নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১৪ নভেম্বর, ২০১৮
নির্বাচনের আগে সচিবালয়ে একটা বিদ্রোহ ঘটাতে চায় বিএনপি। এই বিদ্রোহে পদোন্নতি বঞ্চিত আমলাদের একত্রিত করার কাজ করছেন সদ্য অবসরে যাওয়া সাবেক তিন সচিব। এই আমলাদের তিনজনই আওয়ামী লীগ শাসনামলে সচিব হয়েছেন। দুজন চিহ্নিত বিএনপি হওয়ায় ভালো পোস্টিং পাননি। অন্যজন আওয়ামীপন্থী এক সচিবের বেয়াই হওয়ায় ভালো পদে ছিলেন। এই তিন সচিবের একজন বিএনপি-জামাত আমলে সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ছিলেন। অন্যজন ড. ইয়াজউদ্দিনের নেতৃত্বে সরকারের সময় ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্ব পান। তৃতীয় জন বিএনপিপন্থী আমলাদের নেতা। এই তিনজনের সঙ্গে আছেন সদ্য পদোন্নতি পাওয়া বিএনপি আমলের কয়েকজন মন্ত্রীর একান্ত সচিবগণ।
জানা গেছে, বিএনপির নেতৃত্বে একটি টিমের সঙ্গে এই আমলারা কাজ করছে। এরা সারাদেশে মাঠ প্রশাসনের তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকায় জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নাম আছে। এই সব মাঠ কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ও খতিয়ে দেখা হয়েছে। এই মাঠ কর্মকর্তাদের অন্তত অর্ধেক নির্বাচনে হয় বিএনপির পক্ষে থাকবে অথবা নিরপেক্ষ থাকবে বলে ঐ কর্মকর্তারা মত দিয়েছেন। সচিব পর্যায়েও অন্তত ১২ জন সচিব বিএনপির পক্ষে কাজ করবে বলে বিএনপিপন্থী ঐ সাবেক তিন আমলা মত দিয়েছেন। তবে, নির্বাচন নয়, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর আন্দোলনে সচিবালয়কে সম্পৃক্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিএনপিপন্থী আমলাদের। বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জনের পথে হাঁটে, তাহলে সচিবালয়ে সরকার বিরোধী বিদ্রোহ সৃষ্টির চেষ্টা করা হবে। এই বিদ্রোহে শুধু বিএনপিপন্থীরা নন, সঙ্গে সঙ্গে পদোন্নতি বঞ্চিতদের শামিল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পদোন্নতি বঞ্চিত অনেক আমলার সঙ্গে বিএনপি থেকে দায়িত্ব প্রাপ্ত তিন আমলা যোগাযোগ করেছেন। যোগাযোগ করা হচ্ছে বিশেষ করে ৮৪ ব্যাচের যারা এখনো সচিব হতে পারেননি, ৮৫ ব্যাচের কিছু কর্মকর্তা এবং ৮৬ ব্যাচের যাঁরা অতিরিক্ত সচিব হতে পারেননি তাঁদের সঙ্গে। সচিবালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তফসিল ঘোষণার পরপরই বিএনপিপন্থী আমলাদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। তারা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে বৈঠক করছেন। জানা গেছে, বিএনপিপন্থী আমলারা তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে। এগুলো হলো:
১. সারাদেশে বিএনপিপন্থী সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা। তারা যেন অভিন্ন চিন্তা ও নির্দেশনার কাজ করতে পারে সেই নেটওয়ার্ক তৈরি করা।
২. নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট মাঠ প্রশাসনের মধ্যে থেকে যাঁরা বিএনপিপন্থী আছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ।
৩. সচিবালয়ে কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করা, তাঁরা যেন ৯০ এ এরশাদ বিরোধী আন্দোলন বা জনতার মঞ্চের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
সরকারি কর্মকর্তাদের একাংশ এই তৎপরতা সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো একটি রিপোর্ট সরকারের উচ্চপর্যায়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন