নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ১২ মার্চ, ২০১৮
উন্নয়ন বিশেষজ্ঞগণ বলেন যে, কোনো জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সবার আগে সেই জনগোষ্ঠীর শক্তিশালী উপাদান বা পাওয়ার ফ্যাক্টর চিনে নিতে হয়। আমাদের দেশে উন্নয়নে সৎ রাজনীতিবিদ, সাধু ব্যবসায়ী আর সৎ আমলাদের ধরা হয় সমাজের শক্তিশালী উপাদান বা পাওয়ার ফ্যাক্টর হিসেবে। সুশাসনের জন্য বিচার বিভাগ বা জুডিশিয়ারীকে শক্তিশালী উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হলেও উন্নয়নের জন্য প্রাথমিকভাবে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী আর আমলাদের উপর বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। এঁদের সদিচ্ছা, সততা, নিষ্ঠা ও ঐকান্তিক চেষ্টা যে কোন দেশের উন্নয়নে খুব বড় ফ্যাক্টর। কাউকে বাদ দিয়ে বা পাশ কাটিয়ে কোন দেশের করা খুব কঠিন। সংশ্লিষ্ট পক্ষের কাউকে বাদ দিলে শুরু হতে পারে ব্লেইম গেম।একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপাবেন, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে; উন্নয়ন হয় বিলম্বিত। উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি পরিক্ষিত মডেল নিয়ে বলি। এই মডেলটি অনেক দেশেই কার্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়েছে বা হতে পারে ভেবে তৈরী করেছেন মালয়েশিয়ান উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ জাগাতেসান। আমাদের এই বাংলায় ফলদায়ক হতে পারে ভেবেই জাগাতেসানের মডেলের আলোকে এই লেখা।
আমাদের মতো দেশে রাজনীতিকগন জীবন থেকে রাজনীতির পাঠ নেন, কিন্তু বেশীরভাগেরই প্রাতিষ্ঠানিক বড় ডিগ্রী থাকে না। একদা ব্রিটিশ কলোনির এই দেশের বেশীরভাগ রাজনীতিবিদগণ বাংলা ভাষার বাইরে, বিশেষ করে ইংরেজি ভাষায় দক্ষ নন যদিও তাঁরা আইনপ্রণেতা বা মেম্বার অফ পার্লামেন্ট (এমপি)। আমরা ব্রিটিশ আইনের উত্তরাধিকারী তাই আইন প্রণেতাদের জন্য ইংরেজি জানা খুব জরুরি। ভাষা দক্ষতার ঘাটতির কারণেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের পক্ষে আইনের খসড়া করেন আমলারা। উন্নত দেশের প্রায় ৮০ ভাগ সাংসদ আইনে ডিগ্রিধারী হয়ে থাকেন। যাতে আইন প্রণয়নে তাঁদের কারও উপর নির্ভর করতে না হয়। কারণ যিনি আইনের খসড়া করবেন, মনের অজান্তেই ওই আইনের খসড়ায় তাঁর ব্যক্তিগত মত প্রতিফলিত হবে। এই প্রতিফলিত মত দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক নাও হতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে মুষ্টিমেয় কিছু রাজনীতিক আছেন যারা খুব জ্ঞানী আইন প্রণয়ন সম্পর্কেও যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন। বাকীরা পুরোপুরি আমলা নির্ভর। আইন প্রণয়নে আইনী শব্দ চয়ন ও তার প্রয়োগ খুব জটিল বিষয়। স্থান কাল পাত্র ও বাক্যে তার প্রয়োগ ভেদে একই শব্দের অনেকগুলো অর্থ হয়ে থাকে। শব্দ বাক্যের কথায় বসানো হচ্ছে তার উপর অনেক সময় ঐ শব্দের অর্থের ভিন্নতা আসতে পারে। রাজনীতিকগন বেশীরভাগ সময় এলাকার বা দেশের মানুষের সমস্যা আর তার সমাধান নিয়ে কাজ করেন, শব্দের মার প্যাঁচ নিয়ে কাজ করা তাঁদের হয়ে ওঠে না। তাঁরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাদা মনে কাজ করতে চান, যাতে তিনি পূনরায় নির্বাচিত হতে পারেন। রাজনীতিবিদগন সবাই ধোয়া তুলসি পাতা নন তার পরেও অধিকাংশ ক্যারিয়ার পলিটিশিয়ান বা রাজনীতিক সালাম পাবার জন্য রাত দিন কাজ করেন, তাঁদের কোন অফিস টাইম নেই, ছুটির দিন নেই। চট্টগ্রাম এলাকারদেশপ্রেমীক এক সাবেক এমপি (সাংসদ) সম্প্রতি টাকার অভাবে ধুকে ধুকে প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন যদিও প্রধানমন্ত্রী শেষ মুহূর্তে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। অতি সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথিবীর মধ্যে সব চেয়ে মিতব্যায়ী সরকার প্রধান।
এবার আসি ব্যাবসায়ীদের কথায়। সৎ ব্যাবসায়ীগণ দেশের উন্নয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জনগোষ্ঠী। তাঁরা তাঁদের মেধা, শ্রম ও অর্থ দিয়ে নিজের তথা সমাজের উন্নয়নে সব থেকে বেশী ভূমিকা রাখেন। উন্নয়নে লাগে টাকা, আর এই টাকার যোগানদাতা দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ। আমাদের দেশের মোট আহরিত রাজস্বের যোগান দেন বৃহৎ করদাতা ইউনিটসমূহ। দেশের ও বিদেশের চাহিদা বিচার করে দেশের মধ্যে উৎপাদন, রপ্তানী বা আমদানী আর বিপণনের মাধ্যমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে নিজে ও দেশকে লাভবান করেন। তাঁরা এই করেই দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করেন। আমাদের দেশের গার্মেন্টস, ওষুধ, চামড়া, চা, পাট, ইত্যাদি শিল্পের দিকে তাকালেই এর সত্যতা পাওয়া যাবে। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার মানসিকতার অসাধু ব্যবসায়ী যেমন আছে, তেমনি আছে অনেক সৎ ব্যবসায়ী। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের চাহিদা, তাদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে রাজনীতিবিদগণকে তাঁরা পরামর্শ দেন যাতে শিল্পের বিকাশ তথা দেশের উন্নয়ন হয়। এই কাজে তাঁরা আমলাদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেন।
বাংলাদেশ সরকারের রুলস অফ বিজনেস ১৯৯৬ (জুলাই ২১২ সালে সংশোধিত) আর সচিবালয় বিধিমালা ২০১৪ দেখলে বুঝা যায় যে, সরকারী কর্মকাণ্ডের গুরুদায়িত্ব আমলাগনের উপর। সরকারের নীতি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্য মন্ত্রী, এমপিদের সংসদের বাইরের কোন কাজের দায় নেই, যদি প্রধানমন্ত্রী বিশেষ কোন নির্দেশ না দিয়ে থাকেন। উল্লেখিত আইনে বলা হয়েছে যে, একজন সচিব তাঁর মন্ত্রণালয়ের চীফ একাউন্টিং অফিসার। তাই দেশের উন্নয়নে, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সকল পক্ষের মাঝে সেতু বন্ধনের কাজ করেন এই আমলাগণ। প্রতি ৫ বছর পরে বা তার আগেও মন্ত্রী/ প্রধানমন্ত্রী চাকরি চলে যেতে পারে কিন্তু আমলাদের চাকরি যায় না। বড় জোর তাঁদের ওএসডি (কাজ না করিয়ে বেতন দেওয়া) করা হয় বা এক মন্ত্রণালয় থেকে অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। একাবার বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ঢুকলে তার পরে বড় কোনো অপরাধ না করলে আমলাদের চাকরি একদম পাকা। রাজনীতিবিদগণের মতো ৫ বছর অন্তর অন্তর ভোটের মত কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়না। তাঁরা বিগত ও বর্তমান সরকারের সমস্ত কর্মকাণ্ডের তথ্য উপাত্ত সংরক্ষণ করেন। তাই দেশ ও জাতির উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রতিটি স্তরে সৎ আমালাগণের তথা প্রজাতন্ত্রের কর্মীদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এবার আসি ট্রাইএঙ্গেলের কথায়। প্রথমেই দেশপ্রেমিক সৎ রাজনীতিবিদ, সৎ আমলা আর সৎ ব্যাবসায়ী যারা দেশের সার্বিক উন্নয়ন চান, তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে। এসব সৎ রাজনীতিবিদ, সৎ আমলা আর সৎ ব্যাবসায়ীদের নিয়ে মন্ত্রনালয় বা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে টার্গেট করে তার অধীন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আওতাধীন বিষয়গুলোর উন্নয়নের জন্য গঠিত হবে ভিন্ন ভিন্ন কমিটি। এই কমিটিসমূহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের/ বিভাগের সকল খাত বা উপ-খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সমস্ত আইন প্রণয়ন, বাস্তবায়ন বা পরিবর্তন সাধনের সমস্ত দায়ভার গ্রহন করবেন, সরকার প্রধানকে প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা দেবেন। দেশের মানুষের নাড়ীর খবর রাখেন রাজনীতিকগণ তাই তাঁরা জনগনের মতামতের প্রতিফলন ঘটাবেন আইন প্রণয়নে, প্রয়োগে বা পরিবর্তন সাধনে। আমলাগণ তাঁদের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলবেন এই ধরণের আইন প্রণয়নে, প্রয়োগে কী কী সমস্যা আগে হয়েছে বা ভবিষ্যতে হতে পারে যাতে দেশের, জনগণের ক্ষতি হয়। আর ব্যবসায়ীগন এসব কিছুর অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় নেবেন। কমিটির যারা যে যে খাতের সাথে বর্তমানে জড়িত, অভিজ্ঞ, তাঁরা সেই খাতের বা উপ-খাতের সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য হবেন। যাতে করে কেউ কোন ভাবেই সংশ্লিষ্ট খাতের উন্নয়নের ব্যর্থতার দায় এড়িয়ে যেতে না পারেন। অথবা আইনের ফাঁক গলে কেউ যেন অন্যায় করে পার না পায়, আইনের ফাঁক ফোঁকর গলে রাতারাতি কেউ কোটিপতি বনে যেতে না পারে। দেশের জনগণ যেন চরম ক্ষতির মুখে না পড়ে। সমন্বয়ের অভাবে যেন ফ্লাড টাকার অপচয় না হয়। আন্তঃমন্ত্রনালয়/ বিভাগ সমন্বয়হীনতা যেন জনগনের জানমালের ক্ষতির কারণ না হয়।
ট্রাইএঙ্গেল করতে হবে সমন্বহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে। উন্নয়নে নিজের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর ব্লেইম গেম বন্ধ করতে? বিশ্ববানিজ্য আর বিশ্বঅর্থনীতির খোঁজখবর রাখেন ব্যবসায়ী আর আমলাগণ। তাই এর সাথে সঙ্গতি রেখে সরকারের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় রাজস্ব আহরণে প্রতি বছর সরকার বাজেট প্রণয়ন করে থাকে। বাজেটের পরেই এফবিসিসিআইএর বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান তাদের পক্ষ থেকে নানা অসন্তোষ প্রকাশ করে থাকে। কারণ অনেক সময় এখানে থাকে সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। অনেক সময় এর যৌক্তিক কারণ ও থাকে, যা ধরা পড়তে সময় নেয় কিন্তু তা সংশোধনে সময় লাগে এক বছর মানে পরবরতী বাজেট। কিন্তু কোন কোন সময় এই এক বছরেই ঐ খাতের বিপুল ক্ষতি হয়ে যায় যা পাঁচ বছরেও পুশিয়ে নেওয়া যায় না। বাজেটের আগে পরে তথ্য বিক্রির অনেক অভিযোগ পায়া যায়। আবার বলা হয় শিল্পপতিদের অমুক গ্রুপ প্রভাব খাটিয়ে বাজেটে তাদের জন্য সুবিধা আদায় করে অমুক অমুক শিল্পগ্রুপকে লোকসানের মুখে ফেলেছে। এই বিতর্ক বেশ পুরাতন তাই এখন বিভিন্ন শিল্পগ্রুপের পক্ষ থেকে এখন এমপি হওয়ার জন্য সম্ভাব্য বিজয়ী দলের টিকেট কেনার প্রতিযোগিতা হয় মোটা অঙ্কের টাকায়। অভিযোগ আছে যে, নিজেদের মধ্যে গ্রুপ তৈরী করে একটা বিশেষ শিল্পখাতের জন্য বাড়তি সুবিধা নিচ্ছেন ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদগণ। এঁদের সাথে যুক্ত হচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত আমলা। যারা কর্মজীবনে সারাটা সময় রাজনিতিকদের গালি দিয়েছেন তাঁদের অনেকেই অবসরে গিয়ে রাতারাতি হয়ে হচ্ছেন রাজনীতিবিদ, হচ্ছেন পার্লামেন্ট মেম্বার (এমপি)। ফলে তিনি যে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী ছিলেন, তার চাকরীকালীন সময়ের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
আমাদের দেশ উন্নয়নের বুলেট ট্রেনে উঠেছে বলে যারা দাবী করছেন তাঁরা শুধু কি দৃশ্যমান উন্নয়নের পক্ষে কথা বলবেন নাকি অদৃশ্য উন্নয়ন তথা বাংলার মানুষের আত্মিক উন্নয়ন নিয়েও ভাববেন? বাংলার মানুষের আত্মিক উন্নয়ন না হলে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কার্যকর সুফল কি ঘরে আসবে?
লেখক:সায়েদুল আরেফিন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।