২০১৪ সালে যখন আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয়বারে মত বাংলাদেশের ক্ষমতা গ্রহণ করলো তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রায় এক সপ্তাহ পরে অভিনন্দন বার্তা জানায় চীনা সরকার। কিন্তু সেই একই অভিনন্দন ২০১৮ সালের এসে ভারত ও চীনের মাঝে এক প্রকার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রূপ নেয়। নির্বাচনের পরদিন ভারতের পরেই চীন সরকার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যেভাবে দ্রুত গতিতে অভিনন্দন জানিয়েছে তাতে অনেকে বেশ অবাক হয়েছে।
আসলে কি ঘটে গেলো ওই পাঁচ বছরে আর কিবা ঘটে গেছে বিগত ১২ বছরে বাংলাদেশের সাথে চীন ও ভারতের মাঝে সম্পর্কে? বিশাল এক প্রশ্নবোধক কিন্তু উঁকি দেয় বাংলাদেশ কিভাবে প্রতিবেশী এই বৃহৎ সুপার পাওয়ারদের সামলে যাচ্ছে বিগত বছর গুলোতে। বাংলাদেশ নিয়ে বৃহৎ শক্তিগুলোর এমন টানা টানিতে মনে হতেই পারে এক নায়িকাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধের ময়দানে নেমে পড়েছে শক্তিশালী দুই নায়ক। হার জিত যারি হোক না কেনো আঁখের লাভ আসলে বাংলাদেশ কতটুকু তুলতে পারলো তাই এখন সবচেয়ে বড় মাথা-ব্যথার কারণ।
চীন ও ভারত দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মাঝে ২০০৯ সাল থেকেই এক ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে শেখ হাসিনার সরকার। বাংলাদেশের কাছে ভারত এবং চীনের চাহিদা ভিন্ন-ভিন্ন। অর্থাৎ যার চাহিদা যেরকম ঠিক সেভাবেই বিষয়গুলোকে এগিয়ে নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। এমন ধারণা রয়েছে। রাজনীতি এবং কূটনীতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, ভারতের সাথে শেখ হাসিনার সরকারের সম্পর্ক রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা ইস্যুর সাথে সম্পর্কিত। অন্যদিকে চীনের সাথে সম্পর্কটি পুরোপুরি অর্থনৈতিকভাবে জড়িত। হাসিনা এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই দুই দেশের সাথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি জাল বুনে চলেছেন।
শেখ হাসিনার সরকার ভারতকে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনের ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব সহায়তা প্রদান করে গেছেন এবং এখনো যাচ্ছেন। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে ইসলামি জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটে সেটি যাতে ভারতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে সেজন্যও পদক্ষেপ নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার।
তবে চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক পুরোপুরি ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলে মনে করেন বেশিরভাগ বিশ্লেষক। যেই সরকারী ক্ষমতায় থাকুক না কেনো চীনের তাতে মাথাব্যথা নেই। চীন সবার সাথেই কাজ করতে আগ্রহী। এছাড়া যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার নানা ধরণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেজন্য চীনও চাইছে শেখ হাসিনার সরকারই ক্ষমতায় থাকুক। কারণ তাতে প্রকল্পগুলো চলমান থাকবে এবং তাতে চীনের লাভ হবে।
২০১৪ সালের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার চীন সফরের পর থেকে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ভিন্নমাত্রা নিয়েছে। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বাংলাদেশ সফর করে। সে সফরের সময় চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে ২৬টি নানা ধরণের চুক্তি এবং সমঝোতা হয়েছে। বর্তমানে চীন বাংলাদেশে পদ্মা সেতুসহ নানা অবকাঠামো প্রকল্পের সাথে সরাসরি জড়িত। এছাড়াও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, একটি সার কারখানা, চট্টগ্রাম এবং খুলনায় দুটি বড় তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের সাথেও চীন সম্পৃক্ত আছে।
তবে ইদানীং সময়ে ভারত ও চীনের সাথে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের ঝামেলা তৈরি হয়েছে। বিশেষত ২০১৫ সালে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে চীনের সাথে বাংলাদেশের বেশ কিছু মতবিরোধ দেখা দেয়। এসময় ভারত সরকারো বাংলাদেশের সাথে না থেকে মিয়ানমারের পক্ষ নেয় যা বাংলাদেশকে বেশ মনঃক্ষুণ্ণ করে তুলে। এর ফলে চীনের সাথে বেশ কিছু বড় বড় প্রজেক্ট থেকে আস্তে আস্তে সরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। বিশেষ করে বাংলাদেশের সামরিক খাতে চীনের যে একছত্র প্রভাব রয়েছে তা থেকে সরে দাড়াতে শুরু করে হাসিনা সরকার। এর ফলে সবচেয়ে লাভবান হয় পশ্চিমা দেশ গুলো। কারণ উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশের বাজার ধরার জন্য অনেক দিন থেকেই চেষ্টা করে আসছে পশ্চিমা দেশ গুলো।
বাংলাদেশের হাইপারফরমেন্স ফ্রিগেট প্রোগ্রাম ও জঙ্গি বিমান ক্রয় সংক্রান্ত প্রোজেক্ট থেকে অনেকটা বাদ পরে গেছে চীন। বাংলাদেশ এখন চীনের বদলে যুক্তরাজ্য, ইতালী, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকে পড়েছে অনেকখানি। যার ফলে আস্তে আস্তে চীনের প্রভাব থেকে খানিকটা বের হয়ে আসতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। তবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এখনো বাংলাদেশে চীনের প্রভাব কমিয়ে নিয়ে আসতে পারে নি শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে ভারতের সাথে বাংলাদেশের টানা-পোড়োনের শুরুটা টুকরো টুকরো বিষয় নিয়ে এখন বেশ বৃহৎ আকার ধারণ করে গেছে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের সীমান্ত হত্যার বিষয়টি বেশ পুরনো হলেও ভারত এখনো এই সমস্যার কোন সমাধান করে দিতে পারে নি।
তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে চালু হওয়া নাগরিকত্ব আইনের বলে ভারতে বসবাসরত লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার যে এক প্রচেষ্টা মোদি সরকার হাতে নিয়ে তা নিয়ে অত্যন্ত ক্ষব্দ মনোভাব প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ থেকে আমলা, মন্ত্রী ও শেখ হাসিনা পর্যন্ত। যেটি কিনা অনেকটা বিস্ময়ের হলেও বাংলাদেশ বেশ ভালো ভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছে এতদিনের দাদাগিরি আর এখন থেকে বাংলাদেশের উপর চলবে না। এমন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া চলবে না যাতে বিপদে পড়তে পারে বাংলাদেশ।
তাছাড়া বাংলাদেশের সাথে এই সম্পর্ক আরো অবনতি হয় করোনা ভাইরাসের টিকাকে কেন্দ্র করে। বিশ্বব্যাপী করোনার টিকা দেওয়া শুরু হলে ভারতের উপর টিকা ক্রয়ে একতরফা নির্ভর করে এক বড় ধরণের বাঁধার মুখে পড়তে হয় বাংলাদেশকে। শুরুতে বিশ্বের ধনী রাষ্ট্র গুলোর সাথে তাল মিলিয়ে টিকা দেওয়া শুরু করতে পারলেও হুট করে বাংলাদেশকে কোন প্রকার আগাম নোটিশ না দিয়ে টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। এর ফলে দেশের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় সরকারকে। যদিও এই সমস্যা থেকে রক্ষায় এগিয়ে আসে চীনা সরকার। অন্য অনেক দেশের থেকে অনেকটা কম মূল্য বাংলাদেশকে টিকা সরবরাহ করে বাংলাদেশের সাথে নিজেদের পুরনো সম্পর্ককে আবার নতুন করে ঝালিয়ে নেয় চীনা সরকার।
এছাড়া ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ককে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে কুয়ালালামপুরভিত্তিক সাউথ এশিয়ান মনিটরের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চিতভাবেই মনে হচ্ছে ভারতের সাথে নাড়ির সম্পর্কটি কেটে গেছে বা কাটা পড়ার পর্যায়ে রয়েছে। আর এটিও বেশ নিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে যে, ভারতকে তার মুষ্টি শিথিল করতে হচ্ছে। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমুর মতো আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এবং হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননের মতো সিনিয়র নেতারা ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্টের- প্রশাসনিক বা নিরাপত্তা কাঠামোর সাথে আলাদা সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছিলেন। তারা সবাই অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেছেন। তোফায়েল ও আমুর মতো নেতারা দৃশ্যপট থেকে বিদায় নেয়ায় যোগাযোগ লাইনটিই কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যোগাযোগের একমাত্র যে লাইনটি রয়ে গেছে তা একেবারে সরাসরি এবং তা হলো হাসিনার সাথে। মনে হচ্ছে, তিনি এমনটিই চেয়েছেন।’
বিশ্লেষণে আরো বলা হয়েছে, ‘ভারত এখন দূরে থাকায় নিশ্চিতভাবেই যে প্রতিবেশী সুবিধা পাবে সে হলো শক্তিশালী চীন। বাংলাদেশে বিপুল বিনিয়োগ করায় ভারতীয় প্রভাবের শক্তিকেন্দ্রগুলো বিচ্ছিন্ন রাখতে চীন কার্যকরভাবে তার ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে চীন সফলভাবে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রতিবেশী থেকে বাংলাদেশকে সরিয়ে এনেছে। সাধারণভাবে যতটুকু মনে করা হয়ে থাকে, চীনা সংশ্লিষ্টতা তার চেয়ে অনেক বেশি। এমন একটি ধারণা রয়েছে যে বাংলাদেশে চীন কেবল ব্যবসায়িক সুযোগ গ্রহণের ব্যাপারে আগ্রহী।
বিশাল পদ্মা সেতুসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করায় ব্যবসা নিশ্চিতভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। তবে চীনের কৌশলগত অনুপ্রবেশকে এড়িয়ে যাওয়ার একটি প্রবণতা রয়েছে। নিশ্চিত বিনিয়োগ স্বার্থের সাথে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান ভূকৌশলগত বৈশ্বিক তাৎপর্য থাকার কারণে বাংলাদেশের সরকার পরিচালনাকারীকে নিরঙ্কুশভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চীন অনেক বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞা। সে এখানে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নয়া দিল্লির সাথে ঘনিষ্ঠ কাউকেই দেখতে চায় না। এ কারণেই দিল্লি-অন্তঃপ্রাণদের বাদ দিয়ে মন্ত্রীসভা গঠন করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ কে কেন্দ্র করে ভারত ও চীনের এমন টানাপোড়ন বাংলাদেশ কে বেশ মধুর সমস্যায় না ফেলে বরং বেশ জটিলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে দিনকে দিন। ছোট স্বাধীন একটি দেশ হয়ে বৃহৎ দেশগুলোর মাঝে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা এবং সেখান থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে আসার মত ক্ষমতা ব্যাবহার বাংলাদেশ বেশ ভালো করে দেখিয়ে আসলে তা আর কত দিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব তাই শেষ পর্যন্ত দেখার বিষয়।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।