বিশ্বের পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলেও তাজ্জবের বিষয়, ছোট ছোট দেশের কাছে তাদেরকে লজ্জার এবং করুণ পরিণতি বরণ করে নিতে হয়। ইতিহাস সাক্ষী, বর্তমান পরিস্থিতিও যেন ইতিহাসেরই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
একসময় সারা পৃথিবী শাসন করেছে গ্রিস, আরব, মোঙ্গল, ব্রিটেনের মত পরাশক্তিরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেনের কাছ থেকে এই পরাশক্তির তকমাটা গ্রহণ করে আমেরিকা। এর পর থেকেই একে একে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধে জড়িয়ে পরে নব্য ক্ষমতাবান দেশটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোরিয়া যুদ্ধ এরপর ভিয়েতনাম হয়ে বর্তমান আফগানিস্তান। কোন যুদ্ধেই কিন্তু আমেরিকা সর্বশেষ জয়ী দল নয়। প্রতিটি যুদ্ধে তারা ব্যাপক সৈন্য, অর্থ খরচ করেও সারা পৃথিবীতে সাড়া ফেলা এসব যুদ্ধ জয় করতে পারে নি। তারা যেই যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেছে সেই যুদ্ধে স্থানীয় দেশটির কোন লাভ না হলেও দেশটি একেবারেই ক্ষত বিক্ষত হয়েছে। কোরিয়া আজ দুই ভাগে বিভক্ত, ভিয়েতনাম যদিও নিজেদের শেষ পর্যন্ত কিছুটা ঘুছিয়ে নিতে সক্ষম হলেও আফগানিস্তানের অবস্থা একেবারেই নাজুক। দেশটির সম্পূর্ণ করিকাঠামো আমেরিকার চাপিয়ে দেওয়া অন্যায্য এই যুদ্ধে ভেঙ্গে পড়েছে। কিন্তু এরপরেও দেশটিতে শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলো না কথিত এই মোড়ল।
ইতিহাস বলে আফগানিস্তান হলো বিশ্বশক্তির গণকবর। যেই দেশি এই ভূখণ্ড দখল করতে এসেছে তারাই হেরেছে, বিলিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে নিজের দেশের সবটুকু সম্মান। আফগানরা জন্মগত জাত যোদ্ধা, আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম আর প্রশিক্ষণ বাদ দিয়েই কিভাবে নিজ ভূখণ্ড আগলে রাখতে হয় তা জানে তারা। একটা কথা আছে, ‘বিদ্বানরা শিক্ষা নেয় ভুল থেকে’ কিন্তু আমেরিকার আচরণে সেই শিক্ষার ন্যূনতম ছিটে ফোঁটাটাও নেই। যেই তালেবানদের নিজ হাতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের জন্য তৈরি করেছিলো আমেরিকা সেই তালেবানদের হাতেই চরম পরাজয় মেনে দেশ ছাড়তে হচ্ছে এখন তাদের।
মার্কিন রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা এখন বলছেন যে, ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনামের সায়গন থেকে যেভাবে আমেরিকানদেরকে হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল - ২০২১ সালের কাবুলে এখন সেই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটলো।
মার্কিন রিপাবলিকান সেনেটর মিচ ম্যাককনেল বলেছেন, "প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রকে ১৯৭৫ সালের সায়গনের অপমানজনক পতনের চাইতেও খারাপ অবস্থায় নিযে যাচ্ছে।"
তিনি আরো বলেন, "এখন আফগান সৈন্যদের সাহায্য না করলে আল-কায়েদা ও তালেবান মিলে কাবুলে আমাদের দূতাবাস পুড়িয়ে দিয়ে এবার ১১ই সেপ্টেম্বরের বার্ষিকী পালন করবে।"
দু`দশকব্যাপী এই আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারি হিসেবমতে ৭৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয় করেছে, এতে নিহত হয়েছে তাদের ২,৩১২ জন সৈন্য, জখম হয়েছে ২০ হাজারের বেশি, আফগান সৈন্য ও পুলিশ নিহত হয়েছে আনুমানিক ৬৪,০০০ - আর আফগান বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে অন্তত ১১১,০০০।
তাই কাবুলের পতনকে এখন অনেকে দেখতে চাইবেন আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ প্রয়াসের পরাজয়ের চরম মুহূর্ত হিসেবে।
আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে – আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয় ভিয়েতনামের চেয়েও বড় পরাজয় হিসেবে। দেশটিতে ১৯৭৫ সালে দুই দশকের যুদ্ধ শেষে ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে দিন শেষে একেবারেই খালি হাতে ফেরে দেশটি। বরং এই যুদ্ধের শেষে তারা কার্যত ভিয়েতনামকে তাদের প্রতিপক্ষ রাশিয়ার হাতেই তুলে দেয়। আফগান যুদ্ধেও একেবারে সেই ঘটনারি প্রতিফলন ঘটালো মার্কিনীরা। দেশটিতেও দুই দশকের যুদ্ধ শেষে ২.৫ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে শেষ পর্যন্ত নিজের দেশের নাগরিক ও কূটনৈতিকদের যাতে কোন ক্ষতি না করে দেশটি থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া যায় তার জন্য নিজেদের প্রতিপক্ষের কাছে অনুরোধ করতে বাধ্য হয়েছে দেশটি।
আফগানিস্তান-ভিয়েতনামে আমেরিকার হারের মূল কারণ
স্থানীয়দের সম্মান, সংস্কৃতির প্রতি বিষদ আচরণ এবং স্থানীয় জনগণের সাথে মিশে যেতে না পারাই আমেরিকানদের এইসব যুদ্ধে হেরে যাওয়ার মূল কারণ হিসেবে মনে করেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞগণ। তাদের মতে হুট করে একটি দেশ রাতের আধারে হয় তো দখল করে নেওয়া সম্ভব কিন্তু সকাল বেলা সেই দেশের জনগণের সামনে নিজেদের তাদের জন্য ক্ষতিকর নয় তা যদি আপনি প্রমাণে ব্যর্থ হন তবে আপনার সেই দেশে টিকে থাকাটা খুব বেশি স্থায়ী হবে না এটা নিশ্চিত।
আমেরিকানদের সাথেই ঠিক একি ঘটনা ঘটেছে ভিয়েতনাম এবং আফগানিস্তানে। দেশ দুটিতে তারা বিনা বাঁধায় জয় করেছিলো ঠিকি কিন্তু স্থানীয় জনগণের সাথে মিশে যেতে না পারায় আসতে আসতে তারাই আমেরিকার শত্রুতে পরিণত হয়।
আফগানিস্তানের ঘটনাপ্রবাহ দেখে মার্কিন বিশ্লেষকরাও এখন বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ `পরাজয়` আসলে আকস্মিক কিছু নয়, এটা ঘটেছে বহু বছর ধরে - একটু একটু করে।
মার্কিন সাংবাদিক ও বিশ্লেষক ফরিদ জাকারিয়া এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, তালেবানের এই পুনরুত্থান আকস্মিক নয়, বরং গত ১০-১৫ বছর ধরেই তালেবানের ধীরে ধীরে শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছিল।
আফগানিস্তানে ২০০১ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হওয়া মার্কিন বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে তালেবানের পতনের পর কাবুলে অনেক তরুণের দাড়ি কামিয়ে ফেলার দৃশ্য টিভির পর্দায় দেখানো হয়েছিল।
কিন্তু আসলে তালেবান কখনোই সম্পূর্ণ পরাজিত হয়নি। আফগানিস্তানে বিপুল পরিমাণ বিদেশি সৈন্যের উপস্থিতি সত্ত্বেও তালেবান আবারও সংগঠিত হয়ে ক্রমাগত তাদের শক্তি বাড়ায়, আফগানিস্তানের নানা অঞ্চলে আবার তাদের প্রভাব বিস্তার করে। আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে তারা বিপজ্জনক করে তুলেছিল এবং তাদের চোরাগোপ্তা বা আত্মঘাতী আক্রমণ, ঘরে তৈরি বোমা বিস্ফোরণ ও সহিংসতা বছরের পর বছর ধরে অব্যাহতভাবেই চলছিল।
ভিয়েতনামের মত আফগানিস্তানের পরিবেশও আমেরিকানদের জন্য অনুকূলে ছিলো না। ভিয়েতনাম যেমন ট্রপিকাল জঙ্গলের এবং পাহাড়ে ভরপুর একটি দেশ তেমনি আফগানিস্তান মরু, বরফ এবং অত্যন্ত বিপদের ভরপুর পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ পাহাড়ে ঘেরা দেশ। আমেরিকানরা মাটির উপরে সবকিছুই দেখতে পেলেও দেশদুটিতেই প্রতিপক্ষ সব সময় আমেরিকানদের সাথে লড়ে গেছে মাটির নিচ থেকে চোরা গুপ্তা হামলা করে।
এছাড়া দেশদুটি ছিলো আমেরিকা থেকে অনেকটা দূরে যার ফলে রসদ সরবরাহে আমেরিকা কে সব সময় ব্যাপক ঝামেলার মাঝে দিয়ে যেতে হয়েছে। আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে আমেরিকাকে পাকিস্তানের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল থাকতে হয়েছে। যার কারণে প্রায়শই তালেবানরা নিজেরদেরকে পুনরায় গুছিয়ে নেওয়ার সময় পেতো।
ভিয়েতনামের মত এখানেও আমেরিকার জয়ের অন্যতম বাধা ছিলো তার প্রতিপক্ষ রাশিয়া। দুটো পক্ষকেই দেশটি অস্র, সামরিক প্রশিক্ষণ এবং বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে গেছে। ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপস্থিতি চোখের সামনে হলেও আফগানিস্তানে তারা সব সময় পেছন থেকে তালেবানদের সহযোগিতা করেছে বলে বেশির ভাগ বিশ্লেষক মনে করেন। যদিও রাশিয়া সব সময় তা অস্বীকার করে এসেছে।
এছাড়া, ২০১৯ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক ক্রেগ হুইটলকে "আফগানিস্তান পেপার্স: এ সিক্রেট হিস্ট্রি অব দ্য ওয়ার - এ্যাট ওয়ার উইথ দ্য ট্রুথ" শিরোনামের ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তিনি দেখিয়েছিলেন, একের পর এক মার্কিন প্রশাসন এটা স্বীকার করে নিয়েছিল যে তালেবানকে হারানো সহজ হবে না, আফগান রাষ্ট্রটি দুর্বল এবং দুর্নীতিতে ভরা, - তাই কোন সমন্বিত নীতি ছাড়া এগিয়ে যাওয়াটাও "পরাজয় স্বীকার করে নেয়ার চাইতে ভাল।"
আফগানিস্তানে আমেরিকার মূল লক্ষ্য ছিলো দেশটিকে তালেবান এবং আল-কায়েদা থেকে মুক্ত করা কিন্তু তালেবানরা আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছে আমেরিকাদের দেশটি নিয়ে গাফিলতি আর স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসনের সাথে সমন্বয় হীনতার কারণে।
আফগান যুদ্ধ অংশ গ্রহণকারী এক সেনা অফিসার বলেন, আফগানিস্তানে অবস্থানকালে তিনি বুঝতে পেরেছেন কেন ইতিহাসবিদরা আফগানিস্তানকে ‘সা¤্রাজ্যের করবখানা’ বলেন। বিংশ শতাব্দীতে দু’বার আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায় ব্রিটেন। ১৮৪২ সালে সেখানে তারা সবচেয়ে ভয়াবহ সামরিক পরাজয়ের অন্যতম এক পরাজয় বরণ করে। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানকে দখল করে রেখেছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিন্তু ১৫০০০ সেনা সদস্য নিহত এবং হাজার হাজার আহত হওয়ার পরই তারা আফগানিস্তান ছেড়ে যায়। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক নিয়মের বিষয়ে তিনি বিশেষত এক বৈকল্যে ভোগেন। উদাহরণ হিসেবে, তাকে এবং অন্য ইউনিটকে রাতের বেলা তালেবানদের আস্তানায় ঘেরাও বা অভিযান চালাতে অনুমতি দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, বাচ্চাদের চুম্বন করতে দেয়া হতো না আমাদেরকে। সেখানে আমরা কিছুই করতে পারতাম না। আমরা আসলে চেষ্টা করেছি এবং ব্যর্থ হয়েছি কিংবা তালেবানদের হারানো জন্য কিছুই করিনি।
তালেবান যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান পাকিস্তান
মন্তব্য করুন
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি রাশিয়া
মন্তব্য করুন
ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি
মন্তব্য করুন
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের স্ত্রী এবং দেশটির ফার্স্ট লেডি আসমা আল-আসাদ লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে ২০১৯ সালে তিনি ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু এবার তিনি লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হলেন। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। খবর এএফপির।
এতে বলা হয়েছে, ৪৮ বছর বয়সী আসমা বিশেষ চিকিৎসা প্রোটোকলের মধ্য দিয়ে যাবেন; যার জন্য তাকে আইসোলেশনে থাকতে হবে। এর ফলে তিনি সরকারি কিংবা জনসংশ্লিষ্ট কোনও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারবেন না।
এর আগে, ২০১৯ সালের আগস্টে সিরিয়ার এই ফার্স্ট লেডি বলেছিলেন, তিনি ব্রেস্ট ক্যানসার থেকে পুরোপুরি সেরে উঠেছেন। ব্রেস্ট ক্যানসার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে থাকাকালীন তা শনাক্ত করায় চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি।
২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ব্রিটিশ-বংশোদ্ভূত সাবেক এই ব্যাংকার বিভিন্ন ধরনের দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কাজকর্মে জড়িয়ে পড়েন। দেশটিতে যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের সাথে সংশ্লিষ্টতা বাড়ালেও দেশটিতে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
সিরিয়ার অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিরিয়া ট্রাস্ট ফর ডেভেলপমেন্ট পরিচালনা করেন আসমা আল-আসাদ। তার এই প্রতিষ্ঠানের ছায়াতলে সিরিয়াজুড়ে অনেক দাতব্য ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে অন্যান্য সংস্থা।
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গত বছর প্রথমবারের মতো স্বামী বাশার আল-আসাদের সাথে বিদেশ সফরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান আসমা আল-আসাদ। ওই সফরে তিনি আমিরাতের প্রেসিডেন্টের মা শেখ ফাতিমা বিনতে মুবারকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
লিউকেমিয়া সিরিয়া ফার্স্ট লেডি
মন্তব্য করুন
ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবরিজে দেশটির সদ্য প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির-আব্দোল্লাহিয়ান ও অন্যান্য সহযাত্রীদের দাফন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানাতে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে তাবরিজে।
মঙ্গলবার (২১ মে) এ তথ্য দিয়ে ইরানের সংবাদমাধ্যম মেহের জানিয়েছে, সকালে ইরানের তাবরিজ শহরে নিহতদের জানাজা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট রাইসি ও তার সাত সহযাত্রীর দাফনে যোগ দিতে শহরটির একটি কেন্দ্রীয় স্কয়ার থেকে হেঁটে রওনা হন লাখো ইরানি। এ সময় তাদের হাতে ছিল ইরানের পতাকা ও প্রয়াত প্রেসিডেন্টের ছবি।
উল্লেখ্য, রবিবার আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় গত দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট রাইসি। সেখানে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও ছিলেন। তিনটি হেলিকপ্টারের বহর নিয়ে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফিরছিলেন রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ানসহ অন্য কর্মকর্তারা। পথে পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে দুর্গম পাহাড়ে প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী বেল-২১২ মডেলের হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছায়।
প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর সোমবার ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা মেহর নিউজের খবরে বলা হয়, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি দেশটির জনগণের জন্য তার দায়িত্ব পালন করার সময় একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। তিনি শহীদ হয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ানসহ বাকিরাও নিহত হয়েছেন।
ইব্রাহিম রাইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির-আব্দোল্লাহিয়ান ইরান
মন্তব্য করুন
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিসহ, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান ও উচ্চপদস্থ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা। হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পর দীর্ঘ তল্লাশি অভিযান শেষে পাহাড়ি ও তুষারাবৃত এলাকা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের পর তাদের সন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চেয়েছিল ইরান। যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এই তথ্য সামনে এনেছে।
তবে 'কোনও কারণে' ইরানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে সেই সহায়তা করতে পারেনি। মঙ্গলবার (২১ মে) এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার সাংবাদিকদের বলেন, এ ব্যাপারে তিনি বিস্তারিত বলছেন না। তবে ইরান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চেয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মূলত ব্যবস্থাপনাগত কারণে তারা সেটা দিতে পারেননি।
ম্যাথু মিলার ইঙ্গিত দেন, রবিবার দুপুরে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর সেটিকে খুঁজে পেতে দ্রুত সাহায্য চেয়েছিল ইরান।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টার চেষ্টার পর বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি উদ্ধার করে ইরান। ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর ঘটনায় আনুষ্ঠানিক শোক জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ওয়াশিংটন বলেছে, রাইসির হাতে 'রক্ত' লেগে আছে।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তা সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে কীভাবে যোগাযোগ হলো, তা বলতে অস্বীকৃতি জানান মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র।
ম্যাথু মিলার শুধু বলেন, রবিবার কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইরান। যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে বলে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিদেশি সরকারের অনুরোধে তারা সাড়া দেয়। এ ক্ষেত্রেও তারা ইরানকে সাহায্য করত। তবে মূলত ব্যবস্থাপনাগত কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের শোকবার্তায় বলা হয়েছে, ইরান এখন নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিচ্ছে। এ অবস্থায় ইরানের জনগণ ও তাদের মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র আবার তার সমর্থন জানাচ্ছে।
মার্কিন প্রশাসন বলেছে, এটি একটি রেওয়াজমাফিক শোকবার্তা। এটি রাইসির প্রতি কোনো রকম সমর্থন প্রকাশ করছে না। রাইসি সেই ব্যক্তি, যিনি বিচারক থাকাকালে গণহারে রাজবন্দীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালে কর্তৃপক্ষ নারীদের গণ–আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করেছে।
এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট-পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে তাদের কোনো হাত নেই বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত নিয়ে ইরান এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করেনি।
মন্তব্য করুন
ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবরিজে দেশটির সদ্য প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির-আব্দোল্লাহিয়ান ও অন্যান্য সহযাত্রীদের দাফন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানাতে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে তাবরিজে। মঙ্গলবার (২১ মে) এ তথ্য দিয়ে ইরানের সংবাদমাধ্যম মেহের জানিয়েছে, সকালে ইরানের তাবরিজ শহরে নিহতদের জানাজা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট রাইসি ও তার সাত সহযাত্রীর দাফনে যোগ দিতে শহরটির একটি কেন্দ্রীয় স্কয়ার থেকে হেঁটে রওনা হন লাখো ইরানি। এ সময় তাদের হাতে ছিল ইরানের পতাকা ও প্রয়াত প্রেসিডেন্টের ছবি।
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিসহ, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান ও উচ্চপদস্থ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা। হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পর দীর্ঘ তল্লাশি অভিযান শেষে পাহাড়ি ও তুষারাবৃত এলাকা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের পর তাদের সন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চেয়েছিল ইরান। যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এই তথ্য সামনে এনেছে।