সোশ্যাল থট

পরীমণি ইস্যু নিয়ে যা বললেন মাসরুর আরেফিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২:৫৩ পিএম, ১৪ অগাস্ট, ২০২১


Thumbnail

পরীমনিকে নিয়ে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টায় সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন।

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:

অনেকেই আমাকে ফোন করে বলছেন, আমি যেহেতু ঝামেলায় আছি, আমার কোনো সাহায্য লাগলে আমি তার বা তাদের সাহায্য নিতে পারি। মানুষের এই মহানুভবতায় আমি মুগ্ধ। কিন্তু ধন্যবাদ—আমি কোনো ঝামেলায় নেই। আমাকে ইনবক্সে ম্যাসেজ পাঠানো, ফোনে সহায়তার হাত বাড়ানো—হ্যাঁ, আমি আপনার মানবিক বোধটুকুর প্রশংসা করি; কিন্তু না, আপনি ভুল বুঝছেন যে আমি ঝামেলায় আছি। 
এটাকে অ্যারোগেন্স হিসেবে নেবেন না। এটাই বাস্তব। যে-জিনিসের সঙ্গে আমার সামান্যতম যোগাযোগ নেই, সেই জিনিস নিয়ে আমার নামে খবর বের হওয়া আমার কাছে একটা শূন্য, একটা লাড্ডু, একটা ফক্কা, একটা বিগ জিরো, একটা বিগ নাথিং।

অতএব আমি মন দিয়ে অফিস করছি, প্লেনে পড়তে পড়তে আসা এডওয়ার্ড সাঈদের ‘হিউম্যানিজম অ্যান্ড ডেমোক্রেটিক ক্রিটিসিজম’ বইটা শেষ করছি, জেট ল্যাগে কিছুটা ভুগছি, উপন্যাস ‘আড়িয়াল খাঁ’ নিয়ে বসব বসব করছি, আর বন্ধু কথাসাহিত্যিক মশিউল আলমের জন্য ফিওদর দস্তয়েভস্কিকে নিয়ে লেখাটার প্রথমদিকের পাতাগুলি লিখেও ছিঁড়ছি আর ছিঁড়ছি।

এরই মধ্যে আমার শেষ পোস্টটা নিয়ে বেশ কিছু জিনিস পড়লাম ফেসবুকে (এখন ওসব পড়া পুরো বন্ধ করেছি যদিও)। জিনিসগুলো ভাবালো। যেমন:

১. আমি কী করে পরীমনিকে চিনি না, বা ‘বোট ক্লাব’ কাণ্ডের আগে কী করে আমি তার নামও শুনিনি?—শুনুন, আমি ঢঙ করে কথা বা ন্যাকামি ভরা ভালো-ভালো-লক্ষ্মী-লক্ষ্মী কথা বলার ধারে কাছের কোনো ক্যারেক্টার না। আমি তার নাম শুনিনি, তো আমি তার নাম শুনিনি। ব্যস। আমরা শাবানা-ববিতা-কবরী ছাড়িয়ে শেষমেশ শমী কায়সার-বিপাশা হায়াত পর্যন্ত ফলো করে হাঁপিয়ে যাওয়া জেনারেশন। এভাবে বাংলা রূপালী পর্দার সঙ্গে আমরা বহুদিন মোটামুটি সংযোগবিহীন। মাঝে নন-কমার্শিয়াল ভাল বাংলা ছবি যে কটা হয়েছে, তার সবই দেখেছি। কিন্তু সেসবের মধ্যে পরীমনি অভিনীত কোনো ছবি পাইনি, তাই দেখিনি। আপনারা দেখেছেন, আপনাদের সে প্রিয় নায়িকা, আপনারা তাকে চেনেন—ভাল কথা। আমি দেখিনি, আমার চেনার সময় হয়নি, আমার চেনার মতো কোনো চলচ্চিত্রে তিনি আসেননি, তাই আমি চিনি না। কথা শেষ।

২. সোশ্যাল মিডিয়ার প্রশ্ন এটাও যে, পরীমনির মতো বড় নায়িকাকে যিনি চেনেন না, তিনি আবার কী করে ‘সাহিত্যিক‘ হন? মানে, তাহলে সমাজের পালসটা তিনি কী করে ধরতে পারেন?—দেখুন, সমাজ একটা বিরাট কড়াই। তাতে থানকুনি পাতা দিয়ে খলসে মাছের ঝোলের সঙ্গে ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্ব সম্পর্কিত আপনার বিশ্বাস, মসজিদ ও মন্দির সংক্রান্ত আপনার ভাবনা, বেগুনের কাঁটার পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া রিকশার স্পোক আর এই মুহূর্তে ডেন্টাল সার্জনের হাতে উঠে আসা আপনার দাঁত আর সেই হঠাৎ নেই-হয়ে-যাওয়া দাঁতের হু-হু করে ওঠা কান্না, সবটা, সবটা—মুদ্রাস্ফীতি-জিডিপি-মানইজ্জত-বার্থ কন্ট্রোল পিল-আর্মির ট্রাক-কোকিলের কুউউউইসহ সবটা—সেই কড়াইতে একসাথে রান্না হচ্ছে।

ওই বিশাল রান্নার কড়াইয়ে ফুটতে থাকা অতগুলো জিনিসের মধ্যে একটা মাত্র জিনিসের নাম ‘পরীমনি’। যাকে আপনি এ মুহূর্তে ‘দি পরীমনি ফেনোমেনন’-ও বলতে পারেন। মানে যার মধ্যে এই এখন আছে এক ব্যক্তি পরীমনির ওপর দিয়ে চলা সিস্টেমের গ্রাইন্ডিং মেশিনের গড়গড়গড়, যা এই এখন তাকে নিষ্ঠুরভাবে গুড়িয়ে-মাড়িয়ে-কেটে-চিড়ে-ছিঁড়ে দিচ্ছে। (এটাই হয়তো আপনার নৈতিকতার বিচারে ‘পরীমনি’ নামের এক চক্র বা বলয়ের লোভ ও লালসার যৌক্তিক পরিণতি।)

