নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৭ পিএম, ১০ অগাস্ট, ২০২০
আব্দুল মান্নান খান যখন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হলেন তখন আওয়ামী লীগের অনেকেই চমকে উঠেছিল। রাজনৈতিকভাবে যেমন তিনি কমিউনিস্ট পার্টি থেকে আসা, তেমনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও তাঁর কোন ক্যারিশমা নেই। তিনি মাহমুদুর রহমান মান্না কিংবা আখতারুজ্জামানের মতো জনপ্রিয় নেতাও নন। তারপরেও কেন তাঁকে প্রেসিডিয়াম সদস্যের অন্তর্ভুক্ত করা হলো তাই নিয়ে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছিল।
বিস্ময়ের শুরু অবশ্য এখানে নয়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আব্দুল মান্নান খানকে মনোনয়ন দেওয়া হয় ঢাকা-১ আসন থেকে। আওয়ামী লীগের জোয়ারের ওই নির্বাচন থেকে আব্দুল মান্নান খান বিজয়ী হন এবং তাঁকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়। মান্নানের উত্থান পর্ব শুরু হয় ২০০৭ সাল থেকে। যখন ওয়ান ইলেভেন শুরু হয়, সেসময় আব্দুল মান্নান খান ছিলেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এবং দলীয় কার্যালয়ে বসে প্রেস রিলিজ দেওয়া, চায়ের আড্ডায় মেতে ওঠাই ছিল তাঁর একমাত্র কাজ। তিনি কখনও নির্বাচন করবেন বা মন্ত্রী হবেন এমন ভাবনা তাঁর কোনসময়েই ছিলনা। বিশেষ করে তাঁর নির্বাচনী এলাকাটি ছিল সব হেভিওয়েটদের বিচরণক্ষেত্র। ব্যরিস্টার নাজমুল হুদা, প্রয়াত নুরুল ইসলাম বাবুল, সালমান এফ রহমান, নূর আলীর মতো ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এই আসনের জন্যে প্রার্থী। আওয়ামী লীগ যখন ২০০৬ সালের নির্বাচনে শেষ মুহুর্তে সরে দাঁড়িয়েছিল, সেই নির্বাচনেও নূর আলীকে এই আসনের জন্যে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই নির্বাচন হয়নি।
ওয়ান ইলেভেন শুরু হলে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ সংস্কারপন্থী হয়ে যায় এবং সেই সময় শেখ হাসিনার পক্ষে আওয়ামী লীগের যে সমস্ত নেতারা দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন, তাঁদের প্রথম সারিতে নাম ছিল প্রয়াত জিল্লুর রহমান, প্রয়াত আশরাফুল ইসলাম, বেগম মতিয়া চৌধুরী প্রমুখ। আর দপ্তর সম্পাদক হিসেবে আব্দুল মান্নান খান শেখ হাসিনার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁকে অনেকটা রুহুল কবির রিজভীর মতো মনে করা হতো। অনেক টকশোতেও আব্দুল মান্নান খান শেখ হাসিনার পক্ষে আপোসহীন ছিলেন এবং সেসময় নীতিহীনদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে কথা বলেছিলেন। এই সংকটকালীন সময়ে আদর্শ নিয়ে দাঁড়ানোর প্রতিদান হিসেবেই শেখ হাসিনা তাঁকে মূল্যায়ন করেছেন- এটাই আওয়ামী লীগের অন্দরমহলে জানে। আব্দুল মান্নান খানের নীতি এবং আদর্শের প্রতি অনুরাগ নতুন নয়। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে যখন নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তখন যারা প্রথমেই এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মিছিল করেছিল তাঁদের মধ্যে আব্দুল মান্নান খান ছিলেন অন্যতম। এক সময়ে আব্দুল মান্নান খান অনেকের মতোই কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতি ছেড়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। পড়াশুনার দিকে মনোযোগী এবং ভালো প্রেস রিলিজ লিখতে পারার কারণে শেখ হাসিনা তাঁকে দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেন। বিশ্বস্ত থাকার কারণে চিঠিপত্র লেখা সহ দাপ্তরিক কাজগুলো মনোযোগের সঙ্গেই তিনি করেন।
শেখ হাসিনার বিশ্বাস অর্জন করেই তিনি রাজনীতিতে টিকে ছিলেন। যদিও তিনি ক্যারিশম্যাটিক বক্তা নন, একজন ছাপোষা কেরানীর মতো ৯টা-৫টা দলীয় কার্যালয় আগলে রাখাই ছিল তাঁর কাজ। কিন্তু আওয়ামী লীগের কঠিন সময়ে তাঁর ভূমিকা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়। তবে প্রশংসিত হলেও আওয়ামী লীগার হিসেবে কখনো তিনি কর্মীদের কাছে প্রশংসিত হননি। বরং ছাত্র ইউনিয়নের মান্নান খান হিসেবেই তিনি পরিচিত। ২০১৪ এর নির্বাচনে তিনি হেরে যান প্রয়াত নুরুল ইসলামের স্ত্রী সালমা ইসলামের কাছে। গত নির্বাচনে তিনি আর মনোনয়ন পাননি এবং নির্বাচনী এলাকাতেও তাঁর আর পদচারণা নেই। একজন টেবিলের নেতা হিসেবে পরিচিতি, শেখ হাসিনার স্নেহসিক্ত- এটাই তাঁর জীবনের সবথেকে বড় প্রাপ্তি।
মন্তব্য করুন
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার
মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে ফোরামের সিদ্ধান্তের
বাইরে গিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র
সহ-সভাপতির পদ থেকে খোকনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ নিয়ে ফোরামে দেখা দেয় বিভক্তি।
উদ্ভূদ্ধ পরিস্থিতিতে সৃষ্ট জটিলতা আপাতত নিষ্পত্তি করেছে বিএনপি।
তবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি
পদে খোকন দায়িত্ব পালন করবেন কিনা সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দলটির
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাতে বিএনপি
চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের
উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের বৈঠক হয়। ওই বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নেতা বলেন, একটি
সুষ্ঠু সমাধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে, এ ইস্যুতে এখন থেকে গণমাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের
কথা বলতে বারণ করা হয়েছে।
সূত্রমতে, বৈঠকে ব্যারিস্টার মাহবুব
উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল (বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী
আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব) নিজ নিজ অবস্থান থেকে যুক্তি-পাল্টা যুক্তি তুলে ধরেন। বৈঠকের
শেষ পর্যায়ে মাহবুব উদ্দিন খোকন ও কায়সার কামাল একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ
প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ করেন। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে আপাতত কোন্দ্বল নিরসন হয়েছে
বলে মনে করছেন বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা। পরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বৈঠকের
সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
বৈঠকে উপস্থিত একজন আইনজীবী নেতা আরও বলেন, এখন মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক
ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না এবং তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে দায়িত্ব
পালন করবেন কি-না সে সিদ্ধান্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেবেন।
এদিন বিকাল ৫টা থেকে ৮টা পর্যন্ত বৈঠকে মহাসচিব ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু
মাহমুদ চৌধুরী, ড. আবদুল মঈন খান এবং আইনজীবীদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই
রায় চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আযম খান উপস্থিত ছিলেন।
মাহবুব উদ্দিন খোকন ইস্যুতে বিএনপির
উচ্চপর্যায়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। গত সোমবার দলের স্থায়ী কমিটিতেও দুই ধরনের ভাষ্য
পাওয়া গেছে। বিএনপির সিনিয়র নেতা ও সিনিয়র আইনজীবীদের একাংশ খোকনকে জাতীয়তাবাদী
আইনজীবী ফোরাম থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায় বিব্রত।
তারা মনে করেন, খোকনের মতো জনপ্রিয়
আইনজীবী নেতা এখন আর দলে নেই। তাকে অব্যাহতি দেওয়ার মাধ্যমে যাদের উৎসাহিত করা হয়েছে
তাদের আইন অঙ্গণে গ্রহণযোগ্যতা কম। আবার কারো কারো মত ছিল, দলের কেউ দলীয় স্বার্থের
ঊর্ধ্বে নয়। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনসহ যেকোনো বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত যারা
অমান্য করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খোকনের বিরুদ্ধে কেনো
ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের একটি অংশ খোকনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নিতে জনমত গঠনে আদালত পাড়ায় কাজ করেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে গত বুধবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান
তারেক রহমান আইনজীবী নেতাদের সঙ্গে ওয়ান টু কথা বলেন। আইনজীবী নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে
বৃহস্পতিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে মহাসচিব সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক
করেন। এ বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বিষয়টি এতোদিন ছিল জাতীয়তাবাদী
আইনজীবী ফোরামের, এখন তা বিএনপি টেকওভার করেছে। এই ইস্যুতে এখন সিদ্ধান্ত দেবেন দলের
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার
মাহবুব উদ্দিন বলেন, ‘ফোরামের তো গঠনতন্ত্রই নেই। সে (কায়সার কামাল) কীভাবে বহিষ্কার
করে? তার ক্ষমতা আছে বহিষ্কার করার? যে পর্যন্ত গঠনতন্ত্র না হবে, সে পর্যন্ত কাউকে
বহিষ্কার করা যাবে না। যত বহিষ্কার করা হয়েছে, তা আইনত কার্যকর নয়।’
এ সময় তিনি কায়সার কামালের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেও কথা বলেন। এর আগে গত শনিবার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে অব্যাহতি দেয় সংগঠনটি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার
সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকে তিনি দলের সার্বিক বিষয়ে দলীয় প্রধানকে অবগত করেছেন।
বৃহস্পতিবার
(২৫ এপ্রিল) রাতে চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাত ৮টা
২০ মিনিটে খালেদা জিয়ার বাসভবনে প্রবেশ করেন বিএনপির মহাসচিব। রাত সোয়া ৯টার দিকে
তিনি বের হয়ে আসেন।
বিএনপির
মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ
তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতেই মির্জা ফখরুল ফিরোজায় গিয়েছিলেন। তবে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া তারেক জিয়া বিএনপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
মন্তব্য করুন
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
তীব্র গরম মির্জা আব্বাস বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে ফোরামের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে খোকনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ নিয়ে ফোরামে দেখা দেয় বিভক্তি। উদ্ভূদ্ধ পরিস্থিতিতে সৃষ্ট জটিলতা আপাতত নিষ্পত্তি করেছে বিএনপি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনই দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি পরামর্শ দিয়ে আসছেন এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কখনও মুখ খুলেননি বিএনপির কেউই। তবে এবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি জানিয়েছেন বিএনপি থেকে বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়াকে বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দল ভাবছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে দলের এমন ভাবনার কথা জানান বিএনপির এই নেতা।