নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩১ পিএম, ২৩ নভেম্বর, ২০২১
আইয়ুব খান মেড আ মিসটেক, হি শুড কিলড দ্য.... মুজিব।
কথাটা বলার পর এক সেকেন্ড দেরি হলো না। রকিবুল হাসানের প্রচণ্ড ঘুষি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো কামরান রশীদ। তারপর ভয়ংকর পিটুনি। পেটাতে পেটাতে কামরানকে টিলার নিচে নিয়ে এলেন রকিবুল হাসান। হাতের কাছে যা পেলেন, তাই দিয়ে চললো আঘাতের পর আঘাত। অবশেষে, রক্তাত্ত কামরান জীবন ভিক্ষা চেয়ে রকিবুলের হাত থেকে বেঁচে যান।
সময়টা ১৯৭০। এই বাংলার সন্তান, বাঙালির সন্তান, ১৮ বছরের টগবগে যুবক, ক্রিকেটার রকিবুল হাসান। করাচিতে পাকিস্তান অনুর্ধ- ২৫ দলের ক্যাম্পে তখন। ক্যাম্পের সেই সন্ধ্যায় আড্ডা চলছিল। পাকিস্তানের রাজনীতি তখন উত্তাল। ক্রিকেটারদের সেই আড্ডায় চলে আসে রাজনীতি। বাঁহাতি স্পিনার পেশোয়ারের কামরান রশীদ যখন বলে ওঠে, আইয়ুব খান মেড আ মিসটেক, হি শুড কিলড দ্য মুজিব। তখন খোদ পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে এই দুঃসাহসী প্রতিবাদের ঘটনা ঘটিয়ে দেন বাঙালি যুবক রকিবুল হাসান।
করাচিতে বসে একজন বাঙালির এই রুদ্রমূর্তি দেখে যেন বিস্ময়ে, আতংকে পাথর হয়ে রইলো পাকিস্তানে ক্রিকেটাররা। পরদিন কোর্ট মার্শালে ডাক পড়ল রকিবুল হাসানের। মেজর সুজা জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কেন এমন করেছ?
রকিবুল মেজরের চোখে চোখ রেখে উত্তর দিল, ও আমার নেতাকে নিয়ে বাজে কথা বলেছে, বাঙালির নেতাকে গালি দিয়েছে। যতবার গালি দেবে ততবার আমি এমন করবো।
২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১। আন্তর্জাতিক একাদশের বিপক্ষে পাকিস্তানের টেস্ট ম্যাচ, ঢাকা স্টেডিয়ামে। বাঙালি হওয়ার অপরাধে বার বার বঞ্চিত হয়ে সেই টেস্ট খেলায়, পাকিস্তান টিমে প্রথম একাদশে প্রথম ডাক পান রকিবুল হাসান। আনন্দে রাতে ঘুম হয় না রকিবুলের। কিন্তু সব স্বপ্ন মাটি হয়ে গেলো ম্যাচের আগের দিন। পাকিস্তান দলের সব খোলোয়াড়কে দেয়া হয়েছে গ্রে নিকোলস ব্রান্ডের ব্যাট, ব্যাটের উপরে লাগানো আছে জুলফিকার আলী ভুট্টোর নির্বাচনী প্রতীক তলোয়ার।
রকিবুলের মাথায় রক্ত উঠে গেলো। এইতো সেদিন নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পুরো পাকিস্তানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। বাঙালির সরকার গঠনের অপেক্ষা। না না না, ব্যাটে আইয়ুব খানের নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে মাঠে নামা যাবে না।
রাতেই পূর্বাণী হোটেল থেকে বের হয়ে বন্ধু শেখ কামালের সাথে পরামর্শে বসলো রকিবুল। কী করা যায়!
২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল, ঢাকা স্টেডিয়াম। হাজার হাজার বাঙালি দর্শক গ্যালারতে। পশ্চিম পাকিস্তানি আজমত রানাকে নিয়ে, ব্যাটিং শুরু করতে নামলো রকিবুল। একজন ফটোগ্রাফার প্রথম খেয়াল করলো ব্যাপারটা। ছুটে এলেন ছবি তুলতে। মুহূর্তে স্টেডিয়াম জুড়ে খবর ছড়িয়ে পড়ল-রকিবুল তার ব্যাটে তলোয়ারের বদলে ‘জয় বাংলা’ স্টিকার লাগিয়ে খেলছে।
স্টেডিয়াম জুড়ে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে স্লোগান উঠলো, জয় বাংলা, জয় বাংলা। জ্বলে উঠলো দেশি- বিদেশি ক্যামেরার ফ্লাশ। পরদিন বিশ্বজুড়ে বড় বড় করে পত্রিকার হেডিং ‘পাকিস্তানের হয়ে জয়বাংলা স্টিকার নিয়ে মাঠে নেমে দুনিয়া চমকে দিলেন রকিবুল হাসা’।
মার্চ এলেই লাল-সবুজের পতাকার দিকে চোখ পড়তেই, স্মৃতি রকিবুল হাসানকে নিয়ে যায় সেই ১৯৭১ সালে। সেই ম্যাচ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর পশ্চিম পাকিস্তানি খেলোয়াড় জহির আব্বাস ফিরে যাচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানে। যাওয়ার সময় জহির হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, রকিবুল, করাচিতে দেখা হবে আবার। রকিবুল হাসান দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন, অবশ্যই দেখা হবে। তবে আমার সঙ্গে তখন থাকবে নতুন পাসপোর্ট।
কথা রেখেছিলেন আমাদের রকিবুল হাসানেরা। নয় মাস যুদ্ধ করে, নতুন পাসপোর্টের মালিক হয়ে তবেই ঘরে ফিরেছিলেন।
এইসব বীরত্ব গাঁথায় গর্বিত হই। নতুন প্রজন্মকে জানিয়ে যেতে চাই। প্রতি বছর ২৬ মার্চের সকালে, পতপত করে উড়তে থাকা লাল সবুজের পতাকার দিয়ে তাকিয়ে চোখের কোণায় চিক চিক পানি জমে।
নভেম্বর ২০২১ : অথচ আমরা আজ কী দেখতে পাই, বাংলাদেশের দর্শকরা পাকিস্তানের পতাকা, জার্সি নিয়ে বাংলাদেশ ভার্সেস পাকিস্তান খেলায় বাংলাদেশের মাটিতে, নিজের দেশকে সমর্থন না করে পাকিস্তানকে সমর্থন করছে। স্বাধীন দেশে যুদ্ধে পরাজিতদের সাথে ক্রিকেট খেলায় নিজেদের মাঠে আমাদের প্লেয়ারদের উপর পাকিস্তান প্লেয়ারদের হুমকীস্বরুপ আচরন, উদ্ধত্যপূর্ণ আচরন দেখে কি মনে হচ্ছে তারা সেই প্রতিশোধ নিতে আসছে?
আমরা লজ্জিত, কাদের জন্য এই দেশটা স্বাধীন করলাম! হে প্রজন্ম যদি তুমি ভুলে যাও তোমার স্বাধীনতার মানে নেই তাহলে বুঝে নিও তুমি তোমার বিপদ ডেকে আনছো। আমাদের আত্নত্যাগের কথা ভুলে যেওনা।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
মন্তব্য করুন
যে জীবনটি আমি যাপন করছি,
সে জীবনটি আমার দ্বিতীয় জীবন।
আমার প্রথম যে জীবন ছিল
সেটির মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু এমনিতে হয়নি। মৃত্যুকে ডেকে আনা হয়েছে।
পরিকল্পনায় ছিল একটি লোক
আর তার দুই সহকর্মী।
তিনটে মাত্র লোক, জিহাদিরা এতকাল
ধরে যা পারেনি, তা
পেরেছে। জিহাদিরা যদি আমাকে হত্যা
করতো, তাহলে আমার এতটা দুঃখ
হতো না। কারণ দীর্ঘকাল
থেকেই জানি তারাই আমার
আততায়ী। দুঃখ বেশি হচ্ছে
কারণ হত্যাকারীরা জিহাদি নয়। কী কারণ
তাদের ছিল তবে আমাকে
হত্যা করার? এর মধ্যে বড়
দু’টো কারণ আপাতত
যা মনে হচ্ছে তা
হলো ম্যাল প্র্যাকটিস, মার্কেটিং ও মানি।
অনেকে
বলছে হত্যাকারীর বিরুদ্ধে মামলা করতে। আমার মতো নিরীহ,
নির্বোধ কী করে বড়
বড় শক্তিমান মানুষের বিরুদ্ধে আদালত অবধি যাবে! সেই
ক্ষমতা তো আমার নেই।
শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কোনও
শক্তিও আমার নেই। এই
দ্বিতীয় জীবনটি সম্পূর্ণই অন্যরকম। আমার প্রথম জীবনের
মতো দুরন্ত, দুর্বিনীত নয়। এই দ্বিতীয়
জীবনটি অনেকটা রিহ্যাবের পঁচানব্বই বছর বয়সী জরাগ্রস্ত
নারীদের মতো। এই জীবনটি
আমার জন্য নয়। কিন্তু
এই জীবনটিই এখন আমার জন্য
বরাদ্দ করেছে আমার হত্যাকারীরা। যতই
প্রাণপণে আমি মনের শক্তি
অর্জন করতে চাইছি দু'বেলা করে, ততই
ব্যর্থ হচ্ছি।
আমার
কী হয়েছিল? আমার শরীরের ওপর
দিয়ে কি কোনও ট্রাক
বা ট্রেন চলে গিয়েছিল? হাড়গোড় গুঁড়ো
হয়ে গিয়েছিল? না। আমার শরীরের
কোনও হাড় কোথাও বাজেভাবে
ভেঙেছিল? না। ডিসলোকেশান
হয়েছিল? না। ডিসপ্লেসড হয়েছিল?
না। আমি কি হাঁটতে
পারছিলাম? আমি অন্তত কাউকে
ধরে মেঝে থেকে বিছানা
অবধি হেঁটে
এসেছিলাম। আমি
কি বসতে পারছিলাম? আমি
বসতে পারছিলাম। আমার কি হিপ
জয়েন্ট ফুলে উঠেছিল? না।
জয়েন্টে ব্যথা ছিল? না। আমার
কি কোনও জয়েন্ট ডিজিজ
ছিল? না। কী ছিল
আমার তবে? শুরুতে হাঁটুতে
ব্যথা ছিল, পরে সে
ব্যথাও ছিল না। অকারণ
উদ্বেগ ছাড়া কিছুই ছিল
না আমার। উদ্বেগটি আমার ভেতরে তৈরি
হয়নি। সিরিঞ্জে ভরে ভরে ইঞ্জেক্ট
করা হয়েছে। আর আমার উদ্বেগই
ছিল ম্যাল প্র্যাকটিসের জন্য চমৎকার পুঁজি।
ডাক্তার হিসেবে কী করা উচিত
ছিল তাদের? উচিত ছিল আমাকে
রেস্টে থাকতে বলা কিছুদিন। এক
সপ্তাহ, দু'সপ্তাহ, তিন
সপ্তাহ। অথবা তারও চেয়ে
কিছু বেশি। তারা কি ট্রিটমেন্টের
কোনও গাইডলাইন ফলো করেছে? করেনি।
তারা ডাক্তারের কাজ নয়, করেছে
কসাইয়ের কাজ।
আমার
প্রথম জীবনটি আমার কাছ থেকে
কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই দ্বিতীয় জীবনটির
দিকে তাকালে আমার শ্বাসকষ্ট হয়,
বড় অসহায় বোধ করি। দ্বিতীয়
জীবনটি আমার প্রাপ্য ছিল
না। আমার প্রথম জীবনটির
নাম ছিল জীবন, আমার
দ্বিতীয় জীবনটির নাম ‘মৃত্যু’।
আমি বেশ কিছুদিন হলো
মৃত্যু যাপন করছি। আমাকে
হয়তো আরও বহুদিন মৃত্যুযাপন
করতে হবে।
(ফেসবুক
থেকে সংগৃহীত)
মন্তব্য করুন
সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হঠাৎ কিছুটা ‘অস্বাভাবিক’ পোস্ট করছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। ‘আমার মৃত্যু হয়েছে’ ও ‘দেহ হাসপাতালে
দান করেছি’ প্রসঙ্গ নিয়ে দুটি পোস্ট করে ভক্তদের মনে কৌতূহল জাগানোর পর এবার হাসপাতালের
বিছানায় শুয়ে থাকার একটি ছবি পোস্ট করেছেন তিনি।
রোববার (১৫ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে এ ছবিটি পোস্ট করেন তসলিমা নাসরিন। তবে পোস্টে কোনো ক্যাপশন লেখেননি তসলিমা নাসরিন। ফলে ডালপালা ছড়াচ্ছে, তসলিমা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কি না?
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা ছবিতে দেখা যাচ্ছে- তার দুই পাশে পাঁচজন দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের মধ্যে একজন নারী। বাকি চারজন পুরুষ। তবে তারা কারা সে বিষয়েও তসলিমা কিছু লেখেননি।
এদিকে, তসলিমার এ পোস্টের নিচে চিন্তিত তাঁর ভক্তকুলরা। নন্দিতা নামের একজন তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে করেছেন, ‘সেকি! কি হয়েছে, কেউ কি জানাবে দয়া করে? আমি তো ভেবেই বসলাম যে, নিশ্চয়ই তোমার ফেসবুক হ্যাক হয়েছে! তোমাকে এরকম মোটেও মানায় না। যদিও মাঝে-মধ্যে অসুখ-বিসুখ মানুষকে কিছুটা বিশ্রামের অবকাশ দিয়ে দেয়। তাড়াতাড়ি সেরে ওঠো প্লিজ। উৎকণ্ঠা নিয়ে বেশ কিছু মেসেজ করে ফেলেছি কিন্তু তোমাকে। সবকটার উত্তর চাই!’
রাজা চ্যাটার্জী নামে আরেকজন মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘এমন ছবি দেখতে ইচ্ছে করে না। এখনও অনেক কাজ বাকি। দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’
পার্থ বল লিখেছেন, ‘দিদি, এবার আমাদের সত্যিই আপনি টেনশনে ফেললেন। কী হয়েছে প্লিজ আমাদেরকে জানান। রক্তের সম্পর্ক নেই বলে ভাববেন না যে আপনি আমাদের দূরের লোক। কিচ্ছু হবে না আপনার।
এর আগে বাংলাদেশ সময় শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দিনগত রাতে তসলিমা নাসরিন তার ফেসবুকে লেখেন, ‘গতকাল ঠিক এই সময় মৃত্যু হয়েছে আমার। এখন ফিউনারেল (অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া) চলছে।’ এ পোস্টে তার ভক্তদের বেশ হইচই পড়ে যায়। অনেকেই তার খোঁজ-খবর জানতে চেয়ে মন্তব্যও করেন। তবে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি এ লেখিকা।
মৃত্যু নিয়ে দেওয়া পোস্টের প্রায় ১৭ ঘণ্টার পর আরেকটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। সেখানে তসলিমা লেখেন, ‘আমার মরণোত্তর দেহ হাসপাতালে দান করা হয়েছে।’
পরপর তার এমন কয়েকটি পোস্টে নেটিজেনদের মধ্যেও কৌতূহল জেগেছে। আসলে কী হয়েছে তসলিমা নাসরিনের? লেখিকা কী অসুস্থ? তবে এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আমাদের ফিল্মমেকার এবং শিল্পীদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা মহাকালের কাছে নিজেদের কোনো পরিচয় রেখে যেতে চাই। আমরা কি চাই ভবিষ্যত আমাদের চিহ্নিত করুক এই পরিচয়ে যে, ইহারা ছিলেন একদল ফিল্মমেকার যাহারা নিরাপদ বিপ্লব চাহিয়াছিল? যদি তা না চাই, তাহলে আমাদেরকে যার যার জায়গা থেকে বলতে হবে, গল্প বলার স্বাধীনতা চাই। কথা বলার স্বাধীনতা চাই। কোনো কিছুর বিনিময়েই এটা নেগোশিয়েট করা যাবে না...
বাবাকে একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ছোটবেলা থেকে তোমার পরিচয়ে পরিচিত হয়ে এসেছি,এখন যখন তোমাকে কেউ চঞ্চল চৌধুরীর বাবা বলে চেনে,তোমার কেমন লাগে? বাবা কোন উত্তর না দিয়ে আমার দিকে শুধু ভেঁজা চোখে কিছুক্ষন তাঁকিয়ে ছিল। তার সেই গর্বিত মুখটা দেখে,আমার চোখ দুটোও ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল। সন্তানের সকল সফলতায় বাবা মায়ের যে কি শান্তি,কি আনন্দ...