আবার ওই একই ‘পরীমনি’ ফেনোমেননের অন্যদিকে? অন্যদিকে আছে একগাদা জিভ-বের-করা, লোল-ফেলা, চকচকে বড় গাল ফুলিয়ে হাসতে থাকা কিছু লোক, যারা পরীমনিদের কাছে বেড়াতে গিয়ে কল রেকর্ডে ধরা, ভিডিওতে ধরা, এতে ধরা, তাতে ধরা।

তো, লেখক হিসেবে ওই কড়াইয়ের ‘পরীমনি’ নামের তরকারিটুকু চিনতে আমার এই নির্দিষ্ট ‘পরীমনি‘-কেই চেনা বাধ্যতামূলক না। ওই তরকারি মানবসভ্যতার প্রথম থেকেই কড়াইতে টগবগিয়ে ফুটতে থাকা এক তরকারি, স্বাদে যা চকলেটের খসখসে খোসার মতো, আবার ডালিম-ডালিমও (‘গিলগামেশ’-এ এক রাজা ডালিম খেতে খেতে একজন পা-খোঁড়া প্রজাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘প্রজা, তোমার পায়ের অবস্থা কী?’ প্রজার উত্তর, ‘ডালিম-ডালিম।’—মানে রাজা মশাই, আমার পা-টা ভুজভুজ করছে, মানে বোমার মতো আপনার মুখ-গাল-ঘাড়-বুকজুড়ে ওটা ফেটেফুটে পড়বে।)

সমাজের কড়াইয়ের নির্দিষ্ট ‘পরীমনি’ নামের ওই ডালিম-ডালিম স্বাদের তরকারি নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। সেটা এই অর্থে যে, ওই ডালিমের স্বাদ নেওয়াটা যার যার ব্যক্তিগত বিষয়, আমি তা সম্মান করি। আমি নৈতিকতার পণ্ডিত না, সুবিধাবাদী মানুষের সুবিধামতো বানানো ভাল-মন্দের কোনো পতাকাবাহকও আমি না।

এ ক্ষেত্রে কেবল এক জায়গায়ই সমস্যা আছে আমার, মানে যদি কথা ‘সত্যি’ হয়। সমস্যা এই যে, যারা ওই চক্রের হাতে পড়ে পরে ব্ল্যাকমেইলড্ হন, তারা যদি আবার রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম বা রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষজন হয়ে থাকেন, তাহলে সমূহ বিপদ। তাহলে বঞ্চিতের আরও বঞ্চিত হবার সম্ভাবনা। এর বাইরে আর কোনো বিপদ দেখি না—এর বাইরে ব্যক্তিস্বাধীনতার ওই ডালিমের সবটাই লাল, ওই তরকারির সবটাই তাজা স্বাদের।

৩. আমার নিজের গাড়ি নেই? এটা কেমন কথা? এ কেমন ন্যাকামি? সিটি ব্যাংক এমডির গাড়ি নেই?—ভাই ও বোনেরা, আমি মাইক্রোফোনে মুখ রেখে বলছি যে, আমার নিজের কোনো গাড়ি নেই। কথাটা আমাদের অনেক ব্যাংক এমডির জন্যই সত্য। ‘ব্যাংক এমডি’ শব্দ দুটো এদেশে হয়ে গেছে একটা গালি। এখন কোনো ব্যাংক এমডি যে আর্থিকভাবে সৎ মানুষ হতে পারেন, তা অবিশ্বাসযোগ্য এক বিষয়। কথা অবশ্য সেটা না। কথা হচ্ছে, ব্যাংকগুলো সাধারণত: একটা লেভেলের পর থেকে ফুলটাইম গাড়ি দেয় ড্রাইভার-তেল ইত্যাদিসহ। তাই গাড়ি কেনার আমার প্রয়োজন হয়নি। সে কারণেই বললাম, বেশ কজন এমডিরই নিজের গাড়ি নেই। নির্দিষ্ট করে সিটি ব্যাংক ডিএমডি হবার পর থেকে আপনাকে দেয় দুটো করে গাড়ি—একটা ডিএমডির নিজের চলার জন্য, একটা তার পরিবারের জন্য। এমডিরও তাই। অতএব আমার নিজের গাড়ি নেই। আর ভুলে যাবেন না আমি কথাটা কেন লিখেছিলাম? লিখেছিলাম এটাই বলতে যে, নিজের জন্য আজও একটা টয়োটা বা মারুতি কিনলাম না, আর আমি কিনা অন্য একজনকে পকেটের টাকা দিয়ে একবারে ৩ কোটি টাকার ‘মাসেরাতি’ কিনে দিলাম?

৪. এটা ওনার কোন্ ধরনের ন্যাকামি যে উনি বলছেন চাকরি জীবনের শেষে ব্যাংক থেকে ‘কার লোন’ নিয়ে উনি গাড়ি কিনবেন?—আপনি আমার এ কথায় বিশ্বাস করলেন কি করলেন না, তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। আমার অর্থনৈতিক অবস্থা আমার অবস্থা, আপনার না। মোটামুটি ভাল একটা গাড়ির দাম আমার জানা আছে। আমি নিজেই ব্যাংকার হিসেবে ‘কার লোন‘-এর ব্যবসা করি। অতএব যা বলেছি, জেনেই বলেছি। আমার বেতন ‘বড়’ হতে পারে, বাংলাদেশের বিচারে তা ‘বড়’-ও বটে। আবার খরচও তেমনই বড়, ইনকাম ট্যাক্সও তেমনই বড়, জীবনে নেওয়া লোনগুলির কিস্তি তেমনই বড়, সাধারণ ঘর থেকে উঠে আসার কারণে দায়িত্ববোধের অন্য জায়গার অন্য খরচও তেমনই বড়। ‘ব্যাংক এমডিরা সব চোর’—ঢালাওভাবে এ কথা যেমন আপনার কথা, আপনার মনের অসুখ; তেমন ‘ব্যাংক এমডিরা সব বড়লোক’—ঢালাওভাবে এ কথাও আপনার এক হিংসাশ্রয়ী দগদগে কল্পনা, এক রগরগে শ্রেণীঘৃণা (যা নিয়ে আমার কোনোই আপত্তি নেই, যেহেতু ওটা ন্যায্য ঘৃণা)।

৫. সবচেয়ে বেশি বিচারের শিকার আমি হলাম এর আগের এক ‘নারী কেলেঙ্কারী’-তে আমার নাম থাকার কারণে। অনেকেই ভাবলেন, বাহ্, এই লোকের নাম তো আগেও এক নারী সম্বন্ধে বাজারে এসেছিল, অতএব পরীমনিকে গাড়ি কিনে দেওয়ার বিষয়টা এই লোকের বেলায় সত্য। 
আপনারা যারা আগের খবর ফলো করেছিলেন (প্রায় তিন বছর আগের কথা), তাদের জন্য আমি কিছুই বললাম না, শুধু এই লেখার নিচে কমেন্ট বক্সে আমার পুরোনো এক লেখার লিঙ্ক দিয়ে দিলাম। পড়ে নেবেন।

সিটি ব্যাংকে চাকরি করে কেউ দেশের জাতীয় সংসদের মিথ্যা বিজনেস কার্ড নিয়ে ঘুরবে, ব্যাংকের পাশাপাশি নিজের নামে ট্রেড লাইসেন্স করে ৪-৫টা ব্যবসা চালাবে (যার একটা আবার স্পষ্ট ‘চাকরি বাণিজ্য’— যেখানে পোস্টারের নিচে ব্যাংকিং কোচিং সেন্টারের যোগাযোগের ঠিকানায় থাকবে আপনার নিজের ইমেইল ঠিকানা) ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি, আর আমি ব্যাংক এমডি হয়ে কোনো ব্যবস্থা নেব না? আমি ব্যবস্থা নিতে একটুও দেরি করিনি। আর সেই প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া মাত্র আমি হয়ে গেছি ‘যৌন নির্যাতনকারী’। বাহ্। আমার সঙ্গে ‘ঘটা’ পরীমনি কাণ্ডের মতোই সেটা আরেক মহাকাণ্ড—এক সুতো প্রমাণ কিংবা একটা কারো কোনো সামান্যতম সাক্ষ্য বা সামান্যতম সারকামস্টেনশিয়াল এভিডেন্স ইত্যাদি কিছুর টুকরোটাও সেখানে নেই। অতএব রাষ্ট্রের আদালতে মামলাটা আমরা তিনজন ভিকটিম সেবার জিতেছিলাম।

এখন আপনারা বলছেন, এই লোকটার সাথেই এটা হয় কেন?

কী হয় কেন? আপনি কী করে জানেন যে ওই ঘটনাটা আমাকে নিয়ে হয়েছিল বলেই একদল লোক এবার ঠিক করেনি যে, এই ব্যাটার মাথাটাই পরীমনির গাড়ির মধ্যে ঠেসে ঢুকিয়ে দে, তাহলে লোকে খাবে?

বুঝছেন হয় কেন? মানুষ এইসব ‘রিপিট’ ফর্মুলায় বিশ্বাস করে বলেই হয়। এটাই হিউম্যান সোসাইটি, এটাই দ্য গ্রেট-গ্র্যান্ড-টগবগিং অ্যাট দ্যা বয়েলিং অ্যান্ড বার্স্টিং পয়েন্ট—দি বিউটিফুল হিউম্যান কড়াই।

আর কথা না বাড়াই। যারা আমার গত পোস্টে সাহিত্যিকের অহংকার দেখেছেন, তাদেরকে বলি যে, আমি আমার বইটাকে ‘সেরা’ বলিনি, বলেছিলাম ‘অন্যতম সেরা’ বা ‘অন্যতম প্রধান’। কিন্তু সাহিত্যিকের অহংকার আমার আসলেই আছে। সমাজের কড়াইতে ধাই-ধাই করে আগুন লেগে যাওয়ার আশঙ্কায় আমি ওই অহংকার একটু কম দেখাই।

আর যারা গত পোস্টে ‘আগস্ট আবছায়া’ উপন্যাস প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড বিষয়টা নিয়ে আসার মধ্যে আমার চালাকি দেখেছেন, তাদেরকে বলি—আপনি বাসায় ঘুমিয়ে আছেন, হঠাৎ টের পেলেন কিছু দুর্বৃত্ত আপনার বাথরুমের পাইপ বেয়ে একটা মাসেরাতি গাড়ি দড়িতে বেঁধে টেনে তুলছে, এবার আপনার ওই ঘুম-ঘুম অবস্থায়ই তারা আপনাকে হাত-পা বেঁধে সেই মাসেরাতিতে ঢোকাচ্ছে ঠেলে-ঠুলে-ধাক্কা মেরে-গুঁতিয়ে; আহ্, এরকম একটা দিন হঠাৎ আসুক আপনার জীবনে, তখন আপনি অনেক কিছু বলবেন—হয় ভয় থেকে, না হয় আবেগ থেকে।

‘আগস্ট আবছায়া’ ও ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ উপন্যাসের প্রধান কথা এই যে, নির্বিচার নৃশংসতা কারও ওপরেই না চলুক—দেশ নির্মাতার ওপরেও না, কোনো কবি ও কার্টুনিস্টের ওপরেও না। পরীমনিকে নিয়ে যা চলছে তা একটা রীতিমত সার্কাস, যা কিনা এভাবে চলতে থাকলে আমরা শিগগির ভাল্লুকের ডাক শিখে ফেলতে যাচ্ছি নিশ্চিত। ওই ডাকেরই ভদ্রস্থ নাম—সহিংসতা। সহিংস হয়েন না। মায়া রাখুন মানুষের প্রতি। এক নিৎশের ‘ডাক’ শুনে হিটলার হিটলার হয়েছিলেন। পরীমনি কাণ্ডে যা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে সবার হাতে একটা করে জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা’ তুলে দিই, যাতে করে নিস্তব্ধ দুপুরে চালতে গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে চিলের ‘ডাক’ শোনার কল্পনা করে আপনি মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারেন।

ভালবাসা সবার জন্য, ব্যক্তিমানুষ পরীমনিসহ। ন্যায়বিচারই প্রাপ্য তার, আর প্রাপ্য—বিচারের আগেই ছিন্নভিন্ন না হয়ে যাওয়া। আইনের বিচারের আগেই কেউ যেন সমাজের বিচারের হাতে টুকরো না হয়ে যায়। কারণ এইটা ট্রাইবাল-নৃশংস-খুনি এক হায়েনা-গোত্রের, দাঁত ও জিভ বের করে বিকৃত নৃশংসতার প্রেমে পড়ে থাকা, ‘গ্রাম্য’ সমাজ।

পুনশ্চ: কাল সন্ধ্যায় সিটি ব্যাংক গুলশান থানায় জিডি করেছে, এখন বাকি আইনী কাজ চলছে। মিথ্যা দিয়ে এত লক্ষ মানুষের ভালবাসার প্রতিষ্ঠানকে আঘাত করে সেই আঘাতকে আবার প্রতিষ্ঠা করে রাখা যায় না। মিথ্যা মিথ্যাই।



মন্তব্য করুন


সোশ্যাল থট

'সাকিবের এমন সংকীর্ণ চিন্তা ভাবনা পরিবর্তন করা উচিৎ'

প্রকাশ: ০৭:১১ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail জেনিসিয়া বর্ণা ও মেহের নেগার

তরুণ ক্রিকেটার তানজিম হাসান সাকিবের নারীদের নিয়ে তার একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল হয় এবং এর পরই তীব্র সমালোচনার মুখে পরেন এই ক্রিকেটার। সাকিবের অসম্মাজনক পোস্টকে নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এছাড়া এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক নারী তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। 

এরই ধারাবাহিকতায় তার এই পোষ্ট নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সাথে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) কথা বলেছেন দুইজন কর্মজীবী নারী। তাদের মধ্যে একজন হলেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনের নিউজরুম এডিটর ও  নিউজ প্রেজেন্টার জেনিসিয়া বর্ণা। অন্য আরেকজন হলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক ব্যবস্থাপক মেহের নেগার।

সাকিবের ফেইজবুক পোষ্ট প্রসঙ্গে প্রথমেই বর্ণা বলেন, আমার মনে হয় সবার দেখার ধরণ এবং পয়েন্ট অব ভিউ এক নয়। সাকিব যা বলেছেন সম্পূর্ণই তার নিজের পয়েন্ট অব ভিউ থেকে বলেছেন। তার সাথে আমার বা আপনার মতামত মিলবে এর কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে তিনি যা বলছেন তার সাথে আমি একমত নই। 

আমি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ছি পাশাপাশি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে নিউজরুম এডিটর ও প্রেজেন্টার হিসেবে কাজ করছি। ক্লাস, অফিস সামলে আমি বাসা বেশ ভালো ভাবে সামলে নিতে পারি। আমার দৈন্দিন জীবন ব্যাবস্থা নিয়ে আমি এবং আমার পরিবার বেশ খুশি। 

তিনি বলেন, এসময়ে এসে নারী পুরুষ সকলে যেখানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নত বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে সেখানে আমার পয়েন্ট অব ভিউ থেকে সাকিবের এমন মন্তব্য অহেতুক। একজন নারী যখন শিক্ষিত এবং  সাবলম্বী হবেন তখন তিনি তার সন্তান কেও সঠিক শিক্ষা দিতে পারবেন, নিজের এবং পরিবারের খরচ বহন করতে পারবেন। কখনোই একজন চাকরিজীবী স্ত্রীদের জন্য সমাজ পরিবার ধ্বংশ হয় না। বরং একজন কর্মজীবী মহিলার জন্য সমাজ এবং পরিবারের বন্ধন শক্ত হয় ভালো হয় । আর একজন চাকরিজীবী স্ত্রী সবসময় চারদিক মানে পরিবার, সমাজ,চাকরি সবকিছুই সমানভাবে সামলানোর ক্ষমতা রাখেন। একজন কর্মজীবি নারী সবসময় অনেক গোছানো হয়।

এবার আসি পর্দার কথায় পর্দার সাথে চাকরীর কোনো সম্পর্ক নেই। চাকরী করলেযে কেউ পর্দা করতে পারবে না এমন কোনো বাধ্যকতা নেই। আমি মনে করি পর্দা করার ইচ্ছে থাকলে যে কোনো অবস্থাতেই করা সম্ভব। অনেক নারীই আছেন যারা চাকরী করেন না, কই তারাতো পর্দা করেনা তাহলে তাদের উদ্দেশ্য সাকিব কি বলবে?  

পাশাপাশি হিসাবরক্ষক ব্যবস্থাপক মেহের নেগার বলেন, যদিও এটা তানজিম হাসান সাকিবের ব্যক্তিগত অভিমত। কিন্তু তিনি পুরো নারী সমাজকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলেছেন। তাছাড়া উনি বাংলাদশেকে রিপেজেন্ট করছেন তাই উনার এমন মন্তব্য একদমই গ্রহণযোগ্য নয়। উনাকে অনেকেই অনুসরণ করেন তাই তার এমন মন্তব্য সমাজের কর্মজীবী নারীদের উপর নেগেটিভ ইমপেক্ট পরতে পারে।

মেহের বলেন, একজন শিক্ষিত এবং কর্মজীবী নারী অন্য সাধারণ নারীদের চেয়ে অনেক বেশি স্মাট এবং রেসপন্সিবিল হন বলে আমি মনে করি। কর্মজীবী নারীরা যেমন সাহসিকতার সাথে অফিসের কাজ সামলান ঠিক তেমনি সংসারও সামলান। চাকরীজীবী স্ত্রীরা হাজবেন্ডের সাথে সংসারে কন্ট্রিবিউট করে হাজবেন্ডের  চাপ কমিয়ে আনেন।

এমনকি সন্তানদের সঠিকভাবে বেড়ে উঠা এবং তাদের সুন্দর চরিত্র গঠনে অনেক বড় ভূমিকা রাখেন একজন শিক্ষিত ও কর্মজীবী নারী। তাই স্বামী এবং সন্তানদের হক নষ্ট হওয়ার কথা একদম অযৌক্তিক। আর পর্দা করা একজনের ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার । কেউ পর্দা করতে চাইলে সে যেকোনো অবস্থাতেই পর্দা করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, পর্দা চাকরি করার উপর নির্ভর করে না। সামগ্রিকভাবে একজন শিক্ষত এবং কর্মজীবী নারী দেশের অর্থ সামাজিক উন্নয়ন থেকে শুরু করে পারিবারিক বন্ধন শক্ত করে সর্বক্ষেত্রে সমান ভূমিকা রাখেন। তানজিম হাসান সাকিবের এমন সংকীর্ণ চিন্তা ভাবনা  পরিবর্তন করা উচিৎ।

উল্লেখ্য, নারীদের নিয়ে তানজিম সাকিবের অসম্মাজনক পোস্টটিতে তিনি বলেন, ‘স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে তার কমনীয়তা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পর্দা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়।



সাকিব   কর্মজীবী নারী  


মন্তব্য করুন


সোশ্যাল থট

‘নিঃসন্দেহে একজন কর্মজীবী মহিলা একজন দায়িত্বশীল স্ত্রী’

প্রকাশ: ০৭:৩৭ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail লেখক ও কলামিস্ট সোনিয়া তাসনিম ও নারী উদ্যোক্তা তাহমিনা আক্তার পিংকি

সম্প্রতি তরুণ ক্রিকেটার তানজিম হাসান সাকিবের নারীদের নিয়ে তার একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয় এবং এর পরই তীব্র সমালোচনার মুখে পরেন এই ক্রিকেটার। 

নারীদের নিয়ে তার এমন অসম্মাজনক পোস্টটিতে তিনি বলেন, ‘স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে তার কমনীয়তা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পর্দা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়।

তানজিম হাসান সাকিবের এমন অসম্মাজনক পোস্টকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক নারী তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। 

তার এই পোষ্ট নিয়ে বাংলাইসাডারের সাথে বুধবার ( ২০ সেপ্টেম্বর) কথা বলেছেন দুইজন নারী। তাদের মধ্যে একজন হলেন লেখক ও কলামিস্ট সোনিয়া তাসনিম এবং অন্য আরেকজন হলেন চারুকল্প'পের প্রতিষ্ঠাতা একজন নারী উদ্যোক্তা তাহমিনা আক্তার পিংকি।

লেখক ও কলামিস্ট সোনিয়া তাসনিম সাকিবের পোস্ট প্রসঙ্গে বলেন, বস্তুত ইসলাম প্রচার এবং প্রসারের সমৃদ্ধকাল থেকেই মুসলিম নারীরা ধর্মীয় বিধান মেনেই বিভিন্ন অর্থনৈতিক কাজে অংশ নিয়ে এসেছে। এমনকি প্রাক শিল্পায়িত সমাজেও মুসলিম নারীরা নানা অর্থনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। 

সুতরাং ধর্মীয় দিক থেকে নারীদের আসলে শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে অংশ নেবার বিষয়ে কোন বাধা নেই একথা নিশ্চিত। আমি মনে করি, একজন নারী যখন কর্মক্ষেত্র অবতীর্ণ হয় তখন তার মাঝে দায়িত্ব বোধ এবং চেতনার এক সুষম মিশ্রণ হয়। নিঃসন্দেহে একজন কর্মজীবী মহিলা একজন দায়িত্বশীল স্ত্রী, মা, বোন হিসেবেও নিজেকে শতভাগ প্রমাণ করতে সক্ষম।

তিনি বলেন, আমার নিজের মা একজন শিক্ষিকা ছিলেন। মায়ের কাছ থেকে সবসময় আমরা সহনশীলতা আর দায়িত্ববোধ, নৈতিকতার শিক্ষা পেয়েছি। নিজেরাও পড়াশোনা করেছি ভবিষ্যতে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য। আলহামদুলিল্লাহ। তেমনটা করছিও। এমনকি আমার মেয়ে দুটোকেও লেখা পড়া শিখাচ্ছি যেন পরবর্তী জীবনে তারা স্বাবলম্বী হতে পারে। আর এটাই একটা প্রগতিশীল সমাজের বাস্তব চিত্র। আদৌ আমরা অবশ্যই প্রগতীশীল হব এবং সেটা অবশ্যই ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি সম্মান রেখেই। 

ক্রিকেটার তানজিম তানিমের বক্তব্য সম্পর্কে বলতে গেলে বলব, ওনার এই মতামত সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। স্বাধীন দেশে মত প্রকাশের অধিকার যেহেতু সবার আছে, সেহেতু নিজের বক্তব্য উনি রাখতেই পারেন। সেই হিসেবে এটাকে তার নিজস্ব ভাবনা বলেই মনে করছি। তবে হ্যাঁ, দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলকেই মন্তব্য প্রদানের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া জরুরী।

এদিকে নারী উদ্যোক্তা তাহমিনা আক্তার পিংকি বলেন, একজন পুরুষ যদি চায় তার সন্তান ভবিষ্যতে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বা মেজিট্রট হবে নিজের একটি ভালো জায়গা তৈরি করবে, একজন ভালো মানুষ হবে তাহলে অবশ্যই তার স্ত্রীকে শিক্ষিত হতে হবে। আর একজন শিক্ষিত নারীর অবশ্যই চাকরি করেতে চাইবে এটা একটা নারীর অধিকারই বলা যায়। 

তিনি বলেন, একটা নারী যদি কর্মজীবি হয় তাহলে স্বামীর হক আদায় হয় না ,সংসারে শান্তি থাকে না এই যে কথাটা বলেছেন ক্রিকেটার তানজিম শাকিব, এই কথাটার সাথে আমি একমত হতে পারলাম না। কারণ আমাদের দেশের বাহিরের কথা যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে দেখা যায় বিশ্বের সকল দেশেই স্বামী-স্ত্রী দুজনে চাকরি করছে। তবে তারা যদি চাকরি করে সংসারে শান্তি রাখতে পারে, স্বামী-স্ত্রীর সর্ম্পক ভালো রাখতে পারে, পরিবারে সকল দায়িত্ব একজন স্ত্রী সঠিকভাবে পালন করতে পারে, তাহলে আমাদের দেশের নারীরা কেন পারবে না। আমি মনে করি যে নারী ঘর সামলাতে পারে, সে নারী  চাকরিও সামলাতে পারবে।  

এখন আসি পর্দা করার কথায়, আসলে চাকরি - বিজনেস  করেও পর্দা মেনে চলা যায়। আবার অনেকে হচ্ছে চাকরি করেনা, শুধু গৃহিনী তারা কিন্তু পর্দা মেনে চলে না। তো পর্দা করারটা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত ব্যাপার, সেটা চাকরি করা না করার সাথে সর্ম্পক নেই।


কর্মজীবী মহিলা   দায়িত্বশীল স্ত্রী   তানজিম হাসান সাকিব  


মন্তব্য করুন


সোশ্যাল থট

‘যে নারী চাকরি সামলায়, সে ঘরও সামলাতে জানে’

প্রকাশ: ০৯:০৯ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail ফাতেমা ইসলাম অংকন ও আফরোজা আদিবা

তরুণ ক্রিকেটার তানজিম হাসান সাকিব এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে দারুণ বোলিং করে সবার নজরে আসেন এবং ব্যাপক প্রশংসিত হন। কিন্তু এর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নারীদের নিয়ে তার একটি পোস্ট ভাইরাল হয় এবং এর পরই তীব্র সমালোচনার মুখে পরেন এই ক্রিকেটার। 

নারীদের নিয়ে তার এমন অসম্মাজনক পোস্টটিতে তিনি বলেন, ‘স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে তার কমনীয়তা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পর্দা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়।

তানজিম হাসান সাকিবের এমন অসম্মাজনক পোস্টকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক নারী তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। 

তার এই পোষ্ট নিয়ে বাংলাইসাডারের সাথে আজ মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কথা বলেছেন প্রাইভেট কোম্পানির দুইজন কর্মজীবী নারী। তাদের মধ্যে একজন হলেন ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার রিসার্চ ডিপার্টমেন্টের ফাতেমা ইসলাম অংকন এবং অন্য আরেকজন হলেন আমেরিকান ভিত্তিক নিউজ চ্যানেল টিবিএন টোয়েন্টিফোরের নিউজ প্রেজেন্টার আফরোজা আদিবা।

প্রথমে ফাতেমা ইসলাম অংকন সাকিবে এই পোষ্ট নিয়ে বাংলাইনসাইডারকে বলেন, অবশ্যই শিক্ষিত ও কর্মজীবী মা একজন ভালা সন্তান গড়তে যথেষ্ট ভূমিকা রাখেন বলে আমি মনে করি। কারণ আমার মা একজন শিক্ষিকা ছিলেন, তিনি নিজেও পড়াশোনা করেছেন এবং আমাদের ভাই-বোনদেরকেও পড়াশোনা করিয়েছেন। একইসাথে আমাদের প্রতি প্রত্যকটি দ্বায়িত্ব তিনি সঠিক ভাবে পালন করেছেন। কেন আমরাতো আমাদের মায়ের থেকে কখন অবহেলিত হয়নি, আদর স্নেহ যত্নে আমার মা'তো আমাদের কখনো কমতি রাখেননি। তিনিতো একজন চাকরিজীবী স্ত্রী'ই ছিলেন।

তিনি বলেন, আমি নিজেও এখন চাকরি করছি, ফলে পরিবারে কন্ট্রিবিউট করতে পারি সে ক্ষেত্রে আমার পরিবারও খুবই উপকৃত হচ্ছে। আমি বলবো একটি মেয়ে চাকরি করার জন্য কখনো পারিবার ধ্বংস হয় না বরং আরও স্টং হয়। আমি মনে করি চাকরির জন্য একজন স্ত্রী, একজন মা, একজন নারীর 'দায়িত্ববোধ আরও বাড়ে। আমি তানজিম হাসান সাকিবে এই কথার সাথে একমত হতে পারলাম না এবং বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরে এমন কারো থেকে এ ধরণের মন্তব্য মোটেও আসা করা যায় না। 

এদিকে তরুণ এই ক্রিকেটারের পোষ্ট ক্ষিপ্ত হয়ে টিবিএন টোয়েন্টিফোরের নিউজ প্রেজেন্টার আফরোজা আদিবা বলেন, ‘আমার মনে হয় সে এটা সম্পূর্ণ না ভেবেই বলেছেন। চাকরি করলে কখনোই স্বামীর হক নষ্ট হয় না, চাকরি করেও বিভিন্ন ভাবেই স্বামীর হক আদায় করা যায়। যে নারী চাকরি সামলায়, সে ঘরও সামলাতে জানে। তানজিম হাসান সাকিবের এই কথায় কোনো যুক্তি এবং ভিত্তি নেই।‘

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে হাজার হাজার মেয়ে আছে যারা চাকরি করেও ঘর সংসার সবকিছুই সমানতালে সামলায়। এছাড়া যে পর্দায় থাকতে চায় সে পর্দায় থেকেও চাকরি করতে পারে। আর যে পর্দায় থাকতে চায় না সে চাকরি না করেও পর্দা করেনা। আর চাকরিজীবী স্ত্রীদের জন্য সমাজ পরিবার দুটোই উন্নত হচ্ছে। একজন তারকা একজন তারকা হয়ে স্ত্রীদের নিয়ে এই ধরনের পোষ্ট তিনি করতে পারেনা।‘

তানজিম সাকিবের পোস্ট নিয়ে নেটিজেনরা এখন আলোচনা-সমালোচনায় ব্যস্ত। অনেকে তরুণ এই ক্রিকেটারকে দল থেকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে অনেকে তার পক্ষেও মতামত দিয়েছে।


তানজিম হাসান সাকিব   নারী   চাকরি   স্ত্রী চাকরি  


মন্তব্য করুন


সোশ্যাল থট

যতীন সরকার বলেছেন, ‘নাস্তিকতা মুরতাবাদ!’

প্রকাশ: ০৩:৪৭ পিএম, ২০ অগাস্ট, ২০২৩


Thumbnail যতীন সরকার বলেছেন, ‘নাস্তিকতা মুরতাবাদ!’

সম্প্রতি প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকাকে একটি ভিডিও ইন্টারভিউ দিয়েছেন অধ্যাপক যতীন সরকার। সেই ভিডিও ইন্টারভিউয়ের প্রতিক্রিয়ায় নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন তার ‘সুষুপ্ত পাঠক’ নামক ফেসবুক পেইজে অধ্যাপন যতীন সরকারের ইন্টারভিউয়ে বলা বক্তব্য নিয়ে লিখেছেন নিজের মন্তব্য। অধ্যাপক যতীন সরকারকে নিয়ে তসলিমা নাসরিনের লেখাটি হুবহু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। 

‘সুষুপ্ত পাঠক’ -পেইজে তসলিমা নাসরিনের লেখা: 

লেখক অধ্যাপক মার্কসবাদী যতীন সরকার ‘প্রতিদিনের বাংলাদেশ’ পত্রিকায় ভিডিও ইন্টারভিউতে বলেছেন, নাস্তিকতা মুরতাবাদ!... ইসলামের জন্ম না হলে পৃথিবী এক হাজার বছর পিছিয়ে থাকতো...

যতীন সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি করা প্রগতিশীল মানুষদের সংখ্যা অনেক। আমার মধ্যে কোন ভক্তি শ্রদ্ধা নেই। ফলে যত বড় মানুষ হোন তাকে সমালোচনা করতে আমার দ্বিধা হয় না। ব্লগার কিলিংয়ের সময় ইস্টিশন ব্লগে যতীন সরকারের একটি ইন্টারভিউ বের হয়েছিলো, সেখানেও তিনি ‘নাস্তিকতার আস্ফলন’ বলে ব্লগারদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছিলেন। তখন তাকে ‘বুড়ো মানুষ’ বলে অনেকে এড়িয়ে যেতে বলেছিলেন। যতীন সরকার পাকিস্তান শাসনের বিরুদ্ধে বলা ও মার্কিসবাদ প্রচার ছাড়া তাদের চিন্তা চেতনা এই সমাজে একজন মানুষকেও ভাবতে সাহায্য করেনি। যিনি মনে করেন ইসলামের জন্ম হয়েছিলো বলে পৃথিবী এক হাজার বছর এগিয়ে গেছে, নাস্তিকতা বর্জনীয়- তিনি কট্টর মৌলবাদীদের কাছে কতখানি সন্মান পাবেন ভেবে দেখুন। এখন হুমুয়ূন আজাদকে রেখে কি তাকে কেউ কোপাতে আসবে? তসলিমা নাসরিন দেশ ছাড়বে না তো কি যতীন সরকার দেশ ছাড়বে? ব্লগাররা মরবে নাকি যতীন সরকার মরবে?

'প্রতিদিনের বাংলাদেশ' পত্রিকা ইসলামের প্রগতীশীল ভূমিকা নিয়ে তাকে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, ইসলাম নিয়ে তিনি অনেক পড়েছেন।... যদিও তিনি এক জায়গায় স্বীকার করেছেন তিনি ধর্মকে জেনেছেন মার্কসবাদ পড়ে! তিনি যে ইসলাম পড়েননি সেটা স্পষ্ট। ইসলাম জানতে হলে মাদ্রাসায় হায়ার ক্লাশে যেভাবে পড়ানো হয় সেভাবে জানতে হয়। যতীন খুড়ো সেভাবে পড়েননি তাতে কোন সন্দেহ নেই। যাই হোক, তিনি বলছেন খ্রিস্টান ধর্মের ক্যাথলিকরা গ্রীক জ্ঞান-বিজ্ঞানকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করেছে। আর মুসলমানরা সেই গ্রীক জ্ঞানবিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এটা পুরোপুরি মিথ্যাচার ছিলো যতীন খুড়োর! কেন? বাগদাদের ‘মুতাজিলাদের’ ঠিক একইভাবে ইসলামের মোল্লাতন্ত্র হত্যা করেছে। দেশান্তরিন করেছে। কারাগারে আমৃত্যু বন্দি করে রেখেছে তখনকার বিজ্ঞানী দার্শনিকদের। কেন? কারণ গ্রীক জ্ঞানবিজ্ঞানের সঙ্গে ইসলামের সাংঘর্ষিকতা দেখতে পেয়েছে ইমাম গাজ্জালির মত আলেমরা। ইবনে সিনা, আল বেরুণীরা কাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতেন? যতীন খুড়ো সেটা বেমালুম ভুলে গেলেন নাকি গোপন করলেন?

নাস্তিকতা নিয়ে তার মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিলেট থেকে ‘যুক্তি’ নামের একটা পত্রিকা বের হতো। এক লোক তার কাছে লেখা চাইলে তিনি ‘নাস্তিকতা মুরতাবাদ’ লেখাটা দেন। সম্পাদক লেখার শিরোনামটা বদলের অনুরোধ করলে তিনি অনড় থাকেন... বলে হা হা হা করে হাসেন যতীন সরকার। কেন, উনি কি জানেন না সেই সম্পাদকটি অনন্ত বিজয় দাস? যাকে কুপিয়ে খুন করেছে খুড়ো যাদের জন্ম না হলে পৃথিবী এক হাজার বছর পিছিয়ে যেতো বলে দাবী করেছেন! পত্রিকার নাম যুক্তি মনে আছে কিন্তু অনন্ত বিজয় দাসের নাম মনে নেই? অনন্ত বিজয় দাস এদেশের বুদ্ধির মুক্তির জন্য প্রাণ দিয়েছেন। মার্কসবাদী যতীন খুড়োদের কাছে তিনি চক্ষুশূল হবেনই। তাই অবাক হইনি। আমার রাগ বা বিরক্তি আসলে বিজয়দের উপরই! বেঁচে থাকতে তিনি এই মার্কসবাদী যতীন সরকারদের মনে করতেন চিন্তা ভাবনায় সমগোত্র! অভিজিত রায়ও তাই। 'মুসলিম লীগ নাস্তিকদের' সঙ্গে গলায় গলায় মিলতেন। অভিজিত মারা যাবার পর তার ব্লগের মুসলিম লীগ নাস্তিকরা তাদের আসল চেহারা দেখিয়ে দিয়েছে। আমার চাইতে সেটা কে আর বেশি জানে?

যতীন সরকার কোন মুক্তচিন্তার লেখক নন। তিনি এদেশে চিরদিন নিরাপদে লেখালেখি করে গেছেন। তার সময়ে তিনি সন্তুষ্ঠ ছিলেন। তার লেখায় একটি কিশোর কিশোরীও তাদের পঁচাগলা চিন্তা বিশ্বাস ধারণা থেকে বের হবার কোন পথ পাবে না। তিনি একজন সাধারণ লেখক। তাকে নিয়ে আমার আর কোন ভাবনা নেই।


যতীন সরকার   নাস্তিকতা   মুরতাবাদ   তসলিমা নাসরিন  


মন্তব্য করুন


সোশ্যাল থট

আওয়ামী লীগ দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে : সজীব ওয়াজেদ জয়

প্রকাশ: ০৯:০০ এএম, ১৯ জুলাই, ২০২৩


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী ও উগ্রপন্থীদের সহিংস থাবা মোকাবিলা করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা লেখেন তিনি।

সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, ‌‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনার পর বাংলাদেশ আরও অনেক বছর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশে পাকিস্তানি ধাচের স্বৈরাচার শুরু হয়।

মোশতাক, জিয়া ও এরশাদ তাদের দুঃশাসনকে বৈধতা দিতে আইয়ুব-ইয়াহিয়ার পদ্ধতি অবলম্বন করে দেশের গণতন্ত্রকে বিভ্রান্ত করেছেন।’

স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াতে ইসলামীকে একজন রাষ্ট্রপ্রধানের সমর্থনে দেশে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন জয়। 

যত দিন যাচ্ছে, বাংলাদেশের জনগণ গোলামী করার আকাঙ্খা থেকে দেশকে শুদ্ধ করেছে।’



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন