প্রকাশ: ০৩:০০ পিএম, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২১
বাংলাদেশে এখন মিডিয়ার অনেক বিস্তৃতি হয়েছে। যদিও সম্প্রতিকালে লক্ষ্য করা গেছে যে, অনলাইন পত্র-পত্রিকা দিন দিন মোটামুটিভাবে একটি গতি পেয়েছে। যার ফলে প্রিন্টিং মিডিয়ার চেয়ে অনলাইন মিডিয়া গুলো বেশি জনপ্রিয়। তার কারণ হচ্ছে তারা যে কোন ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে সেটিকে পাঠকের কাছে হাজির করতে পারে। এসবের একটি নেগেটিভ সাইডও আছে। সেটি হলো মিডিয়ার এত বেশি হওয়ার ফলে মিডিয়া অনেক সময় সংবাদ খুঁজে পায় না। হয়তো একই সংবাদ বিভিন্ন মিডিয়াতে অনেক সময় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লিখতে বাধ্য হয়। তবে মিডিয়াকে সংবাদের খোরাক যোগাতে সাহায্য করছে নতুন নতুন সৃষ্ট রাজনৈতিক দল। তারা প্রথমে একটি প্রেস কনফারেন্স করে। এরপর স্বাভাবিক নিয়মে একটি কমিটি করে। হয়তো সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, এই এক-দুইজনকে লোকে চিনে।তবে আর কাউকে চিনে না। আমরা একটি দল বলতে বুঝি, দলটিতে একজন নেতা থাকতে হবে আর তার সমর্থক থাকতে হবে। কিন্তু একের পর এক যেসব নতুন দলের কথা বর্তমানে মিডিয়ার মাধ্যমেও আমরা জানতে পারছি তাদের সমর্থক কিন্তু খুব একটা নাই দেশে। যার ফলে তারা কোন একটা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না। এটা-ওটা কথা বলে। এবং আমার ধারণা, অধিকাংশ নতুন নতুন যে রাজনৈতিক দলগুলো হয়েছে তারা যদি এদেশের পার্লামেন্টারি ইলেকশনে অংশ নেয় তবে ৩০০-৫০০ ভোটের বেশি পাবে না। আমি এখানকার নেতাদের বলতে চাই, ট্রেনে ইঞ্জিন থাকে এবং ইঞ্জিনের সাথে অনেক বগি থাকে। ইঞ্জিন সমস্ত বগিগুলোকে টেনে নেয়। বগিতে থাকে অনেক লোক জন অথবা মালামাল। অর্থাৎ, বগি টানার জন্য ইঞ্জিনের প্রয়োজন হয়। এখানে নেতৃত্ব দিচ্ছে ইঞ্জিনই। ইঞ্জিন যেদিকে যাবে বগি সেদিকে যাবে। আমাদের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ইঞ্জিন দেখতে পাচ্ছি প্রায়শই , কিন্তু বগি দেখতে পাচ্ছি না। অর্থাৎ তাদের সমর্থক নাই। এর ফলে যা হচ্ছে তা হলো তারা বিনা কারণে রাস্তা দখল করে রাখছে। আমি একটি উদাহরণ দেই- আজকাল যদি কেউ নতুন পত্রিকা বের করতে যায় তাহলে সে দেখবে যে সে যে নামে পত্রিকা খুলতে চায়, সে খুঁজে বের করে দেখবে কেউ না কেউ ওই পত্রিকাটির নামটি আগেই রেজিস্ট্রেশন করেছে। এবং সকলেই জানে, আমার আর নতুন করে বলার নেই। কোনো না কোনোভাবে মেকানিজম করে ওই নামটা রেখে দিয়েছে। তারপর তারা এটা বিক্রি করে। এখনকার কিছু জনপ্রিয় পত্রিকাও এইভাবে এই নাম কিনে নিয়ে তারা পত্রিকাকে জনপ্রিয় করেছে। তার আগে পত্রিকাগুলো নামও কেউ জানতো না।
আমাদের দেশে শেষ পর্যন্ত কি এই রাজনৈতিক ইঞ্জিন, অর্থাৎ যে নেতারা রাজনৈতিক দল করছে তারাও কি ওই সকল তথাকথিত পত্রিকার মতো নাম বিক্রি করেই চলবে কিনা, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। একসময়, দেখা যাবে এটিই বাস্তবভিত্তিক হবে। দেখা যাবে প্রথমে দুই-একজন নামকরা লোকরা দলে ঢুকবে। তারপর অরিজিনাল লোকদের বের করে দেবে তারা। তবে সেই লক্ষণও আপাতত নাই। কারণ হচ্ছে এই যে, যারা সত্যিকারভাবে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে, যারা মাঠে যেতে পারে সেরকম কোনো রাজনৈতিক দল হচ্ছে না। একটি উদাহরণ দেওয়া চলে যে, যতগুলি সম্প্রতিকালে গত কয়েক মাসে এমনকি এই করোনাটা যখন কমে যায়, তখনও কোনো রাজনৈতিক দল কিন্তু ঢাকার বাহিরে প্রেস কনফারেন্স ছাড়া কোন মাঠে ময়দানে যেয়ে এমনকি বিভাগীয় শহরেও এখন পর্যন্ত কোনো একটি সভা করে নাই। অর্থাৎ আমার মনে হচ্ছে এরা ঐ যে তথাকথিত পত্রিকায় নাম করে বিক্রি করবে। সেটাই তাদের উদ্দেশ্য কিনা এটাও একটি প্রশ্ন। কারণ এদের দ্বারা আর যাই হোক, এদেশের মানুষের কোন মঙ্গল হবে না। রাজনীতির কোনো মঙ্গল হবে না। কারণ যে রকম ট্রেন বগি ছাড়া শুধু ইঞ্জিন দিয়ে কোনদিন ট্রেন লাইনে যেমন চলতে পারে না, তাকে অবশ্যই বগি ব্যবহার করতে হবে। ঠিক তেমনিভাবে একের পর এক এই ইঞ্জিন সৃষ্টি করার যে প্রবণতা আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে এটি অর্থহীন। আমার মতে, বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক দল রেজিস্ট্রেশন করার যে সিস্টেম আছে তাদেরকে খুব শক্তভাবে এটা বলা উচিত যে কিভাবে তারা করবে এবং সেটাকে বাস্তবায়িত করবে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে এটাকে যাদের করার কথা তারা সেই ভাবে সিরিয়াসলি করে না। কারণ তাদের অনেকেই মনে করে যে বাংলাদেশে এখন বিনোদনের সুযোগ খুব কম। সুতরাং এই ধরনের ইঞ্জিন তৈরির ফলে তারা অনেক বিনোদনমূলক কথাবার্তা পায়। এটা একটা বিনোদনের মাধ্যম হয়ে গেছে। আগে ছিল সিনেমা-নাটক। এখন আমরা গ্রামের মানুষেরা, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমরা যাত্রা দেখতাম। যাত্রা তখন খুবই জনপ্রিয় ছিলো। এখন যাত্রাটা নাই। আমার মনে হচ্ছে যাত্রার আধুনিক ভার্সনই হচ্ছে এই তথাকথিত ইঞ্জিল ওয়ালা রাজনৈতিক দল। তারা যাত্রার পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক কথাবার্তাই বলবে। এতে আসলে দেশের কোন মঙ্গল হবে না। আমি মনে করি এতে ভবিষ্যতে দেশের বরং ক্ষতি হবে। অনেক ছেলে মেয়েদের উস্কে দিয়ে তারা দেশে একটি স্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করছে। যেখানে আমরা উন্নতির শিখরে যাচ্ছি সেটা বাধাগ্রস্ত করতে পারবে এবং এই বাধাগ্রস্ত করার জন্য যে নুতন নুতন বগি ছাড়া ইঞ্জিন তৈরি হচ্ছে সেটাকেও মনে করি।
রাজনীতি অবশ্যই একটি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কারণ অসাংবিধানিক পথে যারাই ক্ষমতায় এসেছে বিশেষ করে আমাদের দেশের ১৯৭৫ সালে সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পরে। সেই সকল রাজনৈতিক দলগুলি সত্যিকারভাবে রাজনীতিকে প্রপারলি এগিয়ে নিতে পারেনি। তারা বরং পিছিয়ে দিয়েছে দেশকে। এরপরে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার রাজনৈতিক একটি ধারা নিলেন। এখন রাজনৈতিক দল থাকবে। কিন্তু আমার মতে আইন করে করা কাজটা সঠিক হবেনা। কিন্তু যে ভাবে রাজনৈতিক দল করতে হবে সেই ব্যাপারে একটা অবশ্যই সঠিক আইন থাকবে এবং সেই আইন দ্বারা এই তথাকথিত সেই গ্রামের যাত্রা গান অথবা আগে ঢাকায় এখন কিছুটা কমেছে, কর্নারে কর্নারে পান-বিড়ির দোকান এভাবে রাজনৈতিক দল করে লাভ কোন দেশেই হয়নি, হবেও না এবং বিশ্বের কোথাও নাই। যদি রাজনৈতিক দলের সংখ্যার দিক দিয়ে কোনো নোবেল দেওয়া হয় তবে বাংলাদেশ অবশ্যই পেতো।
কারণ এত বেশি পরিমাণ রাজনৈতিক দল আছে, আর এসব রাজনৈতিক দলকে আমি আজকের লেখায় নাম দিয়েছি ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিনে থামাতে হবে, থামিয়ে আমাদের সঠিক পথে, সঠিক রাজনীতিকে আনতে হবে। যখন ছাত্ররা তাদের যুক্তিপূর্ণ আন্দোলনে যায় তখন এই তথাকথিত রাজনৈতিক দলগুলোর এদের নিজস্ব সমর্থক না থাকায় তারা পিছন থেকে কিছু খরচ করে ওদের উসকে দেয়। একটি সুষ্ঠু রাজনীতি তার সুষ্ঠু পথ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি সঠিকভাবে রাখতে হয় তাহলে আমাদের সমাজের এবং রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় হাত দিতে হবে এবং সরকারি দল থেকে বিরোধী দল সকলে মিলেই এটায় যদি হাত দেয়া না হয় তাহলে আমাদের পরিশেষে মারাত্মক ক্ষতি হবে। আমরা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজাতি, এবার করোনাতে আমরা আমাদের অনেক গুণী জনকে হারিয়েছি। এমনকি দু-তিন দিন আগে রফিকুল ইসলাম সাহেবও চলে গেলেন। এখন যদি আমরা কোথাও একজন বিজ্ঞ লোককে এমনকি সিম্বোলিক অর্থেও তাকে প্রধান অতিথি করে বা বিশেষ বক্তা করে আনতে চাই সেরকম লোকের অভাব হয়েছে। এই অভাবের কারণ হচ্ছে যে লোকজন বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতি থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে এবং রাজনীতিতে বুদ্ধিবৃত্তিক লোক আসা খুব বেশি প্রয়োজন। বুদ্ধিবৃত্তিক লোক তখনই আসবে যখন রাজনীতিকে একটি সুস্থ ধারার সুস্থ পথে নেওয়া যাবে। সেই কারণের জন্য আমাদের এই বিজয়ের মাস শুরু হয়েছে। আমরা বিজয়ের মাসে এই একের পর এক ইঞ্জিন তৈরি বন্ধ করে যেন সঠিক রাজনীতির পথে এগোতে পারি সে ব্যাপারে সকলের সজাগ হওয়া এবং একে একটি রূপ দান করা আমাদের অত্যন্ত জরুরী।
এবার আমদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী পালনের বছরে আমাদের সকলের বিবেককে জিজ্ঞাসা করে একটি প্রতিজ্ঞা করা উচিৎ যেনো আমরা দেশের গণতন্ত্রকে স্থায়ীরূপ দিব এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সত্যিকারে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে রূপ দিয়ে এবং সেটাকে সফল করে জাতির পিতার প্রতি সত্যিকারে সম্মান দেখাবো। সম্মান দেখাবো আমাদের স্বাধীনতাকে, যে স্বাধীনতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে, সংগ্রাম করে আমরা লাভ করেছি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং যারা বয়সের কারণে তখন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেনি অনেকে তখন জন্ম গ্রহণ করেনি তাদের সকলকেই সঠিকভাবে আমরা শিক্ষিত করব। সেই শিক্ষিত দুইটি ভাবে করতে হবে, একটি হচ্ছে কনভেনশনাল, যা স্কুল-কলেজের মাধ্যমে করা হয়। আর অন্যটি হচ্ছে নন-কনভেনশনাল, যেটা আগে বিভিন্ন এরিয়া থেকে লাইব্রেরি পাওয়া যেতো। সেখান থেকে বই এনে মানুষ পড়তো, সেসব লাইব্রেরি একটি প্রতিষ্ঠান আর এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে এভাবে আবার প্রয়োজনে সরকারি অনুদান দিয়ে গড়ে তুলতে হবে। যেমন প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানে অনেকে নিজে থেকেই বঙ্গবন্ধুকন্যা বা মুজিব কন্যার নাম দিয়ে তারা করা শুরু করেছে। একইসাথে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে একটি লাইব্রেরী থাকা উচিত এবং এই লাইব্রেরীতে যেরকম উদাহরণ হিসেবে বলি নিজের মেডিকেল কলেজেরই শুধু টেকনিক্যাল সাবজেক্ট নয়। পড়তে হবে কবিতা, ইতিহাস ও অন্যান্য বিষয়ে। তাহলে শুধু চিকিৎসক শুধু তার টেকনিক্যাল জ্ঞানই সম্ববৃদ্ধ হবে না সাথে একজন চিকিৎসক সত্যিকারে মানুষ হয়েও উঠতে পারবে।
জাতির
পিতার বদৌলতে যে স্বাধীন দেশ পেয়েছি এবং যেটি সঠিক পথে পরিচালনা করছেন তার কন্যা রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা। তাকে আরও সঠিক রূপ দেওয়ার জন্য আমাদের এখন শিক্ষাঙ্গন থেকে প্রতিটি জায়গায়
হাত দিতে হবে। যেমন লাইব্রেরী কথা বললাম তেমনি লাইব্রেরী থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনেক
ভালো ভালো জিনিস আমাদের ছিল। তখনকার দিনে মানুষ এত শিক্ষিত ছিল না অথচ পুঁথিপড়া হতো
তাতেও কিন্তু লোকজন শোনার জন্য আগ্রহ পোষণ করতো, কিছু শিখতো। যেটাই শিখুক মানুষ কিন্তু
পুঁথির দারাও কিন্তু শিখেছে। আমরা কেন তার
থেকে সরে যেয়ে খালি ইঞ্জিন তৈরির দিকেই হাত দিচ্ছি। সুতরাং আসুন আমরা সকলে মিলে বগি
ছাড়া আর ইঞ্জিন তৈরি না করে সত্যিকারে বাংলাদেশে গড়ে তুলি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপি নামের রাজনৈতিক দলটি যেন এখন এক রহস্যে ঘেরা বাড়ি। ভূতুড়ে
বাড়িও বলা যায়। যে বাড়ির কর্তারা থাকেন অন্ধকারে। লোকচক্ষুর আড়ালে। যেখানে চাকরবাকর,
সেরেস্তাদাররা থাকেন আতঙ্কে। কেউ জানে না আগামীকাল কী হবে। ১৭ বছরের বেশি সময় ক্ষমতার
বাইরে থাকা দলটি যে এখনো টিকে আছে, তা এক বিস্ময়। তার চেয়েও বড় কৌতূহল বিএনপি কে চালায়?
একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত দলটি এখন যেন পথ হারিয়েছে। পথের দেখা পেতে, বিএনপিকে বাঁচাতে
নানা জনের নানা মত। অনেকেই অনেক পরামর্শ দিচ্ছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় যে পরামর্শটি এখন সামনে এসেছে, তা হলো বিএনপির
নেতৃত্ব পরিবর্তন। এমন এক নেতৃত্ব সামনে আনা যিনি দেশে থাকেন এবং সবার সঙ্গে যোগাযোগ
করতে পারেন। কদিন আগে কূটনৈতিকপাড়ায় এক চায়ের দাওয়াতে গিয়েছিলাম। যেখানে বিএনপির দুজন
ডাকসাইটে নেতাও উপস্থিত ছিলেন। আমন্ত্রণকারী কূটনীতিকের বিএনপি নিয়ে অন্তহীন কৌতূহল।
বিএনপির নেতাকে দেখেই তিনি প্রশ্ন করলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তোমরা এ অবস্থান নিলে
কেন? বিএনপির ওই নেতা গৎবাঁধা বুলির মতো কিছু বাক্য আওড়ালেন।
কূটনীতিকের প্রশ্ন, যারা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে তাদের ব্যাপারে তোমরা
কী করবে? এবার ওই বিদেশি মুচকি হেসে বললেন, আমি জানি এর উত্তর তোমার কাছে নেই। এ উত্তরের
জন্য তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে। তোমরা কেন সক্রিয় কাউকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দাও
না? বিএনপির নেতা ওই সন্ধ্যায় বিদেশি কূটনীতিকের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। কিন্তু
ওই প্রশ্নের আংশিক উত্তর পেলাম গত বুধবার। বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের কাছ
থেকে। আলাল এসেছিলেন ডিবিসির ‘রাজকাহন’ অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক নাজনীন মুন্নী
জিজ্ঞেস করলেন, ‘তারেক রহমান বাইরে আছেন, মামলায় তার শাস্তি হয়েছে। বেগম জিয়ার শারীরিক
অবস্থাও খারাপ। এ দুজনকে বাদ রেখে কীভাবে দ্রুত দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, অথবা অন্য
কোনো সমাধান আছে কি না?’ এবার অবশ্য আলাল নীরব থাকেননি। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন,
‘খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি কি না, সে বিকল্প
চিন্তা আমাদের মধ্যে আছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষ থেকে
একটি কমিটি বা বডি বাছাই করা হবে, যারা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেবে।’ আলালের বক্তব্য
বিশ্লেষণ করলে সোজাসাপ্টাভাবে বলা যায় বিএনপির নির্বাহী দায়িত্ব থেকে জিয়া পরিবারকে
মুক্ত করার বিষয়টি এখন আর শুধু গুজব নয়। বিএনপিতেও বিষয়টি নিয়ে চর্চা হচ্ছে।
গত কয়েক বছর ধরেই, বিশেষ করে ২০১৮ সালে বেগম জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার
পর থেকেই বিএনপিতে জিয়া পরিবারের বাইরে নেতৃত্ব প্রসঙ্গটি সামনে আসে। একটি রাজনৈতিক
দলের প্রধান নেতাকে হতে হয় সার্বক্ষণিক। তাকে সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। তাৎক্ষণিকভাবে
সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত নির্দেশনা দিতে হয়। কিন্তু ২০১৮
সাল থেকেই এ ব্যাপারে বিএনপি একটি শূন্যতার মধ্যে আছে। বিএনপি মহাসচিব বা স্থায়ী কমিটির
সদস্যরা সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। সহজভাবে বলা যায়, তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার
নেই। বেগম জিয়া যখন মুক্ত ছিলেন, তখন বিএনপির সিদ্ধান্তের জন্য নেতারা দলের চেয়ারপারসনের
দ্বারস্থ হতেন। চেয়ারপারসন কয়েকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে বাস্তবতা নিরিখে সিদ্ধান্ত
নিতেন। কিন্তু বেগম জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র
ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়।
যদিও একাধিক মামলায় দণ্ডিত তারেক রহমানকে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব
দেওয়াটা ছিল গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। বেগম জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার আগে গঠনতন্ত্রের ওই ধারাটি
রহিত করেন। কিন্তু সুদূর লন্ডনে বসে বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দল পরিচালনা বাস্তবতা-বিবর্জিত।
ঢাকার চেয়ে লন্ডন ছয় ঘণ্টা পিছিয়ে। দলটির সকালে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন, সেটা বিকেলে
বা সন্ধ্যায় নিতে হয়। বিএনপির অনেকেই দলটিকে ‘সান্ধ্যকালীন রাজনৈতিক দল’ হিসেবেও ইদানীং
ডাকতে শুরু করেছে। বিএনপির গঠনতন্ত্র এমন যে, এখানে দলের চেয়ারপারসনকে সর্বময় ক্ষমতা
প্রদান করেছে। একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলে এরকম অগণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্র থাকতে পারে
কি না, সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে বাস্তবতা হলো এই যে, দলের প্রধান ব্যক্তি ছাড়া কারোরই
কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার নেই। বিএনপি মহাসচিবসহ অন্য নেতারা স্রেফ আজ্ঞাবহ কর্মচারী।
অনেকটা পাইক-পেয়াদার মতো। মালিকের এক কথায় তাদের চাকরি চলে যায়।
বিএনপি আসলে একটা লিমিটেড কোম্পানির মতো। যে কোম্পানির সব শেয়ারের
মালিক জিয়া পরিবার। ফলে বেগম জিয়া যখন জেলে, তারেক রহমান লন্ডনে, তখন বিএনপির অন্য
নেতারা অসহায় চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকেন। কর্মীরা প্রশ্ন করলে, নেতারা উত্তর দিতে
পারেন না। বিদেশি কূটনীতিক, সুশীল সমাজ প্রতিনিধিদের কোনো জিজ্ঞাসার তাৎক্ষণিক উত্তর
নেই বিএনপি নেতাদের কাছে। বছর দুয়েক আগে বিএনপি মহাসচিব এক সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন।
সেখানে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রে কোনো লবিস্ট ফার্ম ভাড়া করেছে কি না।
জবাবে প্রথমে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন, না। সংবাদ সম্মেলন শেষ করে তিনি যখন
চলে যাচ্ছিলেন, তখনই তার কাছে ফোন এলো দূরদেশ থেকে। বিএনপি মহাসচিব ফিরে এলেন। উত্তেজিতভাবে
বললেন, আওয়ামী লীগের জুলুম নির্যাতনের সঠিক তথ্য জানানোর জন্যই তাদের লবিস্ট ফার্ম
আছে। এই তো সেদিন বিএনপি নতুন করে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করল। বেগম জিয়াসহ নেতাকর্মীদের
মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে সমাবেশের ডাক দেওয়া হলো। নির্দেশটি এসেছিল লন্ডন থেকে। লন্ডনে
অবস্থানকারী নেতা সেখানে বসে কীভাবে বুঝবেন বাংলাদেশে কী তীব্র তাপপ্রবাহ।
বিএনপি কোনো নেতাই সাহস করে বলতে পারলেন না, বাংলাদেশের আবহাওয়ার
অবস্থা, প্রচণ্ড গরমে মানুষের যাই যাই অবস্থার কথা। কর্মসূচি ঘোষণা হলো। এরপর সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হলো তীব্র সমালোচনা। এ আবহাওয়ায় বিএনপির এ রাজনৈতিক কর্মসূচিকে
তুলাধুনা চলল। অবশেষে লন্ডনে থাকা নেতার বোধোদয় হলো। তিনি আবার ফরমান জারি করলেন সমাবেশ
বাতিল। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের কথাই ধরা যাক। প্রতিকূল পরিস্থিতির
মধ্যেই দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন সভাপতি পদে নির্বাচিত হলেন। কোথায় তাকে
সাবাশি দেওয়া হবে, শুরু হলো নাটক। লন্ডন থেকে বার্তা এলো, ফল প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
দায়িত্ব নেওয়া যাবে না। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা তো বটেই, বিএনপির নেতাকর্মীরাই হতবাক।
২০১৮ সালের নির্বাচনে ছয় আসন পেয়ে যদি বিএনপির নির্বাচিতরা সংসদে যেতে পারেন, তাহলে
খোকন কেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব নিতে পারবেন না? কারও কাছে
উত্তর নেই।
খোকন দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে দায়িত্ব নিলেন। এরপর আবার নাটক।
অবশেষে গত বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত পাল্টেছে দলটি। বিএনপিতে এখন এরকম সিদ্ধান্ত বদলের
উৎসব চলছে। সকালের সিদ্ধান্ত বিকেলে বাতিল হচ্ছে। দেশের বাস্তবতা, পরিস্থিতি বিবেচনায়
না নিয়ে সামরিক ফরমানের মতো নির্দেশনা জারি করা হচ্ছে। দূরে থেকে সিদ্ধান্ত দিলে এমনই
হবে স্বাভাবিক। বারিধারার কূটনৈতিকপাড়ায় নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাদের ব্যাপক কদর
ছিল। চা, নাশতা, নৈশভোজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন বিএনপি নেতারা। এ সময় বিএনপি নেতাদের
মধ্যে একটি বাক্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়—‘আই উইল গেট ব্যাক টু ইউ সুন’ (খুব শিগগিরই
আমি তোমাকে এ সম্পর্কে জানাব)। বিএনপি কি নির্বাচনে যাবে, নির্বাচনে বর্জনের কৌশল কী?
নির্বাচনের পর কী করবে—সব প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি নেতাদের উত্তর এই এক বাক্য। কূটনৈতিকপাড়া
বিএনপি নেতাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অক্ষমতায় বিরক্ত। একজন কূটনীতিক একবার বলেই ফেললেন,
‘তোমাদের দলে তো অনেক অভিজ্ঞ নেতা আছে। এ সময়ের জন্য তাদের কাউকে দায়িত্ব নিতে বলো
না কেন?’ এ প্রশ্নের উত্তরেও বিএনপির পক্ষ থেকে সেই বাক্যটিই উচ্চারিত হয়েছে। বিএনপির
জন্য জিয়া পরিবারের বাইরে আপৎকালীন সময়ে কাউকে নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তটি স্পর্শকাতর।
দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মীর মধ্যে এ নিয়ে যুক্তিহীন আবেগ কাজ করে। তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস
করেন, জিয়া পরিবারের বাইরে থেকে নেতৃত্ব এলে দলটি টিকবে না। কোন্দলে কয়েক টুকরো হয়ে
যাবে।
জিয়া পরিবার মুক্ত বিএনপির ধারণা অনেকের কাছে ধৃষ্টতা, অপরাধ, ‘কবিরা
গুনাহ’। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিএনপিকে বাঁচানোর এটিই একমাত্র পথ। নির্বাহী দায়িত্ব
থেকে বেগম জিয়া বা তারেক রহমান সরে গেলেই বিএনপির কর্তৃত্ব তারা হারাবেন না। ভারতের
কংগ্রেসের নেতৃত্বে গান্ধী পরিবারের কেউ নেই। কিন্তু তবুও এখনো এ পরিবারই উপমহাদেশের
প্রাচীনতম দলটির প্রধান নিয়ন্ত্রক। এক-এগারোর সংকটে আওয়ামী লীগ সভাপতি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কাউকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেননি। কঠিন পরিস্থিতি
মোকাবিলার দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন বিশ্বস্ত অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ জিল্লুর রহমানের হাতে।
’৭৫-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন জোহরা তাজউদ্দীন। তাতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ
থেকে বিচ্যুৎ হয়নি আওয়ামী লীগ। পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগই শেখ হাসিনাকে নেতৃত্বে বসিয়েছে
বিপুল সম্মানে, অফুরান ভালোবাসায়। যে কোনো রাজনৈতিক দলের সংকট আসলে আদর্শের পরীক্ষা।
আদর্শের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে আদর্শবান অভিজ্ঞ নেতা প্রয়োজন।
এক-এগারোর সংকটে আওয়ামী লীগ জিল্লুর রহমান, সৈয়দ আশরাফের মতো নেতা
পেয়েছিল বলেই দলটি ঐক্যবদ্ধ থেকেছে। শক্তিশালী হয়েছে। অন্যদিকে এ সময় বিএনপি পেয়েছিল
তাদের ভাষায় ‘বিশ্বাসঘাতক’ আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, সাইফুর রহমানদের। যারা নিজেদের আদর্শবান
নেতা হিসেবে প্রমাণ করতে পারেননি। এ উপলব্ধি যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হয়েছিল,
তার প্রমাণ মেলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে। তীব্র রাজনৈতিক বিরোধ
উপেক্ষা করে, তিনি বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন জিল্লুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। হয়তো
মনের ভেতর এক দীর্ঘশ্বাসকে চাপা রেখেছিলেন। এই ভেবে যে, তিনি তার দলে জিল্লুর রহমানের
মতো একজন বিশ্বস্ত নেতা পাননি। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুই মেরুর দল। দুটি দলের নীতি,
আদর্শ বিপরীতমুখী। সংকট মোকাবিলায় দুই দলের অভিজ্ঞতা দুরকম। আওয়ামী লীগের প্রতিটি সংকটে
আদর্শবান নেতারা ত্রাণকর্তা হিসেবে সামনে এসেছেন। বিএনপির সংকটে দায়িত্ববানরা করেছেন
প্রতারণা। জিয়ার মৃত্যুর পর বিচারপতি আবদুস সাত্তার কিংবা কে এম ওবায়দুর রহমান বিএনপির
জন্য স্বস্তি আনতে পারেননি। এক-এগারোর সময় ইয়াজউদ্দিন-মান্নান ভূঁইয়ারা দলের বিরুদ্ধে
ষড়যন্ত্র করেছেন বলে বিএনপির নেতাকর্মীরা এখনো দাবি করেন। দুই দলের এ বিপরীত পরিস্থিতিতে
প্রধান কারণ আমার মতে ‘আদর্শ’।
আওয়ামী লীগে কিছু নেতাকর্মী আদর্শের চর্চা করে। একটি নির্দিষ্ট
আদর্শের ভিত্তিতে দলটি পরিচালিত হয়। আর বিএনপির একমাত্র আদর্শ হলো, আওয়ামী লীগ বিরোধিতা।
