নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৪৫ এএম, ২৩ জুন, ২০১৮
শীর্ষ নেতৃবৃন্দের অব্যাহত চাপের মুখে অবশেষে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে খানিকক্ষণের জন্য বেরিয়েছেন বিএনপির স্বেচ্ছা গৃহবন্দী সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল শুক্রবার সবার অলক্ষ্যে তিনি শুধু কার্যালয় থেকে বেরিয়েই ক্ষান্তি দেননি স্বল্পতম সময়ের ব্যবধানে রাজধানীতে বিএনপির একটি ঝটিকা মিছিলেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। অবশ্য ঘর থেকে বেরিয়ে ঝটিকা মিছিল অংশগ্রহণের ঘণ্টা-খানেকের অভিযান শেষে আবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়েই ফিরেছেন রিজভী।
রুহুল কবির রিজভীর দলীয় কার্যালয়ে দীর্ঘদিন অবস্থানের বিষয়ে গত কয়েকদিন ধরেই বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে আলোচনা চলছিল। বিষয়টি দলের নেতাকর্মীদের আন্দোলনের ইচ্ছাকে দমিয়ে দিচ্ছে এবং নেতাকর্মীদের বিপথগামী ও ভুল বোঝাচ্ছে বলে মনে করেন শীর্ষ নেতারা। তাই রিজভীকে অতি সত্ত্বর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়তে বলেন বিএনপির নেতারা। এই বিষয়ে লন্ডনে পলাতক বিএনপি নেতৃত্বও একই মনোভাব পোষণ করেন। বিষয়টি রিজভীর কানেও যায়। অবশেষে রিজভী নেতৃবৃন্দকে এক হাত দেখে নেওয়ার কৌশল হিসেবেই ঝটিকা মিছিলে অংশ নিয়ে তাঁর রাজপথের সংগ্রামী পরিচয় তুলে ধরেন। তবে এজন্য তিনি অন্যান্য দিনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত শান্ত ও ঝঞ্ঝাট-হীন শুক্রবার দুপুর বেলাকে বেছে নেন।
বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে সবার অলক্ষ্যে পল্টনের বিএনপি কার্যালয় ছেড়ে যান রুহুল কবির রিজভী। কল্যাণপুরে আগে থেকে প্রস্তুত ছিল বিএনপির জনাকয়েকের একটি দল। রিজভী সেখানে পৌঁছে ঝটিকা মিছিলে নেতৃত্ব নেন। অবশ্য গাবতলীতে অপেক্ষায় ছিল একটি গাড়ি। রিজভী মিছিল শেষে গাড়িতে উঠে বসেন। সেই গাড়ি তাঁকে আবার পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে ফিরিয়ে আনে। ঘণ্টা কয়েকের ব্যবধানে সম্পন্ন হয় রিজভীর ঝটিকা মিছিল অভিযান।
বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের ঝটিকা অভিযান সম্পর্কে এখনো কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও, দীর্ঘদিন স্বেচ্ছা বন্দিত্ব বরণ করে দলীয় কার্যালয়ে অন্তরীণ থাকার পর রিজভীর এমন তৎপরতা তাঁর অনুসারীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন