নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২০ মার্চ, ২০১৯
৭৫’র পর প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ বাকশালকে সমর্থন করছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সম্প্রতি এক বক্তৃতায় বলেছেন, বাকশাল পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে নির্বাচনে অনিয়ম, দুর্নীতি ও কারচুপি বন্ধ হতো। তার এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি আবার বাকশালে ফিরে যেতে চাচ্ছে? যদিও ২০০৮ সালে বিপুল বিজয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি এবং কয়েকটি রাজনৈতিক দল এরকম সমালোচনা করছে যে আওয়ামী লীগ বাকশাল ব্যবস্থা পূনঃপ্রবর্তন করছে। ২০১৪ এর নির্বাচনের পর বিএনপির পক্ষ থেকে বেশ জোরেশোরেই বলা হচ্ছে যে আওয়ামী লীগ আবার একদলীয় শাসনব্যবস্থায় ফিরে যাচ্ছে এবং একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে।
২০১৮ এর ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বিএনপির পক্ষ থেকে এই বক্তব্য আরও জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। ’৭৫ এর ২৪ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ সারাদেশে বাকশাল ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিল। বাকশাল নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে এবং বিরোধীপক্ষ একচেটিয়াভাবে বাকশালকে মানবাধিকার লঙ্ঘন, মৌলিক অধিকার হরণ এবং গণতন্ত্রকে হরণ হিসেবে চিহ্নিত করে আসছিলো। যদিও যারা বাকশাল সম্বন্ধে সঠিকভাবে জানেন, বাকশালের নীতি কৌশল পড়াশুনা করেছেন তারা জানে বাকশাল কখনই একদলীয় শাসনব্যবস্থা ছিলো না। সকল রাজনৈতিক দলের একটা ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম ছিলো।
আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ৭৫’র ১৫ আগস্টের পর থেকে বাকশাল নিয়ে নীরবতা পালন করেছিলো। বাকশাল নিয়ে তাদের সুস্পষ্ট অবস্থান ছিলো রহস্যবৃত। ৭৫’র ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ যখন পুনর্গঠিত হয় তখন আওয়ামী লীগ বাকশাল ব্যবস্থা থেকে সরে এসে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিজেদের অবস্থান ঘোষণা করে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ব্যাপক পরিবর্তন আনেন। সমাজতান্ত্রিক ধ্যানধারণা থেকে সরে এসে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগ বেসরকারী খাতকে উৎসাহ দিতে শুরু করে। তখন থেকে বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ নিজেই বাকশাল ব্যবস্থাকে ধারণ করে না। বাকশালকে আওয়ামী লীগ একটি ভুল হিসেবে স্বীকার করে। যদিও আওয়ামী লীগ কোন রাজনৈতিক ঘোষণাপত্র, কর্মসূচি বা অঙ্গীকারে বাকশাল ব্যবস্থাকে ভুল প্রমাণিত করেনি। আবার এটাও সত্য যে, বাকশাল নিয়ে যে অপপ্রচার, মিথ্যাচার ও নানারকম বিভ্রান্তি জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে কোন সুস্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেনি। যদিও আওয়ামী লীগের অনেক চিন্তাবিদ, গবেষকরা বাকশাল ব্যবস্থার বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তবে তা জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রচারণার জন্য কোন ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ গ্রহণ করেনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ যখন বারবার বলে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা বলছে তখন প্রশ্ন থাকতেই পারে আওয়ামী লীগ বাকশাল নিয়ে কেনো ভয় পাচ্ছে। এই সমস্ত বিভ্রান্তির অবসান ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বাকশালের ব্যাপারে একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে যে, আওয়ামী লীগ ক্রমান্বয়ে বাকশাল ব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষকে সুস্পষ্ট ধারণা দেবে এবং বাকশালের নীতি এবং অর্থনৈতিক কৌশলগুলো যে জনকল্যাণমূলক ছিল সেটার সম্বন্ধে আলোচনা করবে। যদিও আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলেছে যে, বর্তমানে দেশে বাকশাল ব্যবস্থা কায়েমের কোনো বাস্তবতা নেই এবং সেটা আওয়ামী লীগ চায়ও না। পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতি এবং পরিবর্তিত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাকশালের ঐতিহাসিক আবেদনও হারিয়ে গেছে। তবুও আওয়ামী লীগ মনে করে জাতির পিতা যেসময় বাকশাল করেছিলেন সেটা ছিল সঠিক সিদ্ধান্ত এবং বাকশাল সেইসময় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। বাকশাল সম্পর্কে যে বিভ্রান্তিগুলো আছে যেমন বাকশাল একদলীয় ক্ষমতা সেটা ছিল ভুল একটি তথ্য। বরং বাকশালের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো একটি প্লাটফর্মের মধ্যে মিলিত হয়েছিল, সেখান থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা ছিল। একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যেই সেই নির্বাচনী ব্যবস্থা বাকশালের মধ্যে নিহিত ছিল। বাকশালের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক ছিল সমবায় প্রথা চালু করা, অর্থনৈতিকভাবে সাম্য প্রতিষ্ঠা এবং সমাজতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অর্থনীতিক নীতি এবং কৌশল গ্রহণ করা।
