নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৭ এএম, ২৯ জুলাই, ২০১৮
ঢাকা মহানগরীতে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, জলাভূমি, নিন্মাঞ্চল, খাল ও নদী ভরাট ও দখল, খাল ও নালা-নর্দমা আবর্জনায় ভরাট এবং নিয়মিত পরিষ্কার না করা, সংস্থাগুলোর দায়িত্বহীনতা, জবাবদিহিতার অভাব, দায়িত্বে অবহেলা, সমন্বয়হীনতা, জনসচেতনতার অভাব রাজধানীর জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। বাংলাদেশে বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। আর অস্বাভাবিক হচ্ছে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি হওয়া, বর্ষাকালে বৃষ্টি না হওয়া। এবছর গ্রীষ্মকালে ঢাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল হলেও এবছর শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি। টানা খরার পর শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহের শেষে বর্ষার আসল রূপ দিতে শুরু করেছে প্রকৃতি। তবে রাজধানীবাসীর জন্য বর্ষার এমন রূপ চরম দুর্ভোগ বয়ে আনছে। কেননা কর্মচঞ্চল নগরজীবনে বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা, যানজট অনেকাংশেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানি। রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি। জলমগ্ন রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় গর্ত থাকায় ঘটছে দুর্ঘটনা।
বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা-যানজটে ঢাকা মহানগরী অচল হয়ে পড়ে। গত বছর ঠিক এই সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, এ বছর জলাবদ্ধতা হবে না। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগ, ওয়াসা, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ তাদের সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি। ২৪ ঘণ্টায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে। মেট্রো রেলসহ ওয়াসা, উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে বেশির ভাগ সড়ক এমনিতেই সংকুচিত হয়ে পড়েছে। যেটুকু সড়ক যানবাহন চলাচলের জন্য রয়েছে, তাও খোঁড়াখুঁড়িতে তৈরি হওয়া খানাখন্দে ভরা। জলাবদ্ধ সড়কে খানাখন্দের মধ্য দিয়ে চলতে গিয়ে আটকে পড়ছে বাস, কার, অটোরিক্সা ও রিক্সা। এতে রাজধানীর বেশির ভাগ সড়ক জুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।
গত বছরের ২৬ জুলাই পল্লী উন্নয়ন, সমবায় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি প্রমিজ করছি, সামনের বছর থেকে এসব (জলাবদ্ধতা) দেখবেন না। কিছু দিনের মধ্যেই নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে বর্তমান জলাবদ্ধতা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিটা আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে। আমরা বুঝতে পারছি, কোন জায়গায় আটকা পড়ছি। সে জায়গায় দ্রুত ব্যবস্থা নেব। ভারী বৃষ্টি হলেও যেন তিন ঘণ্টার মধ্যে পানি নিষ্কাশন হয়, সে ব্যাপারে ওয়াসাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ এর আগে ঢাকার দুই মেয়র, ওয়াসার এমডি ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধানরা এক বছর সময় চেয়ে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মন্ত্রীকে এবং তাঁর মাধ্যমে নগরবাসীকে।
মন্ত্রীর নির্দেশ, মেয়র ও এমডির দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তব কোনো প্রতিফলন নগরবাসী দেখছে না। এবছরও সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জনজীবনে সীমাহীন দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি পর্যন্ত হাঁটুপানি থেকে কোমরপানি জমছে। গত বছর মেয়রকে হাঁটুপানিতে নেমে প্রতিশ্রুতি দিতেও দেখা গেছে। এতে আশ্বস্তও হয়েছিল নগরবাসী। কিন্তু এবছর এপ্রিলের শেষের দিকের বৃষ্টিতে আবারও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক কর্মপরিকল্পনা ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনের ঘোষণা অর্থহীন। বর্তমান আইনি কাঠামোয় খাল ও স্টর্ম ড্রেন দেখভাল করার দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার আর রাস্তার দুই পাশের সারফেস ড্রেন দেখভালের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। ঢাকা ওয়াসা, সিটি করপোরেশন এবং জনগণ তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলেই জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান সম্ভব।
উত্তর সিটি করপোরেশনের ১২৩০ কি.মি., দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০০০ কি.মি. এবং ওয়াসার বক্স কালর্ভাটসহ ৩৭০ কি. মি. ড্রেনেজ লাইন নিয়মিত পরিষ্কার এবং খালগুলো দখলমুক্ত করে নিয়মিত পরিষ্কারের পর্যাপ্ত উদ্যোগ না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রাজধানীর রাস্তাগুলো। রাজধানীর পানি নিষ্কাশন পথগুলো পলিথিন, প্লাস্টিক বোতলসহ বিভিন্ন ধরনের আবর্জনায় ভরাট হয়ে থাকে। শত শত কোটি টাকা খরচ করে এসব আবর্জনা পরিষ্কার, ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার ও উন্নয়ন করলেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর। বর্তমান সময়েও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম চলছে। এরপরও স্বস্তিতে নেই নগরবাসী।
প্রতি বছর জলাবদ্ধতায় সেবা সংস্থাগুলো নিজেদের ব্যর্থতার দায় একে-অপরের ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন যে, রাজধানীতে মাত্র দুই শতাংশ জলাভূমি রয়েছে, যেখানে থাকার কথা ১২ শতাংশ, নিন্মাঞ্চল ভূমিদস্যুদের দখলে, ৬৫টি খাল ও চারটি নদী ছিল, এখন সেগুলো নেই; এসব কারণে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসন কিছুটা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তাঁর পরিসংখ্যান নিয়ে মতভেদ থাকলেও জলাভূমি, নিন্মাঞ্চল, খাল ও নদী ভরাট ও দখলের বিষয়টি কম-বেশি প্রায় সকলেরই জানা। একই সাথে ঢাকা ওয়াসা যে ২৬টি খাল দেখভাল করার কথা সেগুলো দখলমুক্ত ও পরিষ্কার করে প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো কার্যক্রম নগরবাসীর দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। ১৯৮৯ সালে ওয়াসাকে পানি নিষ্কাশনে মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি একাজে যুক্ত হয় সিটি করপোরেশনসহ আরও কয়েকটি সংস্থা। ওয়াসা পানি সরবরাহের হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পানি নিষ্কাশনে নজর দেওয়ার সময় নেই। আর এর ফলে ভুগছে নগরবাসী।
গত বুধবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন জলাবদ্ধতা-যানজট নিরসন তাঁর দায়িত্ব নয়; জলাবদ্ধতা সমাধান করবে ঢাকা ওয়াসা; যানজটের সমাধান করবে অন্য সংস্থা। কিন্তু নগরবাসীর প্রশ্ন- ডিএসসিসির য নিয়ন্ত্রণাধীন ১০০০ কি.মি. ড্রেনেজ লাইন নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার করা হচ্ছে কি? রাজধানীর জলাবদ্ধতা লাঘবে ২৬টি খালের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে ওয়াসা এবং ২ হাজার ৬ শত কি.মি. ড্রেনেজ লাইন পরিষ্কার রাখার ক্ষেত্রে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসা উদ্যোগ নিবে এটাই নগরবাসীর প্রত্যাশা।
বৃষ্টির পানি ড্রেনের মাধ্যমে স্ট্রম স্যুয়ারেজে যাবে, সেখান থেকে খালে, খাল থেকে নদীতে পড়বে। দীর্ঘ এই পথের প্রতিটি অংশ নির্বিঘ্ন হতে হবে। কোথাও এটি বাধাপ্রাপ্ত হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলো পুনরুদ্ধারের বিকল্প নেই। খালগুলো উদ্ধারের পর এগুলো পরিষ্কার করে দুই পাড় বাঁধাই করতে হবে। যাতে আবার বেদখল না হয়। পাশাপাশি এগুলো নিয়মিত তদারকি, পরিচর্যা ও পরিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে জলাবদ্ধতা আরও ভয়াবহ রূপ নিবে। নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা-যানজট থেকে মুক্তি দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে। বাস্তবে ভোগান্তি কমছে না, বরং প্রতি বছর বাড়ছে।
উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসা নিজেদের দায় স্বীকার না করে একে অপরকে দোষারোপ করছে। আবার সমন্বয়হীনতার কথা বলে পার পেয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি সংস্থা ও জনগণের নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালনের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা, যানজটসহ বিভিন্ন সমস্যা বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। আর যেটুকু অবশিষ্ট থাকবে সেটুকু সমন্বয়ের মাধ্যম সমাধান করতে হবে।
ঢাকা মহানগরী পৃথিবীর দ্রুত বেড়ে ওঠা শহরগুলোর অন্যতম। নানা সংকটে এ মহানগর বর্তমানে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। বাসস্থান, যাতায়াত, বিনোদন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশসহ মৌলিক ও প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে নগরবাসীকে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এগুলোর সাথে যুক্ত হয়েছে যানজট ও জলাবদ্ধতা। মহানগরীর সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর সময়োপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যর্থতা, অদূরদর্শিতা, দায়িত্বহীনতা এবং স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রভাবসহ নানা কারণে নগর জীবনের সমস্যাগুলো দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকাকে বসবাসযোগ্য একটি পরিকল্পিত মহানগরী হিসেবে গড়ে তোলার মূল দায়িত্ব রাজউকের। এছাড়া ওয়াসা, উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআইডব্লিউটিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবে এবং সংস্থাগুলো তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থ হওয়ায় এ মহানগরী বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়ছে। ফলে দ্রুত জীবনযাএার মানের অবনতি ঘটছে এবং নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
করণীয়:
জলাবদ্ধতা নিরসনে সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
সিএস অনুযায়ী খালের সীমানা নির্ধারণ এবং অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা।
খালগুলো দখলমুক্ত ও খনন করে প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং দুই পাড় বাঁধাই করা।
ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করা।
সংস্থাসমূহ একে অপরকে দোষারোপ না করে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করা।
খাল ও ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার করা।
প্রতিটি সংস্থার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ সিস্টেমকে একক কর্তৃত্বে নিয়ে আসা।
জনগণকে সচেতন করা এবং তাদেরকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করা।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, পবা এবং সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।