নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ০২ অগাস্ট, ২০২০
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন রাজনৈতিক অন্ত:প্রাণ মানুষ। চারবারের প্রধানমন্ত্রী টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আছেন। কিন্তু রাজনীতির চেয়ে তিনি এখন প্রশাসনেই বেশি মনোযোগি। বিশেষ করে করোনা সঙ্কট, বন্যা মোকাবিলাসহ ইত্যাদি নানা কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি রাজনীতির ওপর যতটা না নির্ভরশীল, তার চেয়ে বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন প্রশাসনের ওপর। আর এ কারণেই রাজনৈতিক কর্মসূচীহীন এই দেশে ক্ষমতাসীন থেকেও আওয়ামী লীগ অপাংক্তেয় অবস্থায় রয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ত্রাণ বিতরণের মতো টুকটাক রাজনৈতিক কর্মসূচী করছে, যেগুলো আওয়ামী লীগের মতো বড় এবং বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠনের বিচারে অত্যন্ত স্বল্প। তাও সারাদেশ জুড়েও এই কার্যক্রম হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলো একরকম স্থবির হয়ে আছে। টুকটাক কিছু ছাড়া তেমন কোন কাজ নেই অঙ্গ সহযোগি সংগঠনগুলোর। অনেক অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও ঘোষণা করা হয়নি। বাংলাদেশের রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র মনে করা হয় ঢাকাকে। ঢাকা মহানগরে আওয়ামী লীগের দুটি শাখা রয়েছে- উত্তর এবং দক্ষিণ। দুটির সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক থাকলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখন পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়নি। এরকমভাবেই আওয়ামী লীগ ক্রমশ রাজনীতিহীন হয়ে পড়েছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি যেমন দলীয় কার্যক্রমের চেয়ে দেশের সঙ্কট মোকাবিলায় ব্যস্ত, তেমনি দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যস্ত কিছু ভিডিওবার্তা দেওয়া নিয়ে। এই ভিডিওবার্তা ছাড়া তার কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে না।
আওয়ামী লীগের কিছু এতিম রাজনৈতিক নেতা যারা গত নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি, মন্ত্রীত্বও পাননি- তারা আগলে রাখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু অ্যভিনিউতে দলীয় কার্যালয়। তাদের কিছু বক্তৃত্বা বিবৃতি এবং সীমিত আকারে সামাজিক দূরত্ব মেনে কর্মসূচী আর অপ্রকাশ্যে হা-হুতাশ হাহাকার আওয়ামী লীগের রাজনীতির একমাত্র উপজীব্য। আওয়ামী লীগের নেতারাই এখন স্বীকার করেন, সারাদেশ রাজনৈতিক সংগঠনহীন হয়ে পড়ছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে রাজনৈতিক আগ্রহের চেয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের আগ্রহই অনেক বেশি। এর মধ্যে রয়েছে অনুপ্রবেশকারীদের উৎপাত।
আওয়ামী লীগের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা বিএনপির। আওয়ামী লীগের তাও কেন্দ্রীয় কমিটি আছে। বৃক্ষরোপনের মতো টুকটাক কিছু নির্জীব কর্মসূচীর মধ্যে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছে। কিছু কিছু কর্মীরা দলকে জীবিত রাখার জন্য নানা রকম চেষ্টা কসরত করছেন, কিন্তু বিএনপিতে সেটাও নেই। সংগঠন হিসাবে বিএনপি আছে কিনা সেটা বোঝার জন্য শুধুমাত্র গণমাধ্যমের ওপর নির্ভর করতে হয়। বাংলাদেশে টেলিভিশন বা গণমাধ্যম যদি না থাকতো তাহলে বিএনপি নামের সংগঠনটির অস্তীত্বই থাকতো না। বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক সংগঠন যেটি এখন কে চালাচ্ছে সেটিও সাধারণ নেতারা জানেন না। লন্ডনে রয়েছেন তাদের পলাতক ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া চারমাস পর জেলথেকে বেরিয়ে নিজেকে ঘরবন্দি রেখেছেন। ঈদ এবং পালাপর্বন ছাড়া তিনি নেতাকর্মীদের দেখা সাক্ষাৎ দেন না। দেশ ও জাতি নিয়ে তাদের কোন ভাবনা নেই। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এখন মৌসুমী পাখিতে পরিণত হয়েছেন। মাঝে মাঝে টেলিভিশনের পর্দায় উঁকি মারা ছাড়া এখন তাদের কোন কর্মসূচী নেই। বিএনপি কোন রাজনৈতিক সংগঠন কিনা এনিয়ে খোদ বিএনপির নেতারাই প্রশ্ন করেন।
প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলগুলোর যখন বেহাল দেশা তখন অন্যান্য রাজনৈতিক দল নিয়ে তো বলাই বাহুল্য। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টি আছে কি নেই সেটি একটি বড় প্রশ্ন। জাতীয় পার্টির নতুন চেয়ারম্যান জিএম কাদের একজন সজ্জন ব্যক্তি। কিন্তু দলকে গতিশীল করা বা দলের সকলের কাছে হিরো হওয়ার মতো নেতা তিনি নন বলে দলের মধ্যে সকলে স্বীকার করেন। অন্যদিকে রওশন এরশাদ কি চান সেটা সকলেরই জানা।
বাংলাদেশের বাম রাজনৈতিক দলগুলো এই সময় নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পেলেও সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেনি। বরং তারাও নানা রকম খুচরা লোভে পাপিষ্ট হচ্ছেন। মানুষের কাছে তাদের কোন আদর্শবাদী চেহারা নেই।
আর স্বাধীনতা বিরোধী জামাত নানা ধাক্কায় এখন তারা নিজেদের আত্নগোপনের সংগঠনই বানিয়ে ফেলেছে। জামাতের গোপনে কিছু কার্যক্রম থাকলেও প্রকাশ্যে কিছু নেই।
এরকম একটা বাস্তবতায় বাংলাদেশ একটি রাজনীতিহীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। রাজনীতিবিদদের চেয়ে এখন বেশি সরব দেখা যাচ্ছে গার্মেন্টস মালিকসহ ব্যবসায়ী- আমলাদের। রাজনৈতিক সরকারে আমলা এবং ব্যবসায়ীদের একক দৌড়াত্ব। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোও তারা নিচ্ছেন।
মোদ্দাকথা হলো দেশে কোন রাজনীতি নেই। রাজনীতির অর্থ হলো, রাজনৈতিক আদর্শ বা রাজনৈতিক চিন্তা সরকারের কার্যক্রমে প্রতিফলিত হবে। এখন সরকারের কার্যক্রমে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। রাজনীতির অর্থ হলো বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো জনগনের আকাঙ্খাকে ধারণ করে বিকল্প কর্মসূচী দেবে। তেমন কিছু এখন দেখা যাচ্ছে না। রাজনীতির অর্থ হলো জনগনের মাঝ থেকে উঠে আসা নেতৃত্ব ভবিষ্যতের জন্য কর্মপন্থা দেবে এবং জনআকাঙ্খাগুলো সংসদসহ বিভিন্ন জায়গায় তুলে ধরবে, তেমন কিছু নেই। ফলে পঁচাত্তরের পর থেকে বাংলাদেশে যে বিরাজনীতিকরণের ষড়যন্ত্র চলছিলো, সেই ষড়যন্ত্রের নীরব বাস্তবায়ন বাংলাদেশে হয়েছে কিনা সেটি নিয়েই এখন আলোচনা হতে পারে। কারণ যখন একটি দেশ রাজনীতি শুন্য হয়ে পড়ে তখন জনগন হয়ে পড়ে অধিকারহীন। আমলা কিংবা ব্যবসায়ীরা তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে। সেরকম একটি রাজনীতিহীন রাষ্ট্রের প্রতিই এগুচ্ছে বাংলাদেশ।
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া তারেক জিয়া বিএনপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
মন্তব্য করুন
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
তীব্র গরম মির্জা আব্বাস বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
ড. আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনই দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি পরামর্শ দিয়ে আসছেন এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কখনও মুখ খুলেননি বিএনপির কেউই। তবে এবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি জানিয়েছেন বিএনপি থেকে বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়াকে বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দল ভাবছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে দলের এমন ভাবনার কথা জানান বিএনপির এই নেতা।
উপজেলা নির্বাচন থেকে কঠোর অবস্থান থেকে ইউটার্ন নিলো বিএনপি। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আপাতত যারা উপজেলা নির্বাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে সব কিছু নির্ভর করবে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। যারা পরাজিত হবে তাদের ওপর নেমে আসবে শাস্তির খড়গ। আর যারা বিজয়ী হবেন তাদের বিষয়টি উপেক্ষা করা হবে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে ফেঁসে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। তবে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেও নীতিমালার কারণে বেঁচে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।