নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:২৭ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
আজকে আমার একজন সহকর্মী তার স্মার্টফোনে আমাকে একটা ভিডিও দেখিয়েছে। আমি আমার জীবনে এর চাইতে হৃদয়বিদারক কোনও ভিডিও দেখেছি বলে মনে করতে পারি না। ভিডিওটি একজন এসএসসি পরীক্ষার্থীর। ছেলেটি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে বলছে, সে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে, প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নের উত্তরও সে পেয়ে গেছে। কিন্তু সেই উত্তরে বেশ কয়েকটা ভুল ছিল। ক্ষুব্ধ ছাত্রটি বলছে, কেন ভুল উত্তর সরবরাহ করে তাদের এভাবে উত্ত্যক্ত করা হয়?
যে কোনও হিসেবে এটাকে খুবই মজার একটা কৌতুক হিসেবে বিবেচনা করার কথা ছিল কিন্তু আমি এই ভিডিওটি দেখে বিন্দুমাত্র কৌতুক অনুভব করিনি। আমি এক ধরনের আতঙ্ক অনুভব করেছি। আমাদের দেশে আমরা নতুন একটি তরুণ প্রজন্ম তৈরি করেছি, যারা সাংবাদিকদের বলতে সঙ্কোচবোধ করে না যে, তারা ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছে। সেই প্রশ্নের উত্তর সরবরাহকারীদের ওপর তারা ক্ষুব্ধ হয়, যদি তারা উত্তরে ভুল করে। আমাদের এই নতুন প্রজন্ম ন্যায় এবং অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য করতে পারে না।
এ রকমটি আগে ছিল না। এ রকমটি হয়ে যাওয়ার জন্য আমরা দায়ী। আমরা হাতে ধরে এ রকম একটি প্রজন্ম তৈরি করেছি, যদি এই দেশে প্রশ্নফাঁস না হতো তাহলে আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম এ রকম হয়ে যেত না।
কাজেই আমি খুবই অসহায় বোধ করি যখন দেখি এই দেশের গুরুত্বপূর্ণ মানুষেরা বিষয়টিকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছেন। তারা বলেন প্রশ্নফাঁস নতুন কিছু নয়, আগেও প্রশ্নফাঁস হতো। প্রশ্নফাঁস নিয়ে কথা বলা হচ্ছে সরকারের একটি দোষ খুঁজে বের করার চেষ্টা মাত্র। আমি এটাকে মোটেও ছোট একটা বিষয় হিসেবে দেখতে পারি না। আমার কাছে এটাকে রিক্টর স্কেলে আট মাত্রার ভূমিকম্পের মতো মনে হয়, মহামারী প্লেগের মতো মনে হয়। প্রশ্নফাঁস হওয়ার কারণে আমাদের পুরো শিক্ষাব্যবস্থাটাকে অর্থহীন করে দেওয়া হয়েছে। একটি ছেলে বা মেয়ের জিপিএ ফাইভ কথাটির অর্থ কী আমরা জানি না। আসলেই সে ভালো একজন ছাত্র বা ছাত্রী হতে পারে কিংবা সে ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা দেওয়া একজন অসৎ অভিভাবকের অসৎ সন্তান, অসৎ শিক্ষকের অসৎ ছাত্র হতে পারে। তুলনামূলকভাবে খারাপ গ্রেডের একজন ছাত্র বা ছাত্রী হয়ত আসলে একজন সোনার টুকরো ছেলে বা মেয়ে। তার চারপাশে ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্ন দেখেও সে প্রলোভনে পা দেয়নি, সৎ থেকেছে, বাবা-মায়ের বকুনি খেয়েছে বন্ধুদের হাসির পাত্র হয়েছে। কে এই প্রশ্নের জবাব দেবে?
শুধু কী তাই? পরীক্ষার নম্বর দিয়ে ছেলেমেয়েদের কলেজ ঠিক করে দেওয়া হয়। ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্ন দেখে পরীক্ষা দেওয়া ছেলেমেয়েরা ভালো ভালো কলেজের সিটগুলো দখল করে নেবে। আমাদের সোনার টুকরো ছেলেমেয়েরা হতাশ হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ মানুষেরা তাদের দীর্ঘশ্বাস শুনতে পান না, আমি শুনতে পাই।
আগে প্রশ্নফাঁস হতো কী-না আমরা জানি না, যদি হতো অবশ্যই সেটি খুবই খারাপ একটা ব্যাপার হতো। কিন্তু আগে প্রশ্নফাঁস হতো বলে এখন প্রশ্নফাঁস হওয়াটা মেনে নিতে হবে এটা নিশ্চয়ই একটা যুক্তি হতে পারে না। আগে এদেশে রাজাকাররা গাড়িতে পতাকা উড়িয়ে ঘুরে বেড়াত বলে এখনও তারা গাড়িতে পতাকা উড়িয়ে ঘুরবে সেই কথাটি তো আমরা কখনও বলি না। খুঁটিনাটি না জেনেও শুধু কমনসেন্স দিয়ে অনেক কিছু বোঝা যায়। আগে প্রশ্নফাঁস করতে হলে কাউকে না কাউকে পুরো প্রশ্নটির একটি কপি জোগাড় করতে হতো, এখন তার দরকার হয় না। একটি প্রশ্নকে মাত্র এক ঝলক দেখার সুযোগ পেতে হয়, চোখের পলকে প্রায় অদৃশ্য একটা ক্যামেরা দিয়ে তার ছবি তুলে নিয়ে আসা যায়। আমি নিজের কৌতূহলে পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপানো এবং বিতরণ করার পুরো প্রক্রিয়াটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছি। আমি জানি অনেক মানুষ এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত, তারা অকারণে এবং অপ্রয়োজনে এই প্রশ্নটিতে হাত বুলানোর সুযোগ পান। কাজেই প্রশ্নফাঁস হয়ে যাওয়ার বিষয়টি ধরাছোঁয়ার বাইরের একটি বিষয় নয়। পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত মাত্র একজন অসৎ মানুষের প্রয়োজন যে এক ঝলক প্রশ্ন দেখার সুযোগ পেলে সম্ভবত কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা করে ফেলতে পারে।
এখানে একটা কৌতূহলের বিষয় বলা যায়। আমি জানতে পেরেছি বেশ কিছুদিন আগে একটা সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, যেখানে বিজি প্রেসের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায় সম্পত্তির খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছিল। বিজি প্রেস হচ্ছে সেই প্রেস যেখানে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ইত্যাদি গোপন কাগজপত্র ছাপানো হয়। এই প্রেসের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায় সম্পত্তি বা ব্যাংক ব্যালেন্সের খোঁজখবর নেওয়ার উদ্দেশ্য খুবই সহজ, কেউ হঠাৎ করে তাড়াতাড়ি বড় লোক হয়ে যাচ্ছে কী-না, হঠাৎ করে কেউ আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে কী-না সেটি খুঁজে বের করা। যদি এ রকম কিছু দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে ‘ডালমে কুছ কালা হায়।’
তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে এই অত্যন্ত সময়োপযোগী প্রয়োজনীয় তদন্তটি হঠাৎ করে ‘ওপরের’ আদেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কাজেই বিজি প্রেসের কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী অসৎ উপায়ে বড়লোক হতে শুরু করেছে কী-না সেটি জানার আর কোনও উপায় থাকল না। আমি যেটা জানতে পেরেছি তার মাঝে কতটুকু সত্যতা আছে জানা দরকার। কারণ এটি যদি সত্যি হয় তাহলে আমাদের ভয় পাওয়ার অনেক কারণ আছে। ‘ওপরের’ আদেশটি কত ওপর থেকে এসেছে আমি সেটাও জানতে খুবই আগ্রহী।
একটা সময় ছিল যখন কোনোভাবেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বীকার করতে রাজি হয়নি যে, পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস হয়েছে। আমি তখন অসহায়বোধ করেছি, কারণ আমি জানি একটি সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রথমে সমস্যাটি বুঝতে হয়। যদিও সমস্যা আছে সেটি মেনেই নেওয়া না হয় তাহলে সমস্যার সমাধান করা হবে কেমন করে? শেষপর্যন্ত সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, এখন সবাই জানে পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস হয়। সেটি নিয়ে সংসদে আলোচনা হয় এবং সবচেয়ে বড় কথা হাইকোর্ট নিজে থেকে পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস বন্ধ করার ব্যাপারে সুপারিশ দেওয়ার জন্য দুটি কমিটি করে দিয়েছে। সেই কমিটি দুটির একটির দায়িত্বে রয়েছেন প্রফেসর মোহাম্মদ কায়কোবাদ। ২০১৪ সালে প্রশ্নফাঁসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য আমি যখন শহীদ মিনারে বৃষ্টির মাঝে বসেছিলাম, তখন আমার সঙ্গে সারাদেশের একজন মাত্র শিক্ষক ছিলেন, তিনি প্রফেসর কায়কোবাদ। কাজেই আমি নিশ্চিতভাবে জানি প্রশ্নফাঁসের এই অভিশাপ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য সবচেয়ে আন্তরিক মানুষটিকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। আমি অনুমান করতে পারি এই কমিটি নিশ্চয়ই কোনও কিছু ধামাচাপা দেবে না, সমস্যাটির গভীরে প্রবেশ করবে এবং নিশ্চিতভাবে একটি সমাধান খুঁজে বের করবে।
প্রশ্নফাঁসের ব্যাপারটি যখন আর লুকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি তখন সেটি বন্ধ করার এক ধরনের আয়োজন শুরু হয়েছে। তবে আয়োজনটি প্রশ্নফাঁস বন্ধ করার জন্য নয়, ফাঁস হয়ে যাওয়া ‘প্রশ্ন বিতরণ’ বন্ধ করার জন্য। আমরা যদি ধরে নিই প্রশ্নফাঁস আমরা বন্ধ করতে পারবো না, সেটি হবেই হবে, আমরা শুধু এর বিতরণটি বন্ধ করবো, তাহলে তো বুঝতে হবে আমরা প্রশ্নফাঁস বন্ধের যুদ্ধে আগেই পরাজয় স্বীকার করে বসে আছি। আমি বিশ্বাস করতে রাজি নই যে, প্রশ্নফাঁস বন্ধ করা সম্ভব নয়। অবশ্যই সম্ভব, শুধু সেটি আন্তরিকভাবে চাইতে হবে। যদি প্রশ্নফাঁস বন্ধ করা যায় তাহলে তার বিতরণ বন্ধ করার জন্য আলাদা করে নতুন কোনও উদ্যোগ নিতে হবে না। যে প্রশ্নফাঁস হয়নি সেটি বিতরণ করবে কেমন করে?
যারা প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি দীর্ঘদিন থেকে দেখে আসছে তারা মোটামুটিভাবে তার একটা প্যাটার্ন লক্ষ্য করে আসছে। মূল প্রশ্নটি অনেক আগেই ফাঁস হয়, সেটি ধাপে ধাপে বিতরণ করা হয়। যখন পরীক্ষা প্রায় শুরু হতে যাচ্ছে তখন বিনামূল্যে ছেড়ে দেওয়া হয়। একেবারে শেষ ধাপে যখন এটা খুচরা হিসেবে বিতরণ করা হয় তখন তাদের কাউকে কাউকে ধরা হয়েছে কিন্তু তারা নিহায়তই চুনোপুটি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছিল প্রশ্নফাঁসকারী কাউকে গ্রেফতার করতে পারলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। অনেককেই ধরা হয়েছে (এর মাঝে বাসবোঝাই এসএসসি পরীক্ষার্থীরাও আছে) তাদের কতজনকে পাঁচ লাখ টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে কে জানে।
প্রশ্নফাঁসকারী চুনোপুটিকে গ্রেফতার করেছেন এ রকম একজন পুলিশ অফিসারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে নতুন একটি তথ্য দিয়েছেন। সেটি হচ্ছে প্রশ্নফাঁসের এই রমরমা ব্যবসার মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে বিকাশ। বিকাশে টাকা পাঠানোর পুরো ব্যাপারটি যেহেতু পানির মতো সোজা, তাই এটি অপরাধ চক্রের সবচেয়ে প্রিয় পদ্ধতি। আমি ধরেই নিয়েছিলাম এ রকম একটি পদ্ধতিতে টাকা পাঠানো হলে কে পাঠাচ্ছে এবং কার কাছে পাঠাচ্ছে তার একটা হদিস থাকবে। কিন্তু আমি সবিস্ময়ে এবং মহাআতঙ্কে আবিষ্কার করেছি সেটি সত্যি নয়। কোনও রকম নিয়মনীতি না মেনে বিকাশে একটা অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলা সম্ভব এবং সেই এ্যাকাউন্টে টাকা লেনদেন সম্ভব। যে বড় পুলিশ অফিসারটির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে তিনি বিশাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছেন, এই বিকাশ প্রযুক্তির কারণে কিডন্যাপিং অনেক বেড়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, তিনি আমার কাছে জানতে চেয়েছেন যে প্রযুক্তি অপরাধীদের টাকা লেনদেনে সাহায্য করে, আমাদের দেশ কী সেই প্রযুক্তির জন্য প্রস্তুত হয়েছে?
আমি কখনও বিকাশ ব্যবহার করে টাকা পাঠাইনি, তাই এই প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে আমি কিছু জানি না, কিন্তু সহজ প্রশ্নটি তো করতেই পারি। যদি এই প্রক্রিয়ায় অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে টাকা লেনদেন করতে পারে তাহলে তার দায়দায়িত্ব কি বিকাশকে নিতে হবে না।
আবার প্রশ্নফাঁসের মূল ব্যাপারটায় ফিরে আসি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বীকার করেছে একটি প্রশ্ন পুরোপুরি এবং অন্যগুলো আংশিক ফাঁস হয়েছে। যেগুলো ফাঁস হয়েছে সেগুলোর পরীক্ষা কী আবার নেওয়া হবে? শিক্ষা মন্ত্রণালয় কী বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে যদি নতুন করে নেওয়া হয় তার প্রশ্ন আর ফাঁস হবে না? যদি হয় তখন কী হবে? আমি আমার ভাঙা রেকর্ড বাজাতে বাজাতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। আর কতদিন?
বাংলা ইনসাইডার/ডিকে
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।