আজ বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে হাঁটছে তখন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈষম্য। এক শ্রেণীর মানুষের কাছে সমস্ত সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে এবং যতই বাংলাদেশ উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে ততই বৈষম্য বাড়ছে।
এই বাস্তবতায় সাম্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য একটা শোষণহীন সমাজ ফিরিয়ে আনার জন্য বাকশালের আবেদন আবার নতুন করে এসেছে। সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য বাকশালের নীতি কৌশলের যে বিকল্প নেই তা আজ অর্থনীতিবিদরাও স্বীকার করে নিয়েছেন। সেই প্রেক্ষিতেই সাম্যতা এবং ন্যায় নীতি প্রতিষ্ঠা একটা জবাবদিহিতা এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে বাকশালের যে কিছু নীতি আদর্শ কৌশল প্রয়োগ করলে যে তার সুফল বাংলাদেশের মানুষ পাবে সেটা আজ সকলেই স্বীকার করছেন।
এই বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ হয়তো তার নীতি কৌশলে বাকশাল নিয়ে বঙ্গবন্ধুর যে আদর্শ , তার যে স্বপ্ন তার কিছু কিছু গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। সেটা করতে গেলে সবার আগে আওয়ামী লীগের বাকশাল নিয়ে অপপ্রচার, কুৎসা এবং বিষেদাগারের বিরুদ্ধে যুক্তিসম্মত, যুক্তি নির্ভর এবং তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করতে হবে। সেটা যদি আওয়ামী লীগ করতে পারে তাহলে হয়তো আওয়ামী লীগ তাঁর সমালোচকদের জবাব দিতে পারবে এবং বাকশাল ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে অপপ্রচার হচ্ছে সেই অপপ্রচারের জবাব দেয়া সম্ভব হবে। কারণ আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত জাতির পিতা এবং তাঁর পরিবারকে নিয়ে যত অপপ্রচার হয়েছিল তাঁর সঠিক জবাব দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্তির হাত থেকে মুক্তি দিয়েছে। যেহেতু আওয়ামী লীগ এখন দশ বছর ক্ষমতায় আছে এবং আওয়ামী লীগ দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে তৃতীয়বারের মত ক্ষমতায় এসেছে কাজেই আওয়ামী লীগের দায়িত্ব হলো বাকশাল নিয়ে যে বিভ্রান্তিগুলো আছে তা তথ্য উপাত্ত বা যুক্তির মাধ্যমে অপসারণ করা।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া তারেক জিয়া বিএনপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
মন্তব্য করুন
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
তীব্র গরম মির্জা আব্বাস বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
ড. আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনই দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি পরামর্শ দিয়ে আসছেন এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কখনও মুখ খুলেননি বিএনপির কেউই। তবে এবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি জানিয়েছেন বিএনপি থেকে বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়াকে বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দল ভাবছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে দলের এমন ভাবনার কথা জানান বিএনপির এই নেতা।
উপজেলা নির্বাচন থেকে কঠোর অবস্থান থেকে ইউটার্ন নিলো বিএনপি। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আপাতত যারা উপজেলা নির্বাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে সব কিছু নির্ভর করবে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। যারা পরাজিত হবে তাদের ওপর নেমে আসবে শাস্তির খড়গ। আর যারা বিজয়ী হবেন তাদের বিষয়টি উপেক্ষা করা হবে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে ফেঁসে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। তবে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেও নীতিমালার কারণে বেঁচে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।