নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০০ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিএনপি এবং বেগম জিয়ার পরিবার এখন মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছে। বিএনপির নেতারা প্রকাশ্যেই স্বীকার করছেন যে তারা বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলের আবেদনের ব্যাপারে কোনোকিছুই জানেন না এবং প্যারোলে মুক্তির ব্যাপারে তাদের নীতিগত আপত্তি রয়েছে।
অন্যদিকে, প্যারোল প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই বেগম খালেদা জিয়ার ছোটভাই শামীম ইস্কান্দার গত বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য বরাবর একটি আবেদন করেন এবং সেখানে তাকে উন্নততর চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের আবেদন করেন।
বেগম জিয়ার পরিবারের সূত্রে বলা হয়েছে যে এটি প্যারোলের প্রথম ধাপ। এর প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি মেডিকেল বোর্ডকে দিয়ে বেগম জিয়ার পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাবেন এবং তার উন্নত চিকিৎসার জন্য যে তাকে বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন সে ব্যাপারে সুপারিশ করবেন।
তবে, এসএমএমইউ এর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে মেডিকেল বোর্ড ইতিমধ্যে রয়েছেই যারা নিয়মিত বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে। তবে বেগম জিয়ার পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে তার সুচিকিৎসা এখানে সম্ভব কিনা সে ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন মেডিকেল বোর্ড দুই-একদিনের মধ্যেই দেবে।
বেগম জিয়ার পরিবার বলছে যে, মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন যদি নেতিবাচক হয় তাহলে তারা প্যারোলের আবেদন করবেন। প্যারোলের আবেদন করার জন্য জিয়ার পরিবার এরই মধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, বেগম জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দারের সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকদফা বৈঠকও হয়েছে। যেহেতু বিএনপি নেতৃবৃন্দ এই সমস্ত উদ্যোগ এবং সমঝোতার তৎপরতা সম্বন্ধে কোনোকিছুই জানেন না, সে কারণেই তারা বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোল এবং বেগম জিয়ার পরিবার আসলে কি করছে সে ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলেন। এটা জানতে চেয়েই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আজ শামীম ইস্কান্দারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শামীম ইস্কান্দারকে তারা বলেন যে, ‘আপনারা দলকে অন্ধকারে রেখে কি করছেন, সেটা আমাদেরকে জানাতে হবে।’
এর উত্তরে শামীম ইস্কান্দার বলেন, ‘শাট আপ, ডোন্ট পোক ইওর ডার্টি নোজ!’(শাট আপ, তোমার নোংরা নাক এখানে গলাবে না)।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বেগম জিয়ার পরিবার তার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছে ইচ্ছা করেই। তাদের ধারণা যে বিএনপির মধ্যে একটি বড় অংশ আছে যারা খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় না, তারা খালেদা জিয়াকে জিম্মি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়। এ কারণেই খালেদার পরিবার বিএনপিকে অন্ধকারে রেখে সমঝোতার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন