নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০১ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০
এখন বাংলাদেশে সুশীল সমাজ মানেই সরকারের কট্টর সমালোচক। সব কিছুতেই গেল, গেল সর্বনাশ হয়ে গেল বলাই যেন তাদের প্রধান কাজ। বিরাজনীতিকরণে তারা আসক্ত প্রায়। টেলিভিশনে আর সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়ে সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণই তাদের একমাত্র আরাধ্য যেন। কিন্তু এর মধ্যে ব্যতিক্রম কিছু মানুষ আছেন। যারা কাজ করেন নীরবে। নিজেকে পাদপ্রদীপে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। যেকোনো বিষয়ে হুলস্থল করাও তাদের ধাতে নেই। কিন্তু জাতির সংকটে ঠিকই তার দায়িত্ব পালন করেন নিষ্ঠার সঙ্গে, দক্ষতার সঙ্গে। তাদের একজন অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান। বর্তমানে ব্র্যাকের চেয়ারপারসন।
হোসেন জিল্লুর রহমান ১৯৯৬ সালে ‘পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) গঠন করেন। দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক নিরাপত্তা ও সুশাসন তার গবেষণার প্রিয় বিষয়। নীরবে নিভৃতে কাজ করা এই গবেষক প্রথম আলোচনায় আসেন ২০০৮ সালে ৯ জানুয়ারি। এই সময় বিতর্কিত হওয়া দুই উপদেষ্টা বিদায় নিলে, যাদের নতুন করে উপদেষ্টা করা হয় তাদের একজন হোসেন জিল্লুর রহমান। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, যখন জেনারেল মঈন ইউ আহমেদের ক্ষমতা দখলের অভিলাষ ফিকে হয়ে আসে, তখন তিনি গণতন্ত্রের উত্তরণের পথ খুঁজতে থাকেন। এজন্য তিনি এমন কাউকে খুঁজে নিয়েছিলেন যিনি ঠান্ডা মাথায় গণতন্ত্রের উত্তরণে সমঝোতার পথ তৈরি করবেন।
অনেকেই মনে করেন, নানা অভিযোগ সত্বেও ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেষ পর্যন্ত যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে সক্ষম হয়েছিল- তার বড় কৃতিত্ব হোসেন জিল্লুর রহমান। জানা যায়, হোসেন জিল্লুরকে বেছে নিয়েছিলেন ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ। তিনি চেয়েছিলেন, একজন ঠান্ডা মাথার বু্দ্ধিদীপ্ত মানুষ, যিনি দুটো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতা করতে সক্ষম।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সেটা না হলে শিগগিরই তত্ত্বাবধায়ক সকারের বিরুদ্ধেই বড় আন্দোলন শুরু হতো। এটা দেশকে আরেক সংকটে নিয়ে যেত। হোসেন জিল্লুর দায়িত্ব গ্রহণের পরপর একটি নির্বাচনী রোড ম্যাপ তৈরি করেন। এটি তিনি উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করেন। এরপর দুই নেত্রীর মুক্তি। রাজনৈতিক সংলাপ এবং নির্বাচনের ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম মূখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। ড. ফখরুদ্দিন এবং জেনারেল মঈন দুজনই তাকে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের পথ তৈরির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। প্রায় এক বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তাকে নিয়ে বিতর্ক হয়নি কখনো। খুব বেশি কথাও বলেননি তখন। এখনো খুব বেশি সরব নন তিনি। গণতন্ত্রের উত্তরণের তিনি যেমন নীরব যোদ্ধা, তেমনি এখন ‘সুশীল’দের জন্যও তিনি উদাহরণ। সারাক্ষণ ওয়াজ নসিহত না করেও কীভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করা যায় তার ভালো উদাহরণ সম্ভবত ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন