নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ৩০ অগাস্ট, ২০১৮
যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির ঐক্যের প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তারেক-মাহির দ্বন্দ্ব। বিএনপি এবং যুক্তফ্রন্টের নেতারা বলছেন, এই দুইজনের দ্বন্দ্বে ভেস্তে যেতে পারে ঐক্য প্রক্রিয়া। মাহি যেমন জামাতের ব্যাপারে অনড় অবস্থান নিয়েছেন, তেমনি তারেক জিয়াও মাহির অবস্থানকে অমার্জনীয় এবং উদ্ধত বলে মনে করছেন। বাহ্যত: দুই জনের বিরোধ এবং মত পার্থক্য নীতিগত মনে হলেও দুই পক্ষের নেতারাই বলছেন দ্বন্দ্ব ব্যক্তিগত। অথচ এরা দু’জন ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
২০০১ সালের নির্বাচনের আগে তারেক-মাহি জুটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তারেক-মাহিকে নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্ব দেন। মাহি বি চৌধুরীর পরিচালনায় নির্মিত হয় প্রামাণ্য চিত্র ‘সাবাস বাংলাদেশ’। যাতে উপস্থাপনা করেন মাহি বি চৌধুরীর বাবা অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি-জামাত জোট দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন পেয়ে বিজয়ী হয়। অধ্যাপক বি. চৌধুরী হন রাষ্ট্রপতি। উপ-নির্বাচনে মাহি. বি চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়ে এমপি বানায় বিএনপি। মাহির হাতে দেওয়া হয় বিটিভির দায়িত্ব। কিন্তু তারেক-মাহির বন্ধুত্ব ‘একান্ত ব্যক্তিগত’ বিষয়ে ফাটল ধরে। ব্যক্তিগত বিরোধের জেরেই রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়তে হয় মাহির বাবা অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে। বেগম জিয়া যেমন এখন বিএনপির নামমাত্র প্রধান, আসলে বিএনপি চালায় তারেক জিয়া। তেমনি, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর আমলে বিকল্প ধারার অলংকারিক প্রধান। দল চালান মাহি. বি চৌধুরী। তাই, বিএনপির অনেকেই যখন অধ্যাপক বি চৌধুরীর সঙ্গে ঐক্যে যেতে আগ্রহী, তখন তারেক জিয়ার তাতে ঘোর আপত্তি। আবার, বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলতেই মাহি ঐক্যের দুই দফা শর্ত দিয়েছেন। প্রথম দফা শর্ত হলো বিএনপিকে জামাত ছাড়তে হবে। দ্বিতীয় শর্ত হলো, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে শরিকদের জন্য অর্ধেক আসন (১৫০টি) ছাড়তে হবে। যুক্তফ্রন্টের নেতারা বলছেন, মাহি এই দুই শর্ত দিয়েছেন তারেকের সঙ্গে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও বিরোধ থেকেই। বিএনপির নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘২০০১ আমলে বিএনপি-জামাত ঐক্যবদ্ধ ভাবেই নির্বাচন করে। তখন মাহি বি চৌধুরী বিএনপি করতেন। তখন তাঁর জামাতে অরুচি ছিল না, এখন হলো কীভাবে?‘ যুক্তফ্রন্টের একজন নেতা বলেন, আমরা সবাই জানি, কোন রাজনৈতিক দলের শক্তি সামর্থ্য কতটুকু। তারপরও বিএনপিকে মাত্র দেড়শ আসন দেওয়ার প্রস্তাব অবাস্তব। যখন যুক্তফ্রন্টের বৈঠকে এই প্রস্তাব উত্থাপিত হয়, তখনই আমরা আপত্তি করেছিলাম। কিন্তু অধ্যাপক বি. চৌধুরী তাঁর ছেলেকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ’নিজেদের ক্ষুদ্র ভাবা উচিত নয়।’ একাধিক সূত্র বলছে, এই দুই প্রস্তাব শুনে তারেক ক্ষুব্ধ হন। তারেক জিয়া যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সকল যোগাযোগ বন্ধ করতে বলেন। তারেক জিয়ার ধারণা মাহি বি. চৌধুরী আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে কাজ করছে। মাহি এমন একটা প্ল্যাটফর্ম করতে চায়, যারা আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে বর্তমান সরকারকে বৈধতা দেবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই দুইজনের দ্বন্দ্বে, যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির আনুষ্ঠানিক বৈঠক হচ্ছে না। গত ২৮ আগস্ট ড: কামাল হোসেনের বাসভবনে অনুষ্ঠিত যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের বৈঠকেও ৭ দফার ভিত্তিতে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বিএনপির অনাগ্রহে সেই আলোচনার দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। তবে, দু পক্ষই বলছে, তারেক আর মাহির ‘একান্ত ব্যক্তিগত’ দ্বন্দ্বেই শেষ পর্যন্ত কিছু হবে না। একান্ত ব্যক্তিগত বিরোধ কি? এই প্রশ্নের উত্তরে সবাই মুখ টিপে হাসেন।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি বাংলাদেশের নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মেজর হাফিজ সাকিব আল হাসান কিংস পার্টি ড. মঈন খান বিএনপি
মন্তব্য করুন
মো. সিদ্দিকুর রহমান আওয়ামী লীগ বিপ্লব বড়ুয়া সুজিত রায় নন্দী
মন্তব্য করুন
আবদুল আউয়াল মিন্টু তারেক জিয়া বিএনপি ২৮ অক্টোবর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার জন্য নতুন করে আবেদন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার ভাই শামীম ইস্কান্দারের করা এই আবেদন এখন আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন যে, সচিব তাকে ফাইলটি পাঠিয়েছেন। এটি তিনি দেখছেন। আগামীকাল তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। আইনমন্ত্রী এও বলেছেন যে, এ ব্যাপারে পূর্বের সিদ্ধান্ত থেকে তিনি খুব একটা সরে আসবেন না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে কি ধোঁকা দিয়েছে—এরকম একটি প্রশ্ন এখন বিএনপির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিএনপি নেতারা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনায় এই প্রসঙ্গটি বারবার আনছেন। বিএনপির একাধিক নেতা মনে করে, বিএনপি যে আগ্রাসী অবস্থান গ্রহণ করেছিল, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিএনপি কর্মীদের মধ্যে যে তেজি ভাব এসেছিল, তার প্রধান কারণ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব এবং আগ্রহ। তাছাড়া বিভিন্ন সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা কূটনীতিকরা বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যে ভাষায় যে ভাবে কথা বলেছেন তাতে বিএনপির নেতাদের মধ্যে স্থির বিশ্বাস জন্মগ্রহণ করেছিল যে, তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে চায় না। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম এজেন্ডা। আর এ কারণেই বিএনপি নেতারা এই বক্তব্যটিকে তাদের কর্মীদের কাছে সঞ্চারিত করেছিল এবং কর্মীরা উৎসাহিত হয়েছিল।
টানা ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। ১৬ বছরে পা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ। টানা ক্ষমতায় থাকলেও আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে একটা ভারসাম্য লক্ষ্য করা যায়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীদেরকে বিভিন্ন সময় পরিবর্তন করে একেক মেয়াদে একেক জনকে মন্ত্রী করেন এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন করে নেতাদের যেমন যোগ্যতা পরিমাপ করেন, ঠিক তেমনি তাদেরকে ক্ষমতাবান করেন।
নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে একশ কোটি টাকার বেশি উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। সরকারের সঙ্গে দেন দরবার করছেন। কাকে কাকে আটক করতে হবে এবং কারা কারা বিএনপিতে বড় ধরনের আন্দোলন করতে চায়, সরকারের জন্য বিপজ্জনক সেই নামের তালিকা সরবরাহ করেছেন। কাদেরকে বাইরে রাখলে কোন সমস্যা নেই সে নামও জানিয়েছেন সরকারি দলের লোকজনকে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেন বিএনপি কোনো বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে পারে সেজন্য আশ্বাসও দিয়েছেন। তার এই আশ্বাসের কারণেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনেকটা নির্ভর অবস্থায় নির্বাচন করেছে এবং বিএনপি যথারীতি নির্বাচন প্রতিরোধে কোন বড় ধরনের সহিংসতা বা নাশকতা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছে।