বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচন শুরু হয়েছে। মোট সাত ধাপে ৪১ দিনব্যাপী ভোট নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপের ভোট সম্পন্ন হয়েছে এবং দ্বিতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ চলছে।
এই পর্বে মোট ৮৮টি রাজ্যের ১ লাখ ৬৭ হাজার ভোট কেন্দ্রে লড়াই হবে। যেখানে মোট ১৫ কোটি ৮৮ লাখ ভোটার নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করবেন।
১৯ এপ্রিল থেকে ভারতে শুরু হয়েছে ১৮তম লোকসভা নির্বাচন। প্রথম পর্বের নির্বাচনে ২১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২ আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ঠিক একই আসনে ২০১৯ সালের নির্বাচনে এবারের তুলনায় চার শতাংশ বেশি ভোট পড়েছিল। ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) এই তথ্য জানিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে এবং বলেছে, ভোটার তালিকা আরও স্বচ্ছ করা দরকার। আর ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।
প্রথম ধাপের নির্বাচনী এলাকাগুলোতে মোট ভোটার ছিল ১৬ কোটি। ভোট পড়েছে ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ যদিও ২০১৯ সালে এই কেন্দ্রগুলোতে ভোট পড়েছিল ৭০ শতাংশ। ইসিআই বলছে, তামিলনাড়ু ও উত্তরাখণ্ডসহ ১৯টি কেন্দ্রে আগের নির্বাচনের তুলনায় এবার কম ভোট পড়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, তামিলনাড়ুতে ৩ শতাংশ কম ভোট পড়েছে, আর উত্তরাখণ্ডে ভোট কম পড়েছে ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। ভোটের হার কমেছে রাজস্থানেও। সেখানে ভোটের হার কমেছে ৬ শতাংশ। ভোটার উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে কম ছিল উত্তর প্রদেশ ও বিহারের কেন্দ্রগুলোতেও।
সব মিলিয়ে বলা যায়, সামগ্রিকভাবে ভোটার উপস্থিতি কমে গেছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মত রাজনৈতিক দলগুলোরও তেমন কোন মাথাব্যাথা নেই।
ভোটার উপস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মাথাব্যাথা না থাকলেও ভারতের নির্বাচন কমিশন এটাকে 'উল্লেখযোগ্য পতন' বলে অভিহিত করেছে। একই সঙ্গে উদ্বেগ ও আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে।
শুধু উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা জানানোই শেষ কথা নয়। এর পেছনে কারণ উদঘাটন করার চেষ্টা করছেন এবং তা সমাধানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহণ করেছেন।
বিশ্লেকেরা বলছেন, ভোটার উপস্থিতি কমে যাওয়ার একটা বড় কারণ হতে পারে মাত্রাতিরিক্ত গরম ও তাপপ্রবাহ। বেশ কয়েকটি এলাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়ে গিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ভোট দেওয়া ছিল সত্যিই কষ্টকর। অনেকেই এই কষ্ঠ মানতে চাননি। তাই ভোট দিতেও যাননি। অনেক ভোটার অভিযোগ করে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে বলেছেন, 'ভোটকেন্ত্রে পান করার মতো পানির ব্যবস্থাও ছিল না। তীব্র গরমে গলা শুকিয়ে নাজেহাল হয়ে পড়েছিলেন অনেক ভোটার।'
বেঙ্গালুরুতে দ্বিতীয় ধাপে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর এখানে ভোটারদের উপস্থিতি বরাবরই কম থাকে। তাই দ্বিতীয় দফার ভোটে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে।
ডেক অব ব্রিয়ুস নামের একটি জনপ্রিয় মদের দোকান ঘোষণা দিয়েছে, ভোট দিয়ে এসে যে প্রথম ৫০ জন কাস্টমার তাদের দোকানে আসবেন তাদের বিনামূল্যে মদ দেওয়া হবে।
এছাড়া ভোটারদের ডিসকাউন্ট মূল্যে খাবার, ভিন্ন ভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁ ভিন্ন সেবা, কিছু জায়গায় বিনামূল্যে কফি, আবার কোথাও দেওয়া হবে দোসা ।
শুধুমাত্র যে খাবারের দোকান ভোটারদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখছে তাই নয়। ট্যাক্সি কোম্পানি এমনকি একটি অ্যামিউজমেন্ট পার্কও ভোটারদের জন্য বিশেষ অফার ঘোষণা করেছে।
তবে এসব করে কি আসলেও ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো সম্ভব? রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ভোটারদের উদাসীনতা কিভাবে সাম্লাবে নির্বাচন কমিশন! রাজনৈতিক দলগুলো হয়তো মানতে চাইবে না, কিন্তু সাধারণ মানুষদের সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যায়, প্রচলিত দল কিংবা নেতাদের প্রতি তাদের মোটেও আস্থা নেই। যার প্রতি আস্থা নেই, তাকে জিতিয়ে আনার জন্য এত কষ্ট করে রোদে পুড়ে ভোট দিতে যাবে কোন আহাম্মক?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত-বিশ্লেষণগুলো পড়লেও এর সত্যতা মেলে। বেশির ভাগ বিশ্লেকের মতে, রাজনৈতিক দলগুলো এবার প্রচারের ক্ষেত্রে বহু ধরনের বিভাজন সৃষ্টি করেছে। বিরোধীদের গালিগালাজ করে শুধু বিদ্বেষ ছড়িয়েছে। এসব ভালো চোখে দেখেনি সাধারণ ভোটার। তাছাড়া অনেক নেতার দল বদল করা স্বভাবকেও ভালোভাবে গ্রহণ করেনি ভোটারেরা।