নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১৮ জুন, ২০১৯
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে আবার বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ৫ মাস পর অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বিতণ্ডার একপর্যায়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ঘোষণা করেছিলেন যে, একসপ্তাহের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন হবে।
আজ দুটি মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিন হয়েছে এবং বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেছেন যে আর একটি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন হলেই তিনি মুক্ত হতে পারবেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া যদি আদালতের রায়ে জামিন পান বা মুক্ত হন তাহলে সরকারের সেখানে কিছু করার নেই, সরকারের সেখানে বাধা দেওয়ারও কিছু নেই। কিন্তু আর কয়টি মামলায় জামিন পেলে বেগম খালেদা জিয়া কারামুক্ত হবেন তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার প্রধান কৌশুলী হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহাবুব হোসেন বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার কতটি মামলা রয়েছে এবং কতটি মামলায় তিনি গ্রেপ্তার রয়েছেন সেটা আমরা জানি না। কারণ সরকার বিভিন্ন স্থানে নাশকতা, অগ্নিসংযোগ এবং সন্ত্রাসের যে মামলাগুলো করেছে, সেখানে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের নাম দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন যে, ‘অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নাম দিলে এটা সুবিধা হবে যে সরকার তার ইচ্ছা অনুযায়ী যে কাউকে এ মামলা আসামি করতে পারে।’ তিনি ধারণা করেন যে বেগম খালেদা জিয়া যখন মুক্তির দ্বারপ্রান্তে আসবেন তখনই এরকম আরও কয়েকটি মামলায় তাকে শ্যেন অ্যারেস্ট দেখানো হবে। ফলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সুদূর পরাহত হবে। অন্য সময়ের মতো তিনি এখনো মনে করেন যে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা এবং আলাপ আলোচনা ব্যতিরেকে কখনোই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। এজন্যই তিনি বিএনপির একাধিক নেতাকে বলেছিলেন যে, বেগম জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে যেন সমঝোতা করে। সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করার ক্ষেত্রে মোটাদাগে কতগুলো কতগুলো নীতিগত ঐক্যমতের প্রেক্ষাপটও তৈরি হয়েছিল, কিন্তু বেগম জিয়াই শেষ পর্যন্ত রাজনীতি থেকে অবসর নিলেন। আবার কোনোরকম রাজনৈতিক বক্তব্য রাখবেন না অথবা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন- এর কোনোটিতে তিনি রাজি হননি। ফলে সেই আলোচনার মাধ্যমেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আপাতত তিরোহিত হয়েছে। তবে বেগম খালেদা জিয়ার আলোচনার মাধ্যমে মুক্তির পথ বন্ধ হলেও আদালতের মাধ্যমে মুক্তির পথ এখনো খোলা রয়েছে। কিন্তু বিএনপিপন্থী আইনজীবি ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদ বলতে রাজি হননি যে কিভাবে বেগম খালেদা জিয়া এক সপ্তাহের মধ্যে জামিন পাবেন। যদিও ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, খালেদা জিয়াকে এই দুটি মামলায় ৬ মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়ার পরে এখন একটি মামলা রয়েছে, সেই মামলায় জামিন পেলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আইনগত বাধা থাকবে না। তিনি মনে করেন, এরপর যদি অন্যকোন মামলায় শো অ্যারেস্ট দেখানো হয়, তাহলে সেটা হবে আদালত অবমাননার শামিল এবং এ ব্যাপারে সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনা রয়েছে, একজন আসামীকে একটি মামলায় জামিন দেওয়ার পরে তার বিরুদ্ধে পরবর্তীতে যদি অভিযোগ করে মামলা দেওয়া হয়, তাহলে সেটা হলো আদালতের সিদ্ধান্ত বাধিত করার অপচেষ্টা মাত্র। সে বিষয়ে তিনি আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলেও জানিয়েছেন। কিন্তু খন্দকার মাহবুব হোসেন মনে করেন যে, নতুন করে মামলা নয়। পুরনো এবং চলমান মামলাগুলোতেই বেগম খালেদা জিয়ার অনেকগুলো সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া দুটি মামলায় বেগম খালেদা জিয়া দণ্ডিত হয়েছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের জন্য তার মামলা হয়েছে। সে দুটি মামলাতেই এখন পর্যন্ত তার জামিন হয়নি। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক মুখরোচক বক্তব্য দিচ্ছেন যে সমস্ত বিএনপি নেতারা। তারা আসলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চান কিনা সেই বিষয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। দেখা যাচ্ছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এই মুক্তির প্রশ্নে বিএনপি বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তবে বিএনপির তৃনমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন যে, যে কোন মূল্যে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়া উচিত। মুক্তি পেলেই সবগুলো সমস্যারই সমাধান হবে এবং দলও টিকবে। এই মুক্তি নিয়ে বিভ্রান্তির মতো দলেও যে বিভ্রান্তি তা দলেকে কুড়ে কুড়ে খাবে। এখন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে আইনগত লড়াই চালাবে নাকি সমঝোতার পথে যাবে সেই সিদ্ধান্ত দিতে পারবে একমাত্র লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন