নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৯ পিএম, ৩০ মে, ২০১৮
অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জাতীয় সরকারের প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ তো সব সময়ই ঐক্যমতের সরকারের মাধ্যমেই দেশ পরিচালনা করে। এখনো সংসদের বিরোধী দলও সরকারে আছে। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট যদি আগামী নির্বাচনে একটি আসনও পায়, আর আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে জয়ী হয় সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ জাতীয় সরকারে যুক্তফ্রন্টকে শর্ত সাপেক্ষে নেবে। অন্যদিকে, বিএনপি জাতীয় সরকারের দাবিকে নাকচ করে দিয়ে বলেছে, এটা আওয়ামী লীগের বাকশালী ফর্মুলা।
গতকাল মঙ্গলবার যুক্তফ্রন্টের আহ্বায়ক এবং বিকল্পধারার চেয়ারম্যান অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী আগামী নির্বাচনের পর অন্তত ৫ বছরের জন্য জাতীয় সরকারের প্রস্তাব করেছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একজন নেতা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময় ঐক্যমতের ভিত্তিতে দেশ চালাতে চায়। যারা জাতির পিতাকে স্বীকার করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে, যারা স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে জোট বা আঁতাত করে না, তাদের শক্তি যত কমই হোক, আমরা তাঁদের সঙ্গে রাখি।’ তিনি বলেন, ৯৬ তে আমরা ঐক্যমতের সরকার গঠন করেছিলাম। এখনো আমরা সংসদের সব দলকে নিয়েই সরকার গঠন করেছি।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এখন যে সরকার দেশ চালাচ্ছে সেটা তো জাতীয় সরকারই। সংসদে নির্বাচিত সকল দল সরকারে যাচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগামী নির্বাচনেও যদি আওয়ামী লীগ জয়ী হয়, সেক্ষেত্রেও আমরা সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করবো। এমনকি বি. চৌধুরী সাহেব এবং তাঁর দল যদি সংসদে আসেন, তাদেরকেও আমরা সরকারে নিতে পারি।’
আওয়ামী লীগ বিষয়টিকে হালকাভাবে নিলেও বিএনপি জাতীয় সরকারের আহ্বানকে একটি ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবেই দেখছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ বলছেন, ‘সরকার যখন একটা প্রহসনের নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে, তখন জাতীয় সরকারের দাবি অপ্রাসঙ্গিক।’ তিনি বলেন, জাতীয় সরকারের প্রস্তাব, আওয়ামী লীগকে বাঁচানোর কৌশল।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেছেন, ‘বি. চৌধুরী সাহেব দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে। এখন তাঁর একটু হালুয়া রুটি খাবার সাধ হয়েছে। এজন্য তিনি জাতীয় সরকারের আবদার করছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন এবং এরশাদের মতো বিশেষ দূত হবেন।’ বিএনপির নেতারা বলছেন, ৮৮ তে যেমন আ.স.ম আব্দুর রব যেমন গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা হয়েছিলেন, এখন যেমন এরশাদ, তেমনি বি. চৌধুরী গৃহপালিত নেতা হতে চান। তিনি রাষ্ট্রপতি থেকে এখন মন্ত্রী হতে চান। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগকে বৈধতা দিতে চান।
বিএনপির নেতারা এসব অভিযোগ করলেও অবশ্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অধ্যাপক বি. চৌধুরীর পিছু ছাড়েননি। তিনি গতকালের ইফতার পার্টিতে বিএনপির একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন