নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৮ এপ্রিল, ২০১৯
দলের কাউন্সিল হওয়ার আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফেরই দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত ৩ মার্চ ভোররাতে ঢাকায় নিজ বাড়িতে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে দ্রুত এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীতে তিনটি বড় ব্লক ধরা পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শে ৪ মার্চ বিকালে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ২০ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ওবায়দুল কাদেরের বাইপাস সার্জারি সম্পন্ন হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সিঙ্গাপুরে মাউন্ড এলিজাবেথ হাসপাতালের কাছেই এক ভাড়া বাসায় উঠেছেন। আপাতত চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তার ফলোআপ চিকিৎসা চলছে বলে সিঙ্গাপুর থেকে প্রাপ্ত খবরে পাওয়া গেছে, আর এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে তার দেশে ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দেশে ফিরে এসেও তার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের সম্ভাবনা কম বলেই জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাকে আপাতত চাপ না দেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন বলেই আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ওবায়ুদল কাদের অসুস্থ হওয়ার পূর্বে একই সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র বলছে, মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পালন করা অনেক সহজ। সেখানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ না করেও তার কর্ম সুষ্ঠুভাবে পালন সম্ভব। অধস্তন কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশনা দিয়ে কাজগুলো পর্যবেক্ষণ করেই একটি মন্ত্রণালয় চালানো যায়। কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সেক্ষেত্রে অনেক বেশি। দলের সাধারণ সম্পাদককে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হয়, তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে হয় এবং সিদ্ধান্ত দিতে হয়। তাছাড়া সামনে যেহেতু দলের কাউন্সিল হবে, সেজন্য এই মুহূর্তে দলের সাধারণ সম্পাদককে দেশে ব্যাপক সফর করতে হবে, বিভিন্ন বিভিন্ন জেলা উপজেলায় কাউন্সিল অধিবেশনে তাকে অতিথি হিসেবে নেওয়ার আমন্ত্রণ আসবে। এসব বিবেচনা করেই আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড তাকে আপাতত দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে যে, দেশে ফিরে আসার পর তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। তিনি যদি ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন তাহলে দ্বিতীয় মেয়াদেও তাকে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। আর তার শারীরিক অবস্থা যদি ভালো না হয়, তার যদি শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়- সেক্ষেত্রে হয়ত তাকে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়তে হতে পারে। কারণ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করছেন যে এমন চাপ ওবায়দুল কাদেরের ওপর প্রয়োগ করা ঠিক হবে না যাতে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং দলের একটি অমূল্য ক্ষতি হয়। এর আগে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। সেই ঘটনাটিও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ব্যথিত করেছিল। সেই বাস্তবতায় তিনি চান যে ওবায়দুল কাদের সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠুক।
অবশ্য অন্য একটি সূত্র বলছে যে, ওবায়দুল কাদের সুস্থ হয়ে আসার পর যে সমস্ত যুগ্ম সম্পাদকের কোনো মন্ত্রিত্ব নেই তাঁদের মাধ্যমে দল চালালেন এবং তিনি শুধু সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখলেন এরকম একটি চিন্তাভাবনা আছে। সারাদেশে জেলা, উপজেলায় যে সম্মেলনগুলো সেগুলোতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকেরা ভূমিকা পালন করবে। তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগের কাজটিও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকেরা করবে। সাধারণ সম্পাদক দলের সভাপতির সঙ্গে কথা বলে নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিবে।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে যে, এই দুটি বিকল্প নিয়ে ভাবা হচ্ছে। তবে এটার মূল লক্ষ্য ওবায়দুল কাদেরকে সরিয়ে দেয়া বা ওবায়দুল কাদেরের ক্ষমতা হ্রাস নয়। এটার মূল লক্ষ্য হলো ওবায়দুল কাদের যেন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। সাধারণত এই ধরনের বাইপাস সার্জারীর পর স্বাভাবিক জীবনে আসতে অন্তত এক বছর সময় লাগে। সেই বিবেচনা থেকেই আওয়ামী লীগ একাধিক বিকল্প সন্ধান করছে। তবে আওয়ামী লীগের সব নেতাই মনে করছেন যে, ওবায়দুল কাদেরের বিকল্প একমাত্র ওবায়দুল কাদেরই। তিনি যেভাবে পরিশ্রম করতেন, যেভাবে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, সিদ্ধান্ত দিতেন এবং মন্ত্রনালয়ের কাজেও সময় দিতেন এরকম একজন কর্মঠ দলের নেতা পাওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার। ওবায়দুল কাদের যে অমূল্য সম্পদ, অসুস্থতার জন্য যেন আওয়ামী লীগ সেই সম্পদের সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য আওয়ামী লীগ এখন থেকেই সতর্ক। আওয়ামী লীগ সভাপতি সেজন্য চাইছেন যে, ওবায়দুল কাদের আগে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠুক। সুস্থ হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত তাঁকে পূর্ণ দায়িত্ব দিতে তিনি আগ্রহী নন।
বাংলা ইনসাইডার/এসআর/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া তারেক জিয়া বিএনপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
মন্তব্য করুন
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
তীব্র গরম মির্জা আব্বাস বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
ড. আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনই দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি পরামর্শ দিয়ে আসছেন এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কখনও মুখ খুলেননি বিএনপির কেউই। তবে এবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি জানিয়েছেন বিএনপি থেকে বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়াকে বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দল ভাবছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে দলের এমন ভাবনার কথা জানান বিএনপির এই নেতা।
উপজেলা নির্বাচন থেকে কঠোর অবস্থান থেকে ইউটার্ন নিলো বিএনপি। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আপাতত যারা উপজেলা নির্বাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে সব কিছু নির্ভর করবে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। যারা পরাজিত হবে তাদের ওপর নেমে আসবে শাস্তির খড়গ। আর যারা বিজয়ী হবেন তাদের বিষয়টি উপেক্ষা করা হবে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে ফেঁসে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। তবে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেও নীতিমালার কারণে বেঁচে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।