ক্ষমতার হালুয়া-রুটি ভাগবাটোয়ারার জন্য গঠিত এ ক্লাবে সবাই কিছু চান। তা ছাড়া আওয়ামী
লীগের একজন তৃণমূলের কর্মীও মনে করেন, দলটা তার। কিন্তু বিএনপির সবাই বিশ্বাস করেন,
দলের মালিক জিয়া পরিবার। তারা শুধুই চাকরবাকর। যে কারণে কেউ ঝুঁকি নিতে চান না। সিদ্ধান্ত
গ্রহণে জিয়া পরিবারের জন্য অপেক্ষা করেন। নেতৃত্বে বাইরের কেউ এলে তারা বিশ্বাসঘাতকতা
করবেন, জিয়া পরিবারকে মাইনাস করবেন—বেগম জিয়া বা তারেক রহমানের এমন আশঙ্কা অতীত অভিজ্ঞতা
থেকেই। তা ছাড়া জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া এ রাজনৈতিক দলটিই তাদের আয়-উপার্জনের একমাত্র
পথ। নেতৃত্ব ছাড়লে আয়ের উৎসও বন্ধ হয়ে যাবে। এসব কারণেই হয়তো জিয়া পরিবারের সদস্যরা
নেতৃত্ব ছাড়তে চান না। নেতৃত্ব ছেড়ে দিলেই একজন সাত্তার, সাইফুর রহমান, কিংবা মান্নান
ভূঁইয়ার জন্ম হবে। এ অবিশ্বাসের কারণেই, নির্বাচনে অযোগ্য বেগম জিয়া, তারেক রহমান নির্বাচনবিমুখ।
বিএনপির রাজনীতির মূল ভিত্তি চারটি—অবিশ্বাস, সন্দেহ, ক্ষমতা ও সুবিধাবাদ। এ কারণেই
বিএনপি জিয়া পরিবারমুক্ত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। কেউ কি বাড়ির কেয়ারটেকারকে হেবা
দলিলে বাড়ি লিখে দেয়?
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন সবটুকু জীবনী শক্তি নিঃশেষ করে দেয়। সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি যদি হন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী, তাহলে তো কথাই নেই। অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত টেনশনে শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় প্রায়। আমার জন্য ৩০ এপ্রিল ছিলো তেমন একটি দিন। কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। গত বছর ১৭ মে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘে স্বীকৃতি পায়। কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বললেন, এবার কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী করতে হবে ঘটা করে। তার মতে জাতিসংঘের এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের বিরাট অর্জন।
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। প্রতিদিন তিনি হুমকি দিচ্ছেন, প্রতিদিন তিনি সতর্ক বার্তা দিচ্ছেন, হুশিয়ারি উচ্চারণ করছেন। কিন্তু কেউ তার কথা শুনছেন না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশনা আসলে দলের নির্দেশনা। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশই এই নির্দেশনা মানছেন না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে এই অবস্থান ওবায়দুল কাদেরের নয়, এই অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূলত তাঁর তার বক্তব্যেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ ধরনের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন দেখা গেল যে, একমাত্র প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার শ্যালককে মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়েছেন। অন্য কেউই ওবায়দুল কাদেরের সিদ্ধান্তকে পাত্তা দেননি। ওবায়দুল কাদের এই ব্যাপারে কঠোর অবস্থানের কথা বারবার ঘোষণা করছেন।
বিএনপি নামের রাজনৈতিক দলটি যেন এখন এক রহস্যে ঘেরা বাড়ি। ভূতুড়ে বাড়িও বলা যায়। যে বাড়ির কর্তারা থাকেন অন্ধকারে। লোকচক্ষুর আড়ালে। যেখানে চাকরবাকর, সেরেস্তাদাররা থাকেন আতঙ্কে। কেউ জানে না আগামীকাল কী হবে। ১৭ বছরের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি যে এখনো টিকে আছে, তা এক বিস্ময়। তার চেয়েও বড় কৌতূহল বিএনপি কে চালায়? একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত দলটি এখন যেন পথ হারিয়েছে। পথের দেখা পেতে, বিএনপিকে বাঁচাতে নানা জনের নানা মত। অনেকেই অনেক পরামর্শ দিচ্ছেন।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।