নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০১ পিএম, ১৭ অগাস্ট, ২০১৮
বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে জোটে আগ্রহী দুপক্ষই। ভোটের হিসেবে দুপক্ষের কাছেই মহামূল্যবান বিএনপি। কিন্তু বিএনপি কার সঙ্গে যাবে? দুপক্ষ হলো অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট এবং ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। অথবা বিএনপি দুই জোটের কোনটিতেই হয়তো শেষ পর্যন্ত যাবে না, বরং ২০ দলীয় জোটেই নির্বাচনে যাবে। বিএনপি কোন পথে যাবে সেটাই এখন মহামূল্যবান প্রশ্ন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ মোর্চা গঠনের আহ্বান জানিয়ে আসছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি যেমন বি. চৌধুরীর ডাকে সাড়া দিয়ে ছুটে গেছেন। সেখানে তিনি গণতন্ত্রের জন্য জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন, তেমনি তিনি ড. কামাল হোসেনকেও অভিভাবক মেনেছেন। কিন্তু ড. কামাল হোসেন আর অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী এক রহস্যময় কারণে এক হতে পারছেন না। দুই প্রবীণ রাজনীতিবীদই পৃথক অবস্থান থেকে ঐক্যের কথা বলছেন। যদিও বিএনপি মহাসচিব ছাড়া বিএনপির অন্যনেতাদের কাছে, এরা দুজনই মূল্যহীন। বিএনপির একজন নেতা স্পষ্ট করেই জানালেন, ভোটের বাজারে ঐক্যের কোনো দাম নেই। এরা বিএনপির ঘাড়ে বন্দুক রেখে গুলি করতে চায়। একই মত লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ারও। তারেক জিয়া মনে করেন, বিদ্যমান ২০ দলকে রেখে তার সঙ্গে জাতীয় পার্টিকে যুক্ত করা গেলেই জাতীয় ঐক্য হবে। তারেক জিয়া দলের সিনিয়র নেতাদের আড়ালে রেখে এরশাদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেছেন বলেও জানা গেছে। তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি.এম কাদেরের সঙ্গে বিএনপির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টি আরেক দফা ডিগবাজীও দিতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চেয়েছিলেন সরকার হটাতে সকল জোটে রাজনৈতিক শক্তির ঐক্য। এজন্য তিনি জামাতকে ত্যাগ করতেও প্রস্তুত ছিলেন। প্রস্তুত ছিলেন বিএনপির নেতৃত্বও ত্যাগ করতে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মির্জা ফখরুলের সর্বদলীয় জোটের ফর্মুলা ছিল যৌথ নেতৃত্ব। এখানে একক কোন নেতা থাকবে না। নির্বাচনের পর জোটে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, তাদের থেকে প্রধানমন্ত্রী হবে। অথবা, জোট আলোচনা করে একজন প্রধানমন্ত্রী ঠিক করবে। কিন্তু মির্জা ফখরুল নানান চেষ্টা করেও বি. চৌধুরী এবং ড. কামালকে এক করতে পারেন নি। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তারেক জিয়াও প্রথমে বি. চৌধুরীর সঙ্গে ঐক্যে রাজী ছিলেন। কিন্তু অধ্যাপক বি. চৌধুরীর পক্ষ থেকে মাহী বি. চৌধুরী দেড়শ দেড়শ আসনের ফর্মুলা দিলে তারেক ক্ষেপে যান। ঐ ফর্মূলায় মাহি বিএনপিকে ১৫০ এবং শরীকদের ১৫০ আসন দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। একাধিক সূত্র নিশ্চত করেছে, বিএনপি শেষ পর্যন্ত হয়তো দুই প্রস্তাবিত জোটের একটিতেও যাবে না, বরং জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির একটি সমঝোতায় যাবে। বিএনপির অধিকাংশ নেতাই মনে করেন, ২০ দল ভাঙ্গা যৌক্তিক হবে না। বরং জাতীয় পার্টি ২০ দলের বাইরে একমাত্র দল, যাদের জামাত নিয়ে কোন অরুচি নেই। বিএনপির একজন নেতা বলেন, ২০০১ সালেও আমরা জাতীয় পার্টিকে নিয়েছিলাম, ২০১৪তেও এরশাদের সঙ্গে আমাদের একটা সমঝোতা হয়েছিল।’
বাংলা ইনসাইডার/আরকে
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন