ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে ইসরায়েলি আগ্রাসন। সেই আগ্রাসন বন্ধে যুদ্ধবিরতির আলোচনা কোনও ধরনের চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলি বাহিনী রাফা অঞ্চলে নতুন করে বোমাবর্ষণ শুরু করেছে।
চুক্তি
ছাড়াই যুদ্ধবিরতি আলোচনা শেষ হওয়ায় ইসরায়েল
রাফাতে হামলা চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানিয়েছে। শুক্রবার
(১০ মে) এক প্রতিবেদনে
এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা
রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী বৃহস্পতিবার রাফা অঞ্চলে বোমাবর্ষণ করেছে বলে ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা জানিয়েছেন। অন্যদিকে রাফাতে হামলা করলে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার যে হুমকি প্রেসিডেন্ট বাইডেন দিয়েছেন তা প্রত্যাখ্যান করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহু এক ভিডিও বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যদি আমাদের প্রয়োজন হয়, আমরা আমাদের নখ দিয়ে লড়াই করব। কিন্তু আমাদের নখের চেয়ে অনেক বেশি আছে।’ অন্যদিকে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এবং ইসলামিক জিহাদ বলেছে, তাদের যোদ্ধারা শহরের পূর্ব উপকণ্ঠে ইসরায়েলি ট্যাংকগুলোতে ট্যাংক-বিধ্বংসী রকেট এবং মর্টার নিক্ষেপ করেছে।
গাজার
সবচেয়ে বড় শহুরে এলাকা
রাফা। রাফা শহরের সাবরা
এলাকায় দুটি বাড়িতে ইসরায়েলি
বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ
অন্তত ১২ জন নিহত
হয়েছেন।
ইসরায়েল বলেছে, হামাস যোদ্ধারা রাফাতে লুকিয়ে আছে। মূলত ইসরায়েলের আগ্রাসনের কারণে লাখ লাখ গাজাবাসী বর্তমানে রাফাতে আশ্রয় নিয়েছেন। গত সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা আগ্রাসনে গাজা ভূখণ্ডের বেশিরভাগ অংশই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইসরায়েল রাফাতে পূর্ণাঙ্গ অভিযান চালাবে না বলে তারা আশা করে। এই ধরনের কোনও অভিযান হামাসকে পরাজিত করার বিষয়ে ইসরায়েলের লক্ষ্য পূরণের জন্য ভালো হবে বলেও তারা বিশ্বাস করে না।
মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ‘(প্রেসিডেন্ট বাইডেনের) দৃষ্টিতে রাফাতে কোনও ধরনের আঘাত করা ইসরায়েলের সেই উদ্দেশ্যকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে না।
কিরবি
বলেন, ইসরায়েলের মাধ্যমে হামাসকে উল্লেখযোগ্যভাবে চাপ দেওয়া হয়েছে
এবং বেসামরিক নাগরিকদের জন্য উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি
থাকায় সেখানে অভিযান চালানোর চেয়ে গোষ্ঠীর নেতৃত্বের অবশিষ্টাংশ খুঁজে বের করার জন্য
আরও ভালো বিকল্প পন্থা
রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি এই আক্রমণের ফলে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে প্রায় ৩৫ হাজার লোক নিহত এবং আরও প্রায় ৮০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
এছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েল গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন এক রায়ে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা করছে। সেসময় ওই রায়ে ইসরায়েলকে এই ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন
রহস্যজনকভাবে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে কোন পরিবর্তন আসবে কিনা বা এটার প্রভাব কেমন হতে পারে! এটাই এখন বিশ্বরাজনীতির আলোচিত বিষয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রভাবশালী এই দুই নেতার মৃত্যুতে অনেকটাই পাল্টে যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ। আর রাইসির মৃত্যু থেকে এখন ইসরায়েলই সবচেয়ে লাভবান হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইব্রাহিম রাইসি ও হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলমান সংঘাতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
গত কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছিল তেহরান। বিশেষ করে লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, বাহরাইন ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অর্থ ও সমরাস্ত্রের অন্যতম যোগানদাতা ছিল ইরানের ইসলামী বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী।
আর এসব গোষ্ঠী মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা ও ইসরায়েলের স্বার্থের জন্য ক্রামাগত হুমকি তৈরি করে আসছিল।
গত মাসে ইব্রাহিম রাইসির সরকার সরাসরি ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলও ইরানের ইস্ফাহান শহরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই ঘটনার আগে কেউ কখনো কল্পনাই করতে পারেনি মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ ইসরায়েলের হামলার সাহস করতে পারে, সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছিলেন ইব্রাহিম রাইসি।
শুধু এ হামলা নয়, কয়েক দশক ধরে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে বেশ অসন্তুষ্ট ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলো। এমনকি এ তালিকায় রয়েছে সুন্নি প্রধান দেশ সৌদি আরবও। আর পশ্চিমা শক্তির কোনো তোয়াক্কা না করে পরমাণু কর্মসূচিতে জোরদার ভূমিকা পালন করেছেন ইব্রাহিম রাইসি। এমনকি বেশ কয়েকবার ইসরায়েলকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার হুমকিও দিয়েছিলেন সদ্য নিহত ইরানি প্রেসিডেন্ট। এ কারণে বিশ্লেষকরা বলছে, রাইসির মৃত্যু প্রভাব ফেলতে পারে দেশটির পরমাণু কর্মসূচিতেও।
এছাড়া, রাইসির মৃত্যু শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয় বরং মধ্য এশিয়া ও ইউরোপীয় ভূরাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে রুশ বাহিনীকে যে বিপুল পরিমাণ ড্রোন ও সমরাস্ত্র সরবরাহ করেছিল তেহরান এখন সেই পদক্ষেপ কতটা ধারাবাহিক থাকবে সে প্রশ্ন উঠেতে শুরু করেছে অনেক মহলে। এছাড়াও রাইসির নেতৃত্বে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সংঘাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল তেহরান।
ইব্রাহিম রাইসি মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতি সৌদি আরব
মন্তব্য করুন
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি
মন্তব্য করুন
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি
মন্তব্য করুন
ইরান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাঘেরি কানি
মন্তব্য করুন
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানকে নিয়ে বিধ্বস্ত হওয়া হেলিকপ্টারটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম বলছে, হেলিকপ্টারটি ছিল বেল ২১২ মডেলের।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, হেলিকপ্টারটির বয়স কত ছিল তা স্পষ্ট নয়। তবে ১৯৬০-এর দশকে এই মডেলটি কানাডিয়ান সামরিক বাহিনীর জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লবের পর তেহরানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার দশক শুরু হয়েছিল। ওই সময়ের পর ইরানের কাছে কোনও সামরিক অস্ত্র বিক্রি করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
হেলিকপ্টারটি তৈরি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের হেলিকপ্টার প্রস্তুতকারক কোম্পানি বেল। মার্কিন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, থাইল্যান্ডের জাতীয় পুলিশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারি- বেসরকারি অনেক সংস্থা ব্যাপকভাবে এই হেলিকপ্টার ব্যবহার করে।
ফ্লাইট গ্লোবালের ২০২৪ সালের ওয়ার্ল্ড এয়ার ফোর্সেস ডিরেক্টরি অনুযায়ী, ইরানের নৌ ও বিমানবাহিনীর বহরে বেল ২১২ মডেলের মোট ১০টি হেলিকপ্টার রয়েছে। তবে ইরানের সরকার এসব হেলিকপ্টারের মধ্যে কতটি পরিচালনা করে আসছে তা পরিষ্কার নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই হেলিকপ্টার যেকোনও ধরনের উদ্দেশে ব্যবহার করা যায়। মানুষ ও মালামাল পরিবহনের পাশাপাশি যুদ্ধের সময় অস্ত্র সরঞ্জাম বহন এবং ব্যবহারও করা যায়।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আইআরএনএ বলেছে, প্রেসিডেন্টকে বহনকারী এই হেলিকপ্টার ছয়জন যাত্রী ও দুজন ক্রুকে পরিবহন করতে পারে।
বিমান দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহকারী অলাভজনক সংস্থা ফ্লাইট সেইফটি ফাউন্ডেশন বলছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বেল ২১২ মডেলের একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ওই সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপকূলীয় এলাকায় বেসরকারিভাবে পরিচালিত বেল ২১২ মডেলের একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়।
ইরান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান হেলিকপ্টার যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
রহস্যজনকভাবে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে কোন পরিবর্তন আসবে কিনা বা এটার প্রভাব কেমন হতে পারে! এটাই এখন বিশ্বরাজনীতির আলোচিত বিষয়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রভাবশালী এই দুই নেতার মৃত্যুতে অনেকটাই পাল্টে যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ। আর রাইসির মৃত্যু থেকে এখন ইসরায়েলই সবচেয়ে লাভবান হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।