নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৫ এএম, ১৭ অক্টোবর, ২০২১
মন্দিরে হামলা, ভাঙচুরসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ঘটনায় সরকার রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। পাশাপাশি এ ধরণের ঘটনার বিষয়ে গোয়েন্দা ব্যর্থতার বিষয়টি নিয়েও দলের নেতারা ব্যক্তিগত এবং অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে আলোচনা করছেন বলে জানা গেছে।
নেতারা সহিংসতা উসকে দেওয়ার জন্য বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজতের হাত দেখছেন। একই সঙ্গে তাদের আশঙ্কা, নির্বাচন সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা আরো হতে পারে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এবারের পূজাকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক সংঘাত হতে পারে—এটা আগে থেকে আঁচ করতে না পারার বিষয়টি গোয়েন্দা ব্যর্থতা। এর দায় এড়াতে পারবে না সরকার। এখন ক্ষতি কমানোই (ড্যামেজ কন্ট্রোল) মূল লক্ষ্য। মন্দিরে হামলার ঘটনায় ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়াও ভাবাচ্ছে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের। ইতোমধ্যে নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের ঘটনার বিষয়ে ভূমিকা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিষয়টি আন্তর্জাতিক রূপ পেলে সরকার ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে বলেই মনে করছেন নেতারা।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পাঁচজন প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে দুটি কাজকে খুব জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
প্রথমত, আওয়ামী লীগ ও সরকারকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশে থাকতে হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে আশ্বস্ত করতে হবে। পাশাপাশি হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় এনে সরকারের সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার পেছনে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রচার করে সরকারের রাজনৈতিক ক্ষতি কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
সরকারের একজন মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একজন নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ভারত বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে এমন চেষ্টা আরো বেড়েছে, যা ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নোয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ নিজেদের রাজনৈতিক দুর্বলতার বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে। পূজা উপলক্ষে দলের নেতা-কর্মীদের আগে থেকেই তৎপর থাকার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া ছিল। দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের একাধিক নেতা বলছেন, যেখানে দলের সাংগঠনিক অবস্থা কিছুটা দুর্বল, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আছে, মূলত সেসব জায়গাতেই এবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর বাইরে গোয়েন্দা ব্যর্থতাও কাজ করেছে।
কুমিল্লার ঘটনার পরই সেখানে ছুটে গেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল। এর নেতৃত্বে আছেন চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ।
আবু সাঈদ আল মাহমুদ বলেন, সাম্প্রদায়িক হামলার পেছনে বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজতের হাত আছে। একেবারে পরিকল্পনা ও ছক করে এসব হামলা করা হয়েছে। এতে কিছু গোয়েন্দা ব্যর্থতাও থাকতে পারে।
তিনি বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে দায়ীদের যেকোনো মূল্যে শাস্তির আওতায় আনা হবে। সারা দেশে দলের নেতা-কর্মীদেরও পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাঠে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়ানোর অংশ হিসেবে আবু সাঈদ আল মাহমুদের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি চাঁদপুর ও কুমিল্লা হয়ে এখন নোয়াখালী আছে। এই দলে আছেন দলের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, অর্থ সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান। তাঁরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
১৪ দল সূত্র জানায়, বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলার ঘটনায় আজ রোববার (১৭ অক্টোবর) বেলা তিনটায় ১৪ দলের ভার্চ্যুয়াল বৈঠক ডাকা হয়েছে। এই বৈঠকে শরিকদের বক্তব্য শোনা এবং পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে। তবে শরিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, মন্দিরে হামলার বিষয়টি সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে তুলে ধরবেন তারা। এর সঙ্গে এসব ঘটনায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা এবং অবহেলা রয়েছে কি না, সে প্রশ্নও তোলা হবে বলে শরিক দলের দুজন নেতা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, শুধু অন্য দলের ওপর দোষ চাপালেই সরকারের দায় শেষ হয়ে যায় না।
১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, সুনামগঞ্জের ঝুমন দাশকে ধরে ছয় মাস কারাগারে রেখে দেওয়া হয়েছে। অথচ সাম্প্রদায়িক উসকানিদাতাদের ধরতে সরকার গড়িমসি করে। হেফাজতে ইসলামকে আশকারা দেওয়া হয়। সরকারের নীতিতে সমস্যা আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও ব্যর্থতা আছে। এসব বিষয়ে সরকারকে পরিষ্কার হতে হবে। নয়তো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ করা যাবে না বলেও মনে করেন তিনি।
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া তারেক জিয়া বিএনপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
মন্তব্য করুন
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
তীব্র গরম মির্জা আব্বাস বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
ড. আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনই দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি পরামর্শ দিয়ে আসছেন এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কখনও মুখ খুলেননি বিএনপির কেউই। তবে এবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি জানিয়েছেন বিএনপি থেকে বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়াকে বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দল ভাবছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে দলের এমন ভাবনার কথা জানান বিএনপির এই নেতা।
উপজেলা নির্বাচন থেকে কঠোর অবস্থান থেকে ইউটার্ন নিলো বিএনপি। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আপাতত যারা উপজেলা নির্বাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে সব কিছু নির্ভর করবে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। যারা পরাজিত হবে তাদের ওপর নেমে আসবে শাস্তির খড়গ। আর যারা বিজয়ী হবেন তাদের বিষয়টি উপেক্ষা করা হবে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে ফেঁসে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। তবে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেও নীতিমালার কারণে বেঁচে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।