নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৪ মে, ২০১৯
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। গতকাল ছাত্রলীগের পুর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এই কমিটিতে সন্তুষ্ট নয় ছাত্রলীগের একাংশ। প্রতিবার যখনই ছাত্রলীগের কমিটি গঠিত হয়, তখনই কোন না কোন পক্ষ অসন্তুষ্ট হয়, বিক্ষোভ করে, ভাঙচুর হয়। এসময় একটি কথা উচ্চারিত হয় ‘গডফাদার’রা কমিটি করেছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বললেই ‘গডফাদার’ প্রসঙ্গটি আসে। কমিটি কাজ করবে গডফাদারদের ইশারায়। যদিও ছাত্রলীগের অবিসংবাদিত নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার প্রতি আস্থা সব ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর। কিন্তু প্রতিবার কমিটি হবার পর আলোচিত হয় কিছু নাম। বলা হয়, অমুকের কমিটি, তমুকের কমিটি।
১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা ভাঙাচোরা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। এ সময় ছাত্রলীগের কর্তৃত্ব নেন আমীর হোসেন আমু। বলা হতো ‘আমুর কমিটি’। এসময় ছাত্রলীগে আবদুর রাজ্জাক এবং তোফায়েল পন্থীরা কোনঠাসা হয়ে পড়ে। আমু দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের গডফাদার ছিলেন। কেন্দ্রীয় কমিটির একটি বড় অংশ তার অনুসারী থাকতো। এরপর আসেন ওবায়দুল কাদের। ছাত্রলীগের মান উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি ওকে কমিশন গঠন করেন। এসময় ছাত্রলীগের নেতা হতে হলে ওবায়দুল কাদেরের আস্থাভাজন হতে হতো। ওবায়দুল কাদেরের রাজত্বে ঢুকে পড়েন লিয়াকত শিকদার। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ছাড়ার পরেও ছাত্রলীগে লিয়াকত শিকদারের প্রভাব ছিল প্রচণ্ড। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে লিয়াকত শিকদারের অদৃশ্য হতে থাকতো বলে অনেকেই মনে করেন। আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রলীগে লিয়াকত শিকদারের প্রভাব খর্ব করার বিষয়টি একবার খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতির নজরে আসে। ছাত্রলীগের বিগত দুটি কমিটি লিয়াকত শিকদারমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওবায়দুল কাদের আবার ছাত্রলীগে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। এবার ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারন সম্পাদক নির্বাচন করেন খোদ অওয়ামী লীগ সভাপতি। কিন্তু পুর্ণাঙ্গ কমিটি চুড়ান্ত করার আগে ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হয়ে পারেন। এরপর ছাত্রলীগের কমিটির দায়িত্ব দেয়া হয় জাহাঙ্গীর কবির নানককে। জাহাঙ্গীর কবির নানক ছাত্রলীগের নতুন ‘গডফাদার’ হিসেবে আবির্ভূত হন। কিন্তু নানকের সঙ্গে লিয়াকত শিকদারের সম্পর্ক ভালো। একারণেই ছাত্রলীগের সদ্য কমিটিতেও লিয়াকত শিকদারের প্রভাব রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। এবার কমিটিতে জাহাঙ্গীর কবির নানকেরও পছন্দেরকিছু ছাত্রনেতা অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। তবে, ছাত্রলীগের কমিটিতে এবার সবচেয়ে বেশি স্থান পেয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতির পছন্দের ছাত্রলীগ কর্মীরা। আওয়ামী লীগের একজন নেতা মনে করেন ‘ ছাত্রলীগ যদি সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগ সভাপতির কতৃতে পরিচালিত হয়, যেকোনো ছাত্রলীগ বদনাম মুক্ত হতো। কিন্তু ছাত্রলীগকে প্ররোচিত করে কিছু গডফাদার। যারা ছাত্রলীগের নেতাদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। এদের কারনেই ছাত্রলীগের বদনাম হয়। এজন্যই ছাত্রলীগকে বদনাম মুক্ত করতে আগে গডফাদার মুক্ত করতে হবে।‘ কিন্তু এবারের ছাত্রলীগের পুর্ণাঙ্গ কমিটি কি গডফাদার মুক্ত হয়েছে?
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন