নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০২ এএম, ২৪ জুলাই, ২০১৮
আমাদের দেশের একটা বিশেষ শ্রেণির মানুষ অষ্টপ্রহর হিসেব করে কবে নির্বাচন আসবে। এই অষ্টপ্রহর কী তা একবার দেখে নিই। সময়ের সর্বনিম্ন একক হচ্ছে নিমিষ। চোখের পাতা পড়ার যে সময় তাকে এক নিমিষ বা পলক হিসেবে ধরা হয়। আর ১৫ নিমিষ=১ ক্ষণ। ১৫ ক্ষণ=১ লঘু। ৩০ লঘু=১ মুহূর্ত। ৩০ মুহূর্ত=১ দিবারাত্র বা ২৪ ঘণ্টা। ২৪ ঘণ্টা বা একদিন আবার ৮ প্রহরে বিভক্ত। নির্বাচন এগিয়ে এলেই সবাই প্রহর গুণে গুণে সুযোগ নেয়, এটা যেন আমাদের দেশের একটা কালচারে পরিণত হতে চলেছে। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও তাদের মিত্র মিডিয়ার সাহায্য নানা প্রপাগান্ডা করে সরকারকে চেপে কাহিল করে ফেলে। ফলে মাঝে মাঝে সরকারের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা হতে দেখা যায়। সরকার প্রধান বিচক্ষণ আর দেশপ্রেমিক হলে তাল সামাল দিতে পারেন, না হলে অনেক কিছুই এলোমেলো হয়ে যায়, যার প্রভাব থাকে সুদূরপ্রসারী।
বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে যেহেতু সচিবগণ আর প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কারও কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবার ক্ষমতা নেই, তাই আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে দিন রাত সমানে কাজ করতে হয়। ফলে কাউকে না কাউকে বিশ্বাস করে মাঝে মধ্যে ঠিকমতো না পড়েই প্রধানমন্ত্রীকে সই করতে হয় ফাইলে। ফলে অনেক সময় সরকারের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন সিদ্ধান্তও এসে যায় সামনে। দেশে উন্নয়ন প্রকল্পের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অনেক বেশি ফাইলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জমা পড়ে। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমি মাত্র ৫ ঘণ্টা ঘুমাই। বাকি ১৯ ঘণ্টা দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করি। আমার কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। আমি চাই, বাংলাদেশের মানুষ ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র মুক্ত হোক। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হোক। আমি জাতির পিতার দেখে যাওয়া স্বপ্ন পূরণ করতে চাই’।
এক জরিপে দেখা গেছে যে, দারিদ্রে জর্জরিত স্বল্প শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর দেশে ছাপার অক্ষরে লেখা যেকোনো কিছুকেই তাঁদের ধর্মগ্রন্থের পরেই বিশ্বাস করে থাকেন। তাই মিডিয়া সমাজের বড় অপিনিয়ন মেকারের হুইল চেয়ার দখল করে বসে। আধা সত্য, অল্প সত্যকে নানা কথার প্যাচে নিজেদের মতো সত্য বলে প্রচার করে। যা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ভাষায় এসব কথা, ‘কেহ বিশ্বাস করে, কেহ করে না। যে বিশ্বাস করে সেও সত্য-মিথ্যা যাচাই করে না, যে অবিশ্বাস করে সেও না। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নটা নির্ভর করে মানুষের খুশির উপর।’
ঘটনার পটভূমি বিচার করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হবার পরে দেশের কথিত নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবী বলে খ্যাতদের মাঝে জবাবদিহিতা ছাড়াই সাময়িক একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ আসে। এতে কথিত নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবীগণ খুশিতে ডগমগ করতে থাকেন। কারণ ক্ষমতা পেতে তাঁদের ভোটের দরকার হয় না। দেদারসে আর্থিক দুর্নীতির সুযোগ থাকার ফলে কথিত নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবী তথা সুশীল সমাজ একাট্টা হয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষমতা দখলের একটা ষড়যন্ত্র করে। তাঁদের প্রিয় মিডিয়ায় প্রোপাগান্ডার সাপোর্টে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রধানকে জেলে পুরে ফেলে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে নিউইয়র্কে নিভৃত জীবন যাপনকারী বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান এবং ওয়ান ইলেভেনের অন্যতম পরিকল্পনাকারী জেনারেল মঈন ইউ আহমেদের নতুন প্রকাশিতব্য বইতে সেই তথ্য ফাঁস করে দেন। ঐ বইয়ে মঈন ইউ আহমেদ ‘শেখ হাসিনাকে ‘বিচক্ষণ, দেশপ্রেমিক এবং রাষ্ট্রনায়োকচিত গুণাবলী সম্পন্ন রাজনীতিবিদ’ হিসেবে অন্যদিক বেগম জিয়াকে ‘পরিবার কেন্দ্রিক, অস্থির এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন’।
মঈন ইউ আহমেদ বলেন, ‘দেশে শক্তিশালী এবং ক্রিয়াশীল একটি সুশীল সমাজ দুই নেত্রীকে গ্রেপ্তার করে তাদের রাজনীতি থেকে অবসরে পাঠানোর জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপর ক্রমাগত চাপ দিতে থাকে। এই সুশীল সমাজের নিয়ন্ত্রণে ছিল দেশের সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক। তাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা এবং আমার অন্তত তিন দফা বৈঠকে তারা বার বার দুই নেত্রীকে গ্রেপ্তার করে রাজনীতি থেকে বিদায় করতে বলেন।’
খুব যৌক্তিক কারণে শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ফলে কথিত সুশীল সমাজ তাঁর উপর চরম রুষ্ট হন। ক্ষমতায় গেলে ১৯৭১ সালের মানবতা বিরোধীদের বিচার করবেন এই এজেন্ডা এতই জনপ্রিয়তা পায় যা, ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন জোট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় আসে, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়। এতে কথিত নিরপেক্ষ সুশীল সমাজ লোভের গুড়ে বালি পড়ে, চুপসে গিয়ে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন জোটের বিপুল জনপ্রিয়তায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে ২০১৬ সালে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন যে, ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবর’ যাচাই ছাড়া প্রকাশ করে সাংবাদিকতা জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। তিনি বলেন যে, ‘এটা আমার সাংবাদিকতার জীবনে, সম্পাদক হিসেবে ভুল, এটা একটা বিরাট ভুল। সেটা আমি স্বীকার করে নিচ্ছি।’ ইংরেজি দৈনিকটির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন এটিএন নিউজে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রশ্নের মুখে মাহফুজ আনামের এই স্বীকারোক্তি আসে। মাহফুজ আনামের অন্যতম সহযোগী মতিউর রহমান যিনি প্রথম আলোতে দুই নেত্রীকে বিদায় নিতে বিশেষ সম্পাদকীয় লেখেন তিনিও অনেকটা চুপ হয়ে যান এই নির্বাচনের পরে। তাঁরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকার নীতি গ্রহণ করেন বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে বিরাট অঙ্কের টাকা চুরি যায়। টাকা চুরির এই ঘটনায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা দ্য ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স-আইএসআই এর সম্পৃক্ততার আশঙ্কা করে ভারত। ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের এই আশঙ্কার কথা রিজার্ভ ব্যাংক ইন্ডিয়াকে জানিয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছিল বলে জানা যায়।
‘টানা পাঁচ বছর ধরে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমটি সমান্তরালভাবে হ্যাকারদেরও নিয়ন্ত্রণে থেকেছে- অথচ প্রতিষ্ঠানটি কেউ সেটি টেরই পায়নি তা খুব অবাক করার কথা’। সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানি `ফায়ার আই` এমন একটি কেসেরও তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির চিফ এশিয়া প্যাসিফিক সিকিউরিটি অফিসার ব্রিচ বোলান্ড। তাঁর ভাষ্য,’বাস্তবতা হচ্ছে অধিকাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানই সিস্টেম হ্যাক হওয়ার তথ্য প্রকাশ করে না।’
এবার আমরা দেখে নিই সেই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি অপারেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্ট, ইনফরমেশন সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট,ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো, বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগ এবং ফরেন এক্সচেঞ্জ অপারেশন বিভাগের দায়িত্বে কে ছিলেন আর কী তাঁর পরিচয়। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর-৪ বেগম নাজনীন সুলতানার অধীনে ছিল। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা লোপাট বা চুরির সহযোগিতার বা দায়িত্বে অবহেলার দায়ে বেগম নাজনীন সুলতানার চাকরি চলে যায়। এই নাজনীন হচ্ছেন প্রথম আলোর মতিউর রহমানের শালার বৌ, কমিউনিস্ট পার্টির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের বোন।
সাম্প্রতিক কালে তারেক জিয়ার প্রতিনিধির সঙ্গে দফায় দফায় জাতীয় পার্টির বৈঠক, বিএনপি নেতাদের ভারত সফর, যুক্তরাষ্ট্র আর ভারতের কাছে ডক্টর ইউনুস ও ডক্টর কামালের আবেদন নিবেদন, বি চৌধুরীকে দিয়ে নতুন জোট গঠনের প্রক্রিয়া, ইত্যাদি কেমন যেন একটা ষড়যন্ত্রের আভাস দেয় আমদের সবাইকে। এর পরেই এই ইমরান এইচ সরকার কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীর মৃত্যু নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা স্ট্যাটাস দিয়ে বলে যে, একজন আন্দোলনকারী মারা গেছে। ফলে মুহূর্তে খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কয়েকদিন আগে প্রথম আলো কাস্টম ইন্টেলিজেন্সের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সোনা নিয়ে ‘ভৌতিক কাণ্ড’ শিরোনামে আংশিক সত্য খবর প্রকাশ করে, যা মূলতঃ কেরানিদের ভুলে। যে ভুলের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক লিখিত চিঠির মাধ্যমে কাস্টম ইন্টেলিজেন্সকে জানায় এবং কাস্টম ইন্টেলিজেন্স তা মেনে নেয়। এই খবরাংশটি বাদ দিয়ে প্রথম আলো এমনভাবে খবর প্রচার করে যে, চোরাচালান থেকে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখা সোনা নিয়ে জনমনে ব্যাপক ঋণাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সরকার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে যায়। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে তার রাষ্ট্রদূতের পরিবর্তনের ঘোষণা দেয়। আবার উৎসবিহীন আয়ের ব্যয়বহুল নেতা, গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের নেতা ইমরান এইচ সরকারকে ‘আমেরিকান সরকারের U.S. Department of State এর আমন্ত্রণে অহিংস আন্দোলন, লিডারশিপ, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার নিয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য দাওয়াত দেয়, যদিও তাঁকে এয়ারপোর্টে আটকে দেওয়া হয়। এদিকে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির ডিপো থেকে ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েব হয়ে গেছে বলে খবর বেরিয়েছে। কী হচ্ছে একটা পরে একটা! যেন সাজানো টেলিফিল্ম!
কিছু প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই দেখা যাবে যে দেশে চরম বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে চলছে। দুর্নীতি হচ্ছে, আগেও হয়েছে, হয়তো আগামীতে হবে কম কিন্তু এসব মিডিয়া এমনভাবে খবর প্রচার করা হচ্ছে যে দেশের প্রধানমন্ত্রী বসে বসে এগুলো করছেন, আরাধনার মতো করে তাঁর মুন্ডুপাত করা হচ্ছে অষ্টপ্রহরে। লেখা শেষ করার আগে আসুন আমাদের আরাধ্য প্রহরগুলোর নাম জেনে নিই। এগুলোর মধ্যে আছে অমৃতযোগ, মহেন্দ্রযোগ, কুলিকবেলা,কুলিকরাতি, বারবেলা, কালবেলা, কালরাতি, ইত্যাদি। রাতের চারটি প্রহর নিয়ে কখন কে জাগে সে সম্পর্কে প্রচলিত কথা: প্রথম প্রহরে সবাই জাগে, দ্বিতীয় প্রহরে ভোগী। তৃতীয় প্রহরে তস্কর জাগে, চতুর্থ প্রহরে যোগী। কিন্তু আমাদের দেশে নির্বাচনের আগে এখন অষ্টপ্রহরে মিডিয়ায় কালরাতির চরম প্রভাব। তাঁরা খুব সক্রিয় যারা এই দেশটাকে পাকিস্তানের মতো একটা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, সরকার বিরোধিতার বদলে জেনেশুনে কোনো রাষ্ট্রের বিরোধিতা, চায় ‘শেখ হাসিনার মাইনাস’, তাহলে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবে, মজা হবে অনেক।
লেখক: উন্নয়ন কর্মী ও কলামিস্ট
তথ্যঋণঃ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল, ফেসবুক ও অন্যান্য
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।