নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
শেষ পর্যন্ত যদি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য হয় তাহলে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নাটকীয় পরিবর্তন হবে। এরকম ঐক্য প্রক্রিয়া হলে আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের আদলে মহাজোট করবে। মহাজোটের শরিকদের ৫০ থেকে ৭০ আসন পর্যন্ত ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও প্রায় চূড়ান্ত হওয়া মনোনয়নেও ব্যাপক রদবদল হতে পারে। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, দলের সভাপতি একাদশ জাতীয় সংসদের মনোনয়নের জন্য তিনটি তালিকা নিয়ে কাজ করছেন। প্রতি তিনমাস অন্তর অন্তর জরিপ করে তালিকাগুলোকে হালনাগাদ করা হচ্ছে। তবে, যেভাবেই নির্বাচন হোক না কেন ৭০ থেকে ৭৭ টি আসনে কোনো পরিবর্তন হবে না। এই আসনগুলো দলের সিনিয়র নেতা এবং জনপ্রিয় এমপিদের। বিএনপি যদি ২০ দলগত ভাবে নির্বাচন করে সেক্ষেত্রে প্রথম তালিকার অনেকে বাদ পড়বে। প্রথম তালিকা করা হয়েছে, ১৪ দলীয় জোটের হিসেব মাথায় রেখে। যেখানে ধরে নেওয়া হয়েছে যে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। এই তালিকায় প্রধান প্রতিপক্ষ ধরা হয়েছে, এরশাদের জাতীয় পার্টি এবং অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টকে। এরকম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার জোটের শরিকদের ২০ থেকে ২৫ টি আসনের বেশি ছাড় দেবে না। এই রকম নির্বাচন হলে, আওয়ামী লীগ দলের ত্যাগী এবং পরীক্ষিত কর্মীদের প্রাধান্য দেবে। শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে কম। জাতীয় পার্টি প্রধান প্রতিপক্ষ হলে, রংপুর বিভাগকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
আবার যদি বিএনপি শুধু ২০ দলকে নিয়ে নির্বাচন করে, সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় তালিকা ব্যবহার করবে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে মহাজোট করবে। তখন শরিকদের জন্য ৫০ থেকে ৬০ আসন পর্যন্ত ছাড় দিতে পারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে মনোনয়নেও বেশ পরিবর্তন আসবে, রাজনীতিবিদদের স্থান দখল করবে ব্যবসায়ী, শিল্পী, খেলোয়াড়সহ পরিচিত মুখ। এ রকম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বগুড়া, ফেনী, লক্ষ্মীপুরের মতো জেলার আসনগুলোতে ব্যাপক পরিবর্তন হবে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তৃতীয় তালিকাও রয়েছে। এই তালিকা তখনই প্রযোজ্য হবে যখন বিএনপি ২০ দলের বাইরে বৃহত্তর জোট করবে। ড. কামাল, যুক্তফ্রন্ট বা অন্যান্য দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে যদি বিএনপি নির্বাচন করে, সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় নাটকীয় পরিবর্তন হবে। তখন শিল্পপতি, ব্যবসায়ী এবং সমাজের পরিচিত মুখরা প্রাধান্য পাবে। এ রকম নির্বাচনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটে আওয়ামী লীগ চমক জাগানো প্রার্থী দেবে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিএনপি যদি জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে নির্বাচন করে, তাহলে আওয়ামী লীগও ঐক্যের ডাক দেবে সেক্ষেত্রে বামদল, ইসলামী দলসহ সবার সঙ্গেই নির্বাচনী ঐক্য গড়ে তুলবে। এ রকম নির্বাচনে দলের জন্য প্রার্থীর ভূমিকা দেখা হবে না, দেখা হবে ঐ প্রার্থী জয়ী হতে পারবেন কি না। এমন অনেক নাম আওয়ামী লীগের তৃতীয় তালিকায় আছে যাদের দেখেই মানুষ উৎসাহিত হবে। আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন, ঢাকা উত্তরে প্রয়াত আনিসুল হক কে মেয়র মনোনয়ন দিয়ে শেখ হাসিনা যেমন সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন তেমনি চমক আসছে এবার মনোনয়নে।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন