নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫৮ পিএম, ২৬ অক্টোবর, ২০২১
রেডিও, টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকায় জোর প্রচার, খালেদা জিয়া বিদেশে চলে যাচ্ছেন। এক-এগারোর জামানা তখন। তিনি তখন ঢাকা সেনানিবাসে শহীদ মইনুল রোডে শহীদ জিয়াউর রহমানের স্মৃতিমাখা বাড়িটিতে কার্যত গৃহবন্দী। বহির্জগতের সংগে প্রায় সব রকমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে।খুব প্রভাবশালী একজন স্বজন এক সন্ধ্যায় কম্পিউটারে কম্পোজ করা একটা বিবৃতি পাঠালেন আমার কাছে বিশ্বস্ত লোক মারফত। সেই সাথে হাতে লেখা একটা চিরকুট। ওই বিবৃতিটি যেন আমার কাছে রেখে দিই। ম্যাডাম দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাবার পর আমি যেন সই করে তাঁর নামে এটি মিডিয়ায় পাঠাবার ব্যবস্থা করি।
আমার মাথার ভেতরে তখন ঘূর্ণিঝড় বইছে। ম্যাডামের সরাসরি নির্দেশ ছাড়া এ কাজ আমি করতে পারি না। কিন্তু তাঁকে ফোনে জিজ্ঞেস করা আর মাইক্রোফোনে ঘোষণা করে দেয়ার মধ্যে তো কোনো তফাত নেই। সিভিলিয়ানদের কারো হাতে তখন কোনো ক্ষমতা নেই। আমার খুব ভালো জানাশোনা এমন তিনজন মেজর জেনারেলকে পরপর ফোন করলাম। তিন জনই খুব গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ছিলেন তখন। প্রথম জন খুব গম্ভীর হয়ে আমার কথা শুনলেন। তারপর বললেন, "দেখি যদি আমি কিছু করতে পারি তবে জানাবো।" দ্বিতীয় জন পরিহাস তরল কণ্ঠে বললেন, "জ্বী ভাই এক্স পিএম-এর সঙ্গে আপনার দেখা করার ব্যবস্থা অবশ্যই করে দিতে পারবো। তবে এই দেখা করার পর আপনার নিজের নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা দেয়া কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।" তৃতীয় জন বললেন, "দেখুন, আপনার একজন ওয়েল উইশার হিসেবে আমি অনুরোধ করছি উনার সঙ্গে এখন ভুলেও দেখা করার চেষ্টা করবেন না। বিপদে পড়ে যাবেন।"
তবুও ঝুঁকি নিয়েই গিয়েছিলাম। আড়াই ঘণ্টা গেটে বসিয়ে রাখলো। বহু দেন-দরবার হলো প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাদের সাথে। বললাম, উনার অধীনে কাজ করেছি। জীবনে আর কোনো দিন দেখা হবে কিনা জানি না। উনি তো চলেই যাচ্ছেন। একটু দেখা করে বিদায় জানাবার সুযোগ পাবো না?
অবশেষে দেখা করে কয়েক মিনিটের মধ্যে ফেরার শর্তে মিললো অনুমতি সন্ধ্যা পেরিয়ে যাবার পর।
খবর পেয়ে ম্যাডাম ড্রইং রুমে এসে প্রথমে আমাকে ভর্ৎসনা করেছিলেন। "আপনি কেন এসেছেন? কী-করে এলেন? বিপদে পড়ে যাবেন তো। ঠিক করেননি। জলদি চলে যান।" ম্যাডামের সামনে বসেই সেদিন উনার এক আত্মীয়ের সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়েছিল। বলেছিলাম, "বেগম জিয়ার পরিচয় কেবল তিনি কার কী আত্মীয় সেটা নয়। তিনি কোটি কোটি মানুষের নেত্রী। তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার উৎস। তিনি জাতির সম্পদ। তাঁর ওপর অগণিত মানুষের আস্থা। তাদের আবেগ-অনুভূতির বিপরীতে ম্যাডামের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার কারুর নেই। তিনি স্বজন বা নেতা যাই-ই হোন।"
ম্যাডাম সেদিন দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে জানিয়ে দিয়েছিলেন, "কোথাও যাবো না আমি। এ দেশেই থাকবো। তাতে যা-হবার হবে।" তার পর কতো ইতিহাসই তো হয়ে গেলো। দেড় দশক পেরিয়ে গেছে। অকুতোভয়চিত্ত ম্যাডামের সেই মনোবল ও সেই দৃঢ়তা এখনো রোগকাতরতা সত্বেও অটুট আছে বলেই বিশ্বাস করি। তবে আমার নিজের সেই সাহস ও অধিকার এখন অতীতের অন্তর্গত।
ম্যাডামের ব্যাপারে উনার অসংখ্য অনুসারীর মতন অন্ধকারে ও দূরে থেকে আমি আজ বেদনার্ত কণ্ঠে আবারও সেই বাক্যটি উচ্চারণ করতে চাই, বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু এখনো অগণিত নেতা-কর্মীসহ কোটি কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার উৎস। কাজেই উনার যে-কোনো ব্যাপার লুকিয়ে চুরিয়ে, গোপন করে, কুক্ষিগত করে রাখার চিন্তা ছাড়ুন। সবাই না জানলেও বেমালুম বুঝতে পাচ্ছে, তিনি ভালো নেই। তাঁর দেহ থেকে `ম্যালিগন্যান্ট` বলে সন্দেহভাজন লাম্প অপারেশন করে অপসারণ করা হয়েছে। এটা খুবই গুরুতর ব্যাপার। এই সার্জারির সিদ্ধান্ত হুট করে একদিনে নেয়া হয়নি। কিন্তু তা গোপন রাখা হয়েছিল। অপারেশনের পরেও সবকিছু স্বাভাবিক ও খুব হালকা করে দেখানো হচ্ছে। এর পেছনে কী যুক্তি আমার মাথায় আসে না।
যারা সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক তাদের প্রতি আমার সবিনয় নিবেদন পর্দার অন্তরালে রেখে উনাকে বিস্মৃতি ও অকার্যকারিতার দিকে ঠেলে দেবেন না দয়া করে। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা অসংখ্য মানুষের উদ্বেগের বিষয়। তাই স্বচ্ছতার সঙ্গে সবকিছু রাখুন পাদপ্রদীপের আলোয়। কেবল নিজেরা ইতিহাসের দায় না নিয়ে।
ম্যাডামের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের দিয়ে নিয়মিত বুলেটিন প্রচারের ব্যবস্থা রাখুন। বর্তমান পরিস্থিতিতে বেদনার্ত হওয়া ও দোয়া করা ছাড়া আমার তেমন কিছু করার নেই। সেই সাথে সকলের কাছে মিনতি করি উনার জন্য অন্তরের সকল আকুতি ঢেলে প্রার্থনা করার।
লেখক: বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক প্রেস সচিব।
মন্তব্য করুন
যে জীবনটি আমি যাপন করছি,
সে জীবনটি আমার দ্বিতীয় জীবন।
আমার প্রথম যে জীবন ছিল
সেটির মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু এমনিতে হয়নি। মৃত্যুকে ডেকে আনা হয়েছে।
পরিকল্পনায় ছিল একটি লোক
আর তার দুই সহকর্মী।
তিনটে মাত্র লোক, জিহাদিরা এতকাল
ধরে যা পারেনি, তা
পেরেছে। জিহাদিরা যদি আমাকে হত্যা
করতো, তাহলে আমার এতটা দুঃখ
হতো না। কারণ দীর্ঘকাল
থেকেই জানি তারাই আমার
আততায়ী। দুঃখ বেশি হচ্ছে
কারণ হত্যাকারীরা জিহাদি নয়। কী কারণ
তাদের ছিল তবে আমাকে
হত্যা করার? এর মধ্যে বড়
দু’টো কারণ আপাতত
যা মনে হচ্ছে তা
হলো ম্যাল প্র্যাকটিস, মার্কেটিং ও মানি।
অনেকে
বলছে হত্যাকারীর বিরুদ্ধে মামলা করতে। আমার মতো নিরীহ,
নির্বোধ কী করে বড়
বড় শক্তিমান মানুষের বিরুদ্ধে আদালত অবধি যাবে! সেই
ক্ষমতা তো আমার নেই।
শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কোনও
শক্তিও আমার নেই। এই
দ্বিতীয় জীবনটি সম্পূর্ণই অন্যরকম। আমার প্রথম জীবনের
মতো দুরন্ত, দুর্বিনীত নয়। এই দ্বিতীয়
জীবনটি অনেকটা রিহ্যাবের পঁচানব্বই বছর বয়সী জরাগ্রস্ত
নারীদের মতো। এই জীবনটি
আমার জন্য নয়। কিন্তু
এই জীবনটিই এখন আমার জন্য
বরাদ্দ করেছে আমার হত্যাকারীরা। যতই
প্রাণপণে আমি মনের শক্তি
অর্জন করতে চাইছি দু'বেলা করে, ততই
ব্যর্থ হচ্ছি।
আমার
কী হয়েছিল? আমার শরীরের ওপর
দিয়ে কি কোনও ট্রাক
বা ট্রেন চলে গিয়েছিল? হাড়গোড় গুঁড়ো
হয়ে গিয়েছিল? না। আমার শরীরের
কোনও হাড় কোথাও বাজেভাবে
ভেঙেছিল? না। ডিসলোকেশান
হয়েছিল? না। ডিসপ্লেসড হয়েছিল?
না। আমি কি হাঁটতে
পারছিলাম? আমি অন্তত কাউকে
ধরে মেঝে থেকে বিছানা
অবধি হেঁটে
এসেছিলাম। আমি
কি বসতে পারছিলাম? আমি
বসতে পারছিলাম। আমার কি হিপ
জয়েন্ট ফুলে উঠেছিল? না।
জয়েন্টে ব্যথা ছিল? না। আমার
কি কোনও জয়েন্ট ডিজিজ
ছিল? না। কী ছিল
আমার তবে? শুরুতে হাঁটুতে
ব্যথা ছিল, পরে সে
ব্যথাও ছিল না। অকারণ
উদ্বেগ ছাড়া কিছুই ছিল
না আমার। উদ্বেগটি আমার ভেতরে তৈরি
হয়নি। সিরিঞ্জে ভরে ভরে ইঞ্জেক্ট
করা হয়েছে। আর আমার উদ্বেগই
ছিল ম্যাল প্র্যাকটিসের জন্য চমৎকার পুঁজি।
ডাক্তার হিসেবে কী করা উচিত
ছিল তাদের? উচিত ছিল আমাকে
রেস্টে থাকতে বলা কিছুদিন। এক
সপ্তাহ, দু'সপ্তাহ, তিন
সপ্তাহ। অথবা তারও চেয়ে
কিছু বেশি। তারা কি ট্রিটমেন্টের
কোনও গাইডলাইন ফলো করেছে? করেনি।
তারা ডাক্তারের কাজ নয়, করেছে
কসাইয়ের কাজ।
আমার
প্রথম জীবনটি আমার কাছ থেকে
কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই দ্বিতীয় জীবনটির
দিকে তাকালে আমার শ্বাসকষ্ট হয়,
বড় অসহায় বোধ করি। দ্বিতীয়
জীবনটি আমার প্রাপ্য ছিল
না। আমার প্রথম জীবনটির
নাম ছিল জীবন, আমার
দ্বিতীয় জীবনটির নাম ‘মৃত্যু’।
আমি বেশ কিছুদিন হলো
মৃত্যু যাপন করছি। আমাকে
হয়তো আরও বহুদিন মৃত্যুযাপন
করতে হবে।
(ফেসবুক
থেকে সংগৃহীত)
মন্তব্য করুন
সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হঠাৎ কিছুটা ‘অস্বাভাবিক’ পোস্ট করছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। ‘আমার মৃত্যু হয়েছে’ ও ‘দেহ হাসপাতালে
দান করেছি’ প্রসঙ্গ নিয়ে দুটি পোস্ট করে ভক্তদের মনে কৌতূহল জাগানোর পর এবার হাসপাতালের
বিছানায় শুয়ে থাকার একটি ছবি পোস্ট করেছেন তিনি।
রোববার (১৫ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে এ ছবিটি পোস্ট করেন তসলিমা নাসরিন। তবে পোস্টে কোনো ক্যাপশন লেখেননি তসলিমা নাসরিন। ফলে ডালপালা ছড়াচ্ছে, তসলিমা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কি না?
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা ছবিতে দেখা যাচ্ছে- তার দুই পাশে পাঁচজন দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের মধ্যে একজন নারী। বাকি চারজন পুরুষ। তবে তারা কারা সে বিষয়েও তসলিমা কিছু লেখেননি।
এদিকে, তসলিমার এ পোস্টের নিচে চিন্তিত তাঁর ভক্তকুলরা। নন্দিতা নামের একজন তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে করেছেন, ‘সেকি! কি হয়েছে, কেউ কি জানাবে দয়া করে? আমি তো ভেবেই বসলাম যে, নিশ্চয়ই তোমার ফেসবুক হ্যাক হয়েছে! তোমাকে এরকম মোটেও মানায় না। যদিও মাঝে-মধ্যে অসুখ-বিসুখ মানুষকে কিছুটা বিশ্রামের অবকাশ দিয়ে দেয়। তাড়াতাড়ি সেরে ওঠো প্লিজ। উৎকণ্ঠা নিয়ে বেশ কিছু মেসেজ করে ফেলেছি কিন্তু তোমাকে। সবকটার উত্তর চাই!’
রাজা চ্যাটার্জী নামে আরেকজন মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘এমন ছবি দেখতে ইচ্ছে করে না। এখনও অনেক কাজ বাকি। দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’
পার্থ বল লিখেছেন, ‘দিদি, এবার আমাদের সত্যিই আপনি টেনশনে ফেললেন। কী হয়েছে প্লিজ আমাদেরকে জানান। রক্তের সম্পর্ক নেই বলে ভাববেন না যে আপনি আমাদের দূরের লোক। কিচ্ছু হবে না আপনার।
এর আগে বাংলাদেশ সময় শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দিনগত রাতে তসলিমা নাসরিন তার ফেসবুকে লেখেন, ‘গতকাল ঠিক এই সময় মৃত্যু হয়েছে আমার। এখন ফিউনারেল (অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া) চলছে।’ এ পোস্টে তার ভক্তদের বেশ হইচই পড়ে যায়। অনেকেই তার খোঁজ-খবর জানতে চেয়ে মন্তব্যও করেন। তবে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি এ লেখিকা।
মৃত্যু নিয়ে দেওয়া পোস্টের প্রায় ১৭ ঘণ্টার পর আরেকটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। সেখানে তসলিমা লেখেন, ‘আমার মরণোত্তর দেহ হাসপাতালে দান করা হয়েছে।’
পরপর তার এমন কয়েকটি পোস্টে নেটিজেনদের মধ্যেও কৌতূহল জেগেছে। আসলে কী হয়েছে তসলিমা নাসরিনের? লেখিকা কী অসুস্থ? তবে এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আমাদের ফিল্মমেকার এবং শিল্পীদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা মহাকালের কাছে নিজেদের কোনো পরিচয় রেখে যেতে চাই। আমরা কি চাই ভবিষ্যত আমাদের চিহ্নিত করুক এই পরিচয়ে যে, ইহারা ছিলেন একদল ফিল্মমেকার যাহারা নিরাপদ বিপ্লব চাহিয়াছিল? যদি তা না চাই, তাহলে আমাদেরকে যার যার জায়গা থেকে বলতে হবে, গল্প বলার স্বাধীনতা চাই। কথা বলার স্বাধীনতা চাই। কোনো কিছুর বিনিময়েই এটা নেগোশিয়েট করা যাবে না...
বাবাকে একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ছোটবেলা থেকে তোমার পরিচয়ে পরিচিত হয়ে এসেছি,এখন যখন তোমাকে কেউ চঞ্চল চৌধুরীর বাবা বলে চেনে,তোমার কেমন লাগে? বাবা কোন উত্তর না দিয়ে আমার দিকে শুধু ভেঁজা চোখে কিছুক্ষন তাঁকিয়ে ছিল। তার সেই গর্বিত মুখটা দেখে,আমার চোখ দুটোও ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল। সন্তানের সকল সফলতায় বাবা মায়ের যে কি শান্তি,কি আনন্দ...