ইউক্রেনে
রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ভ্লাদিমির পুতিনের নামে শুক্রবার (১৭ মার্চ ) গ্রেফতারি
পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। এরপর থেকেই
আলোচনায় উঠে এসেছে, রুশ প্রেসিডেন্ট কি সত্যিই গ্রেফতার
হবেন? তাকে কি আদৌ গ্রেফতার
বা বিচারের সম্মুখীন করতে পারবে আইসিসি।
মুল প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ অবশ্য বলে দিয়েছেন, রাশিয়া আন্তর্জাতিক আদালতকে স্বীকৃতি দেয় না। তারা এই প্রশ্নটিকে আপত্তিকর এবং অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন।
পুতিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী?
রোম সংবিধির দুটি অনুচ্ছেদের অধীনে ইউক্রেনীয় শিশুদের সঙ্গে রাশিয়ার আচরণের জন্য পুতিনকে অভিযুক্ত করেছে আইসিসি। অভিযোগে বলা হয়েছে, ইউক্রেনীয় বেসামরিক নাগরিকদের বেআইনিভাবে নির্বাসন এবং রাশিয়ায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
একই অভিযোগে রাশিয়ার শিশু অধিকার কমিশনার মারিয়া আলেকসেয়েভনা লভোভা-বেলোভার নামেও।
অভিযোগ রয়েছে, রুশ কর্তৃপক্ষ স্থানান্তরিত শিশুদের পালক পরিবারের সঙ্গে রেখেছে এবং তাদের রাশিয়ার নাগরিকত্ব দিয়েছে। এদের মধ্যে এমন শিশুও রয়েছে যারা বাবা-মায়ের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে বা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বা তাদের বাবা-মাকে আটক করার সময় আলাদা করা হয়েছে।
পুতিন কি গ্রেফতার হবেন?
যুদ্ধের যেসব সৈন্য অপরাধ করেন তাদের চিহ্নিত করা যত সহজ ততটাই কঠিন যেসব নেতাদের নির্দেশে তারা এটা করেন তাদের অভিযুক্ত করা।
কিন্তু আইসিসি যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার বিষয়টিকে অপরাধ হিসেবে আমলে নিতে পারে। এটা নুরেমবার্গ থেকেই এসেছে। যেখানে মস্কো মনোনীত বিচারক মনে করেছিলেন যে নাৎসি নেতাদের বিচার হওয়া উচিত শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে।
তবে আন্তর্জাতিক আইনের বিশ্লেষক প্রফেসর ফিলিপ স্যান্ডস বলেছেন, ১৯৯৮ সালে যে আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে আইসিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী দেশ নয় রাশিয়া। fole আদালতের সিগনেটরি না হওয়ায় আইসিসি রাশিয়ার নেতাদের বিচার করতে পারবে না।
তাত্ত্বিকভাবে, নিরাপত্তা পরিষদ আইসিসিকে তদন্তের জন্য বলতে পারে। কিন্তু স্থায়ী সদস্য হিসেবে রাশিয়া তাতে ভেটোও দিতে পারে।
তাছাড়া ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পুতিন গ্রেফতার হবেন, এমন সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ আইসিসির নিজস্ব কোনো পুলিশ বাহিনী নেই। তাই এটি গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করতে চুক্তিবদ্ধ দেশগুলোর ওপর নির্ভর করে।
টাইমের প্রতিবেদন অনুসারে, নিকট ভবিষ্যতে আইসিসির চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী কোনো দেশে পুতিন যাওয়ার সম্ভাবনা কম। আর গেলেও তিনি যে গ্রেফতার হবেন, তেমন কোনো আশঙ্কা নেই বললেই চলে। কারণ, এর জন্য ওই দেশটিকে অবশ্যই পুতিনকে গ্রেফতারে আগ্রহী হতে হবে।
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কবেক কলেজের অধ্যাপক বিল বোরিং মনে করেন, পুতিন রাশিয়া ছেড়ে বেরোবেন না। আর বিশ্বে এমন কোনো সরকার নেই, যা তাকে রাশিয়া ছেড়ে বেরোতে বাধ্য করতে পারে।
ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মামলার প্রতিনিধিত্বকারী এ বিশেষজ্ঞ বলেন, আমি মনে করি না, তার (পুতিনের) ব্যক্তিগত পরিণতি ভোগ করার কোনো উপায় রয়েছে।
পরমাণু অস্ত্রের বিশাল মজুতসহ রাশিয়া এখনো বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ। তাদের শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা যেকোনো দেশের জন্য কঠিন পরিণতি ডেকে আনতে পারে, এটি সবাই খুব ভালো করেই জানে।
তাছাড়া আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের বহু নজির রয়েছে বিশ্বজুড়ে। দারফুর গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল আইসিসি। কিন্তু এটি তার বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করতে পারেনি।
এমনকি, পুতিন ও তার মিত্ররা রাশিয়ায় ক্ষমতা হারানোর পরেও তাকে যে প্রত্যর্পণ করা হবে, সেই সম্ভাবনাও কম। এটি করতে গেলে বড় বাধার সম্মুখীন হবে নতুন সরকার। কারণ রাশিয়ার আইনে রুশ নাগরিকদের অন্য রাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতও পুতিনকে গ্রেফতার না করে তার বিচার করবে না। কারণ অভিযুক্ত উপস্থিত না থাকলে তার অনুপস্থিতিতে বিচার পরিচালনা করে না আইসিসি।
তাহলে বিচারের অন্য কোন পথ আছে?
আইসিসির কার্যকারিতা বা আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ শুধু চুক্তির ওপর নির্ভর করে না। বরং এখানে রাজনীতি ও কূটনীতির ব্যাপার আছে। সে কারণেই অনেকে মনে করেন নুরেমবার্গের মতো এখানে সমাধান নিহিত কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক চুক্তির মধ্যে।
তারা ইউক্রেনে আগ্রাসনের অপরাধের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহবানও জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন
পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটে যাওয়া দুটি ভয়াবহ বিশ্বযুদ্ধের পর বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই স্নায়ু যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। ইতিহাসের পাতায় স্নায়ু যুদ্ধের সময়কালটা ছিল ১২ মার্চ ১৯৪৭ থেকে ২৬ ডিসেম্বর ১৯৯১ পর্যন্ত। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার শীতল যুদ্ধের ফলে বিশ্বে এর নানা রকম প্রভাব দেখা গেছে। বলা যায় পৃথিবীর ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঘটনায় ঘটেছে এই সময়টায়।
সোভিয়েতের পতনের পর থেকে স্নায়ু যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটলেও বর্তমানে চীন-রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান গভীর হওয়া সম্পর্কের পরিণতি শেষ পর্যন্ত স্নায়ু যুদ্ধে রুপ নিতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে সহিংস দুটি বিপ্লবের উত্তরাধিকারীরা মস্কোতে একটি সাম্প্রতিক বৈঠকে হাত মিলিয়েছেন এবং তাদের ‘নতুন যুগের জন্য সমন্বয়ের ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ নিয়ে আলোচনা করেছেন। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান শি জিনপিং এবং রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে এই সম্পর্ক নিয়ে পশ্চিমের অনেকেই বিভ্রান্ত হয়েছেন। কেউ কেউ কল্পনা করেছেন, উদাহরণস্বরূপ, শি ইউক্রেনে পুতিনের যুদ্ধে একটি নিরপেক্ষ পক্ষ হবেন, বা তিনি এমনকি শান্তিপ্রণেতাও হতে পারেন।
কিন্তু কয়েক দশক ধরে শান্তিকালীন বিশ্বায়নের পর একটি সমস্যাজনক নতুন অংশীদারিত্ব অপ্রত্যাশিতভাবে আবির্ভূত হয়েছে তা কল্পনা করার পরিবর্তে বিশ্বের সঙ্গে রাশিয়া এবং চীনের ভাগাভাগি দ্বন্দ্ব বোঝার জন্য আমাদের ইতিহাসের দীর্ঘ বৃত্তের দিকে তাকাতে হবে।
ইউক্রেনে পুতিনের আক্রমণকে চীনের অর্থনৈতিক শক্তির দ্বারা প্রকাশ্যে সমর্থিত করা হচ্ছে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। এই যুদ্ধকে বিশ্লেষকরা বলছেন পুনরুদ্ধার করা রাশিয়া-চীন অক্ষের প্রথম ভূ-রাজনৈতিক পণ্য এবং দুটি রাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তন যাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা স্নায়ু যুদ্ধ-পরবর্তী শান্তি দ্বারা কখনো পূরণ হয়নি। আবারও, বিশ্বের গণতন্ত্রগুলো ইউরোপ এবং এশিয়া উভয় দেশেই এই দুই স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগঠিত করার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
১৯৫০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের উপস্থাপিত স্নায়ু যুদ্ধের চ্যালেঞ্জের চারপাশে আমেরিকান গ্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি সমন্বয় করতে শুরু করলে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের আধিকারিক পল নিটজে অভ্যুত্থানের সময়কাল ব্যাখ্যা করেছিলেন যা তার প্রজন্মের আন্তর্জাতিক বিষয়গুলির অভিজ্ঞতাকে সংজ্ঞায়িত করেছিল। তার মতে, বিগত পঁয়ত্রিশ বছরের মধ্যে বিশ্ব প্রচণ্ড সহিংসতার দুটি বৈশ্বিক যুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়াও রুশ এবং চীনা বিপ্লবের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ব। এর মধ্যে অটোমান, অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান, জার্মান, ইতালীয় এবং জাপানি, এই পাঁচটি সাম্রাজ্যের পতনও দেখা গেছে এবং সেইসঙ্গে দুটি প্রধান সাম্রাজ্য ব্যবস্থা, ব্রিটিশ এবং ফরাসিদের তীব্র পতন উল্লেখযোগ্য।
নিটজে এমন একটি বিশ্ব পর্যবেক্ষণ করেছেন যেখানে ‘ক্ষমতার আন্তর্জাতিক বন্টন মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।’ এই পরিবর্তন এবং অস্থিরতার কারণগুলির মধ্যে ছিল দুটি বিপ্লব যা তিনি বিজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করেছিলেন। সেগুলো অবশ্যই রুশ এবং চীনা। দুটি বিপ্লব যার পরিণতি, আমাদের এখন স্বীকার করা উচিত, পুরোপুরি শেষ হয়নি।
আমাদের নিজেদেরকে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত যে ২১ শতকের রাশিয়া এবং চীন এবং তাদের পরিচালনাকারী নেতারা মূলত রুশ এবং চীনা বিপ্লবেরই পণ্য যা নিটজ বুঝতে পেরেছিলেন যে তার জীবনকালের ইতিহাস এবং ভূ-রাজনীতিকে রূপ দেবে। শি এবং পুতিন, এই বিপ্লবগুলির পণ্য হিসেবে তাদের পশ্চিমা-বিরোধী ধারণা এবং সংঘাতের কৌশলগুলোর উত্তরাধিকারী।
আমেরিকান স্পাইমাস্টার জ্যাক ডিভাইন যেমন উল্লেখ করেছেন, পুতিনের কর্মজীবন পূর্ব জার্মানির ড্রেসডেনে রূপ নিয়েছিল, ওয়ারশ চুক্তি বিশ্বে আবদ্ধ ছিল এবং তিনি সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতনকে ‘২০ শতকের সর্বশ্রেষ্ঠ ভূ-রাজনৈতিক বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করেছেন। এখন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে শি তার উত্তরাধিকারী যাকে পার্টি ‘চীনা জাতির মহান পুনর্জাগরণ’ বলে অভিহিত করে, জাতীয় পুনরুজ্জীবনের একটি প্রকল্প যা মাও সে তুংয়ের ‘নয়া চীন’ থেকে উদ্ভূত হয়েছিল এবং বিভিন্ন রূপে অব্যাহত রয়েছে।
শির চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্ব এবং ‘বিশ্বের কেন্দ্রস্থলে’ চীনের সঙ্গে একটি নতুন আদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এই প্রচেষ্টায় পুতিনের রাশিয়া হল শির প্রধান সহযোগী এবং ‘কৌশলগত অংশীদার।’
২০ শতকে সর্বগ্রাসী কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হিসেবে, রাশিয়া এবং চীন বিশ্বের গণতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করেছিল এবং তাদের নিজস্ব একটি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল। দশকব্যাপী চীন-সোভিয়েত জোট কোরিয়ান যুদ্ধ এবং একাধিক তাইওয়ান সংকটকে ছড়িয়ে দিয়েছে, যা ইউরোপ এবং এশিয়া উভয় অঞ্চলে বিস্তৃত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের জন্য একটি দ্বি-থিয়েটার কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মাত্র আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়েছে, সম্ভবত একটি দুই-থিয়েটার কৌশলগত প্রতিযোগিতা পরিচালনা করার জন্য আরও প্রস্তুত ছিল।
কমিউনিস্ট চীন এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়ের একযোগে নিয়ন্ত্রণ তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে একটি চেক প্রদান করেছিল। চীন-সোভিয়েত জোট শেষ পর্যন্ত টেকসই হয়ে ওঠে এবং অনেকাংশে ভেঙ্গে যায় কারণ মাও চীনকে বিশ্বব্যাপারে একটি ক্ষমতা ও কেন্দ্রিয়তার অবস্থানে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন; তিনি মস্কোর জুনিয়র পার্টনার হিসেবে ভূমিকা সহ্য করবেন না।
আজ এই ভূমিকাগুলি বিপরীত হয়েছে এবং এই উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। কমিউনিস্ট মতাদর্শের নামে নয়, একটি আক্রমণাত্মক, সামরিক জাতীয়তাবাদের আলোকে যা উভয় শাসনকে সক্রিয় করে।
শি এবং পুতিন ইউক্রেনে পুতিনের আক্রমণের কয়েক সপ্তাহ আগে ২০২২ সালে বেইজিং অলিম্পিকে অংশীদারিত্বের যৌথ ঘোষণায় তাদের সম্পর্কের দার্শনিক গভীরতা এবং রূপ বিশ্বকে দেখিয়েছিলেন। কিন্তু কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও আগেই শুরু হয়েছে।
২০১০ এর দশক জুড়ে উভয় দেশ তাদের সামরিক, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রসারিত করার জন্য কাজ করেছে। বেইজিং অলিম্পিকের বিবৃতিতে চীন এবং রাশিয়া একে অপরের ‘মূল স্বার্থের’ জন্য পারস্পরিক সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাইওয়ানের ওপর বেইজিংয়ের দাবির প্রতি মস্কো তার সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যাকে এটি ‘চীনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ’ বলে অভিহিত করেছে এবং বেইজিং প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে ‘উভয় পক্ষই ন্যাটোর আরও বিস্তৃতির বিরোধিতা করে এবং উত্তর আটলান্টিক জোটকে তার আদর্শিক স্নায়ু যুদ্ধের পন্থা পরিত্যাগ করার আহ্বান জানায়।’
যৌথ পারমাণবিক সক্ষম বোমারু বিমানের মহড়া, স্থল ও নৌ মহড়া, শক্তি, প্রযুক্তিতে বাণিজ্য বৃদ্ধি, মস্কোর জন্য চীনের প্রচার সমর্থন এবং রাশিয়ার জন্য চীনা অ্যাসল্ট রাইফেল এবং বডি আর্মারের নতুন প্রতিবেদন, পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে যা রূপ নিয়েছে তার কিছু উপাদান মাত্র।
ইউরোপ এবং এশিয়ার ভাগ করা চীন-রাশিয়া বিভাগ চীন-সোভিয়েত জোটের মূল ভূগোলকে স্মরণ করিয়ে দেয়। স্তালিন যেমন কমিউনিস্ট চীনে তার সমকক্ষদের বলেছিলেন, ‘আমাদের মধ্যে শ্রমের কিছু বিভাজন হওয়া উচিত... আপনি পূর্বে কাজ করার জন্য আরও দায়িত্ব নিতে পারেন... এবং আমরা পশ্চিমে আরও দায়িত্ব নেব।’
ইউক্রেনে পুতিনের যুদ্ধই একমাত্র সংঘাত নয়, অবশ্যই এই অক্ষটি সংঘাত তৈরিও করতে পারে। স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে গণতন্ত্রের সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা একটি আধুনিক গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকে সুপারচার্জ করেছে যেটি এখন সমালোচনামূলক প্রযুক্তি এবং কৌশলগত শিল্পে বিশ্বের গণতন্ত্রের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এবং এশিয়ায় অতুলনীয় সুযোগের একটি সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেছে যা প্রশান্ত মহাসাগরে এর নিজস্ব সক্ষমতা দেখাতে পারে। এটি হলো বিংশ শতাব্দীর বিরোধীদের প্রত্যাবর্তন যাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা সত্যিকার অর্থে চলে যায়নি।
চিন রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ুযুদ্ধ
মন্তব্য করুন
বেলারুশের সংগে নতুন চুক্তি করল রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা দিয়েছেন তার দেশ বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করবে। এতে পারমাণবিক অপ্রসারণ চুক্তিও লঙ্ঘন হবে না বলে জানান তিনি। খবর বিবিসি ও গার্ডিয়ানের।
শনিবার
(২৫ মার্চ) রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির
পুতিন এই ঘোষণা দেন।
ইউক্রেন
যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনার পারদ যখন ওপরে,
এছাড়া সম্প্রতি রাশিয়ার কয়েকজন কর্মকর্তার সম্ভাব্য পারমাণবিক হামলার বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার পরই এই ঘোষণা
দিলেন পুতিন।
এদিকে
কবে নাগাদ পারমাণবিক অস্ত্র বেলারুশে মোতায়েন করা হবে তা
উল্লেখ করেননি পুতিন। তবে ১ জুলাইয়ের
মধ্যে বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্রের স্টোরেজ সুবিধার নির্মাণ কাজ শেষ হবে
বলে জানান তিনি।
পুতিন
জানান, পারমাণবিক অস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্য ব্যবহার হতে
পারে এমন কিছু ক্ষেপণাস্ত্র
ব্যবস্থা এরইমধ্যে বেলারুশে স্থানান্তর করা হয়েছে।
রাশিয়ার
প্রতিবেশী ও মিত্রদেশ বেলারুশ।
এছাড়া বেলারুশের সঙ্গে ইউক্রেনের বড় সীমান্ত রয়েছে।
শুধু তাই নয়, ন্যাটোর
সদস্যভুক্ত দেশ পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া
এবং লাটভিয়ার সীমান্ত রয়েছে বেলারুশের সঙ্গে।
শনিবার
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো দীর্ঘদিন ধরে কৌশলগত পারমাণবিক
অস্ত্র মোতায়েনের বিষয়টি উত্থাপন করে আসছিলেন।
পুতিন
বলেন, এখানে (পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন) অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ
দশকের পর দশক ধরে
যুক্তরাষ্ট্র এটা করে আসছে।
তারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের মিত্রদেশগুলোতে
কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করছে।
রুশ
প্রেসিডেন্ট বলেন, বেলারুশের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে।
আমরা দুই দেশ একই
কাজ করবো বলে সম্মত
হয়েছি।
ট্যাকটিক্যাল
বা কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের কোনো বৈশ্বিক সংজ্ঞা
নেই। এটি মূলত ছোট
পারমাণবিক ওয়ারহেড এবং ডেলিভারি সিস্টেম
যা যুদ্ধক্ষেত্রে সীমিত হামলার জন্য ব্যবহার হয়।
এগুলোর
বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করা হয় সাইজ,
তাদের পাল্লা এবং সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে
এগুলোর সীমিত ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে। এগুলো সাধারণ বোমা থেকে কিছুটা
বড়।
বেলারুশ পারমাণবিক অস্ত্র রাশিয়া
মন্তব্য করুন
মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে শুক্রবার রাতে ভয়াবহ টর্নেডোর
আঘাতে কমপক্ষে ২৩ জনের প্রাণহানি
ঘটেছে। টর্নেডোয় বিধ্বস্ত অনেক ভবনের ধ্বংসস্তূপের
নিচে আরও অনেকে আটকা
পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা
হচ্ছে।
ব্রিটিশ
সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, কয়েকটি গ্রামীণ শহরে ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি
করেছে ওই টর্নেডো। এসব
এলাকায় অনেক গাছ ও
বিদ্যুতের লাইন ভেঙে পড়েছে।
যে কারণে হাজার হাজার মানুষ বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের মুখোমুখি হয়েছেন।
মার্কিন
ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস জানিয়েছে, মিসিসিপির উত্তর-পূর্বে সিলভার সিটি এবং রোলিং
ফর্কের গ্রামীণ এলাকায় টর্নেডোটি সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালিয়েছে।
প্রায় ৬০ মাইল এলাকাজুড়ে
টর্নেডোর তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টর্নেডোটি দুর্বল না হয়ে ঘণ্টায়
১১৩ কিলোমিটার বেগে উত্তর-পূর্ব
দিকে ছুটে আলাবামা রাজ্যের
দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
পশ্চিম মিসিসিপির
ছোট শহর রোলিং ফর্কের বাসিন্দারা বলেছেন, টর্নেডোর আঘাতে তাদের বাড়ির পেছনের জানালা
উড়ে গেছে। ওই এলাকায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা
ব্র্যান্ডি শোয়াহ সিএনএনকে বলেছেন, আমি কখনো এমন টর্নেডো দেখিনি... এটা খুব ছোট শহর
এবং শহরটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
সিএনএন-এর খবরে বলা
হয়, উত্তর-পূর্ব জ্যাকসনের ৬০ মাইল এলাকাজুড়ে
১৩ জন মারা গেছে।
এছাড়া মিসিসিপি রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলে ঝড়ে কয়েকজন মারা
গেছেন। সবমিলিয়ে ২১ জনের মৃত্যুর
খবর পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র মিসিসিপি টর্নেডো নিহত
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
রাজস্থানের জয়সালমার বিভাগে
ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ চলার সময় প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া সেনারা
নির্ধারিত স্থানের বদলে ভুল জায়গায়
ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছেন।
শনিবার
(২৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ
তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।
সংবাদমাধ্যমটি
জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার প্রশিক্ষণ হচ্ছিল পোখরান ফিল্ডে। তখন শক্তিশালী সারফেস
টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ভুলক্রমে
অন্য জায়গায় চলে যায়।
দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র আলাদা
দু’টি গ্রামে আঘাত
হানে বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়া
টুডে। এছাড়া ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণ হওয়ায় ওই গ্রামের বাসিন্দারা
বিকট শব্দ শুনতে পান।
তবে এখন পর্যন্ত এ
ঘটনায় কোনো অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত
হওয়া বা প্রাণহানির খবর
পাওয়া যায়নি।
কারিগরি
ত্রুটির কারণে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা
ঘটেছে বলে জানা গেছে।
সামরিক
বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেনেন্ট কর্নেল অমিতাভ শর্মা জানিয়েছেন, এ ঘটনার তদন্ত
শুরু হয়েছে এবং অবস্থা অনুযায়ী
পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইন্ডিয়া
টুডে জানিয়েছে, তিনটির মধ্যে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্রের
ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু
তৃতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটির সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি।
পুলিশ এবং সেনাবাহিনী এখন
এটি খুঁজে বের করতে অভিযান
চালাচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমটি
আরও জানিয়েছে, এ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ১০-২৫ কিলোমিটার দূরের
লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার লক্ষ্যে
তৈরি করা হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো
যেখানে গিয়ে আঘাত হেনেছে
সেখানে বড় গর্ত তৈরি
হয়।
এদিকে গত বছর ভুলক্রমে পাকিস্তানের ভেতর ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। ওই ঘটনায় পরবর্তীতে তিন সেনা কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়। ওই ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কোনো হতাহত না হওয়ায়, বিষয়টি খুব সতর্কতার সঙ্গে সমাধান করা হয়।
মন্তব্য করুন