নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৯ পিএম, ০৮ অগাস্ট, ২০১৮
অক্টোবরকে টার্গেট করেই এগুচ্ছে বিএনপি। নূন্যতম দাবিতে সব দলকে নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি। সাম্প্রতিক সময়ের কোটা আন্দোলন এবং নিরাপদ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে বিএনপি অনেক কিছু শিখেছে বলে দাবি করেছে দলের সিনিয়র নেতারা। আর এবার বিএনপির আন্দোলন হবে ঢাকা কেন্দ্রিক। ঢাকাকে ঘিরেই বিএনপি সব আন্দোলনের কৌশল তৈরি করছে। বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন, ‘২০০৬ সালের অক্টোবরে আওয়ামী লীগ যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, এবার বিএনপি ঢাকার রাস্তায় তেমনি পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। ঐ নেতা বলছেন, ‘লন্ডন থেকে আন্দোলনের কৌশলপত্র আসছে।’ বিএনপির অন্য একজন নেতা জানিয়েছেন ‘সাম্প্রতিক দুটি আন্দোলনে সরকার এবং আওয়ামী লীগের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা গেছে। দুর্বলতাগুলো কী জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন ‘আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল। সরকার সম্পূর্ণ ভাবে প্রশাসন এবং পুলিশ নির্ভর। নেতাদের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা কমছে।’ বিএনপির নেতারা মনে করছে, সাধারণ মানুষের অসন্তোষ বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনে মানুষের ক্ষোভের প্রকাশ দেখেছে বিএনপি।’ নেতারা বলছেন, ‘এটা তাদের আশান্বিত করে তুলেছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মনে করেন, ‘সরকার ক্রমশ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এখনই আন্দোলনের ভালো সময়।’
বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, মুখে যতই শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলা হোক, শিগগিরই বিএনপির সহিংস আন্দোলন দৃশ্যমান হবে। লন্ডন থেকে তারেক জিয়া তাঁর নিজস্ব লোকদের ঢাকাকে অচল করার প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। বিএনপি তার নিজস্ব বৈঠকেও সর্বাত্মক আন্দোলন নিয়ে কথা বলেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেলার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে ঢাকাকেন্দ্রিক সহিংস এবং সর্বাত্মক আন্দোলনের দাবি এসেছে। দলের মধ্যে এতদিন যারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন, শিক্ষার্থীদের পরপর দুটি আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দাবি করেছেন, ‘২০১৪র পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি এক নয়। সরকারের ভিত্তি দুর্বল হয়ে গেছে। বড় আন্দোলনের ধাক্কা সামাল দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই।’ তবে আন্দোলনের ধরণ কি হবে, সে সম্পর্ক স্পষ্ট করে নজরুল ইসলাম খান কিছু বলেননি।
বিএনপি একাধিক সূত্র বলছে, মূলত রাজপথ দখল করে, ঢাকাকে অচল করাই বিএনপির প্রধান লক্ষ্য। আর এটা করতে দলটি কি ধরনের কর্মসূচি নেবে তা ঠিক হচ্ছে লন্ডনে। বিএনপির একটি সূত্র বলছে, চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে তারা চাইছে ২০ দলের বাইরে আরও দলকে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করতে। জোটগত না হোক অন্তত যেন যুগপৎ আন্দোলন হয়, যে লক্ষ্যে দলটির নেতারা অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন। গতকাল বিকেলে কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকেও বিএনপি মহাসচিব আন্দোলনের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, ‘অপেক্ষা করেন, দেখেন। আমরা কি করতে পারি দেখাবো। আমাদের আর কোনো উপায় নেই। এখন অস্তিত্বের জন্যই আমাদের আন্দোলনে যেতে হবে।’
তবে এই আন্দোলন থেকে বিএনপি কি অর্জন করেতে চায়? এরকম প্রশ্নে দুরকম বক্তব্য পাওয়া গেছে। একটি অংশ বলছে, এই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে। তবে অন্য একটি অংশ বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানোর বাস্তবতা নেই। এই আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা নির্বাচনের কিছু দাবি দাওয়া আদায় করবো। সরকারকে কিছু যৌক্তিক দাবি মানতে বাধ্য করা হবে। সরকারকে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করা হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা, একটা আন্দোলনের মোমেন্টাম নিয়ে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। বিএনপির এই অংশ মনে করছে, আন্দোলন তীব্র করতে পারলে বেগম জিয়ার মুক্তিও অসম্ভব নয়।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন