১ সালে সরকার গঠন করেন খালেদা জিয়া। এই সরকারের একমাত্র উল্লেখযোগ্য অর্জন ছিল দেশের শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে যেতে সংবিধান সংশোধন করা।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে। তবে নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকার গঠন করতে তাদের প্রয়োজন হয় জাসদ (রব) আর জাতীয় পার্টির সমর্থন। সরকারের নাম হয় মহাজোট সরকার। উত্তরাধিকারসূত্রে শেখ হাসিনা পান একটি আওয়ামী লীগবিরোধী প্রশাসন আর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মারাত্মক প্রতিক্রিয়াশীল বিরোধী দল, যারা সুযোগ পেলেই সংসদে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত আর নানা অজুহাতে হরতাল ডেকে দেশকে অচল করে দেওয়ার চেষ্টা করত। বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়াল যে ‘ক্ষমতায় নেই কেন দেশবাসী জবাব চাই’র মতো অবস্থা। দেশ শাসনে পদে পদে বাধা। শেখ হাসিনার এই মেয়াদে তিনি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারীদের বিচার না করার জন্য জিয়া যে ইনডেমনিটি আইন সংবিধানে সংযোজন করেছিলেন তা সংসদে বাতিল করে উন্মুক্ত বিচারিক আদালতে পঁচাত্তরের খুনিদের বিচার শুরু করতে পেরেছিলেন, যা ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে বর্তমানে টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী। যে শেখ হসিনা ১৭ মে ১৯৮১ সালে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘ ছয় বছর পর দেশে ফিরেছিলেন, প্রাথমিক ধাক্কা সামলে উঠে যে শেখ হাসিনা বাবার গড়ে তোলা দলটিকে নিজের মেধা, ও  মননে গড়ে তুলেছেন, আর একাধিকবার জীবন—মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে ফিরে এসেছেন, সেই শেখ হাসিনা এখন শুধু বাংলা নামের দেশটির একজন প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি বিশ্বনন্দিত একজন রাষ্ট্রনায়কও বটে। তাঁর টানা চার  দফার মেয়াদে সফলতার সঙ্গে তিনি সামলেছেন একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিডিআর বিদ্রোহ আর খালেদা জিয়া পরিচালিত ২০১৩—১৪ সালের পেট্রলবোমার সন্ত্রাস। দেশে ফেরার পর হতে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টা হয়েছে একাধিকবার যার সব থেকে ভয়ঙ্করটা ছিল ২০০৪ সালে তার জনসভাস্থলে বেগম জিয়ার পূত্র তারেক রহমানের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে গ্রেনেড হামলা। আল্লাহর রহমতে সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে হতে সেই যাত্রায় শেখ হাসিনা  বেঁচে গিয়েছিলেন। বলতে দ্বিধা নেই এসব দুর্যোগ মোকাবেলায় অনেক সময় তিনি দলের অনেক নেতার সহায়তাও পাননি। শেখ হাসিনা তাঁর পিতার যোগ্য উত্তরাধিকার। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা যখন সরকার গঠন করেন, তখন বাংলাদেশ ছিল একটি নিম্ন আয়ের দেশ। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল চার শ ডলারের নিচে আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশে বর্তমান মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২৮০০ ডলারের বেশী আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমনে সাত গুন। কৃষিতে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে তাদের ষড়যন্ত্রতত্তে্ব লিপ্ত, তখন এই শেখ হাসিনাই সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থেই হবে। অনেকের সে কী ঠাট্টা! আজ সেই পদ্মা সেতু বাস্তবে পরিণত হয়েছে। সামনের বছর তা চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। শেখ হাসিনার পক্ষেই বলা সম্ভব এখন থেকে কোনো বৈদেশিক ঋণ বা সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশ তার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে তৈরি হলো সুড়ঙ্গপথ, যা ছিল মানুষের কল্পনারও বাইরে। সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা নিয়ে ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু। সেই বাংলাদেশ এখন ২৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরূ হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে বাণিজ্যিক ভাবে সচল হবে রূপপুর। বাংলাদেশের উপগহ্র মহাকাশে ঘুরছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে মহাকশে যাবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় উপগ্রহ। জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের সিঁড়ি অতিক্রম করার পথে। ২০৪১ সাল নাগাদ দেশটি উন্নত বিশে^র তালিকায় উঠে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার টানা চার মেয়দে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে বাংলাদেশ এখন বিশে^ তেত্রিশতম অর্থনীতির দেশ। গত ১৫ বছরে বদলে গেছে বাংলাদেশ।

একজীবনে একজন মানুষের পক্ষে যা করা সম্ভব, তা শেখ হাসিনা করে ফেলেছেন যদিও করতে পারতেন আরো অনেক কিছু। তাঁর সামনে সব সময় পথ আগলে দাঁড়িছে দেশের সবজান্ত সর্বনাশা আমলাতন্ত্র ও কিছু চাটুকার । তাঁর সামনে এই মুহূর্তে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ আছে। প্রথম চ্যালেঞ্জ দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা। এই ভয়াবহ রোগটি দেশের প্রশাসন যন্ত্রকে গিলে  খেয়েছে। এটি করতে হলে যথাযথ মানুষকে যথাযথ জায়গায় পদায়ন করতে হবে। দেশটিকে অর্ধশিক্ষিত মোল্লাদের হাত থেকে উদ্ধার করতে হবে। তার জন্য ধর্মীয় শিক্ষাসহ সব শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করা দরকার।

শেখ হাসিনা এই দেশকে বিশ্বদরবারে একটি পরিচিতি দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। শেখ হাসিনা আরো দীর্ঘায়ু হোন এই প্রার্থনা করি। দেশকে দিয়েছেন তিনি অনেক কিছু। যা দিয়েছেন তার চেয়ে বেশী কিছু চাওয়াটা হয়তো সমীচিন হবে না। কিন্তু বাস্তবতা বিবেচনা করে চাওয়ারমতো এখন আর কাওকে দেখা যাচ্ছে না। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা নয়, দেশে ফিরেছিল বাংলাদেশ। ৭ মে ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দীন সরকারের বাধা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা যখন বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছিলেন, সেদিন গণতন্ত্র দেশে ফিরেছিল। তাঁর শাসনামলের সব অর্জন ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন যোগ্য মানুষের যথার্থ মূল্যায়ন। আর জরুরী ভিত্তিতে দেশকে আমলাতন্ত্রের সর্বনাশা অভিশাপ হতে মুক্ত করা, দূর্নীতেকে সমূলে উৎপাটন করা।

জয়তু শেখ হাসিনা। জয়তু বাংলাদেশ।

 

লেখক: সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন । ১৫ মে ২০২৪



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশী জনগণের জন্য ‘আলোক বর্তিকা’


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘‘১৭ মে ১৯৮১, তোমার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ এর সূচনা, ১৭ মে ২০২৩, কমিউনিটি ক্লিনিক: ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ দিলো নতুন মর্যাদা’’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠক ডা. কাইয়ুম তালুকদার যে আলোচনা করেছেন তাঁর চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক অভাবনীয়, অনন্য এবং যুগান্তকারী একটি মডেল। শিশু স্বাস্থ্য, মাতৃ স্বাস্থ্য এবং কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। নবজাতকের মৃত্যু, মাতৃ মৃত্যু কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুসরণ শুরু করেছে। গত বছর ১৭ মে কমিউনিটি ক্লিনিক ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিসিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ সারা বিশ্বের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশী জনগণের জন্য ‘আলোক বর্তিকা’। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ এর প্রবক্তা। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা উন্নয়ন কৌশল জাতির পিতার ভাবনা থেকেই উৎসারিত। অল্প সময়ের মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রান্তিক সুবিধা বঞ্চিত মানুষের আপন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে জনগণের বিপুল সমর্থনে আবার সরকার গঠন করেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। ভবিষ্যতে আর কোন অপশক্তি যেন কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করতে না পারে সেজন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এই প্রতিষ্ঠানের সাথে জনগণকে সম্পৃক্ত করেন। বর্তমানে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে নির্মিত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার ‘বাতিঘর’ এই প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে জনগণ জমি দিচ্ছেন, সরকার ভবন করে দিচ্ছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রমের পুরোটাই পরিচালিত হচ্ছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ মানেই স্মার্ট উদ্যোগ। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার উদ্ভাবন মানেই জনবান্ধব কর্মসূচি। কমিউনিটি ক্লিনিক পাল্টে দিচ্ছে গ্রামীণ জনপদ। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে কমিউনিটি ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিশ্ববাসী আজ শেখ হাসিনাকে গুরুত্ব না দিয়ে পারে না


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘‘১৭ মে ১৯৮১, তোমার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ এর সূচনা, ১৭ মে ২০২৩, কমিউনিটি ক্লিনিক: ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ দিলো নতুন মর্যাদা’’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠক ফরিদা ইয়াসমিন, এমপি যে আলোচনা করেছেন তাঁর চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

আজকে আমরা ১৭ মে নিয়ে কথা বলছি। যেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। আবার গত বছর এই দিনে তাঁর চিন্তা প্রসূত কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজকে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, উন্নয়নশীল বাংলাদেশের কথা বলছি, যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি, একদিন উন্নত বাংলাদেশ হব বলে স্বপ্ন দেখছি এই সবকিছু শেখ হাসিনার স্বপ্ন, শেখ হাসিনার ইনিশিয়েটিভ। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা স্মরণ করতে চাই সে দিনটি যেদিন শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এলেন। সমগ্র বাঙালীর আনন্দিত উদ্বেলিত অপেক্ষার দিন। সমস্ত কিছু উপেক্ষা করে মানুষ বঙ্গবন্ধু কন্যাকে স্বাগত জানিয়েছে সেদিন। সেদিন তিনি দেশে আসার পর ৩২ নম্বরে ঢুকতে পারেননি। তিনি চেয়েছিলেন একটি মিলাদ করবেন, নিজের বাড়িতে ঢুকবেন কিন্তু সেটি তিনি পারেননি। তাকে রাস্তায় বসে মিলাদ পড়াতে হয়েছে। তার ওপর এত জুলুম বাধা বিপত্তি সব কিছু পেরিয়ে আজকে তিনি বাংলাদেশের শুধু রাষ্ট্রনায়ক না, তিনি সারা বিশ্বের একজন নেতা হিসেবে পরিণত হয়েছেন। বিশ্ববাসী আজ শেখ হাসিনাকে গুরুত্ব না দিয়ে পারে না। বাংলাদেশের একজন প্রধানমন্ত্রীকে সেরকম গুরুত্ব না দিলেও পারত কিন্তু তারা শেখ হাসিনাকে উপেক্ষা করতে পারেন না। কারণ তিনি শেখ হাসিনা। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। তাঁর যে স্বপ্ন, তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন সেটি সকলের কাছে একটি বিস্ময়। আজকে পাকিস্তানিরা বলে আমাদেরকে বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। 

ছিয়ানব্বইয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেই শেখ হাসিনা জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেন। কমিউনিটি ক্লিনিক এর মত একটি উদ্যোগ এটি কেউ চিন্তাও করেননি। এটা একেবারে শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত। কিন্তু সরকারের পালা বদল হবার সাথে সাথে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসেছে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দিলেন। কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ হওয়ার ফলে আবার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো একেবারে ভূতড়ে বাড়ির মত হয়ে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী পরের বার ক্ষমতায় এসে সেই ক্লিনিকগুলো আবার চালু করেন। জাতিসংঘ এটিকে মডেল হিসেবে নিয়েছে এবং ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সেটি বন্ধ করে দিয়েছিল। আজকের দিনে এসে বুঝা যায় যে এটি আসলে কতটা ইনোভেশন ছিল। শেখ হাসিনার এই উদ্যোগ আজ অন্যান্য দেশ অনুসরণ করতে চায়। 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

১৮ কোটি মানুষের ঠিকানা জননেত্রী শেখ হাসিনা


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘‘১৭ মে ১৯৮১, তোমার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ এর সূচনা, ১৭ মে ২০২৩, কমিউনিটি ক্লিনিক: ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ দিলো নতুন মর্যাদা’’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠক অধ্যাপক ডা. নুরুল হুদা লেনিন যে আলোচনা করেছেন তাঁর চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

১৭৮১ সালে পলাশি যুদ্ধে ইতিহাসের ঘৃণিত সেনাপতি মির্জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজ উদ্দৌলার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ২০০ বছরের গোলামী আমাদের ললাটে এসেছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হলেও বাঙালী এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা পায়নি। যার পটভূমিতে বীরদর্পে আবির্ভূত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ থেকে ৭৫’ বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে স্বাধীনতার লাল পতাকা উড়েছিল বাঙালী আশায় বুক বেধেছিল। কিন্তু বাংলার নব্য মির্জাফরেরা জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার চেতনাকে ভুলুন্ঠিত করেছিল। ভাগ্যক্রমে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা বিদেশে থাকার কারণে জীবনে বেচে যান। কোন অন্যায় না করেও পিতার অসাধারণ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত স্বাধীন বাংলাদেশে আসতে তাকে বাধা দেওয়া হয়েছিল। সামরিক শাসক এবং শাসনের কারণে বরণ করতে হয়েছিল নির্বাসিত জীবন। দেশের আপামর জনগণ, আবাল-বৃদ্ধা-বণিতা শেখ হাসিনার এই অকৃত্রিম ভালোবাসাকে হৃদয়ের বেরোমিটার দিয়ে মাপতে পারে তাকে বাংলায় রুখবে কে। তাইতো ঐক্যের প্রতীক হয়ে বাঙালির ভাগ্যাকাশে জ্বলজ্বলে স্বধীনতার সূর্য হাতে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরেছিলেন শেখ হাসিনা নামের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। যার আলোর বিচ্ছরণ ঘটাচ্ছে ১৮ কোটি মানুষের প্রতিটি হৃদয়ে। বাঙালির ভাগ্য উন্নয়নের চাকা এখন সঠিক পথে সঠিক গন্তব্যের দিকে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ধাবমান। 

১৯৮১ সালের ১৭ মে যেদিন তিনি বাংলার মাটিতে পা রাখেন সেদিন তার পথ ছিল অনেকটা কন্টকাকীর্ণ। নিজের বাড়ি, নিজের পিতার বাড়িতে একজন সাধারণ নাগরিকেরও প্রবেশের অধিকার থাকে। কিন্তু শেখ হাসিনার সেই অধিকার খর্ব করা হয়েছিল। ১৯৮১ সালের ১৭ মে, দেশের মাটিতে পা রাখার পর শেখ হাসিনার হৃদয়ের টেবিলে দু’টি ফাইল ছিল। দু’টি ফাইলের একটি ছিল ৭৫ এর ১৫ আগস্ট পিতা-মাতাসহ স্বজন হারানো মমগাথা ও তাঁর বিচার প্রসঙ্গ। অন্যটি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ তথা বাঙালী জাতির ভাগ্য উন্নয়ন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে যদি জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে না ফিরতেন, তবে বাঙালি জাতির ভাগ্য কখনো আলোর মুখ দেখতো না। তলিয়ে থাকতো অটল অন্ধকারে। তাইতো বাংলার মানুষ সবাই ধারণ করে একটি শ্লোগান, ‘১৮ কোটি মানুষের ঠিকানা, জননেত্রী শেখ হাসিনা।’  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়ার বাংলাদেশের কারিগরি শেখ হাসিনা


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘‘১৭ মে ১৯৮১, তোমার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ এর সূচনা, ১৭ মে ২০২৩, কমিউনিটি ক্লিনিক: ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ দিলো নতুন মর্যাদা’’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ যে আলোচনা করেছেন তাঁর চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বিয়োগান্তের ঘটনায় জাতি ছিল দিক নির্দেশনাহীন। নারকীয় এই ঘটনায় জনগণ হয়ে পড়েন দিশেহারা। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করার কোন শক্তি সাহস ছিল না। দলের অনেক বড় বড় নেতাও ছিলেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ধানমন্ডির ৩২ বাড়ি ছিল কবরের নীরবতা। সমগ্র জাতি তখন অন্ধকারে। সামরিক বুটে পিষ্ঠ গণতন্ত্র। নির্বাসনে সংবিধান আর মানুষের মৌলিক অধিকার। বাক স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। এমনকি বঙ্গবন্ধু নাম উচ্চারণ ছিল নিষিদ্ধ। 

তৎকালীন রেডিও, টেলিভিশন কোথাও বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করতে দেওয়া হত না। দেশকে টেলে দেওয়া হয়েছিল উল্টোপথে। ১৯৭১ সালে যে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল ১৯৭৫ এসে সেই বাংলাদেশ হারিয়ে গিয়েছিল। সারা দেশে শুধু তখন হতাশ আর নাভিশ্বাস অবস্থা। এর প্রায় ৬ বছর পর নির্বাসনে থাকার জননেত্রী শেখ হাসিনা জীবনের পরোয়া না করে ভয় ভীতি উপেক্ষা করে অনেক ঝুকি নিয়ে পরিবারের সদস্যদের বিদেশের মাটিতে রেখে সেই ১৯৮১ সালের ১৭ মে পদাপণ করেন বাংলার মাটিতে। তিনি যখন দেশে এসেছিলেন তখন অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণ হয়। 

আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ তাকে পেয়ে আনন্দিত উদ্বেলিত ছিলেন। তিনি এসেছিলেন এক আলোক বতিতা, আলোর ফেরিয়াওলা হয়ে। তিনি হয়ে উঠেন সকলের আশা আকাঙ্ক্ষা প্রতীক। বিশ্বস্ততার ঠিকানা। শাসক গোষ্ঠীর ভিত তখন কেপে উঠেছিল। দেশে আসার পর জননেত্রী শেখ হাসিনার চলার পথ সহজ ছিল না। মসৃণ ছিলো না। কিন্তু তিনি সমস্ত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে তার মেধা, দক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, সৃজনশীলতা উদার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি আর দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল আর আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। জনগণ ফিরে পায় তার সব ধরনের অধিকার। আল্লাহ অশেষ রহমত শেখ হাসিনার মতা আমরা একজন নেত্রী পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু বানিয়েছেন বাংলাদেশ আর শেখ হাসিনা বানিয়েছেন বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। যত দিন থাকবে শেখ হাসিনার হাতে দেশ পথ হারাবে না বাংলাদেশ।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন