নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২০ মে, ২০১৮
তারা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। প্রত্যেকেই জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বিএনপি গঠনেও তাঁদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখন তাঁরা বিএনপিতে নেই। বিএনপিতে না থাকলেও অনেকেই তাঁদের বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করে। বিএনপির মধ্যেই অনেকের এই মত প্রবল যে, বিএনপির কঠিন সময়ে তাঁদের দরকার ছিল। বিএনপির নেতাদের একটি বড় অংশ মনে করেন, তারেক জিয়ার বাড়াবাড়ি এবং অপমানজনক আচরণের জন্যই এঁরা বিএনপিতে নেই। তারেক জিয়ার কর্তৃত্বের বলী বিএনপি নেতাদের মধ্যে আলোচিত তিনজন হলেন অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ এবং ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।
অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে জিয়া বিএনপিতে ডেকে নিয়েছিলেন। অধ্যাপক চৌধুরীর বাবা কাফিলউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন আওয়ামী লীগের সদস্য। বি. চৌধুরী বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘আপনার ডাক্তার’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। জিয়ার আমন্ত্রণে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। জিয়া তাঁকে দলের মহাসচিব বানান। ১৯৮১’র ৩০ মে জিয়া চট্টগ্রামে এক সেনা বিদ্রোহে নিহত হন। ঐ সময় পাশের রুমে থেকেও অক্ষত ভাবে বেঁচে যান অধ্যাপক চৌধুরী। এরপর থেকে দলে অনেকেই তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখেন। ৯১ এ বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি হন সংসদ উপনেতা। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে আবার জ্বলে ওঠে বি. চৌধুরীর টেলিভিশন প্রতিভা। পুত্র মাহি বি. চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে তৈরি করেন ‘সাবাশ বাংলাদেশ’। ঐ এক অনুষ্ঠান ২০০১ এ বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছিল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। এর পুরস্কারও পান নগদ। বেগম জিয়া তাঁকে রাষ্ট্রপতি করেন। কিন্তু ২০০১ এর নভেম্বরে রাষ্ট্রপতি হয়ে ২০০২ এর জুনেই তাঁকে বিদায় নিতে হয়। রাষ্ট্রপতি হয়ে তিনি জিয়াউর রহমানের কবরে যাননি, এটা ছিল তাঁর অপরাধ। এজন্য বিএনপির সংসদীয় দলের সভায় তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অনাস্থা প্রস্তাব সংসদে ওঠার আগেই অধ্যাপক চৌধুরী রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান। গঠন করেন বিকল্প ধারা। বিএনপি তখন দুর্দান্ত প্রতাপে দেশ চালাচ্ছে। অধ্যাপক চৌধুরীর ‘বেয়াদপি’ তাঁদের সহ্য হবার কথাও না। বিএনপির ক্যাডাররা বিকল্প ধারার মিছিলে আক্রমণ করে। মহাখালীর রেললাইন ধরে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে বি. চৌধুরীর দৌড় এখনো বিএনপির অপরাজনীতির বড় বিজ্ঞাপন। কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন বি. চৌধুরীকে তখন রাষ্ট্রপতি পদ থেকে সরে যেতে হয়েছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, জিয়ার কবরে না যাওয়াটা ছিল একটা অজুহাত। আসল কারণ ছিল তারেক। অধ্যাপক চৌধুরীর ছেলে মাহি বি. চৌধুরীর সঙ্গে ‘একান্ত ব্যক্তিগত’ বিষয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তারেক। বিএনপির অন্য একটি সূত্র দাবি করে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে বি. চৌধুরী অল্প দিনের মধ্যে লাইম লাইটে এসেছিলেন, এটা তারেক পছন্দ করেননি। যে কারণেই হোক বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যকে বিএনপি ছাড়তে হয় তারেকের জন্যই, এনিয়ে কারোই কোনো সংশয় নেই।
কর্নেল (অ.) অলি আহমেদ বিএনপির কেবল প্রতিষ্ঠাতা সদস্যই ছিলেন না, ছিলেন জিয়ার সামরিক সহচরের মধ্যে সবচেয়ে বিশ্বস্ত। জিয়ার জীবন কালে কর্নেল (অব.) অলি ছিলেন তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গী। কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ জিয়ার মৃত্যুর পরও তাঁর বিশ্বস্ততা অটুট রেখেছিলেন। রাজনীতিতে বেগম জিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্ত পরামর্শকদের মধ্যে তিনিই ছিলেন অন্যতম। ৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের পর অলিই ছিলেন ক্ষমতাবান মন্ত্রী। কিন্তু তারেক যুগে এসে নক্ষত্রের পতন ঘটে। ২০০১ এর নির্বাচনের চট্টগ্রামে কর্নেল অলির দুই আসনের একটি দেওয়া হয় জামাতাকে।মুক্তিযোদ্ধা এই সাবেক সেনা কর্মকর্তা তারেকের এই অপমান মেনে নিতে পারেন নি । প্রতিবাদ করেন। বিএনপি নেতাদের অনেকেই স্মৃতিচারণ করেন, তারেক জিয়ার সঙ্গে কর্নেল (অব.) অলির বাদানুবাদ এখনো বিএনপির চর্চার বিষয়। হাওয়া ভবনের বচসার সময় উপস্থিত একজন নেতা বলেছিলেন, ঐ বিকেলে তারেক জিয়াকে অলি আহমেদ যা যা বলেছিলেন, তা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে। অলি আহমেদ বলেছিলেন তুমি বিএনপিকে ধ্বংস করবে, তুমি নিজেও ধ্বংস হবে। ২০০৬ সালে অলি তাঁর নিজের গড়া দল ছেড়ে এলডিপি গঠন করেন।
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ব্যক্তিত্বে এই দু’জনের ধারেকাছে না থাকলেও, তিনিও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। রাজনীতিতে তিনি যোগ্যতার চেয়েও বেশি পেয়েছেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারেকের ইচ্ছাতেই ব্যারিস্টার হুদা যোগাযোগ মন্ত্রী হন। এসময় হুদা, তারেক, মামুন জুটি সিএনজি বাণিজ্য থেকে শুরু করে সড়ক মহাসড়কে দুর্নীতি ও লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেন। ব্যারিস্টার হুদার ঘনিষ্ঠরা জানান, টাকা বানাতেই তারেক, মামুন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে যাচ্ছেতাই ভাবে ব্যবহার করেন। নাজমুল হুদা নিজেই ওয়ান ইলেভেনে গ্রেপ্তার হয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, ‘তারেকের কারণেই বিএনপির প্রতি তার ঘৃণা এসেছিল।’ অবশ্য ২০১২ তে বিএনপি ছাড়ার কারণ আদর্শিক নয় বরং দুর্নীতি মামলা থেকে বাঁচতেই তিনি দল ছেড়েছেন।
Read in English- https://bit.ly/2Gxz0RO
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া তারেক জিয়া বিএনপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
মন্তব্য করুন
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
তীব্র গরম মির্জা আব্বাস বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
ড. আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনই দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি পরামর্শ দিয়ে আসছেন এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কখনও মুখ খুলেননি বিএনপির কেউই। তবে এবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি জানিয়েছেন বিএনপি থেকে বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়াকে বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দল ভাবছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে দলের এমন ভাবনার কথা জানান বিএনপির এই নেতা।
উপজেলা নির্বাচন থেকে কঠোর অবস্থান থেকে ইউটার্ন নিলো বিএনপি। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আপাতত যারা উপজেলা নির্বাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে সব কিছু নির্ভর করবে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। যারা পরাজিত হবে তাদের ওপর নেমে আসবে শাস্তির খড়গ। আর যারা বিজয়ী হবেন তাদের বিষয়টি উপেক্ষা করা হবে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে ফেঁসে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। তবে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেও নীতিমালার কারণে বেঁচে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।