নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০১ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবার অনেক নতুন মুখ আসবে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। আগামী ২০ এবং ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই কাউন্সিল অধিবেশনে নবীন-প্রবীনের মেলবন্ধন তৈরি করা হবে বলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলেছেন। পাশাপাশি তাঁরা বলছে, দূর্নীতিবাজ, অনুপ্রবেশকারী এবং সুবিধাবাদীদেরকে এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হবেনা। সেই বিবেচনায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বেশকিছু নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় কমিটিতে কারা থাকবেন না থাকবেন সে নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি তাঁর ঘনিষ্ট এবং দলের অনেক নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবার বিভিন্ন শ্রেনী-পেশায় যারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত এবং বুদ্ধিবিত্তিক চর্চা করেন এবং দলের বাইরে তাদের একটা ইমেজ আছে এমন অনেককে আনার ব্যাপারে ভাবা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শিক্ষক, ক্রীড়াবিদ শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত স্বনামধন্য ব্যক্তিদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা চলছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিশেষ করে গত চার/পাঁচ বছরে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করেছেন তাদেরকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনার ব্যাপারটি সক্রিয়ভাবে ভাবা হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
২০১৮ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর নির্বাচনের মনোনয়নে আগ্রহী ছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাননি এদেরও কেউ কেউ কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারেন বলে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনার ক্ষেত্রে যাদের নাম আলোচিত হচ্ছে এদের মধ্যে হয়তো অনেকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেখা যেতে পারে। এদের মধ্যে রয়েছে
ড. এ আরাফাত
ড. আরাফাত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বিভিন্ন টক শো তে তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি জড়িত না হলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র আভাস দিয়েছে।
ডা. নুজহাত চৌধুরী
শহীদ বুদ্ধিজীবী এ এফ এম আবদুল আলীম চৌধুরীর কন্যা নুজহাত চৌধুরী সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না হলেও যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একজন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে তার আসার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
মাশরাফি বিন মুর্তজা
মাশরাফি বিন মুর্তজা গেলো নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে নড়াইল-২ আসন থেকে নির্বাচনে করে জয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগে তরুণদের আকর্ষিত করা এবং আওয়ামী লীগে তারুণ্যের প্রাণ সঞ্চারের জন্য মাশরাফি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
সুবর্ণা মুস্তাফা
সুবর্ণা মুস্তাফা আওয়ামী লীগের টিকেটে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও মূল ধারার রাজনীতির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা খুবই কম। কিন্তু আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক উইংকে শক্তিশালী করার জন্য সুবর্ণা মোস্তাফাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভাবা হচ্ছে।
রিয়াজ আহমেদ ও ফেরদৌস
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন রিয়াজ ও ফেরদৌস। সেই সূত্রে এখনো তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছেন। যার ফলে তারা দুজনও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারেন।
শমী কায়সার
শমী কায়সার বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু পাননি। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তিনিও এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসার জন্য চেষ্টা করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
রোকেয়া প্রাচী
রোকেয়া প্রাচী গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন প্রার্থনা করেছিলেন কিন্তু পাননি। তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে তিনি নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। এবারের কাউন্সিলে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এছাড়াও আরো অনেকেরই নাম আছে যারা ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে আসেননি কিন্তু স্ব স্ব পেশাগত ক্ষেত্রে তারা সফল হয়েছেন। এদের মধ্যে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা, আমলাও রয়েছেন। যারা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসার জন্য চেষ্টা করছেন। শেষ পর্যন্ত কারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকবেন তা বোঝা যাবে ২০ ও ২১ শে ডিসেম্বর কাউন্সিলের পর।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন