নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩০ পিএম, ২৫ মার্চ, ২০১৯
এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগের হাত ধরেই। আওয়ামী লীগই এই অঞ্চলের জনগনের ভোটাধিকারের জন্য সবচেয়ে বেশি আন্দোলন করেছে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছে। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বেই তদানীন্তন পাকিস্তানে আন্দোলন হয়েছিল। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে উনসত্তরের গণআন্দোলন; এই দীর্ঘ আন্দোলনের পথ পরিক্রমার মূল বিষয় ছিল জনগনের স্বাধীকার এবং জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠা। সত্তরের নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে এদেশের জনগন তাদের মতামত প্রকাশ করেছিল। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পর দেশের মানুষ অনেক অধিকারের মত ভোটাধিকারও হারায়। ভোট হয়ে যায় একটা প্রহসন। জিয়াউর রহমানের হ্যা না ভোট বা উনসত্তরের নির্বাচন, সবই ছিল সাজানো ছঁকে বাধা এক প্রহসন। এসব নির্বাচনে জনগনের অধিকারের কোন প্রতিফলন ঘটেনি। সীমাহীন কারচুপি ও প্রশাসনের ইচ্ছেমতো বানানো ফলাফল জনগনের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই ১৯৮১ সালে জাতির পিতার বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফিরে এসে জনগনের ভোটের অধিকার পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন শুরু করেন। তিনি আন্দোলন শুরু করেন, আমার ভোট আমি দিবো। যাকে খুশি তাকে দিবো। ৮১ সাল থেকে স্বৈরাচারী বিরোধী আন্দোলনের মূল বক্তব্যই ছিল জনগনের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। গণতান্ত্রিক অধিকারকে উর্ধে তুলে ধরা। নব্বইয়ে স্বৈরাচারের পতনের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। জনগন দীর্ঘদিন পর স্বাধীন মতামত প্রকাশের সুযোগ পায়। জনগনের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা হয়। একানব্বই নির্বাচনে জামাতের হাত ধরে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। বিএনপির শাষনামলে মাগুড়া বা মিরপুরের উপনির্বাচন পরিণত হয় প্রহসনে। আবার ভোটের অধিকার লুন্ঠিত হয়। শুরু হয় নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের উত্তাল আন্দোলনের মুখে বিএনপির পতন ঘটে এবং ছিয়ানব্বইয়ে নতুন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগই প্রথম সরকার যারা নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ করে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা তত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ছেড়ে দেয় ২০০১ সালে। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয় এবং বিএনপি ক্ষমতায় আসে। বিএনপি ক্ষমতায় এসে যে কয়টা নির্বাচন করেছে, সবগুলো নির্বাচন ছিল প্রহসন এবং ভোটাধিকার হরণের নতুন নতুন কৌশলে ভরপুর। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে বিএনপি জামাত জোট ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে প্রধান বিচারপতি বয়স বাড়িয়ে সংবিধান সংশোধন করে, যেন তাদের পছন্দের বিচারপতি কে এম হাসান তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে পারেন। তারপরে শুরু হয় ভোটের অধিকারের জন্য নতুন করে আন্দোলন। এবার শুধু আমার ভোট আমি দিবো, যাকে খুশি তাকে দিবো এই দাবি নয়। সঙ্গে সঙ্গে আসে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের দাবি, ভূয়া ভোটার বাতিলের দাাবি, স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনেরও দাবি। এই প্রেক্ষাপটে আসে ওয়ান ইলেভেন। এই ওয়ান ওয়ান ইলেভেনের সরকার জনগনের অনেকগুলো দাবি পূরণ করে। যেমন স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রবর্তন করা হয়। ফলে দেড়কোটি ভুয়া ভোটার বাদ পড়ে। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তাকে স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে রুপ দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ তৃতীয়বারের ক্ষমতায় এসেছে দুই মাসের বেশি সময় হলো। এই সময়ে প্রশ্ন এসেছে, আওয়ামী লীগই কি ভোটের অধিকার হরণ করছে? ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা নিয়ে অনেক কথা আছে। সে কথা এখন বাদই দিলাম। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচন যেভাবে বা যে প্রক্রিয়ায় হচ্ছে তাতে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট। যার মধ্যে:
১. জনগন ভোট দেওয়ার অধিকার হারিয়ে ফেলেছে এবং জনগন মনে করছে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে কোন লাভ নেই।
২. অধিকাংশ উপজেলা নির্বাচনে কারচুপি, ব্যালট বাক্স ভরানো, প্রভাব বিস্তার ইত্যাদি দৃশ্যমান।
৩. নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও অদৃশ্যভাবে ভোটের বাক্স ভরে যাচ্ছে।
৪. দেখা যাচ্ছে প্রশসন নির্বাচনী ফলাফলের উপর হস্তক্ষেপ করছে।
এই চারটি কারণে মানুষের মধ্যে একটা বিশ্বাস জমে গেছে মানুষ যে ভোট দিবে। সেই ভোটের প্রতিফলন নির্বাচনের মাধ্যমে ঘটবে না। প্রশ্ন হচ্ছে এরজন্য আওয়ামী লীগ কতটা দায়ী? আওয়ামী লীগই জনগনের ভোটের অধিকার নষ্ট করলো নাকি ভোটের অধিকার হরণের অন্যকোন ষড়যন্ত্র পর্দার আড়ালে চলছে? ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন থেকেই যদি আমরা শুরু করি, সেখানে কখনোই মনে হয়নি বিএনপি জামাত জোট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য নির্বাচন করছে। বরং মনে হয়েছে যেকোন মূল্যে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং বিতর্কিত করাই তাদের মূল লক্ষ্য ছিল। তারা মনোনয়ন বাছাই নিয়ে নানা রকম নাটক করেছে। এমনভাবে মনোনয়ন দিয়েছে যে, প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি নিজেরাই একাধিক গ্রুপ উপগ্রুপ সৃষ্টি করে বিভক্তি তৈরী করেছে। তাদের প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা মূলক কোন কর্মকান্ডেই অংশগ্রহণ করেনি। জনগনের কাছে ভোট চাওয়া বা জনগনের কাছে কর্মসূচী নিয়ে যাওয়ার মত কোন লক্ষন বা উৎসাহ তাদের মধ্যে ছিল না। তাহলে প্রশ্ন জাগতেই পারে বিএনপি কি চেয়েছিল? বিএনপি কি চেয়েছিল এই নির্বাচনে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরী করতে যাতে জনগন ভোটের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে? এই ৩০শে ডিসেম্বরের পর বিএনপি জামাত উপজেলা নির্বাচন বর্জন করলো। একটা নির্বাচন যখন অংশগ্রহনমূলক হয় না। একটা নির্বাচনে যখন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি থাকে না তখন স্বাভাবিকভাবেই সেই নির্বাচনের উপর জনগন আস্থা হারিয়ে ফেলে। কাজেই উপজেলা নির্বাচনে যে ভোটারদের অনাগ্রহ এবং ভোটারদের যে অনীহা, এটার একটা বড় কারণ হলো নির্বাচনটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ হচ্ছে না। যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি নেই, সেই নির্বাচন নিয়ে জনগনের আগ্রহ কম থাকবে এটাই স্বাভাবিক। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বিএনপি এসে যখন ‘হ্যা না’ ভোট করেছিল, সেটা ছিল বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় কলঙ্ক। বাংলাদেশে ভোটাধিকার হরণের প্রথম প্রক্রিয়া। সেই ধারা আবার ফিরিয়ে আনার জন্য কি জামাত বিএনপি কৌশলে এটা করছে? সেটা যদি করেও, তারপরও আওয়ামী লীগ দায় এড়াতে পারে না। আওয়ামী লীগের একটা বিপুল জনগোষ্ঠীর সমর্থন রয়েছে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের ৪০ শতাংশ ভোটার রয়েছে। আওয়ামী লীগ কেন তার ভোটারদের নির্বাচনমুখী করতে পারছে না? ভোটারদের কেন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারছে না? সেই ব্যার্থতার দায় আওয়ামী লীগের নিতেই হবে। আওয়ামী লীগ যদি দেশে ভোটের অধিকার রক্ষা করতে চায় এবং জনগনের মতাধিকারের প্রয়োগ ভোটাধিকারের মাধ্যমে ফোটাতে চায় তাহলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি আরো বাড়াতে হবে। আওয়ামী লীগের যারা ভোটার কিংবা কর্মী সমর্থক, তাদেরকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা করার দরকার, সেটা করবে। সেটা যদি না করতে পারে পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ, তাহলে ভোটাধিকার হরণের দায় আওয়ামী লীগের উপরও এসে পড়বে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ওবায়দুল কাদের শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি তারেক জিয়া শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল উন্নয়ন দেখতে পায় না। তারা দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে। দেশের উন্নয়ন নিয়ে হীন মনোবৃত্তির পরিচয় দিচ্ছে তারা।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের যে উন্নতি ও উচ্চতা, এটা দেখে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ লজ্জিত হন। পূর্ব পাকিস্তানকে তাদের কাছে মনে হতো বোঝা। এখন সে বোঝাই উন্নয়নে এগিয়ে গেছে। সে উন্নয়ন দেখে তিনি লজ্জিত হন। বিএনপির শাহবাজ শরিফের বক্তব্য থেকে শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে।
বিশ্বে চলমান যুদ্ধ প্রসঙ্গে কাদের বলেন, সকল প্রকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ও এ যুদ্ধকে না বলার জন্য বিশ্বের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন-হামাস পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের নেত্রী যুদ্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান ও কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ।
বিএনপি আওয়ামী লীগ ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
প্রায় ৩ মাস পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের ৫ সদস্য বিশিষ্ট
আংশিক কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল
কবির রিজভী সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ওলামা দলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে আলহাজ্ব মাওলানা
মো. সেলিম রেজা এবং সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাওলানা কাজী আবুল হোসেন। কমিটির অন্যারা
হলেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব মাওলানা মো. আলমগীর হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব
মাওলানা ক্বারী গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মো. দেলোয়ার হোসেইন।
প্রসঙ্গ, গত ২৫ জানুয়ারি বিএনপির অনুমতি না নিয়েই ওলামা দলের সিনিয়র
যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মো. সেলিম রেজাকে কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব করাসহ
১৬ জনকে বিভিন্ন পদে রদবদল করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে মাওলানা মো. নেছারুল হককের নেতৃত্বাধীন
কমিটির বিরুদ্ধে। পরে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি ওলামা দলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা
করে বিএনপি।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৫ এপ্রিল মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হককে আহ্বায়ক
এবং মাওলানা মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারকে সদস্য সচিব করে ওলামা দলের ১৭১ সদস্যের আহ্বায়ক
কমিটি ঘোষণা করেছিল বিএনপি।
এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাজী মো. সেলিম রেজা বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখে দায়িত্ব দিয়েছেন আমি তা পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি অবিলম্বে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সহ গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।
মন্তব্য করুন
বিএনপি বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের
অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলের ভোটমুখী
নেতাদের ঠেকানো যাচ্ছে না। বহিষ্কারের মতো সাংগঠনিক সর্বোচ্চ শাস্তির পরও দলটির তৃণমূলে
বাড়ছে নেতাদের ভোটমুখী প্রবণতা। কেন্দ্রীয়ভাবে বর্জনের ঘোষণা দিলেও ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনেও দল এবং দল-সংশ্লিষ্ট অনেক নেতা ভোটে রয়েছেন।
অবশ্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের পেছনে পারিবারিক
ধারা, আঞ্চলিকতার হিসাবনিকাশ, দীর্ঘদিনের জনবিচ্ছিন্নতা কাটানোসহ নানা যুক্তির কথা
বলা হচ্ছে। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, ক্ষমতাসীনদের চাপ ও ফাঁদে পড়ে দলের কেউ
কেউ প্রার্থী হয়েছেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা নির্বাচন করবেন, তাদের বিরুদ্ধে
কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ, যে কোনো মূল্যে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা
হবে।
দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সিদ্ধান্ত
অমান্য করে জাতীয়সহ স্থানীয় সরকারের ভোট করায় গত কয়েক বছরে দল ও অঙ্গসংগঠনের পদধারী
চারশ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এর মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা শতাধিক
নেতা রয়েছেন। বাকিরা সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অংশ
নিয়ে বহিষ্কৃত হয়েছেন।
এ ছাড়া সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে
বিভিন্ন সময় দলটির আরও কিছু নেতাকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। পরে তাদের মধ্যে দলে ফিরতে
ভুল স্বীকার করে শতাধিক নেতা আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১৫-২০ জনের বহিষ্কারাদেশ
প্রত্যাহার হয়েছে। এ ছাড়া খুলনার নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের আরও ২৫
নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির।
জানা গেছে, দলের বহিষ্কৃত অন্য নেতাদের
জন্য সহসাই খুলছে না বিএনপির দরজা। বরং এ সংখ্যা আরও বাড়ছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য
করে পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় সম্প্রতি দলের আট নেতাকে বহিষ্কার
করেছে বিএনপি। আর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের ভোটে চেয়ারম্যান,
ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নেওয়া ৬৩ নেতাকে ইতোমধ্যে ৪৮ ঘণ্টা
সময় দিয়ে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে কিংবা কেউ জবাব না দিলে তাদের
দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে জানিয়েছে দলটি। প্রথম
ধাপের নির্বাচনে ১৫২টি উপজেলার মধ্যে ৩৪টিতে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির পদধারী নেতারা
মাঠে আছেন।
জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয়
ধাপে ভোট করতে বিএনপি ও দল-সংশ্লিষ্ট অন্তত ৩৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এই ধাপে
মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ২১ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩০ এপ্রিল।
নির্বাচন থেকে সরে আসতে কেন্দ্রীয় এবং জেলা নেতাদের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ
করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে সাংগঠনিক সর্বোচ্চ শাস্তির বার্তাও। প্রার্থিতা
প্রত্যাহার না করলে সাংগঠনিক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ৩০ এপ্রিলের পর প্রথমে তাদের শোকজ
নোটিশ দেওয়া হবে।
তৃতীয় ধাপের তপশিল অনুযায়ী, মনোনয়ন
ফরম জমার শেষ তারিখ ২ মে এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ মে। চতুর্থ ধাপের
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন। শেষ ধাপের এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৯
মে এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ১৯ মে পর্যন্ত।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে
থাকা বিএনপি নেতাদের বিষয়ে করণীয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা
রহমান বলেন, ‘এই নির্বাচন নিয়ে দলে তো আগেই সিদ্ধান্ত ছিল এবং সেটিই বহাল আছে। সুতরাং
সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ নির্বাচন করলে দল তার ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দল থেকে বিভিন্ন সময় বহিষ্কৃতদের ব্যাপারে আমরা এখনো
চিন্তা করিনি’।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন
বর্জন করলেও ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির স্থানীয় নেতারা
অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে
প্রথম দিকে অংশ নিলেও ভোটে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপির
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় সব স্থানীয় নির্বাচন
বর্জন করে আসছে বিএনপি। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় কুমিল্লার মনিরুল
হক সাক্কু, নারায়ণগঞ্জের তৈমূর আলম খন্দকারসহ অনেককে দলীয় পদ-পদবি থেকে বহিষ্কার করেছে
বিএনপি।
এদিকে দ্বাদশ সংসদের মতো উপজেলা নির্বাচনেও
ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে বিএনপি।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) নরসিংদী
সদর উপজেলা থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জেলা বিএনপি কার্যালয়ে জেলার কর্মিসভা শেষে
জনগণের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয়
সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ।
এসময় তিনি বলেন, জনগণকে আমরা বিগত জাতীয়
নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদের নির্বাচনও বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছি। এ লক্ষ্যে আমরা
নরসিংদীতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেছি। এই কার্যক্রম অব্যাহত
থাকবে। আমাদের প্রত্যাশা, ভোটাররা জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলার ভোটও বর্জন করবে।
বিএনপির কুমিল্লার (সাংগঠনিক) বিভাগীয়
সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, কুমিল্লা উত্তর জেলার মেঘনা উপজেলায় আজ
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) কর্মিসভা ও লিফলেট বিতরণের মধ্য দিয়ে জনগণকে ভোট বর্জনের আহ্বান
জানানো হবে।
এর মধ্য দিয়ে কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগে
জনগণকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করার কার্যক্রম শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে বিভাগের সব উপজেলায়
লিফলেট বিতরণ করা হবে।
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল উন্নয়ন দেখতে পায় না। তারা দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে। দেশের উন্নয়ন নিয়ে হীন মনোবৃত্তির পরিচয় দিচ্ছে তারা। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলের ভোটমুখী নেতাদের ঠেকানো যাচ্ছে না। বহিষ্কারের মতো সাংগঠনিক সর্বোচ্চ শাস্তির পরও দলটির তৃণমূলে বাড়ছে নেতাদের ভোটমুখী প্রবণতা। কেন্দ্রীয়ভাবে বর্জনের ঘোষণা দিলেও ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও দল এবং দল-সংশ্লিষ্ট অনেক নেতা ভোটে রয়েছেন।