ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলন দুটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথমটি হলো এটা স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছে যে, চীনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশকে একাত্ম করতেই এ সম্মেলন ডেকেছেন বাইডেন। এটার মধ্যে একটি রাজনীতি আছে, গণতন্ত্র কতখানি আছে, তা বলা মুশকিল। কারণ এটা স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছে যে চীনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার একটি প্রচেষ্টা করছে বাইডেন প্রশাসন। ফলে সেখানে আমরা কেন জড়িত হব? বরং আমন্ত্রণ পেলে আমরা যাবো কি যাবো না প্রশ্নে ঝামেলা হতো। কেননা এটি চীনের বিরুদ্ধে একটি নতুন জিনিস দাঁড় করানো হচ্ছে।
বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলন সহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক অলিউল ইসলাম।
দ্বিতীয়টি হলো যারা দাওয়াত পেয়েছে তাদের দেশের গণতন্ত্র এমনকি খোদ আমেরিকার নিজের গণতন্ত্র যে নড়বড়ে, এটা বলার তো আর অপেক্ষা রাখে না। ফলে যুক্তরাষ্ট্র কেন বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানালো না সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে। যেখানে পাকিস্তান, ফিলিপিন, এমনকি নরেন্দ্র মোদির ভারতকেও যদি গণতান্ত্রিক বলা হয়, তাহলে তো আমাদের কিছু বলার বা করার নেই। যেহেতু রাজনীতির একটি অংশ হিসেবে আমেরিকা এটা করছে, আর আমাদের সাথে চীনের একটি ভালো সম্পর্ক, সেখানে আমরা কখনোই অন্য দেশের হয়ে আরেকটা দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি না এবং আমরা কখনো দাঁড়াইনি। সেই জায়গায় আমি মনে করি, আমন্ত্রণ না পাওয়াটা বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র বাংলাদেশের মানুষের উপই ছেড়ে দিতে হবে। এটা বাংলাদেশের জনগণের বিষয়। এটা অন্য দেশ এসে এই জিনিসটা সেইভাবে করার কোনো সুযোগ নেই। এটা আমরা বহুবারই দেখেছি এবং আমরা দেখেছি যে, গত ২০ বছরে আমেরিকা আফগানিস্তানে যে ধরণের গণতন্ত্র চর্চা করেছে, সেটাও আমরা দেখেছি। আমেরিকা বিগত ২০ বছরে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালিয়ে উপনিবেশবাদ চালু করেছে। যে দেশ ভিয়েতনামকে তছনছ করে দিল, যে দেশ একাধিক যুদ্ধে বিভিন্ন দেশে যখন-তখন যুদ্ধ করে যাচ্ছে, সেই দেশকে যদি গণতান্ত্রিক বলা হয়, তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই আমি বলবো যে, আমার জানা সংজ্ঞা অনুযায়ী আমেরিকা দেশ হিসেবে গণতান্ত্রিক হতে পারে না। অন্যরা যদি বলে থাকে, বলতে পারে। এটাকে যদি কেউ গণতন্ত্র বলে, সেটাতে আমার আপত্তি আছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সমালোচনা যদি করতে হয়, তাহলে বাংলাদেশ কেন্দ্রিক সমালোচনা করাই ভাল। আমেরিকাকে বলার দরকার নেই। যে দেশ ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানকে তছনছ করলো, তার আগে ভিয়েতনামকে তছনছ করলো, ইরাক তছনছ করলো, ইরানে চেষ্টা করেছিল। সেই দেশের গণতন্ত্রকে যদি কেউ গণতন্ত্র বলে, তাহলে আমি তাদেরকে বলবো যে, গণতন্ত্র সম্পর্কে আরও একটু ভালোভাবে জানতে। আমেরিকা নিজে বলে বেড়াচ্ছে গণতন্ত্র, নির্বাচন। কিন্তু হিটলারও তো নির্বাচিত ছিল, মোসেলিনিও নির্বাচন করেই এসেছিল। তাই আমার মনে হয়, আমাদের যে ঘাটতি, তা আমাদের উপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত। আমাদের জনগণের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। সেটা আমেরিকা ব্যাখ্যা করবে, আমি তা মানতে রাজি না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বাভাবিক ভাবেই বলবে যে, আমাদের থেকে দুর্বল গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে ডাকা হয়েছে। আবার ঐ দিকে শ্রীলঙ্কাকে ডাকা হয়নি কেন, এটাও কেউ বুঝলো না। শ্রীলঙ্কায় মহেন্দ্র রাজা পাকশে তো নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় এসেছে। আমি ধরে নিলাম, যে আমাদের দেশে নির্বাচন নিয়ে সমস্যা আছে। কিন্তু রাজা পাকশে যে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে, সে নির্বাচন নিয়ে তো সেই ধরণের কোনো সমালোচনা ছিল না। বিরোধী পক্ষও সংসদ বয়কট করেনি। সেখানে বুঝাই যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কার সাথে চীনের একটি ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে আমন্ত্রণ পায়নি। অন্যকথায় এটা চীন বিরোধী একটি সম্মেলন। শেষপর্যন্ত কয়টা দেশ এই সামিটে যাবে, কোন লেভেলে যাবে, সেটাও দেখা দরকার। আমার মনে হয় না এটা খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে এমনিতেই।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশীদ বলেছেন, নির্বাচনের তফসিল পেছানোর সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। আমি এর কোনো সম্ভাবনা দেখি না। কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর যে সন্দেহের প্রাচীর তৈরি হয়েছে তাতে সে সম্ভাবনা নেই। তবে এক দফা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল শেষ চেষ্টা হিসেবে তফসিল পেছানোর জন্য তৎপরতা চালাতে পারে। কিন্তু তফসিল পেছানোর নামে যদি আবার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাকে কেউ প্রশ্ন বিদ্ধ করে ফেলে তাহলে আরেকটা অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। কাজেই নির্বাচন কমিশন এবং সরকারকে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। নির্বাচনী রোডম্যাপ বিপন্ন হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। তবে তফসিল পেছানোর সম্ভাবনা দেখি না।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, সরকার এবং নির্বাচন কমিশন যদি জনমত উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচনের দিকে যায় তাহলে চলমান যে সংঘাতময় পরিবেশ চলছে সেটাকে আরও উস্কে দেওয়া হবে। সেটা সাধারণ জনগণের জন্যও ভালো হবে না, সরকারের জন্যও ভালো হবে না। দেশের সাধারণ মানুষ এখন একটা সংকটের মধ্যে আছে। দ্রব্যমূল বৃদ্ধি সহ দুর্নীতি, লুটপাট, অব্যবস্থাপনা আগামীতে অর্থনৈতিক সংকটকে আরও তীব্রতর করতে পারে এমন আভাস অর্থনীতিবিদরা দিচ্ছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে জনমত উপক্ষো করে এবং নির্বাচন কমিশনের কোনো কর্মকাণ্ড যেমন গ্রহণযোগ্য হবে তেমনি আমাদের দেশের সংকটকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, যেভাবে আমেরিকা চাচ্ছিল যে বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে ভারতও যেন আমেরিকার সাথে একই সুরে কথা বলে কিন্তু সেটা যে হবে না তা পরিষ্কার হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত যে আমেরিকার কথা শুনবে না সেটি তারা স্পষ্ট করেছে। এখন আমেরিকা কি করবে সেটা তারা ভালো জানে। তবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আমেরিকা সারা বিশ্বের মধ্যে প্রচন্ড সমালোচনার মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে ইসরায়েল ইস্যুতে তারা প্রচন্ড প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। আমেরিকা তার নিজ দেশেই প্রতিরোধের মুখে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, অনেক দিন ধরে আমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল। রাস্তা-ঘাট বন্ধ না করে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল। সাধারণত নির্বাচনের আগ দিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ে। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো কি করবে না করবে, নির্বাচনী ইশতেহার কেমন হবে ইত্যাদি। কিন্তু রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে দিয়ে হরতাল-অবরোধ করা কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর উচিত না।