নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১০ জুলাই, ২০১৮
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা গিয়েছিলেন এলাকার এমপির কাছে। দলের এমপির কাছে তাঁর তদবির ছিল ছেলের চাকরি। চেয়ারম্যানের কথা শুনে এমপি বললেন, এখনতো বেশ কড়াকড়ি। মেধাতালিকায় থেকেও অনেকের চাকরি হয় না। তারপরও আমি দেখব। কিছুদিন পর খবর এলো তাঁর ছেলের চাকরি হয়নি। বিষয়টি মেনেই নিয়েছিলেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। কিন্তু পরে যা শুনলেন তা কোনোভাবেই মানতে পারছিলেন না। চাকরি হয়েছে এলাকায় বিএনপি পরিবার বলে চিহ্নিত একজনের ছেলের। একটু খোঁজ নিয়েই জানতে পারলেন বিস্তারিত, এমপি সাহেব ওই পরিবারের ছেলের জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করেছেন। পরিবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বলে সার্টিফাই করেছেন। আবার গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই যখন ভ্যারিফাই করতে গেছে সেখানেও টাকা ঢেলে সব ঠিক করেছেন এমপি। বিএনপি পরিবারের জন্য আওয়ামী লীগের এমপির ভালোবাসার উৎস হলো টাকা। বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে বিএনপির ছেলেকে সরকারি চাকরি নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের এমপি।
প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের এক নেতা এই ঘটনা জানান।
গত ৩০ জুন ও ৭ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে সভা করেছেন। সভায় উপস্থিত সব নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শোনা সম্ভব হয়নি আওয়ামী লীগ সভাপতির। তখন প্রধানমন্ত্রী তৃণমূলের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আপনাদের এলাকার যার যা সমস্যা লিখে নির্দিষ্ট বক্সে জমা দিয়ে যাবেন। তৃণমূলের নেতারা লিখিতভাবে তাদের অভিযোগের কথা জমা দিয়ে যান। উল্লিখিত ঘটনাটি একজনের লেখায় পাওয়া যায়।
আর এমন অভিযোগ একটি নয়, অসংখ্য। বেশির ভাগ উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ কর্মীদের কাছ থেকে টাকা খেতে পারে না বলে তাদের পছন্দ করেন না অনেক এমপি। এমপিদের পছন্দ বিএনপি-জামাত, কারণ তাদের কাছ থেকে টাকা খেতে পারে। চাকরির তদবির (ডিও) করে বিএনপি-জামাতের জন্য। আবার চাকরির তদবিরর করতে গেলে এনএসআইসহ গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট লাগে। তখন গোয়েন্দা সংস্থা ম্যানেজ করার জন্য আবার আলাদা করে টানা নেন এমপিরা।
শুধু চাকরির তদবিরই নয়। ব্যবসা দেওয়ার ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগের অনেক এমপির পছন্দ বিএনপি-জামাত। কারণ আওয়ামী লীগের লোকজনের কাছ থেকে টাকা চাইতে পারে না। এই এমপিরা নিজে ব্যবসা নিয়ে জামাত-বিএনপির কাছে অর্থের বিনিময়ে তুলে দেয়।
এখানেই শেষ না বিএনপি-জামাত থেকে আরও আয়ের উৎস আছে এমপিদের। বিএনপি-জামাতের লোকেরা গ্রেপ্তার হলে তাঁদের জন্য থানা-পুলিশ তদবির করছেন অনেক এমপি। অর্থের বিনিময়ে বিএনপি-জামাতের কর্মীদের কোর্টে জামিনের ব্যবস্থাও করছেন এই এমপিরা।
আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারা দেখা যায় এমপিদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে, যুক্তি দেয়, তর্ক করে। এই কারণে অনেক এমপি তো তৃণমূলের নেতাদের কথা বলার সুযোগই দেন না। এমপির সাক্ষাতই পায়না অনেক তৃণমূল নেতা।
জানা গেছে, প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা থেকে উল্লিখিত অভিযোগগুলো এসেছে। সাম্প্রতিক যত নিয়োগ হয়েছে তাতে অনেক বিএনপি-জামাত পন্থী চাকরি পেয়েছে বলে অভিযোগ করেন অনেক তৃণমূল নেতা।
তৃণমূলের একাধিক নেতা বলেন, এমপিদের কাছে বিএনপি-জামাতের লোকেরা টাকা নিয়ে যায়। তাঁদের কথা গোপন রাখা হয়। চাকরি পাওয়ার সময় টাকা দেওয়ার লোকরাই পায়। এমপি টেন্ডার-ব্যবসা বিক্রি করে বিএনপি জামাতের কাছে। নিজেদের লোক তো আর টাকা দিবে না।
প্রায় ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। কিন্তু টাকার বিনিময়ে এমপিদের বিএনপি-জামাত ভালোবাসার কারণে তৃণমূল নেতারা বঞ্চিতই রয়ে গেছেন। অথচ ক্ষমতায় না থেকেও বহাল তবিয়তে আছে বিএনপি-জামাতের লোকেরা।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন